SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Thriller

2.6  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Thriller

অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

4 mins
253



ভূত বললেই দেখি, লোকে ভয়ানক খারাপ, ক্ষতিকর কিছু ভাবতে বসে যায়! কিন্তু আজ আমি আপনাদের বলবো খোদ কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে বসে অনুভব করা (কারণ তেনার দর্শন আমরা কেউ পাইনি) কয়েকটি (নাকি একটি?) ভূতুড়ে কর্মের কথা, যা মোটেই ভয়ানক বা খারাপ নয়, ক্ষতিকর তো নয়ই।


মধ্য কলকাতার একটি শ'দুয়েক বছর পুরানো বিখ্যাত অট্টালিকায় বর্তমানে অসংখ্য সরকারী, বেসরকারী অফিস, রেস্তোরাঁ, সেলুন ইত্যাদি চলছে। আমি সেখানেই একটি অপিসে কর্মরত। এই প্রাচীন প্রাসাদ যে ছিল কোন প্রভাবশালী ইঙ্গ সন্তানের তা বলাই বাহুল্য। তার ওপর সেখানে খুন বা হত্যার ঘটনাও যে আগে অনেক ঘটেছে সেও সবারই জানা। আমার এখানে লেখা ঘটনাগুলি প্রত্যেকটি আজও আমাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন দিন ঘটে চলেছে।


প্রচুর দলিল দস্তাবেজ ফটোকপি করছিলেন আমাদের সিনিয়র একজন স্টাফ - তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একরাতেই সমস্ত পাতা জেরক্স মেসিনে কপি করে ফেলতে। তো ঐ দাদা রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে এসে, কাগজপত্র সব পাশে টেবিলে গুছিয়ে রেখে, একটা একটা করে গোছ কাগজ নিচ্ছেন আর কপি করে পাশাপাশি টেবিলে রেখে দিচ্ছেন। 


অনেক গুলো বাণ্ডিল কাগজ কপি করা হয়ে গেলে, পরের ভাগটা কপি করার আগে ভাবলেন কপি করা কাগজ গুলো স্টেপল করে গুছিয়ে নেবেন। কিন্তু দেখলেন স্টেপলার তো আনাই হয়নি তাঁর, তাই স্টেপলার আনতে গেলেন তিনি পাশের ঘরে, অফিসারের টেবিল থেকে। ফিরে এসে দেখেন সমস্ত কাগজ স্টেপল করে গুছিয়ে বাণ্ডিল করে রাখা রয়েছে টেবিলে! তিনি বেশ অবাক হলেন দেখে কিন্তু সেখানে আসেপাসে অত রাতে যে কেউ নেই আর সে তিনি তাকিয়ে দেখেই বুঝলেন, তাহলে কাজটা কে করল? 


যাক গে, তিনি তখন বাকি কাগজ কপি করতে শুরু করলেন, কিন্তু এবার ঘটতে লাগলো মজার ঘটনা - কপি করে যেই উনি কাগজগুলো টেবিলে রাখেন, অটোমেটিক স্টেপল হয়ে কপি আর মূল কাগজ আলাদা ভাবে গুছিয়ে টেবিলের একপাশে চলে যায়! পরপর তিন গোছা কাগজ কপি হবার পর এমনি করে নিজে নিজেই স্টেপল হয়ে যাচ্ছে দেখে, ভয়ে তিনি আর কাজ না করে ওখান থেকে পালিয়ে এলেন। পরদিন খুব সকাল সকাল উঠে বাকি কাগজপত্র কপি করে কোনমতে অপিস শুরুর আগে নিজের কাজ শেষ করেন তিনি - তখন কিন্তু তাঁকে স্টেপল করতে কেউ আর সাহায্য করেনি!


বোঝা গেল যে ঐ ভূত মহোদয় জীবদ্দশায় বোধ হয় করণিক বা চাপরাশী গোত্রীয় কাজে পারদর্শী ছিলেন! তবে পরের ঘটনাটা আবার অন্য কথা বলে, চলুন শোনা যাক।


সময় প্রায় শেষ হতে চলেছে, এদিকে একগাদা নোটিস তৈরী করে পার্টীদের ধরাতে হবে বলে প্রায় খাওয়া দাওয়া বন্ধ আমার সাহেবের। তিনি তাই একদিন আমাকে বললেন, তাঁকে সাহায্য করার জন্য অফিস আওয়ারের পরও থেকে যেতে।


সেইমত, আমি নিজের চেয়ারে কাজ করছি, সেই দাদাও ছিলেন, তিনি খাবার আনতে গিয়েছিলেন তখন, আর সাহেব নিজের টেবিলে কাজ করছেন। হঠাৎ আমায় ইন্টারকমে রিং করে ডাকলেন, বললেন - দেখ তো পাশের ঘরে কম্পিউটারে কে কাজ করছে? (সাহেব আমায় ভাইয়ের মতই দেখেন বলে, আমি আপনি আজ্ঞে কর কথা বললেও উনি স্নেহ করে আমায় তুই বলেই ডাকেন।) আমি গিয়ে দেখলাম কেউ নেই, আর সেটা ওনাকে বলায় উনি আমায় নিজের কাজ করতে বলে আবার কাজে ডুবে গেলেন।


আমি নিজের চেয়ারে এসে বসে যেই জলের বোতলটা মুখে তুলেছি, সশব্দে ফোনটা বেজে উঠলো। জল খাওয়া ছেড়ে ফোন ওঠালাম, সাহেব ওনার ঘরে ডাকলেন, গেলাম। উনি শুধু ওনার টেবিলে রাখা কম্পিউটারের পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে একটা থাই ভাষায় লেখার ট্রান্স্লেশন করতে বললেন ইংরাজীতে। না, না আমি কোন থাই ভাষার এক্সপার্ট নই, গুগল ট্রান্স্লেটর ব্যবহার করে বিদেশী ভাষা সহজেই ট্রান্স্লেট করতে জানি বলেই উনি ডেকেছিলেন। যাই হোক, এবার হঠাৎ উনি আমায় ইশারা করলেন পাশের ঘর থেকে আসা কীবোর্ডে টাইপিংএর আওয়াজের দিকে। আশ্চর্য, পাশের ঘরে কেউ নেই আমি নিজে দেখে এসেছি, তাহলে কে ওঘরে টাইপ করছে? আবার গেলাম পাশের ঘরে - কেউ নেই! 


সাহেব বললেন - চল, বেড়িয়ে পড়ি। কাল বরং সকাল সকাল এসে কাজ শেষ করা যাবে। আমি বললাম - কম্পিউটারটা বন্ধ করে দিই? সাহেব বললেন - আর এক মুহুর্তও এখানে নয়, তুই চল তো। ও খাবার নিয়ে এসে পড়ার আগেই বেরিয়ে যাবো। আমরা বেরোতে বেরোতেই ঐ দাদার সঙ্গে দেখা। তাঁকে কিছু বলারই দরকার পড়লো না, দরজায় তালা লাগিয়ে তিনিও যাত্রা করলেন!

পরের দিন সকাল সকালই অপিস এলাম, ওমা দেখি সাহেবের কম্পিউটারে কালকের আধলেখা নোটিসটা শেষ করে সেভ করে রাখা আছে। আমি প্রিন্ট আউট নিয়ে রাখলাম। সাহেব এলে তাঁকে ওগুলো ধরিয়ে বললাম - দেখুন, বোধ হয় আজকেই এগুলো পাঠানো যাবে। সাহেব বললেন - কমপ্লীট? আমি - হ্যাঁ। উনি একবার পড়ে নিয়ে দেখলেন পুরোটাই একবারে নিখাদ ব্রিটিশ ইংরাজীতে লেখা একটা নিখুঁত নোটিশ হয়েছে। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ না।


যাই হোক, তখনও আরো গোটা সাতেক ঐরকম নোটিশ বানানো বাকি ছিলো, আর হাতে সময় ছিলো মাত্র তিন দিন! সাহেব ঠিক করলেন সেদিন মঙ্গলবার থেকে শেষদিন মানে শনিবার সব কটা নোটিশ পাঠানো অবধি তিনি অপিসেই থাকবেন আর কাজ সময়েই শেষ করে দেখাবেন। আরো দুজন সাহেবেরও ঐ একই সময়ে কাজ থাকায় তাঁরাও এক একদিন থেকে গেলেন অপিসে। শুক্রবার অপিস আসতেই আমায় সাহেব বললেন - সব কাজ কমপ্লীট, তোর পার্টের কাজটুকু করে রেখেছিস? আমি তো নিজের কাজটুকু প্রথম দিনেই করে রেখেছিলাম, সেটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণও ছিল না। কিন্তু সাহেব অত কাজ মাত্র দুদিনেই শেষ করলেন কিভাবে? বললাম - প্রিন্ট নিয়েছেন? সাহেব আমায় সাতটা নোটিশেরই প্রিন্ট আউট ধরিয়ে দিয়ে সময়মতো পাঠিয়ে দিতে বলে বাড়ি চলে গেলেন! আমিও পড়ে দেখলাম সবকটা নোটিশ তুখোড় সাবেকী ব্রিটিশ ইংরাজীতে লেখা!


বুঝলাম ভূত মহোদয় বেশ পারদর্শী লেখক এবং প্রশাসকও ছিলেন! নতুবা সাহেবকে দিয়ে এত কম সময়ে এমন সুন্দর লেখা লিখিয়ে নিতে পারতেন না!


উপরের ঘটনাগুলি সাম্প্রতিক ঘটা ও সত্য হওয়ায় কারোর নাম বা ঠিকানা দিতে পারলাম না খুব সংযত কারণেই, পাঠক নিশ্চয়ই এটুকু ত্রুটি মার্জনা করবেন।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama