SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy Crime

5  

SHUBHAMOY MONDAL

Tragedy Crime

প্রথম রিপু - শেষ পর্ব

প্রথম রিপু - শেষ পর্ব

5 mins
516


প্রথম রিপু - শেষ পর্ব

শুভময় মণ্ডল


আজকাল ট্রেনে গেটের পাশে অসংখ্য হ্যাণ্ডবিল চিপকানো থাকে - সুন্দর/সুন্দরী বন্ধু বা বান্ধবী পান, বন্ধুত্ব করুন, সাথে ভালো রোজগারও। ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, কিন্তু বড্ড দৃষ্টিকটূ। এখন তো খবরের কাগজেও এসবের বিজ্ঞাপন দেয় দেখি। 


পুরুষ যৌনকর্মীদের প্লেসমেন্ট দেবার, এমন উদ্যোগ আগে দেখা যায়নি খুব একটা। অথচ মাঝে সাজেই এখন, খবরের কাগজে কলকাতার 'জিগোলো'দের নিয়ে লেখালিখি হয় দেখি। কিন্তু এই বিষয়টা মহিলা যৌনকর্মীদের থেকে, অনেক বেশী গোপনেই থেকে গেছে আজও।


যাক গে, মোদ্দা কথাটা হলো, যে কারণে এত সব বলা, এর সাথে জড়িয়ে আছে কত যে ক্রাইম, সেটাও গোপনেই থেকে যায়। শুধু কলকাতা নয়, এ রাজ্যের অন্যান্য শহরেও, এই 'জিগোলো'রা আছে এবং কাজও করছে। সেই সঙ্গে এই জীবিকার অজুহাতে নানা ধোঁকা, ব্ল্যাকমেলের ঘটনাও ঘটছে। আমাদের এই কাহিনীর সূত্রপাত জড়িয়ে আছে - এই জীবিকাকে ঘিরেই।


বিনোদের কলেজে গিয়ে জানতে পারি - সে মেয়েদের মধ্যে প্রচণ্ড জনপ্রিয়। অন্তত গোটা দশেক গার্লফ্রেণ্ড তার ঐ কলেজেই আছে। তারা নিজেরাও পরস্পরের ব্যাপারে ভালোমতই জানে। এটাও জানে যে, তাদের প্রত্যেকেরই প্রেমিক একজনই। এই তালিকায় ওদের কলেজের একজন পার্ট টাইম লেকচারারও আছেন!


ওর মোবাইল রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে, 'অফিস' বলে সেভ করা নম্বরটা পরীক্ষা করে জানলাম - ওর পার্ট টাইম জবটা আর কিছু না, জিগোলো হিসাবে কাজ করা। এখন, ঘটনা হলো - ঐ 'অফিসে' ওর ঠিকানা দেওয়া ছিলো বিহারের। তাই, কলকাতার যেকোনো জায়গাতেই, সার্ভিস দিতে ডাক পেতো সে।


অন্যদিকে, আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের মোবাইলেও, ঐ একই নম্বর সেভ করা আছে, 'গেস্ট' নামে। খুব সম্ভবত তিনিও কর্মব্যস্ত স্বামীর থেকে যৌন সুখে বঞ্চিত থাকায়, আর হাতে পয়সারও অভাব না থাকায়, জিগোলোদের থেকে নিয়মিত সার্ভিস নিতেন তাঁদের ঐ গেস্ট হাউসে। 


এইভাবেই বোধ হয়, একদিন তাঁর সার্ভিসের জন্য ডাক পড়ে বিনোদের। বন্ধুর মায়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর পর, সে বোধ হয় আর অন্য কারোর সার্ভিসে যায়নি। আকাঙ্ক্ষা গোয়েলও বোধ হয় বিনোদের সার্ভিসে খুশী হয়ে, একই ভাবে আর কোনো নতুন সঙ্গীর খোঁজ করেননি। বিনোদও তার মজুরী বেশ ভালোই পেতো তাঁর থেকে মনে হয় - তার ঘরের জিনিস পত্র, পোশাক আশাক দেখে যা বোঝা যায়।


ওদের দুজনেরই কল ডাটা চেক করে দেখেছি আমি। গত চার পাঁচ মাসে ঐ অফিস/গেস্ট নম্বরে দুজনের কোনো কল নেই, যদিও তার আগে নিয়মিত রোজ কল ছিল তাদের। আর তারপর থেকে নিয়মিত কল আছে শুধু এদের দুজনের মধ্যে। বিনোদের সাথে ভালোই সুখে সময় কাটছিলো আকাঙ্ক্ষার। বাদ সাধলো - ঘটনার দিন, কোনো কারণে রাহুল ওখানে হাজির হওয়ায়।


নিজের মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে, বিছানায় সঙ্গমরত তার বন্ধুকে দেখে ফেলে সে। রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেও, তখনই কিছু করে বসেনি সে। ওদিকে ছেলের এসে পড়াটা কোনোভাবে টের পেয়ে, ব্যাকডোর দিয়ে, এমারজেন্সী এক্সিট ধরে বিনোদকে বোধ হয়, তখনই বাইরে পাঠিয়ে দেন আকাঙ্ক্ষা।


রাহুল এরপর ফ্ল্যাটে ঢুকলেও, বিনোদকে হাতে নাতে ধরতে পারেনি। মায়ের সাথে প্রচণ্ড ঝগড়াঝাটি, কথা কাটাকাটি হয় তার। এরপর দুজনেই ওখান থেকে চলে যায়। এর প্রমাণ, ওদের সিকিউরিটি গার্ড দেখেছিলো - বিনোদকে এমারজেন্সী সিঁড়ি বেয়ে নামতে, আর কথা কাটাকাটি করতে করতে, মা বেটাকে নেমে এসে, গাড়ি আর বাইক নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যেতে।


সেদিন সন্ধ্যায় রাহুল আবার ফিরে যায় ফ্ল্যাটে। বিনোদ তখন ঘরেই ছিলো। তাকে নিশ্চয়ই চার্জ করেছিলো সে, তাদের ঐ রীলেশন নিয়ে। বিনোদ তখন তাকে বেশ কিছু মেসেজ ফরোয়ার্ড করে, প্রমাণ করতে চেয়েছিলো বোধ হয় - জেনে শুনে এই সম্পর্কে জড়ায় নি সে। 


নিজের জিগোলো হিসাবে কাজ করার কথা সে স্বীকার করে নিয়ে, সেই সঙ্গে তার মায়ের জিগোলোদের থেকে রেগুলার সার্ভিস নেওয়ার কথাও জানায় তাকে। প্রমাণ হিসাবেই হয়তো, তাকে পাঠানো আকাঙ্ক্ষার ঐ সব মেসেজগুলো, তাকে ফরোয়ার্ড করে দেয় সে।


সেই রাতে সেখান থেকে বেরিয়ে, রাহুল - প্রচণ্ড রাগে আর মায়ের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে, তাঁকে খুন করার প্ল্যান করে ফেলে - অনার কিলিং আর কি! পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে, প্রথমে নরেনকে অচেতন করে দেয় সে। তারপরই বোধহয় আকাঙ্ক্ষার মুখোমুখি হয়। আবারও তাদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা কাটাকাটি বাকবিতণ্ডা হয়। 


বোধ করি, হাতাহাতির পর্যায়ে বিষয়টা পৌঁছে ছিলো। আর তখনই ইচ্ছা করেই ছেলের ধাক্কায় হোক বা নিজে টাল সামলাতে না পেরেই হোক, আকাঙ্ক্ষা তিনতলার নিজের বেডরুমের ব্যালকনি থেকে পিছনের বাগানে ছিটকে এসে পড়েন। ওখান থেকে পড়ার সময়, ব্যালকনির গ্রীলের খোঁচায় লেগে তাঁর শাড়ির আঁচলের কিছুটা ছিঁড়ে গিয়েছিলো - ঐ শাড়ির এই সুতোগুলো ওখানে লেগে ছিলো। - বলে পকেট থেকে বেশ কয়েকটা সুতো বের করে রাখলো সে।


রাহুল বোধ হয় তখন বুঝতে পারে - আকাঙ্ক্ষার বডি ওখানে পড়ে থাকলে, নিজেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না তার। তাই গাড়িতে তার বডিটা তুলে নিয়ে গিয়ে, ফেলে দিয়ে আসে বাইপাশের ধারে। সেটাকে রেপ এণ্ড মার্ডার কিংবা সিম্পল রোড অ্যক্সিডেন্ট দেখানোর জন্য, সে নিজের বুদ্ধিমত চেষ্টারও ত্রুটি রাখে নি। 


শাড়িটা খুলে গাছে আটকে দেওয়া, পেটিকোট ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি সবই করেছিলো। কিন্তু সঙ্গমের সময় কনডম ব্যবহার করায়, পরে তিনি স্নানে ডীপ শাওয়ার নেওয়ায়, আর তার এত ঘন্টা পর মৃত্যুর ফলে - পোস্ট মর্টেমে ইন্টারকোর্সের রীপোর্ট নেগেটিভ এসেছিলো।


যাই হোক, এরপরেও তার ক্ষোভ বোধ হয় প্রশমিত হয়নি। সে কোনমতেই মেনে নিতে পারছিলো না যে, তার বেস্ট ফ্রেণ্ড হওয়া সত্ত্বেও, বিনোদ তার মায়ের সঙ্গে কিভাবে এটা করতে পারলো! তাই এরপর তাকেও শেষ করে দেবার কথা - বোধ হয় মাথায় আসে তার।


সেইমতো, ওখান থেকেই আবার ফ্ল্যাটে আসে সে - বোধ হয় ভোর তিনটে নাগাদ। সিকিউরিটির নজর এড়িয়ে, বাইরে থেকে বিনোদকে ডেকে নেয় নিচে। তারপর চুপি চুপি দুজনে ওখান থেকে বেরিয়ে, রেল লাইনের ধারে আসে। সেখানেই কথা বলতে বলতে সে, সুযোগ মত ফার্স্ট ট্রেনটা, মানে শিয়ালদহ কৃষ্ণনগর লোকালের সামনে, ঠেলে দেয় বিনোদকে। 


বিনোদ বোধ হয় এটা আশা করতে পারেনি। তাই একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলো সে নিজেকে বাঁচাবার - রাহুলের জামার পকেটটা ধরে, টাল সামলানোর। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো। 


বিনোদের হাতের মুঠোয় থাকা, ঐ জামার পকেটের ছবি দেখিয়ে, সিকিউরিটি গার্ডের থেকে নিশ্চিত করেছি - সেদিন ঐ বিশেষ লোগো লাগানো পকেটটা, রাহুলের পড়নের জামাতেই ছিলো। সিকিউরিটির গার্ড লোকটার বয়ানগুলো এই কেসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


আর একটা প্রমাণ - বর্ণার দেওয়া রাহুলের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন, আমার এই কাহিনীর প্রত্যেকটা স্টেপকে অনুসরণ করে, তার সত্যতাকে প্রমাণ করবে। 'গেস্ট হাউস' ঐ ফ্ল্যাটের বাথরুমের ফিক্সড্ মিররটাকে খোলার, এই ছোট্ট চাবিটা দিয়েই আমি, এই রহস্যের তালা প্রথম খুলতে শুরু করেছিলাম। - বলে সেই চাবিটা বের করে রাখে সে।


ওখানে এখনও কম করে লাখ দশেক টাকা তো রাখা আছেই। আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের মোবাইলটাও ওখানেই পেয়েছিলাম - এই নিন, রাখুন। এখন আবার একবার, মৌসুমিকে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলতে হবে, আমি চললাম। আপনি এবার, নিজের মত করে কেস ক্লোজ করুন। আর রাহুলের বয়ান কি হবে … সে তো আপনি জেনেই গেছেন, লিখিয়ে নিন।


হীরু থানা থেকে বেরিয়ে, মোটর বাইক নিয়ে মৌসুমির বাড়ির দিকে দৌড়ালো। কৃষ্ণদা ঢুকলেন ইন্টারোগেশন রুমে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy