Sankha Subhra Nayak's Video

Crime

1.8  

Sankha Subhra Nayak's Video

Crime

বিষাক্ত শরীর

বিষাক্ত শরীর

10 mins
17.7K


ঠাকুর্দা ধাঁধা বলতেন,

"আট পা ষোল হাঁটু,

মাছ ধরতে যায় লাটু,

আকাশেতে পেতে জাল,

মাছ ধরে চিরকাল।'-- বলোতো কি?"

ঠাকুর্দার কোলে বসে পারমিতা ভাবত। আকাশ মানে তো শূন্যতা। ওখানে মেঘেদের বাড়ি। অনেক ধুলোবালি ওখানে উড়ে বেড়ায়। পাখিরা ওড়ে, পতঙ্গরা ওড়ে। ঠাকুর্দা মারা যাওয়ার পরে মা বলত ঠাকুর্দা নাকি আকাশের তারা হয়ে গিয়েছে। সেই আকাশের বুকে জাল ফেলে মাছ ধরে কে? সে কি ভগবান? ফোকলা দাঁতে ঠাকুর্দা হেসে বলতেন, "না দাদু ভাই, ওরা মাকড়সা।"

"মাকড়সা!" হেসে উঠত পারমিতা, "আটটা পা আর ষোলটা হাঁটু। ইস! আমি ভাবছিলাম ভগবান!"

পারমিতা হাসত। কিন্তু ওর মনের কোনো গোপন কোনে আস্তে আস্তে ভগবানের আরেক প্রতিচ্ছবি রূপে মাকড়সারা জাল বুনছিল। যখন একটু বড় হল ওর শখই হয়ে গিয়েছিল মাকড়সা ধরা। অজস্র মাকড়সাদের ধরে ধরে কৌটোর ভিতরে বন্দী করে রাখত। জুওলজি নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন পাস করার পরে এই হবি আরো বেড়ে গেল। ওদের বাড়ির কোনার দিকে একটা হলঘরকে মাকড়সাদের চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলল। দেশ বিদেশের অজস্র মাকড়সা কালেকশন করত পারমিতা। কৌটোর ভিতরে রেখে বাইরে মাকড়সার নাম আর সায়েন্টিফিক নাম সহ লেবেল সেঁটে দিত। যে সব প্রজাতির নাম এখনো জানা যায়নি তাদের নাম রাখত নিজেই। বান্ধবীরা ওকে বলত লিনিয়াসের উত্তরসূরি। দেখতে দেখতে ওর শরীরে যৌবন এল কিন্তু প্রেম কখনো ওর জীবনে এলনা। কলেজে পড়াকালীন ওর প্রিয় বান্ধবী ছিল সায়নী। একমাত্র ওর সঙ্গেই ওর সব চেয়ে ভাল বন্ধুত্ব ছিল। বাকি ছেলে মেয়েরা ওর ধারে কাছেও ঘেঁসতনা। ছেলেরা বলত এরকম ডেঞ্জারাস মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা যায় নাকি? আর মেয়েরা বলত তুই বড় অদ্ভুত। হ্যাঁ, ডেঞ্জারাস আর অদ্ভুত দুটো বিশেষনই ওর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সে যেসব মাকড়সাদের কালেকশন করে রাখত তাদের সবাই মোটেই নিরীহ ছিলনা। কয়েকজন তো ছিল গোখরো সাপের মতোই বিষধর। কিন্তু নিজের পোষ্যদের নিয়ে সে খুব খুশি ছিল। একদিন একটা মাকড়সার কামড়ও খেয়েছিল, সৌভাগ্যক্রমে সেটা খুব বিষাক্ত ছিলনা তাই রক্ষে। সায়নী খুব বকেছিল সেদিন। বলেছিল, "দেখবি, একদিন এই মাকড়সার কামড়েই তুই মরবি।"

ওর জীবনে প্রেম না এলেও শরীরপ্রেমীদের লোভী দৃষ্টি এড়াতে পারলনা পারমিতা। ওর স্বভাব ছিল বাউণ্ডুলে টাইপের। পোশাক আশাকের ব্যাপারে কখনোই সচেতন থাকতনা, তাই মাঝেমাঝে রকে বসা ছেলেদের কাছে টোন খেত সে। অবশ্য সে সবে পাত্তা দেওয়ার মতো মেয়ে পারমিতা ছিলনা, কিন্তু যেবারে রোহনদা ওর পথ আটকে ছিল খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল সেদিন। পাড়ার মোড়ে একটা চা দোকানের সামনে বসে ওরা আড্ডা দিত, আর পথ চলতি মেয়ে দেখলেই টোন মারত। এদের কেউই ছোট খাট ফ্যামেলির ছেলে নয়, কারো বাবা বিজনেসম্যান, কারো ডাক্তার আবার কারো পার্টির বড় নেতা। এদের নেতা ছিল রোহনদা। কোনো মেয়েকে এরা দাঁড়াতে বললে জেনারেলি, ভয়ে হোক বা অন্য কোনো কারনে কেউ ওদের এভয়েড করতনা, এরা এদের খুশি মতো মেয়েটাকে নিয়ে ফূর্তি করত, তারপর ছেড়ে দিত। লিমিট ক্রস কখনোই করতনা। কিন্তু পারমিতা কারো হাতের পুতুল হয়ে খেলতে রাজী ছিলনা, তাই সেদিন যখন রোহিতদা ওকে দাঁড়াতে বলেছিল সে গ্রাহ্য করেনি। আজ কি তারই প্রতিশোধ নেবে রোহিতদা? পারমিতার বুক কাঁপতে লাগল। পান চিবোতে চিবোতে রোহিতদা জিজ্ঞেস করল, "কি নাম তোর?"

নিচু গলায় পারমিতা বলল, "আমার নাম পারমিতা। আমার পথ আটকেছ কেন, যেতে দাও।"

রোহিতদা বলল, "তোর পিঠে দুখানা ডানা গজিয়েছে মনে হচ্ছে! আমাকেও গ্রাহ্য করিস না। আজ এখানে তোর কাপড় খুলে আমরা তোর ল্যাঙটো নাচ দেখব।"

পারমিতার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠল। চিৎকার করে বলল, "জানোয়ার তোর বাড়িতে মা বোন নেই?"

রোহিত দা বলল, "ছি!ছি! মা বোনের কাছে এসব দেখা যায় নাকি? এগুলো তো বউ দেখাবে। নাও সোনা আমার, আমাকে একটা কিস দাও দেখি।"

গাল টা বাড়িয়ে দিল রোহিতদা। নিজের হাতটাকে আর সামলে রাখতে পারলনা পারমিতা। দুম করে রোহিতদার গালে একটা থাপ্পড় মারল। চোখ লাল করে ওর দিকে তাকাল রোহিত দা। বলল, "তোর এত বড় সাহস তুই আমাকে থাপ্পড় মারলি? এরপর ও তুই আমাদের হাত থেকে বাঁচার আশা করিস।"

ওকে জড়িয়ে ধরল রোহিত দা। বাঁচার শেষ অস্ত্র হিসাবে রোহিতদার তলপেট লক্ষ্য করে একটা ঝেড়ে লাথি চালাল পারমিতা। রোহিতদা ক্যাঁক করে বসে যেতেই সে দৌড় লাগাল।

ছুটতে ছুটতে নিজের বাড়িতে এসে পৌঁছাল পারমিতা। ওকে দেখে ওর বাবা অবাক হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল, "কি হল রে এভাবে হাঁফাচ্ছিস কেন?"

পারমিতা বলল, "আজকে রোহিতদা আমার পথ আটকে আমার সঙ্গে অসভ্যতা করছিল।"

পারমিতার বাবা বলল, "ইস! ওরা মেয়েগুলোকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবেনা, বেশি কিছু করেনি তো রে?"

পারমিতা বলল, "কিচ্ছু করার সুযোগ দিইনি, তার আগেই ওকে লাথি মেরে আমি চলে এসেছি।"

পারমিতার বাবা চমকে উঠল, "এটা কি করলি তুই মা? জানিস তো ওরা কত ডেঞ্জারাস ছেলে, কাল ওদের কাছে গিয়ে তুই ক্ষমা চেয়ে আসবি।"

পারমিতা অবাক হল, "এ কি বলছ বাবা? আমি তো খারাপ কিছু করিনি, তাহলে ক্ষমা চাইব কেন? তাও ওই নোংরা ছেলেগুলোর কাছে?"

পারমিতার বাবা বললেন, "দ্যাখ মা, এখন পার্টি, প্রশাসন সবই ওদের দিকে৷ওদের অত্যাচার মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই, আমি তোকে হারাতে চাইনা মা। প্লিজ কাল গিয়ে ওদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিবি।"

উত্তর না দিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে গেল পারমিতা। সবাই এভাবে ওদের মাথায় চড়িয়ে রেখেছে বলেই ওরা এত দূর ওঠার সুযোগ পেয়েছে। নিজের বাবাকেও ওর কাপুরুষ বলে মনে হল। সায়নিকে ফোন করে গোটা ঘটনাটা সে খুলে বলল। সায়নি বলল, "ওদের সঙ্গে লাগতে যাওয়া তোর উচিৎ হয়নি। ওদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার পরে গত তিনমাসে এই এলাকায় তিনটা মেয়ে নিঁখোজ হয়ে গেছে, এই খবরটা তো নিশ্চই জানিস? ঘটনাগুলোর একটারও তদন্ত হয়নি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাগুলোকে তুচ্ছ ঘটনা আর সাজানো ঘটনা বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তারপরও তুই কিভাবে ওদের সঙ্গে ঝগড়া লাগানোর সাহস পেলি, সেটা ভেবেই তো আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! এক কাজ কর, তুই কিছু দিনের জন্য এলাকা ছেড়ে চলে যা। অবস্থা স্বাভাবিক হলে আবার ফিরিস।"

ফোন কেটে সে খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে রইল। না, নিজের এলাকা ছেড়ে সে কোথাও যাবেনা, তাতে ওর যা হওয়ার হবে। দরকারে একবার পুলিশকে ইনফর্ম করে রাখতে হবে। পরদিন বিকেলে সে থানায় গেল। সব শুনে ওসি বললেন, "ছেলেগুলো কি এমনি এমনি তোমার পথ আটকেছিল, নিশ্চই তুমি কিছু করেছিলে।"

পারমিতা বলল, "আপনি আমার দোষ দেখছেন স্যার? ওরা আমাকে একদিন দাঁড়াতে বলেছিল, আমি দাঁড়াইনি, এটা কি আমার দোষ?"

ওসি বললেন, "কেন দাঁড়ালে না? দাঁড়ালে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?"

পারমিতার মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। বলল, "ওরা আমাকে নিয়ে ফূর্তি করবে, আর আমাকে সেটা সহ্য করতে হবে? যদি আমি আপনার মেয়ে হতাম আপনি কি এই কথা আমাকে বলতে পারতেন?"

ওসি বললেন, "এফ আই আর নেওয়ারও কিছু প্রসিডিওর আছে, নিজের মেয়ে হলেও এগুলো আমাকে জিজ্ঞেস করতে হত।"

পারমিতা বলল, "ফালতু কথা ছাড়ুন। আপনি কি আমাকে বাঁচানোর জন্য কোনো হেল্প করতে পারবেন? যদি পারেন তো বলুন, নাহলে আমাকে অন্য ব্যবস্থা দেখতে হবে।"

ওসি মাথা নামালেন, "আমি অপারক। আমি নিজের মাথাটাকেই বাঁচাতে পারছিনা, গতমাসে ওরা থানায় ঢুকে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে চলে গেল, আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না, তোমাকে কিভাবে বাঁচাব?"

"আচ্ছা, ধন্যবাদ," বলে থানা থেকে বেরিয়ে এল পারমিতা। নিজেকে ভীষন হতাশ লাগল ওর। মনে হল রোহিতদাদের সঙ্গে লেগে সত্যিই সে ভুল করেছে। ওর মতো আরো পাঁচজন মেয়ে যখন এই ব্যাপারগুলোকে এত সহজে মেনে নিচ্ছে, তখন ওরই বা কী দরকার ছিল ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাওয়ার? কয়েকদিন বাড়ি থেকে বেরুলনা পারমিতা। নিজের পোষ্যদের নিয়ে মেতে রইল। কয়েকদিন আগে ওর এজেন্ট ওকে একটা আননোন স্পিসিসে'র মাকড়সা এনে দিয়েছে, মাকড়সাটা ব্রাজিলীয় ফোনেটরিয়া মাকড়সার কাছাকাছি, তাই এটার নাম দিয়েছে ফোনেসুরিয়া। সম্ভবত এই মুহূর্তে এটাই পৃথিবীর সব চেয়ে বিষাক্ত মাকড়সা। মাকড়সাটার সে নাম দিয়েছে টাইগার। গত কয়েকদিন ধরে এই মাকড়সাটাকেই বশে আনার চেষ্টা করছিল পারমিতা। ভেবেছিল কিছু দিন বাড়িতেই আত্মগোপন করে থাকবে, যাতে রোহিতদারা ভাবে সে কোথাও চলে গিয়েছে, কিন্তু পারলনা, আজ ওকে বাড়ি থেকে বেরুতেই হল। আজ সায়নির জন্মদিন, ওকে ইনভাইট করেছে। না গেলে সায়নি বলেছে আর কোনো দিনও ওর সঙ্গে কথা বলবেনা। ড্রেস চেঞ্জ করে সে রেডি হয়ে নিল। একটা কৌটোর ভিতরে টাইগারকেও নিয়ে নিল।

বার্থ ডে পার্টি থেকে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গেল। সায়নি ওকে বার বার করে ওদের বাড়িতে থেকে যেতে বলেছিল কিন্তু সে শোনেনি। রাস্তায় বেরিয়েই বুঝতে পারল মস্ত হঠকারিতা করে ফেলেছে। শুনশান রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ওর বুক দুরদুর করে কাঁপতে লাগল। মন্দির পেরিয়ে চকে একটা পোড়ো বাড়ির কাছে এসেই সে থমকে দাঁড়াল। বুঝতে পারল তিন-চারটা লোক ওর পিছু নিয়েছে। ভয় পেয়ে ছুটতে লাগল পারমিতা, কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলনা, হঠাৎ অন্ধকারে কেউ ওকে সামনে থেকে ধাক্কা মারল, মাটিতে দড়াম করে আছড়ে পড়ল পারমিতা, মাথায় চোট লাগল। চাঁদের আবছা আলোয় বুঝতে পারল ওর সামনে রোহিতদা দাঁড়িয়ে আছে। খিস্তি মেরে রোহিতদা বলল, "খুব বাই উঠে গেছে না তোর মাগি? আমাকে লাথি মারা, আমাদের বিরুদ্ধে থানায় কমপ্লেন করতে যাওয়া। আজ তোকে বোঝাব বাই কিভাবে মেটাতে হয়।"

পারমিতার গলা জড়িয়ে এসেছে। কাঁদোকাঁদো গলায় সে বলল, "প্লিজ রোহিতদা আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে যেতে দাও।"

খিকখিক করে হেসে রোহিতদা বলল, "ছাড়ব তো বটেই, তার আগে আমাকে অপমানের পুরো বদলাটা নিয়ে নেব।"

পারমিতা বলল, "আমাকে স্পর্শ করোনা রোহিতদা, নাহলে এর পরিনাম তোমাকে জীবন দিয়ে শোধ করতে হবে।"

পারমিতার পেটে দড়াম করে একটা লাথি মারল রোহিত। বলল, "আমার জীবন নিবি তুই? তার আগে তো তোকে শেষ করে দেব। আজ পৃথিবীর কোনো শক্তি তোকে আমার কাছ থেকে বাঁচাতে পারবেনা।"

লাথি খেয়ে কঁকিয়ে উঠল পারমিতা। ওর গলার স্বর যেন হারিয়ে যেতে লাগল। ততক্ষনে বাকি চারজন লোক সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। ওরা চারজনে মিলে ওকে পাঁজাকোলা করে ধরে পোড়ো বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল। ভয়ে তখন নড়াচড়া করার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে পারমিতা। বহুকষ্টে হাত নামিয়ে পকেট হাতড়ে সে ছোট্ট কৌটোটা বার করল। ওর মুখে কাপড় গুঁজে দিয়েছে রোহিতদা। চিৎকার করার উপায় আর ওর নেই। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে শুয়ে বুঝতে পারল ছুরি দিয়ে ওর জিন্স কেটে ফেলেছে রোহিতদা, ওর নিম্নাঙ্গ এখন উলঙ্গ। হাতের কৌটোটাকে খোলার চেষ্টা করল পারমিতা। পারছেনা, হাত পিছলে যাচ্ছে। ওর যোনিতে নিজের পুরুষাঙ্গ ছোঁয়াচ্ছে রোহিতদা। গা ঘিনঘিন করে উঠল পারমিতার। কৌটো খুলে বহুকষ্টে মাকড়সাটাকে বার করে ফেলল। এই মুহূর্তে মাকড়সাটা ওর তালুবন্দি। এটাকে কি রোহিতদার দিকে ছুঁড়ে মারবে? কিন্তু ছুঁড়ে মারলেই কি মাকড়সাটা ওকে কামড়াবে? আর কামড়ালেই যে বাকি চারজন ওকে ছেড়ে দেবে তার কোনো গ্যারেন্টি নেই। কি করবে সে? ওর যোনিদ্বার দিয়ে ধীরে ধীরে ওর ভিতরে প্রবেশ করছে রোহিতদা। যন্ত্রনায় সে হাত মুঠো করল, আর ঠিক তখনই হাতের তালুতে সে একটা কামড় অনুভব করল। পারমিতার শরীর শিথিল হয়ে এসেছে, বুঝতে পারছে ওর আয়ু আর বেশিক্ষন নেই। পা ফাঁক করে রোহিতদা কে ভিতরে ঢোকার সুযোগ করে দিল পারমিতা। ওর চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। জ্ঞান হারাবার আগে মনের মধ্যে একটা ভীষন শান্তি অনুভব করল সে।

পরদিন সকালে খবরের কাগজে একটা টুকরো সংবাদ বার হল--

"আজ সকালে চকের কাছে একটা পোড়ো বাড়ি থেকে একটা মেয়ের উলঙ্গ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটাকে ধর্ষন করে খুন করা হয়েছে। ধর্ষনকারী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসক দলের কয়েকজন সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গোটা রাজ্য জুড়ে আজ ধিক্কার ও মোমবাতি মিছিল শুরু হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে বলেছেন সবই বিরোধীদের কাজ, এবং দোষী হিসাবে তিনি বিরোধীদের কয়েকজন কে এ্যারেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন। বডি পোষ্টমর্টেমে পাঠানো হয়েছে, আজ বিকেলেই পোষ্টমর্টেম হওয়ার কথা।"

পোষ্টমর্টেম রুম থেকে বেরিয়ে মুচকি হাসলেন ডঃ সেন। আজ তিনি ভীষন শান্তি পেয়েছেন। এই নিয়ে তিন তিনটা ধর্ষন কেসে তাকে মিথ্যে সুইসাইড রিপোর্ট বানাতে হবে। নিজের সততাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বার বার মিথ্যে রিপোর্ট বানাতে তাঁর ভাল লাগত না। কিন্তু নিজের চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে কাজটা তাকে করতে হত। কারন ওনার সিনিয়ার, হেলথ-মিনিস্টার ডঃ পালের চাপ ছিল তার মাথার উপরে। এই কেসেও মিথ্যে রিপোর্ট বানাবেন তিনি, তবু আজ তিনি খুব খুশি। ওনাকে দেখে ডঃ পাল বললেন, "পোষ্ট মর্টেম শেষ তো? এই বোকা মেয়েগুলোর এর চেয়ে ভাল পরিনতি হওয়া সম্ভব নয়, রিপোর্টে কি লিখবেন সেই নিয়ে আপনাকে তো নতুন করে বলার কিছু নেই?"

ডঃ সেন মাথা নাড়লেন। ভেবেছিলেন কথাটা গোপন রাখবেন কিন্তু পারলেন না। ডঃ পালের দিকে তাকিয়ে বলেই ফেললেন "ভিকটিম কিন্তু বোকা নয় স্যার, মারাত্মক বুদ্ধিমতী। ওর মৃত্যু কিন্তু ধর্ষনের ফলে অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়ে হয়নি। ভিকটিম ওর ধর্ষনকারীদের ধর্ষন করতে এলাউ করেছে।"

ডঃ পালের চোখ কপালে, "এ আপনি কি বলছেন, তাহলে ভিকটিম মারা গেল কিভাবে?"

ডঃ সেন বললেন, "মাকড়সার কামড়ে।"

ডঃ পাল চমকে উঠলেন, "আমার কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা, ভিকটিম মাকড়সা পেল কোথায়?"

ডঃ সেন বললেন, "ভিকটিম সঙ্গে করে একটা কৌটো নিয়ে গিয়েছিল, যার ভিতরে মাকড়সাটা ছিল। ও ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের হাতে মাকড়সার কামড় খেয়েছে এবং ধর্ষন কারীদের ধর্ষন করতে এলাউ করেছে। এটা একটা জাল, নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে এদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া। সমাজ থেকে জঞ্জালগুলোকে সাফ করতে এরকম একজনকে দরকার ছিল।"

ডঃ পাল ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন, "কি উল্টোপাল্টা কথা বলছেন আপনি, আমাকে গোটাটা বুঝিয়ে বলুন।"

একটা পৈশাচিক হাসি হেসে ডঃ সেন বললেন, "আমি রিসেন্ট ফোনেটোরিয়া গোত্রের এক বিশেষ প্রজাতির ব্রাজিলীয়ান মাকড়সার ব্যাপারে গবেষণা করছিলাম। এই মাকড়সারা শরীরে তেজষ্ক্রিয় যৌগ উৎপন্ন করতে পারে। এরা এতটাই বিষাক্ত যে যার শরীরে কামড় দেয় তাকে শুধুই মেরেই ফেলেনা, তার শরীরের জেনেটিক্যাল চেঞ্জ ঘটিয়ে দেয়, এই বিষাক্ত রুগির সঙ্গে কারো ব্লাড কনটাক্ট হলে বা যৌনসংগম করলে তাদের শরীরেও সেম জেনেটিক্যাল চেঞ্জ ঘটে যায়। যে পাঁচজন ওকে ধর্ষণ করেছে তারা কিন্তু জানতেও পারছেনা তাদের শরীরে জেনেটিক্যাল চেঞ্জ ঘটে গিয়েছে আর শরীরের ভিতরে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে বিষাক্ত এক শ্রেনীর ক্যানসার, যার কোনো প্রতিষেধক এই পৃথিবীতে নেই।"

"ও মাই গড", চমকে উঠলেন ডঃ পাল। মাটিতে বসে পড়ার আগেই ওনার ফোনে ফোন ঢুকল। ফোনটা একসেপ্ট করতেই শুনতে পেলেন ওপাশ থেকে ওনার স্ত্রী বলছেন, "আজ রোহিতের শরীরটা ভীষন খারাপ, সকাল থেকে ঠিকই ছিল হঠাৎ কী যে হল। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তুমি তাড়াতাড়ি একবার এসো...."

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime