সৌরদীপ সৌমিত্র চৌধুরী "চন্দ্রচূড়"

Crime Thriller Action

4.2  

সৌরদীপ সৌমিত্র চৌধুরী "চন্দ্রচূড়"

Crime Thriller Action

দ্যি কাটথ্রোট

দ্যি কাটথ্রোট

14 mins
732


                              (প্রথম পর্ব)

- "বুঝতেই পারছিস জয়, খুবই ক্রিটিক্যাল একখানা কেস হাতে পেয়েছি। নাহলে তোর এত ব্যস্ততার মধ্যে তোকে ডেকে পাঠাতাম না।"
- "সে আর বলতে!" চায়ের কাপে চুমুক দিতে-দিতে বললাম, "নেহাৎ বিপাকে না পড়লে আমার কথা তোমার মনেই পড়ে না। তা ব্যাপারখানা কী?"
- "বেশ প্যাঁচালো কেস রে। এই তদন্তে তোর হেল্প না পেলে বড় ঝামেলায় পড়তে হবে আমাকে।"

আমি ডঃ জয়ব্রত বসু। বয়স পঁয়ত্রিশ। সদ্য একটা মেডিক্যাল কলেজের 'ফরেন্সিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি' বিভাগে অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেছি। এই মুহূর্তে আমি বসে আছি আমার দাদা, অর্থাৎ অ্যাডভোকেট অনুব্রত বসুর চেম্বারে। পেশায় একজন উকিল হলেও মানুষটার ঝোঁক বরাবরই গোয়েন্দাগিরির দিকে। তাই বলা ভাল, ইনি একজন উকিল কাম শখের ডিটেক্টিভ। বেশিরভাগ কেসেই দাদার প্রয়োজন পড়ে আমার সাহায্যের। তার বক্তব্য....আমি যেহেতু ফরেন্সিক লাইনের লোক, তাই কিছু বিশেষ-বিশেষ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ পেলে তার কাজটা নাকি অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। সে যাই হোক, দাদার আদেশ তো আর ফেলতে পারিনা। তাই গোয়েন্দাগিরির ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি তার অঘোষিত সহকারী। ইদানিং কয়েকটা ছোটখাটো কেস সল্ভ করে কিছুটা সুনামও হয়েছে আমাদের। কিন্তু আজকের এই কেসটা নাকি অনেক বেশি জটিল, অনেক বেশি বিপজ্জনক।

- "এবার বলো তো দাদা," চায়ের পেয়ালাটা টেবিলে নামিয়ে রেখে বললাম, "পুরো কেসটা খোলসা করে বোঝাও আমাকে।"
- "আমি কিছু বলব না। আগে ক্রাইম সিনে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখ, নিজেই সব বুঝে যাবি।"

আমাদের গাড়িটা এসে থামল টালার এক পুরনো বাড়ির সামনে। পুলিশ বাড়িটা সিল করে রেখেছে। দাদা নিজের পরিচয় দিতেই অফিসার আমাদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।
- "এখানে কী হয়েছে রে দাদা?"
- "মার্ডার," দাদা ফিসফিস করে বললেন, "আর যে-সে মার্ডার নয়....একদম অভিনব কায়দায় মানুষ খুন।"

ভিতরে একখানা বড় ঘর। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা বড় খাট। আর সেই খাটেই শায়িত রয়েছে এক প্রৌঢ়ার মৃতদেহ। বয়স হবে ষাট-বাষট্টির কাছাকাছি। হত্যাকারী খুব নিপুণ হাতে কোনও ধারালো ছুরি বা সেই জাতীয় কিছু একটা দিয়ে মহিলার শ্বাসনালি কেটে দু'ভাগ করে দিয়েছে। রক্তে ভিজে গেছে বিছানার সাদা চাদরটা।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। খুনী শুধু মহিলাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। মহিলাটি মারা যাওয়ার পর হত্যাকারী অত্যন্ত পটু হাতে নিজের ছুরি দিয়ে ওই শবের অটোপ্সি করেছে। যেমন ভাবে পোস্টমর্টেম করা হয়, ঠিক সেই মতোই ভীষণ নিখুঁত ভাবে গোটা দেহটা ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে। শরীরের এক-একটা অঙ্গ কে যত্ন সহকারে ডিসেক্ট করে রেখে গেছে আততায়ী। মহিলার শরীরে কোত্থাও কোনও সংঘর্ষের চিহ্ন নেই। তার মানে প্রথমে শ্বাসনালি কেটে মহিলা কে খুন করা হয়। আর তারপর ওনার সেই প্রাণহীন দেহটা কে কাটেছেঁড়া করা হয় একদম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে। পুলিশ অফিসারের মুখে শুনলাম, ঘরের জিনিসপত্র সব নাকি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে। টাকাকড়ি, গয়নাগাটি, এমনকি মহিলার ঘরে রাখা দামি-দামি সব আসবাবপত্র পর্যন্ত অক্ষত। তার মানে হত্যাকারী টাকার লোভে খুন করেনি। তাহলে? এত বড় একখানা অপরাধ করার পিছনে কিছু তো অভিসন্ধি থাকবে?

চেম্বারে ফিরে এসে শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিলাম। দাদাও আমার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসল।
- "হ্যাঁরে জয়, কিছু বুঝলি?"
- "কী আর বুঝব?" আমি ক্লান্তিভরা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, "আজ রোববার। ভেবেছিলাম বাড়িতে আজকে জমিয়ে কচি পাঁঠার ঝোল দিয়ে ভুঁড়িভোজ সারব। কিন্তু এখন যা অবস্থা দেখছি, টালা থেকে আমাদের ফিরতেই বিকেল চারটে হয়ে গেছে।"
- "ধুত্তোর! ফাজলামি না করে সিরিয়াসলি বল না....স্পটে গিয়ে কী বুঝলি তুই?"

- "ঠিক পরিষ্কার হল না কিছুই। খুনের পিছনে দুটো মূল কারণ থাকতে পারে। এক, টাকাকড়ি। বিষয়-সম্পত্তি হাতানোর ধান্দা। আর দুই....কোনও পুরনো শত্রুতা। প্রথমটা হওয়ার চান্স নেই, কারণ আততায়ী ঘরের একটা জিনিসও স্পর্শ করেনি। দ্বিতীয়টা হতে পারে কি?"
- "না রে জয়, ওই মহিলার কোনও শত্রু ছিল এমন কিছু প্রমাণ আমি এখনও পর্যন্ত পাইনি। মহিলাটি বিধবা। স্বামী ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী। বছর কয়েক আগে তিনি দেহ রাখার পর তার স্ত্রী সম্পূর্ণ একা হাতেই সব সম্পত্তি আগলে রাখতেন। বাড়িতে ওই বিধবা কে ছাড়া আরও দুজন ভৃত্য আছে; অবশ্য তারা দুজনেই মহিলার শ্বশুর মশাইয়ের আমলের থেকে সেখানে কাজ করছে, যথেষ্ট বিশ্বাসী। ওদের কে জেরা করেও কোনওরকম সন্দেহজনক তথ্য খুঁজে পাইনি আমি। রাতে কখন খুন হয়েছিল সেটাও ওরা সঠিক জানে না। পরের দিন সকালে চা দিতে গিয়ে মহিলার রক্তাক্ত লাশ আবিষ্কার করে ওরা। ওদেরই দুজনের মধ্যে একজন পুলিশ কে ফোন করে খবর দিয়েছিল।"
- "সবই তো বুঝলাম। কিন্তু একটা কথা বলো তো দাদা, একজন অজাতশত্রু অথচ ধনী বিধবা কে খুন করার পিছনে কি কোনও কারণ নেই? হাজার হোক, অপরাধী তো আর খুন করার মতো রিস্কি একটা কাজ বিনা উদ্দেশ্যে করবে না। তাছাড়া খুন করার পর ডেডবডির অমনধারা নিখুঁত ব্যবচ্ছেদ কী করে করল হত্যাকারী? কেনই বা করল? দাদা, আমি নিজে একজন ডাক্তার। অটোপ্সি করার পদ্ধতি দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি, এমন সুনিপুণ কাজ কোনও আনাড়ি লোকের হতেই পারে না।"

দাদাভাই একটু ম্লান হাসলেন।
- "এই কথাটা আমারও মাথায় এসেছিল। আর বিশেষ কথা কী জানিস? এর আগের খুনগুলোর সাথে এই খুনের অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে।"
- "আগের খুনগুলো মানে?"
- "এর আগেও ঠিক এই একই কায়দায় আরও তিনটে খুন হয়েছে জয়। এইটা চতুর্থ।"
- "বলো কী দাদা! সিরিয়াল মার্ডার?"
- "একদম। আর সবকটা হত্যার মধ্যে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে। প্রতি মাসে একটা করে খুন হয়। প্রথম খুনটা হয়েছিল জুলাই মাসের দশ তারিখে। দ্বিতীয়টা হয়েছিল পয়লা আগস্টে। তৃতীয়টা উনিশে সেপ্টেম্বর। আর চতুর্থ হত্যা হল কাল অর্থাৎ ১৫'ই অক্টোবর।"
- "কী অবস্থা! তাহলে এই মাসে আর কিছু হবে না, তাই তো?"
- "ঠিক তাই। এবার আমার ক্যাল্কুলেশন অনুযায়ী নেক্সট মার্ডার হবে নভেম্বর মাসের চোদ্দ তারিখে।"
- "পরবর্তী খুনটা পরের মাসে হবে সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু দাদা....সেইটা যে চোদ্দ তারিখেই হবে এইটা তুমি বুঝলে কীভাবে? নভেম্বরের যে কোনও দিনেই তো হতে পারে, তাই না?"

- "এর পিছনে খুনী এক ধরণের সিম্পল কোড ব্যবহার করছে। প্রতি মাসের নামের প্রথম অক্ষরটা ইংরেজি বর্ণমালায় যে নম্বরে অবস্থান করছে, খুনটা সেই নম্বরের তারিখেই হচ্ছে।"
- "একটু ভেঙে বলো।"
- "শোন, কাল একটা খুন হল। কাল ছিল অক্টোবর মাসের পনেরো তারিখ। অক্টোবর শুরু হয় 'O' দিয়ে। এখন আমরা যদি A কে এক, B কে দুই....এমন করে নাম্বারিং করতে শুরু করি, তাহলে O কত নম্বরে আসবে?"
- "ইয়ে মানে....পনেরো।"
- "অঙ্কটা মিলে গেল তো? মিলিয়ে দেখ, আগের খুনগুলোও এই একই কোড মেনে করা হয়েছে। সেই অনুসারে পরের খুনটা হওয়ার সম্ভাবনা নভেম্বরের চোদ্দ তারিখে।"

- "এবার তোমার কী প্ল্যান তাহলে?"
- "এখন আমি এই একটা মাস ধরে শুধু কেসটা স্টাডি করব। আপাতত তোর ছুটি। পরের মাসে তোকে আবার দরকার পড়বে। তাই নেক্সট মান্থ তোকে চার-পাঁচ দিনের ছুটি নিতে হবে কলেজ থেকে।"
- "বলো কী দাদা!" আমি লাফিয়ে উঠলাম, "এই সবেমাত্র জয়েন করেছি। এরই মধ্যে এত লম্বা ছুটি কী করে পাব?"
- "সে তোকে একটু ম্যানেজ করতেই হবে জয়। খুনী অলরেডি চারটে খুন করে ফেলেছে। পঞ্চম খুনটাও হোক, এ আমি একদমই চাই না। আর এই কেসে তোর হেল্প আমার ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।"

কলেজের ব্যস্ততার মধ্যে এক মাস কীভাবে পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। কেসটার ব্যাপারে হয়তো বেমালুম ভুলেই গেছিলাম। নভেম্বরের দশ তারিখে দাদার ফোন পেয়ে আবার নড়েচড়ে বসলাম।

- "হ্যালো জয়! ছুটিটা জোগাড় করতে পারলি?"
- "আর বোলো না দাদাভাই। এইচ.ও.ডি. কে অনেক তোষামোদ করে পাঁচ দিনের লিভ আদায় করেছি। এবার বলো, কবে তোমার চেম্বারে আসব?"
- "বাহ্! ভেরি গুড নিউজ। যাক, শেষ পর্যন্ত ছুটিটা পেলি তাহলে। আমি এবার নিশ্চিন্ত হলাম। তুই কি এখন ক্লাস নিচ্ছিস?"
- "এই মুহূর্তে নিচ্ছিনা। আধ ঘণ্টা পর একটা ক্লাস আছে।"
- "বেশ বেশ। তা তুই কি আজ কলেজ ছুটি হওয়ার পর একবার আমার চেম্বারে আসতে পারবি? আসলে বিগত এক মাস ধরে কেসটা ঘেঁটে আমি যা-যা নিষ্কর্ষ বার করতে পেরেছি, তা নিয়ে তোর সাথে কিছু আলোচনা করার আছে।"

দাদার কাছে পৌঁছতে আমার বিকেল হয়ে গেল। চেম্বারে ঢুকে দেখি, দাদা একটা বড় রিক্লাইনিং চেয়ারে গম্ভীর ভাবে বসে আছে। যেন খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করার পর আমার দিকে ফিরে তাকাল। আমায় বসতে বলে দাদা বিনা কোনও গৌরচন্দ্রিকায় সোজাসুজি চলে এল মোদ্দা কথায়।

- "বিগত ক'দিন ধরে এই হত্যাগুলো নিয়ে আমি অনেক অনুসন্ধান করেছি। বেশ কয়েকবার ক্রাইম সিনে গিয়েছি, পুলিশের সাথে কথা বলেও বেশকিছু তথ্য জোগাড় করেছি। খুনী বড়ই ধূর্ত....কোনও পোক্ত প্রমাণ রেখে যায়নি। তবে খুনগুলোর মধ্যে আমি পাঁচটা অদ্ভুত মিল খুঁজে পেয়েছি। আর এই যোগসূত্র ধরেই বলছি, এই চারটে খুন একই লোক করেছে।"
- "পাঁচটা মিল? শুনি কী-কী।"

- "সবচেয়ে প্রথম যোগসূত্রটা তো তুই জানিস, হত্যাকারী মার্ডার করে এক বিশেষ কোড অনুসারে তারিখ নির্ধারণ করে।"
- "হ্যাঁ দাদা, এই ব্যাপারটা আমাকেও খুব ভাবিয়েছিল।"
- "দ্বিতীয় মিল, প্রতিটা খুনের পর ওখানকার সব জিনিসপত্র কিন্তু একদম অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র হত্যা আর শব-ব্যবচ্ছেদ করেই আততায়ী সেখান থেকে চম্পট দিয়েছে; কোনও ধনসম্পত্তি ছুঁয়েও দেখেনি। তৃতীয় মিল, খুনী প্রতিবার হত্যা করে একই কায়দায়। ছুরি বা ক্ষুর জাতীয় কোনও অস্ত্র দিয়ে শ্বাসনালি কেটে মেরে ফেলে নিজের শিকার কে। এই জন্য পুলিশ মহকুমা খুনীর নামকরণ করেছে....দ্যি কাটথ্রোট।"
- "দ্যি কাটথ্রোট? নামখানা তো জব্বর!"
- "যা বলেছিস! এবার চতুর্থ মিলটা শোন। দ্যি কাটথ্রোট খুন করেই কিন্তু পালিয়ে যায়না। যন্ত্রণায় ছটফট করতে-করতে এক সময় ওর শিকারের দেহ শিথিল হয়ে যায়। আর তারপর শুরু হয় আসল খেলা। আততায়ী এবার অত্যন্ত দক্ষ হাতে নিজের ছুরি দিয়ে গোটা শবদেহটা ব্যবচ্ছেদ করে। কোনও এলোপাথাড়ি কাটাকুটি নয়। একদম ঠাণ্ডা মাথায়, অ্যানাটমির সবরকম নিয়ম মেনে শবের পোস্টমর্টেম করে এই কাটথ্রোট।"
- "তা আর বলতে! ডেডবডি ডিসেকশন্ করায় এই কাটথ্রোটের দক্ষতার নমুনা তো আমি নিজের চোখেই দেখেছি। যাই হোক, এবার পঞ্চম মিলটা বলো শুনি।"
- "পঞ্চম মিল হল এটাই যে খুনী হত্যা করে এক বিশেষ প্যাটার্ন মেনে। সে পালা করে পুরুষ এবং নারীদের শিকার বানায়। এই যেমন প্রথম খুনটা করেছিল খিদিরপুরের দিকে এক বৃদ্ধ কে। দ্বিতীয় বার মার্ডার হয় চেতলার এক কলেজ পড়ুয়া তরুণী। ওর তৃতীয় শিকার বারাসাতের এক বাসিন্দা....পেশায় শিক্ষক। আর চতুর্থ খুনটা তো তুই স্বচক্ষে দেখে এলি, টালার ওই বিধবা মহিলা। সেই অনুসারে কাটথ্রোটের পরবর্তী শিকার হবে কোনও পুরুষ।"

খানিকক্ষণ আমরা দুজনেই গুম মেরে বসে থাকলাম। নীরবতা ভেঙে দাদা নিজেই বলল-
- "কিছু বুঝলি? সূত্রগুলো তো মিলেই যাচ্ছে।"
- "তা মিলে যাচ্ছে বটে। কিন্তু এর থেকে কী ক্লু পাওয়া যেতে পারে দাদা?"
- "সবচেয়ে প্রথম ক্লু, প্রতিটা কেসে খুনী একটা টাকাও নেয়নি। তার মানে হত্যাগুলো করা হয়েছে নিছকই নিজেকে আনন্দ দেওয়ার ছলে....জাস্ট ফর স্যটিস্ফাইং দ্যি স্যাডিস্টিক ইমপাল্সেস। সোজা ভাষায় যেটাকে আমরা ফান কিলিংয়ের আখ্যা দিয়ে থাকি।"
- "বলো কী দাদা! এ যে সাইকো কিলার কেস। গলা কেটে খুন, তারপর মৃতদেহ নিয়ে কাটাকুটি....বেশ একটা 'জ্যাক দ্য রিপার' টাইপের আমেজ পাচ্ছি কেসটায়।"
- "তা ঠিক। তবে এক বড় ধরণের অমিল আছে এই সমস্ত খুন আর জ্যাক দ্য রিপারের হত্যাগুলোর মধ্যে। যদিও জ্যাক মানুষ মারত গলা কেটেই, আর খুনের পর লাশের নাড়িভুঁড়িও বের করত। কিন্তু ওর কাজ করার কায়দা ছিল অনেক বেশি এলোপাথাড়ি। এই কেসে তুই লক্ষ্য করে দেখিস যে খুনী অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়, অনেকটা সময় নিয়ে শবের ব্যবচ্ছেদ করেছে। আর সবকিছুই করেছে একদম হিউম্যান অ্যানাটমির সিদ্ধান্ত মেনে। তাই আমার মনে হয়, কাজগুলো নিশ্চয়ই কোনও ডিরেঞ্জড্ সার্জনের। শল্য চিকিৎসার খুঁটিনাটি না জানলে এমন নিখুঁত কাজ করা অসম্ভব।"

- "কথাটা পুরো উড়িয়ে দিতে পারছি না দাদা," আমি একটু ভেবে বললাম, "কিন্তু তুমি যে ডিরেঞ্জড্ বলছ; লোকটা আদৌ পাগল কি? কোনও অঙ্গ পাচারকারী চক্রের ব্যাপার নেই তো?"
- "এ নিয়ে আমিও ভেবেছিলাম জয়। অবশ্য পরে পুলিশের ময়নাতদন্তে দেখা গেছে যে ভিক্টিমের শরীরে সমস্ত অঙ্গই আস্ত আছে।"
- "স্ট্রেঞ্জ! এ তো বড় ডেঞ্জারাস লোক।"
- "অবশ্যই। এরা হল সিরিয়াল কিলারদের জাত। খুব ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ মারতে পারে। অথচ বাইরে থেকে দেখতে তোর-আমার মতোই। দিব্যি ভালমানুষ সেজে সমাজে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।"

                              (দ্বিতীয় পর্ব)

মাঝখানে পুরো একটা দিন কেটে গেল। দাদার কোনও পাত্তা নেই। তাই বারো তারিখে রাতে আমি নিজেই কল করলাম। শুনলাম দাদা নাকি আজ টালা থানার ও.সি. সাহেবের সাথে কথা বলতে গেছিল। কাল সকাল ন'টায় আমাকে চেম্বারে আসতে বলল।

তেরো তারিখটা পুরো দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই পেরিয়ে গেল। প্রথমে লালবাজার....সেখান থেকে কাঁটাপুকুর মর্গ। লাশগুলোর পোস্টমর্টেম যে ডাক্তাররা করেছিলেন, তাঁদের সাথে কিছু জরুরি কথাবার্তা বলে বেরোতে-বেরোতে আমাদের প্রায় বিকেল চারটে গড়িয়ে গেল। শরীর আর চলছে না। আমার ক্লান্তিটা অনুমান করে দাদা নিজেই বলল-
- "শোন জয়, এবার নাহয় ফেরা যাক। চল, আজ তাহলে ট্যাক্সি না নিয়ে আমরা ট্রামে করে চেম্বারে ফিরি।"

জানলার ধারের সিটটা দখল করে দুজনে বেশ গুছিয়ে বসলাম। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপের পর শরীর আর মন কিছুই সাড়া দিচ্ছে না। বিকেলের স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া গায়ে মেখে আমি শরীর এলিয়ে দিলাম ট্রামের সিটে। দাদা ইতিমধ্যে নিজের ব্যাগ থেকে একটি অসমাপ্ত উপন্যাস বার করে পড়তে আরম্ভ করেছে। আমিও কানে ইয়ারফোন গুঁজে মোবাইলের স্ক্রিনে মন দিলাম।

কতক্ষণ ওইভাবে কেটেছে খেয়াল করিনি। হঠাৎ 'খট্' করে বেশ জোরে একটা আওয়াজ হতেই আমি ফোনের থেকে চোখ তুলে তাকালাম। ট্রামলাইনের পাশের রাস্তায় একটা কালো ইনোভা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনের সিট থেকে কেউ একজন দাদা কে লক্ষ্য করে একখানা দলা পাকানো কাগজের টুকরো ছুঁড়ে মেরেছে। কাগজটা জানলা দিয়ে এসে সোজা দাদার বুকে ধাক্কা খেয়ে ট্রামের মেঝেতে এসে পড়ল। দাদা বিদ্যুৎগতি'তে কাগজটা কুড়িয়ে নিজের বুকপকেটে পুরে ফেলল। ইনোভার ভিতরের লোকটাও সঙ্গে-সঙ্গে তুলে দিল গাড়ির কাঁচটা। তার মধ্যেই এক ঝলক যেটুকু দেখলাম....লোকটা ফর্সা, মুখে কালো দাড়ি, চোখে সানগ্লাস। চোখের পলকেই গাড়িটা হুস করে বেরিয়ে গেল। গাড়ির নম্বরটা দেখার চেষ্টা করলাম, কিন্তু নম্বর প্লেট একদম ফাঁকা।

আমি উত্তেজিত ভাবে দাদার দিকে তাকাতেই সে চোখের ইশারায় আমাকে চুপ থাকার ইঙ্গিত করল। তারপর একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে পকেট থেকে চিরকুটটা বার করে চোখের সামনে মেলে ধরল। সেখানে বড়-বড় হরফে লেখা:-

"আগেই জানিয়ে রাখলাম, পরের খুনটা হবে গড়িয়া'তে। যদি প্রাণে বাঁচতে চাস, এই কেসের থেকে দূরে থাক।"

- "কিছু বুঝলি?"
আমি নেতিবাচক ঘাড় নাড়লাম। দাদা কাগজটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল-
- "দ্যি কাটথ্রোটের মেসেজ। আমাকে এই কেস থেকে দূরে থাকার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু লোকটা খুব চতুর। হাতে না লিখে কম্পিউটারে প্রিন্ট করেছে, যাতে আমি হাতের লেখা যাচাই করে কোনও সূত্র না খুঁজে পাই।"
- "আমি কিন্তু একজন কে দেখতে পেয়েছি দাদা। মুখে দাড়ি...."
- "দাড়িটা নকল। নিজের আসল চেহারা লুকানোর এক অতি পুরাতন টেকনিক।"

মাথাটা প্রচণ্ড ভাবে ধরে উঠেছিল। তাই ট্রাম ডিপোতে নেমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে আগে এক পেয়ালা স্ট্রং কফি খেয়ে তারপর নাহয় চেম্বারে ফেরা যাবে। একটা ছোট ছিমছাম কফি শপের ভিতরে ঢুকলাম। বেশি ভীড় ছিল না। আমাদের ছাড়া আরও দুটো টেবিল অক্যুপাইড ছিল। আমরা নিরিবিলি এক কোণা দেখে বসে পড়লাম। দাদা বেয়ারাকে দু'কাপ কফি আর টোস্টের অর্ডার দিল।

- "কিছুই বোঝা যাচ্ছে না দাদা। কালকেই তো চোদ্দ তারিখ। কিন্তু এখনও আমরা শুধুই একটা গোলকধাঁধার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি। হাতে কোনও সলিড প্রমাণ পাচ্ছিনা। দাদা....ও দাদা!"
দাদা আমার কোনও কথায় কর্ণপাতই করছে না। মনে হল খুব মন দিয়ে আমার ঠিক পিছনের সিটে বসা কাউকে লক্ষ্য করছে। আমিও দাদার দৃষ্টি অনুসরণ করে ঘাড় ঘোরালাম। একজন রোগা মতো লম্বাটে গড়নের লোক। মাথায় ক্যাপ। এক হাতে কফির পেয়ালা, অন্য হাতে আড়াল করা সিগারেট। দেখে বুঝলাম যে ওই লোকটাও এতক্ষণ ধরে আমাদের উপরেই নজর রাখছিল।

আমি আবার নিজের কফিতে মনোনিবেশ করলাম। নিশ্চিন্ত মনে পেয়ালায় প্রথম চুমুকটা দিতে যাব, ঠিক তখনই দাদা হঠাৎ আমার হাতদুটো ধরে সজোরে হ্যাঁচকা টান মেরে আমাকে মাটিতে ফেলে দিল। আমার মাথার ঠিক উপরে 'দ্রুম' করে এক কান ফাটানো শব্দ....তার সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল বারুদের বিকট গন্ধ।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাদা চেয়ার ছেড়ে উঠে ওই লোকটার পিছনে ধাওয়া করল। লোকটাও চোখের পলকে বাইরের দিকে ছুট লাগিয়েছে। আমি বোকার মতো কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইলাম। ততক্ষণে কফি শপের ভিতরে ভয়ার্ত কাস্টমার আর বেয়ারাগুলো মিলে চেঁচামেচি জুড়ে দিয়েছে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দাদা ফিরে এল। প্রচণ্ড ভাবে হাঁপাচ্ছে; চিবুক বেয়ে দরদর করে নেমে আসছে ঘর্মাক্ত ধারা।
- "একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল স্কাউন্ড্রেলটা। তুই ঠিক আছিস তো জয়?"
- "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। কিন্তু লোকটা কে?"
- "নিশ্চয়ই দ্যি কাটথ্রোটের শাগরেদ। ওই হুমকির কথাটা মনে আছে? আমাকে এই কেস থেকে সরানোর জন্যই এই প্ল্যান। কাটথ্রোট নিজের পথের কাঁটা কে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। খুব অল্পের জন্য তুই বেঁচে গেলি জয়। আমি না থাকলে কী যে হতো, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।"
- "আর লোকটা....?"
- "ওই কালো ইনোভা গাড়িটায় উঠে চম্পট দিয়েছে। আর এখানে থাকাটা ঠিক হবে না। চল, উঠে পড়। কাল চোদ্দ তারিখ। কালই তো আসল খেলা!"

- "দাদা....একটা কথা বলব? তুমি নিজেকে এই কেস থেকে সরিয়ে নাও। তোমার খুব লাইফ রিস্ক আছে। এই কাটথ্রোট কিন্তু ভীষণ সাঙ্ঘাতিক লোক। মনে রেখো, যে মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় এতগুলো মার্ডার করতে পারে, তোমাকে মারতেও তার হাত কাঁপবে না।"
- "তাই নাকি?" দাদা একখানা বিদ্রূপ-মাখা হাসি হাসল, "গোয়েন্দাদের নিজের ক্যারিয়ারে এইরকম অসংখ্য বিপজ্জনক কেসের সম্মুখীন হতে হয়। ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসাটা কোনও সলিউশ্যান নয়।"
- "বেঁচে থাকলে এমন অনেক কেস সল্ভ করতে পারবে দাদা। নিজেকে বাঁচিয়ে চলাটাই সবচেয়ে জরুরি।"
- "সরি জয়। তোর এই অনুরোধ আমি রাখতে পারলাম না। যখন একবার এই কেসের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন এর শেষ না দেখে আমি ছাড়ছি না।"

আজ ১৪'ই নভেম্বর। সকাল-সকাল চেম্বারে চলে এলাম। দাদা আগে থেকে তৈরি হয়েই ছিল, আমি আসতেই সে গাড়ি বের করল।
- "এখন আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় দাদা?"
- "গড়িয়া। আজ আমাদের খুব চোখ-কান খোলা রাখতে হবে জয়। যে কোনও মুহূর্তে আমাদের উপর হামলা হতে পারে।"
- "কিন্তু আমরা যে এত বড় ঝক্কি নিতে চলেছি, আত্মরক্ষার জন্য তো আমাদের কাছে কিছুই নেই।"
- "কে বলেছে নেই?"
দাদা নিজের পকেট থেকে জিনিসটা বার করল। ছোট সাইজের কালো রিভলভারটা সকালের নরম রোদ্দুরে ঝকঝক করে উঠল। আমি আগ্নেয়াস্ত্র'টার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি দেখে দাদা হেসে উঠল।
- "আমাদের এইসব রাখতেই হয় রে ভাই। যখন-তখন প্রাণের ঝুঁকি হতে পারে।"

গড়িয়ায় পৌঁছতে আমাদের প্রায় সকাল সাড়ে ন'টা বেজে গেল। আজ আবার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির ভারতব্যাপী ধর্মঘট। সেই কারণে দোকানপাট প্রায় সবই বন্ধ। রাস্তাঘাট একদম নির্জন; শুধুমাত্র একটি চায়ের দোকানই খোলা পেলাম।
- "চল জয়। আগে এইখানে একটু চা-জলখাবার সেরে নেওয়া যাক। আজ সারাদিন অনেক ধকল আছে।"

সবেমাত্র চায়ের ভাঁড়ে একটা চুমুক দিয়েছি....হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি ঠিক আমাদের পাশ দিয়ে সাঁই করে বেরিয়ে গেল।
- "দাদা! ওই কালো ইনোভা'টা। দেখো নম্বর প্লেট ফাঁকা।"
দাদা সঙ্গে-সঙ্গে চায়ের কাপ ফেলে গাড়িটার পিছনে দৌড়ল। আমিও দাদার পিছনে ছুটলাম। সামনের মোড় ঘুরে গাড়িটা স্পীড বাড়িয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে। দাদা এক ঝটকায় পকেট থেকে রিভলভারটা বার করে গাড়ির টায়ার লক্ষ্য করে তিন-তিনটে ফায়ার করল। ফটাস্ করে কানে তালা লাগানো একটা আওয়াজ....পরমুহূর্তেই গাড়িটা একদিকে কাত হয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ল। সঙ্গে-সঙ্গে গাড়ির ভিতর থেকে চারজন লোক নেমে ফায়ার করতে-করতে দৌড়ে পালাল। দাদা আমার হাতটা খামচে ধরে টেনে নিল একটা দেওয়ালের পিছনে। ওই চারজনের মধ্যে দুজন কে চিনতে পারলাম। একজন ওই নকল দাড়িওয়ালা লোক, আরেকজন সেই কফি হাউসের রোগা লম্বা ছেলেটা।

ওরা যেদিকে পালাল, সেদিকে বেশ পুরনো এক ভাঙাচোরা বাড়ি চোখে পড়ল। কিন্তু ভিতরে ঢুকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ওদের কোনও হদিশ পেলাম না।
- "শয়তানগুলো ভেগেছে। তবে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। কাছেপিঠেই কোথাও ঘাপটি মেরে বসে আছে হয়তো। যে কোনও সময়ে আমাদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে।"
- "দাদা, মাটিতে ওইটা কী? কাগজ?"

দাদা ঝুঁকে পড়ে চিরকুটটা তুলে নিল। কিছুক্ষণ নীরবে ভ্র কুঁচকে কিছু একটা পড়ল।
- "কী লেখা আছে দাদা?"
- "নিজেই দেখ...." দাদা চিরকুটটা আমার হাতে তুলে দিল। তাতে লেখা:-

14/5/24/20--13/21/18/4/5/18--1/20--1/7/1/18/23/1/12--3/15/13/16/12/5/24

- "এগুলো আবার কী? তারিখ না ফোন নম্বর, নাকি পাগলের প্রলাপ?"
- "কোনওটাই না। এইটা একটা কোড ল্যাঙ্গুয়েজ।"
- "কীরকম?"
- "ওই আগের কোডের মতোই। A মানে এক, B মানে দুই....এমন ভাবে এক-একটা নম্বর আলাদা-আলাদা অ্যালফাবেটের প্রতিনিধিত্ব করে। এর মধ্যে প্রত্যেকটা অ্যালফাবেট কে আলাদা করার জন্য '/' সাইন ব্যবহার করা হয়েছে। আর '--' চিহ্নগুলো হল দুটো শব্দের মাঝখানের স্পেস। এইবার বল তো জয় এটাতে কী মেসেজ লেখা আছে?"

বেশ কিছুক্ষণ ভেবে তারপর উত্তর দিলাম....
"NEXT MURDER AT AGARWAL COMPLEX"

- "একদম ঠিক। এইবার চল, আগারওয়াল কম্প্লেক্সটা খুঁজে বার করতে হবে। কুইক!"

লোকজন কে জিজ্ঞেস করে আগরওয়াল কম্প্লেক্স খুঁজে বের করতে বেশি বেগ পেতে হল না। এক এঁদো গলির মধ্যে বেশ বড় এবং পুরনো একখানা বহুতল বাড়ি। ভিতরে বেশকিছু দোকানপাট আছে, অবশ্য আজকের ধর্মঘটের জন্য সে সবই বন্ধ। খুঁজতে-খুঁজতে আমরা একটা খালি হলঘরে এসে পড়লাম।
- "খুব অ্যালার্ট থাকবি জয়। আমার কাছেই থাক। একা এদিক-ওদিক যাসনা।"
- "দাদা, আমার খুব ভয় করছে। মন বলছে যে কিছু একটা অঘটন ঘটতে চলেছে।"
- "ঘাবড়াস না। আচ্ছা এক কাজ কর। আমার রিভলভারটা তুই রাখ। দরকার পড়লে নিজেকে ডিফেন্ড করতে পারবি।"
দাদা নিজের কার্ট্রিজ-লোডেড রিভলভারটা আমার হাতে তুলে দিল।

হলঘরটা পুরোই নিরেট অন্ধকার। পাইপ লিক করে ছাদ থেকে টপটপ করে জল চুঁইয়ে পড়ছে। নোনাধরা দেওয়ালগুলো'তে শ্যাঁওলার মোটা চাদর।
- "কিছুই বুঝতে পারছি না জয়। জায়গাটা তো একেবারে জনশূন্য। দ্যি কাটথ্রোট কি তার মানে আমাদের বোকা বানাল? ভুয়ো ঠিকানা দেখিয়ে শহরের অন্য কোথাও হত্যালীলা চালানোর প্ল্যান করেছে?"
- "না দাদা। দ্যি কাটথ্রোট বেইমান না। সে কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে।"
- "মানে? এইসব কী বলছিস জয়?"
- "এখনই বুঝতে পারবে।"

আমি দু'হাত তুলে তালি দিতেই অন্ধকার হলঘরের চারটে কোণা ফুঁড়ে চারজন গুণ্ডা বেরিয়ে এল। সেই চারজন যাদের আজ এইমাত্র ওই কালো ইনোভার থেকে বেরোতে দেখেছিলাম।
- "মাইকেল! এর হাত-পা ভাল ভাবে বেঁধে ফেল।"
আমার আদেশ পেয়ে কালো দাড়িওয়ালা লোকটা এগিয়ে এসে চেপে ধরল দাদার হাতটা। আরেকজন গিয়ে কোত্থেকে একটা মোটা দড়ি নিয়ে এসে নিমেষের মধ্যেই দাদার হাত-পা বেঁধে ফেলল।

- "ছাড়ো....ছাড়ো আমাকে!" দাদা ধস্তাধস্তি করে নিজের হাতটা ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে, "এসব কী হচ্ছে জয়? আমার রিভলভারটা দে....জয়!!"

আমি নিঃশব্দে পকেট থেকে ঝকঝকে সার্জিক্যাল স্ক্যাল্পেলটা বার করে বললাম-
- "জয় না। শুধু বলো....দ্যি কাটথ্রোট।"

**** সমাপ্ত ****


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime