Mintu Upadhayay

Crime

5.0  

Mintu Upadhayay

Crime

নিষিদ্ধ অনুভুতি

নিষিদ্ধ অনুভুতি

4 mins
664


নিষিদ্ধ অনুভুতি

- মিন্টু উপাধ্যায়


পকেট একদম গড়েরমাঠ । দশটাকা ছিল এখন সেটাও নাই । সেই কোন সকালে ঘুগনি মুড়ি খেয়েছি দশটাকাটা দিয়ে । এখন বেলা গড়িয়ে এলো বলে, অথচ পেটে কিছু পরল না ।

চিন্তা করছিলাম, গভীর চিন্তা । কি করা যায় ।

অসহ্য, এই চিন্তাটাও কিছুতেই পিছু ছারতে চায় না ।

শেষে ঠিক করলাম যে প্রতিদিন যা করি, আজও তাই করতে হবে ।

সারাটা দিনে আমারতো শুধু একটাই কাজ... "পকেট মারা" আর "পুড়িয়া" নেওয়া ।

"পুড়িয়া" ! হ্যাঁ, আমি এই নামেই ডেকে থাকি আমার একমাত্র ভালবাসাকে... সেটা হল "চরস" ।

"চরস" - এর তীব্র নেশায় আমি সারাটা দিন বুঁদ হয়ে থাকতে চাই । জীবনে ভেঙে যাওয়া রঙিন স্বপ্ন গুলোকে কিছুক্ষণের জন্য আবারও ফিরে পেতে চাই । কখনও কখনও "চরস" না পেলে "হাশিশ" দিয়েও কাজ চালাতে হয় ।

হটাৎ ডান হাতের শিরাটা কেমন টেনে ধরল । তার সাথে মাথাটাও ঝিনঝিন করে উঠলো । নিজেকে সামলাতে না পেরে টলমল পায়ে রাস্তার একধারে বসে পরলাম । পুরাতন পেটের বেথাটা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । দুপুরের ডোজটা নেওয়া হয়নি বলেই এমনটা হচ্ছে । তাই আর সময় নষ্ট না করে রাস্তার ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম । টলমল পায়ে ভিড়ের মধ্যে এক জনকে ইচ্ছে করেই ধাক্কা মারলাম । তাকে সরি বলারও প্রয়োজন বোধও করলাম না । এরই মধ্যে তার মানিব্যাগটা যে হাতছাড়া হয়ে গেলো সে বুঝতেও পারলো না । মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পরছিল । হাত দিয়ে পুঁছে টলতে টলতে আমি স্টেশন রোডের দিকে এগিয়ে গেলাম । ওখানেই রাস্তার ধারে "পুড়িয়া" পাওয়া যায় । মানিব্যাগে যা টাকা ছিল তাতে একবারের মতোই "পুড়িয়া" পাওয়া যাবে ।

"চরস এর পুড়িয়াটা" নিয়ে আমি একটা গলির দিকে এগিয়ে গেলাম, গলিটা বড্ড ঘিঞ্জি । দিনের বেলাতেও সূর্যের আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না । গলির দুদিকেই ছোট ছোট এক কামড়ার ঘর আছে । প্রতিটা ঘরেই শরীরী ব্যবসা হয় । কিছুটা এগিয়ে একটা নালার ধারেই বসে পরলাম । আশেপাশে দু-একজনকে চোখ বন্ধ করে সুখের টান মারতে দেখলাম । "চরসিরা" এখানে এসেই সুখের টান মারে । এখানে বলারও কেউ নাই, আর শোনারও কেউ নাই । মনে হয় যেন পৃথিবী থেকে ছিটকে যাওয়া সম্পূর্ণ অন্য একটি উপগ্রহ । নিয়মমতো "চরসটা" পাকিয়ে আমিও গভীর সুখেতে টান দিতে শুরু করলাম । কিছুক্ষণেই পৃথিবী যেন দুলে উঠলো, আমি তলিয়ে গেলাম অতল গভীরে ।

কতক্ষণ শুয়েছিলাম কে যানে । চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে আছে । দূরে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোয় পথ ঠিকমতো চোখেই দেখা যায় না । উঠে দাঁড়াতে গেলাম, পা দুটো টলে উঠলো । সঙ্গে সঙ্গে পাশের দেওয়ালটা ধরে নিলাম । চোখের সামনে থেকে এখনও ধোঁয়াশা ভাবটা কাটেনি । তবে মাথার ঝিনঝিন ভাবটা ইতিমধ্যেই কমে এসেছে । আধো আলো আধো অন্ধকারেই আমি দেওয়াল ধরে ধরেই এগিয়ে চললাম । শরীরের জড়তা ভাবটা কিছুক্ষণেই কেটে যাবে আমি জানি । প্রতিদিনই তো আমার সাথে এমনটাই হয় ।

গলির মুখে এসে দাঁড়ালাম, পকেট থেকে বিড়ির বাঁচিয়ে রাখা অংশটুকু বার করে ধরালাম । কুণ্ডলী পাকানো একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে চারপাশটা দেখলাম ।

গলি থেকে বেরিয়ে আসতেই ফুরফুরে হাওয়া গায়ে লাগলো । জনমানবশূন্য রাস্তা । এমনিতেও এদিকটা একটু রাত্রি হলেই ফাঁকা হয়ে যায় । সময়টা অনুমান করার চেষ্টা করলাম, বোধয় বেশি সময় হয়নি । আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা তারাকেও খুঁজে পেলাম না, পুরো আকাশটা মেঘে ছেয়ে গেছে । শরীরটাও আগের থেকে অনেকটা চনমনে হয়ে উঠেছিলো । ফুরফুরে হাওয়ায় পথ চলতে বেশ ভালই লাগছিলো । এখান থেকে মিনিট পাঁচেক স্টেশন রোড । আমি ওইদিকেই এগোলাম ।

পথ চলতে চলতে একটা মেয়েকে সামনের দিক থেকে আসতে দেখলাম, শাড়ি পরা, দোহরা চেহারা মেয়েটির । রাস্তার মৃদু আলোয় ওর মুখটা দেখার চেষ্টা করলাম । দূর থেকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া গেলনা মুখটা । মেয়েটি কাছে এগিয়ে আসতে দেখলাম , বেশ ভালই দেখতে মেয়েটাকে । বয়স আন্দাজ কুড়ি থেকে পঁচিশ হবে । পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটির শরীর থেকে একটা মাদকতাপূর্ণ মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগলো । মেয়েলি গন্ধটা নাকে এসে লাগতেই আমার শরীরে কামনার আগুনটা দপ করে জ্বলে উঠলো ।

আমি মেয়েটার পিছু নিলাম, কিছুটা তফাৎ রেখেই হাঁটতে লাগলাম । ও কোন দিকে খেয়াল না করেই পথ চলছিলো । আমি যে ওকে ফলো করছি সে বুঝতেই পারলো না । মেয়েটি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে হাঁটছিল । ওকে কিভাবে কাবু করা যায় সেটাই ভাবছিলাম । এমন সময় রাস্তার ধারে একটা আধলা ইট আমার নজরে পরল । আমি ডান হাতে ইট'টা হাতে তুলে নিয়ে মেয়েটার মাথাটাকে লক্ষ করে সজোরে ছুঁড়ে মারলাম । মেয়েটি টু শব্দটি করে ওঠার আগেই ধপ করে মাটিতে লুটিয়ে পরল ।

আমি একবার চারপাশটা ভাল করে দেখে নিলাম । না, আশেপাশে তেমন কাউকে দেখতে পেলাম না । রাস্তার ধারে দুই বিল্ডিং এর মাঝে অনেকটা পরিত্যক্ত ফাঁকা জায়গা পরে আছে । গভীর অন্ধকারে ছেয়ে আছে জায়গাটা । আমি মেয়েটাকে টেনে হিঁচড়ে ওই ফাঁকা জায়গাটায় নিয়ে গেলাম । মেয়েটা যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছে, ছটফট করছে কিন্তু আমি সেদিকে ধ্যান না দিয়ে নিজের জামাটা খুলে পাশবিক শক্তিতে তাকে বুকে চেপে ধরলাম । তার শরীরে লেপটে থাকা সমস্ত পোশাক আমি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিতে লাগলাম । অনেকদিন পর নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা বন্য পশুটা আবারও জেগে উঠেছে । নিশুতি রাতে মেয়েটির গোঙানোর শব্দ বিদীর্ণ করে দিতে লাগলো আকাশ বাতাসকে ।


= = = = সমাপ্ত = = =


সতর্ক বার্তা : মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকুন ।

গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক । কোন জীবিত বা মৃত বাক্তির সাথে এর সম্পর্ক নাই ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime