এ কেমন প্রতিহিংসা - ২
এ কেমন প্রতিহিংসা - ২
এ কেমন প্রতিহিংসা - ২
শুভময় মণ্ডল
যাই হোক, আমার বন্ধুটিকে দেখলাম প্রসাব করে থেকে, কেমন যেন সিরিয়াস মুখে দাঁড়িয়ে। আমি বললাম – এখানকার জায়গাটা ভালো লাগছে না রে, চল আমরা স্টেজের কাছে যাই।
দুজনে স্টেজের কাছে এলাম। দেখি, সেই জুনিয়র ভাইটা হাতে একটা পিস্তল নিয়ে, অস্বাভাবিক ভঙ্গীতে ভয়ংকর চিৎকার করছে স্টেজের ওপরে! বাচ্চাগুলো সব ভয় পেয়ে স্টেজ থেকে নেমে পালিয়ে গেছে। সে যে কি ভাষায়, কাকে উদ্দেশ্য করে, কি বলে যাচ্ছিলো, কেউই তার কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।
অকস্মাৎ, সেই পিস্তলটা নিজের কানে ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে দিলো সে। তাকে হঠাৎ এইভাবে সবার সামনে আত্মহত্যা করতে দেখে, চমকে গেলাম সবাই! কোথায় চলছিল কিনা সরস্বতী বন্দনা, আর হঠাৎ করে সেই স্টেজে ঘটে গেলো একটা মৃত্যু! কিন্তু কেন?
ওদিকে, আমার ঐ বন্ধুও দেখি খুব মর্মাহত হয়েছে ঘটনাটা দেখে। সে ঐ ভাইয়ের হাত থেকে ছিটকে পড়া পিস্তলটা তুলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলে চলেছে – কি করে একটা ছেলে এভাবে নিজেকে গুলি করতে পারে? কি করে?
ওর স্ত্রী ওকে বোঝাতে গেলে, তাকে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে সে বললো – এভাবে কি করে নিজের কানপট্টিতে নিজেই গুলি করতে পারে কেউ? বলো, এভাবে? বলতে বলতে নিজের কানে ঐ পিস্তলটা ঠেকিয়ে, সেও ট্রীগারটা দাবাতেই যাচ্ছিলো!
আমি চকিতে তার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে, পিস্তলের নলটা উপর দিকে করে দিলাম, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গুলি ছুটলো। সৌভাগ্যক্রমে তার মাথায় না লেগে গুলিটা উপর দিকে চলে গিয়ে একটা গাছের ডালে লাগলো, আর সেই গুলির আওয়াজে বোধ হয় হুঁশ ফিরলো তারও।
হতভম্ব হয়ে বেশ কিছুক্ষণ হাঁ করে সে নিজের হাতের পিস্তলটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর পুরোপুরি সম্বিত ফিরে পেতেই চমকে উঠলো আর ঘটনার বাস্তবিকতা উপলব্ধি করে, হাত থেকে তখনই ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে পিস্তলটা!
এমন সময়, খুব কাছে
ই কেউ একটা গগনবিদারী অট্টহাসি হেসে উঠলো যেন, সবার বুক কাঁপিয়ে দিয়ে। চারিদিকে তাকিয়েও কিন্তু কেউই কাউকে দেখতে পেলাম না।
যবনিকাপাত
পরে, টোভার সাহেবের ইতিহাস ঘেঁটে ঘুঁটে, সেদিনের ঐ ঘটনার একটা সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পেয়েছিলাম। জানিনা, তার কতটা সত্য হবে।
টোভার সাহেব তাঁর অফিসে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও, সেদিন আরও কিছুক্ষণ জীবিত ছিলেন। বাকি সমস্ত কর্মচারীরা দৌড়ে পালালেও, সেখানে তাঁকে গুলি করা সেই চারজনের, দু’জন ভিতরেই রয়ে গিয়েছিলো।
বাকি দু’জন যখন, বাইরের পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছিলো, ভিতরের দু'জন তখন, তাদের সেই প্রিয় সহকর্মীর গুলিবিদ্ধ শরীরে, প্রাণের লেশমাত্র অবশিষ্ট আছে কিনা, তাই পরীক্ষা করে দেখছিলো।
এমন সময়, টোভার সাহেব ক্ষীণ কন্ঠে হাত তুলে জল চাইলেন। ওদিকে, প্রিয় সহকর্মীর মৃতদেহের পাশে বসে থাকা তাঁর সেই দুই কর্মচারী, তাঁর গলার আওয়াজ পেয়ে বুঝতে পারলো - তাদের এতগুলো গুলি খেয়েও সেই পাজি লালমুখো ইংরেজটা তখনও মরে নি! তারা তো রাগে যেন অন্ধ হয়ে গেলো।
মৃত্যুপথযাত্রী সাহেবের কপালে তাই, সেই অন্তিম সময়ে পানীয় জল নয়, অধস্তন কর্মচারীদের মূত্র জুটলো। আর প্রথা মেনে গোরেও দেওয়া হয়নি তাঁকে। তাঁর ঐ বাড়িতেই, ঐ প্রাচীরেরই পাশে, বিষ্ঠাখানার গর্তেই তাঁকে ফেলে দিয়েছিলো তারা।
তাই, তাঁর শবদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি পুলিশের শত তল্লাশীতেও। লোকে বলে, তারপর থেকে নাকি প্রায়ই তাঁর বাড়ি কাম অফিস, ঐ প্রাসাদের ভিতর থেকে গুলির শব্দ শোনা যেত!
পরে, প্রাসাদ ভেঙে পড়লেও সাহেবের অতৃপ্ত আত্মা হয়তো সেই জায়গা ছেড়ে যেতে পারেনি। এখন, অনুষ্ঠানের রাতে তাঁকে পুঁতে দেওয়া সেই জায়গাটাতেই পুনরায় কাউকে মূত্রত্যাগ করতে দেখে হয়তো, তাঁর পুরানো রাগ আবার জেগে উঠেছিল!