অসমাপ্ত
অসমাপ্ত
লাস্ট ইন্টারভিউটা ফেল। আজ আবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হল। প্রতিটা ইন্টারভিউ ফেল করে শুকনো মুখে বাড়ি ফেরার সময় মা কোনো কথা শোনায় না, হিমশীতল দৃষ্টিতে একবার তাকায় মাত্র, কিন্তু খেতে বসেই বক বক শুরু করে, "এত বয়স হয়ে গেল, এখনো পর্যন্ত একটা চাকরি হলনা? গাঁয়ের সবাই চাকরি পাচ্ছে, কেউ কেউ কোম্পানিতে চলে যাচ্ছে, তোরই কিছু হচ্ছেনা।"
"চাকরি কি হাতের মোয়া যে চাইলেই টপাটপ দিয়ে দেবে? চেষ্টা তো করছি। সকাল থেকে তিনঘন্টা, সন্ধ্যেতে তিনঘন্টা বই মুখে নিয়ে বসে থাকি। তার উপরে নিজের সব খরচ, ফ্যামেলির অর্ধেক খরচ আমাকেই টানতে হয়। সকাল থেকে পাঁচখানা টিউশনি করার পরে আর মুড থাকেনা পড়াশুনা করার," এসব কথা বলতে গেলেই ঝগড়া হয়। আর মাথায় রাগ চড়ে যায়। আজ আর খাওয়া হলনা। রাগের মাথায় ভাতের থালাটা ছুঁড়ে দিয়েছি। ছোট বেলায় এমন করলে মা আসত, 'বাবু' 'বাছা' করে খাইয়ে দিত, আজকাল আর আসেনা, আমি পেটে কিল মেরে পড়ে রইলেও ফিরেও তাকায়না। মরে মরুক! কেউ যখন আমার কথা ভাবেনা আমারই বা কি দরকার সবার কথা ভাবার? আমি হোয়াটস অ্যাপ খুললাম। ওপাশ থেকে নিহারিকা বলল, "কেমন আছো?" বললাম,"ভাল নেই, এই সংসারে আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করেনা।"
নিহারিকা বলল, "ওমা এমন কথা কেন?"
ওকে সব ঘটনা আদ্যপ্রান্ত খুলে বললাম। বললাম, "আমাকে কেউ ভালবাসেনা, বড্ড একা হয়ে গেছি আমি।"
নিহারিকা বলল, "কে বলল তুমি একা, আমি তো আছি তোমার পাশে। তোমাকে কেউ ভালবাসুক না বাসুক আমি তো বাসি। চেষ্টা করে যাও, কিছু না কিছু নিশ্চই হবে।"
চেষ্টা করলে হয়তো কিছু হয়, কিন্তু আমরা যা চাই তা হয়তো সব সময় হয়না। নিহারিকার সঙ্গে আমার পরিচয় কখনো হয়নি, ওপাশে যে একটা মানুষ আছে তার অস্তিত্ব বুঝতে পারি ওই মেসেজটুকু পেলে। কিছুই জানিনা ওর ব্যাপারে। কি করে, কোথায় থাকে, কিচ্ছুনা। পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো একদিন হোয়াটস অ্যাপে একখানি আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এল। বলল, "সরি এই নাম্বারটা সেভ করা ছিল, তাই মেসেজ করলাম।"
তারপর ধীরেধীরে কখন যে ও আমার মনের কাছাকাছি চলে এল টেরই পেলাম না। ওকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি, "তোমার বাড়ি কোথায়?" বলেনি। ওকে জিজ্ঞেস করেছি, "তুমি কি করো?" বলত, "কলেজে পড়তাম ছেড়ে দিয়েছি।" কারন জিজ্ঞেস করলে বলেনি। কিন্তু আমার সব কিছুর ব্যাপারে ওর ভীষণ আগ্রহ ছিল। আমি খেয়েছি কিনা, আমি স্নান করেছি কিনা, আমি টিউশনি গেছি কিনা প্রতিটা ডিটেলস ওকে বলতে হত। আর এভাবেই আমরা পরস্পরের মনের কাছাকাছি চলে এলাম। ওর সঙ্গে কথা বললে আমার প্রতিটা দিন বর্ণময় হয়ে উঠত, প্রতিটা রাত কারুকার্যময়। ওকে বার বার বলেছি, "তোমার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।" বলত, "সময় আসুক ঠিক দেখা করব তোমার সঙ্গে।"
নিহারিকা চাইতনা আমি কখনো হেরে যাই, আমি হেরে গেলে ভীষণ কষ্ট পেত সে। বলত, "বাচ্চারা পড়তে পড়তেই হাঁটতে শেখে, আমরা সেটা জানি, তবু একটা বাচ্চা আছাড় খেলে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়, তেমনি তুমি হেরে গেলেও আমার ভীষণ কষ্ট হয়।"
বলত, "আছাড় খাওয়া মানেই হার মেনে নেওয়া নয়, নতুন করে উঠে দাঁড়ানো, নতুন করে চলার চেষ্টা করা, যে মানুষ পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়াতে পারে সেই তো প্রকৃত মানুষ।"
কোনির সাঁতারের শিক্ষকের মতো করে বলত, "ফাইট অনি ফাইট।"
হয়তো ভালবাসা ঠিক এভাবেই আসে। আমাদের মতো ছেলে মেয়েদের জীবনে যাদের সামনে পিছনে অন্ধকার ছাড়া আর কিচ্ছু নেই, কান্নার সময় কেউ যদি সামান্য সান্ত্বনা দেয় তবুও সেটাকে ভীষণ দামি মনে হয়। কেউ যদি পাশে দাঁড়িয়ে একটু উৎসাহও দেয়, মনেহয় পৃথিবীর সব ভালবাসা তারজন্য উজাড় করে দিতে পারি। নিহারিকাকে আমি আমার হৃদয়টা উজাড় করে দিয়েছিলাম। এটুকু জেনেও যে এই ভালবাসা হয়তো কখনো পরিণতি পাবেনা। নিহারিকাকে বলতাম, "তোমার রূপ আমার কাছে কোনো ব্যাপার নয়, তোমার যদি নিজের লুক নিয়ে সংশয় থাকে, তাহলে এই সংশয় তুমি কাটিয়ে তুলতে পারো, তুমি যতই কুৎসিত হও আমি তোমাকে ভালবাসব।"
নিহারিকা বলত, "না গো লুক নয়, অন্য ব্যাপার আছে আমি তোমাকে বলতে পারবনা।"
দেখতে দেখতে সময় বয়ে চলল, ফ্যামেলির চাপ বাড়ল, আরো বেশি করে টিউশনি করতে লাগলাম, তবু নিহারিকা আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে স্মরণ করিয়ে দিত আমার আসল উদ্দেশ্য কি? বলত, "টিউশনি পড়িয়ে যতই রোজগার করো, বাবা মাকে সেদিনই তুমি খুশি করতে পারবে, যেদিন তুমি একটা জব পাবে।" মাঝেমাঝে দু'একবার বিরক্ত লাগত নিহারিকাকে, ভাবতাম হয়তো আমার জবের প্রতীক্ষাতেই ও আমার সঙ্গে দেখা করছেনা। ভাবতাম, যাকে এতটা ভালবাসি সেও কি পারেনা এই ক্ষুদ্র স্বার্থটুকু বিসর্জন দিয়ে আমাকে ভালবাসতে, আমাকে আপন করে নিতে? কিন্তু এক মুহূর্তে নিহারিকার একটা ভয়েস কল আমার সব রাগ জল করে দিত। নিহারিকা বলত, "আমি আমার জন্য ভাবিনা, আমি প্রতিটা মুহূর্তে তোমার কথা ভাবি, তোমার কথা ভেবেই আমি বেঁচে আছি, কিন্তু আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হোক, আমার জন্য তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক।"
আমি বার বার জিজ্ঞেস করেছি, "তোমার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হবে কেন?" কোনো সদুত্তর পাইনি।
দেখতে দেখতে প্রায় দু'বছর কেটে গেল। আমি গলি রাস্তা ছেড়ে একদিন বড়ো রাস্তায় গিয়ে উঠলাম। খুব বড়ো না হলেও একটা ছোট খাটো চাকরি পেলাম। হাজার দশেক টাকা মাইনে। টিউশনির পাশাপাশি ফ্যামেলিটা দিব্যি চলে যাবে, আমার মা বাবা সকলেই খুশি হল, কিন্তু নিহারিকাকে খুশি করতে আমি পারলাম না। বলল, "এখানেই থেমে গেলে তোমার চলবেনা অনি, তোমাকে আরো বড়ো হতে হবে, আরো বড়ো চাকরি করতে হবে।" বললাম, "সবার তো সব চাহিদা পূরণ হয়না, আমারও নাহয় হলনা।"
নিহারিকা বলল, "একথা বলে পাশ কাটিয়ে গেলে তোমার চলবেনা, পৃথিবীতে কেউ তোমাকে চাকরি দিয়ে যাবেনা, তোমাকে লড়াই করে চাকরিটা অর্জন করে নিতে হবে, ফাইট অনি ফাইট।"
ওকে বললাম, "প্লিজ এবারে অন্তত আমার সঙ্গে দেখা কর।"
নিহারিকা বলল, "না অনি, তোমার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগে আমি তোমার সঙ্গে দেখা করবনা।"
খুব কষ্ট লাগল এবারেও নিহারিকা দেখা করতে অস্বীকার করল বলে। ভাবলাম আর না, আর এই সম্পর্কটাকে টেনে নিয়ে যেতে আমি পারছিনা। যার আমার উপরে এতটুকুও বিশ্বাস নেই, আমার পক্ষে তাকে ভালবাসা আর সম্ভব নয়। ওকে হোয়াটস অ্যাপে ব্লক করে দিলাম। ফোন নাম্বারও ব্লক লিস্টে ফেলে দিলাম। কিন্তু ওর সঙ্গে এতটাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছি যে ওকে ছাড়া থাকতে পারলাম না, দিন দুয়েক পরে ব্লক খুলে আবার ওকে মেসেজ করলাম।
স্বাভাবিক ভাবেই নিহারিকা বলল, "আমার উপরে রাগ করেছ?"
বললাম, "রাগ হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? আজ কতদিন ধরে তোমাকে একবার চোখের দেখা দেখার জন্য ছটফট করছি, আর তুমি বার বার কোনো না কোনো অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছ?"
নিহারিকা বলল, "এরকম করেনা সোনা, আমার সমস্যাটা একটু বোঝ।" বললাম, "তোমার সমস্যা আমাকে না বললে আমি কিভাবে বুঝব।"
নিহারিকা বলল, "বলতে পারলে তো আমি অনেক হালকা হয়ে যেতাম। কিন্তু তা যে আমি পারবনা। আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালবাসি অনি, তোমাকে হারাতে আমি চাইনা।"
দেখতে দেখতে আরো একটা বছর কেটে গেল।। নিহারিকা আজও আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যেত, প্রতিটা মুহূর্তে বলত, "এখানেই থেমে গেলে তোমার চলবেনা অনি, তোমাকে আরো আগাতে হবে, আরো বড়ো হতে হবে, ফাইট অনি ফাইট।"
অবশেষে ঠিক তিন বছরের মাথায় আমার বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নটা পূরণ করতে আমি সফল হলাম। একটা বড়ো চাকরি, একটা হাইফাই স্ট্যাটাস। নিহারিকাকে বললাম, "এই দেখ, আমার স্বপ্ন পূরণ করতে আমি পেরেছি, এবারে তুমি আমার সঙ্গে দেখা করবে তো?"
নিহারিকা বলল, "হ্যাঁ করব, আর কটা দিন ওয়েট করো।"
বললাম, "আরো কটা দিন? আর একটা দিনও ওয়েট করতে আমি পারবনা, যদি কাল তুমি আমার সঙ্গে দেখা করো, তাহলে আমাদের সম্পর্ক রইবে, নাহলে এখানেই আমাদের কাট্টি।"
কাঁদতে কাঁদতে নিহারিকা বলল, একথা তুমি বলতে পারলে? এত সহজে তুমি আমাকে ছেড়ে দেবে?"
আমি উত্তর দিলাম না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম এবারে নিহারিকা আমার সঙ্গে দেখা না করলে ওর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবনা। আমি পারছিলাম না আর। যার জন্য আমি আমার জীবনের সমস্ত শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলাম তার কাছ থেকে বার বার অবহেলিত হতে হতে ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে পড়ছিলাম। তাই মনে জোর এনে এবারে সত্যি সত্যিই ওকে হোয়াটস আপ আর ফোনে ব্লক করে দিলাম।
নতুন চাকরিতে অভ্যস্ত হতে হতে আমার বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেল। সকালে গিয়ে সন্ধ্যেতে ফিরে আসা, এত প্রেশার! সব মিলিয়ে দু'তিনদিন খারাপ লাগার পরেই নিহারিকার কথা আস্তে আস্তে ভোলার চেষ্টা করলাম। যদি সত্যি কাউকে ভালবাসা যায় তাকে হয়তো সারাজীবনেও ভোলা যায়না। অসাবধানে আলগোছে বার বার নিহারিকার কথা মনেপড়ে যেত, কিন্তু আমি তো পুরুষ, চোখের জল ঝরালে পুরুষদের চলেনা, তাদের শক্ত হতে হয়, তাই বুকের যন্ত্রনা বুকেই চেপে রেখে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। দিন দশেক পরে মা বলল, "তোর জন্য একটা নতুন সম্বন্ধ এসেছে, দেখতে যাবি?"
আগে নিহারিকার কথা ভেবে এগুলো সরাসরি নাকচ করে দিয়েছি, আজ পারলাম না, আজ আর কোনো পিছুটান নেই, কিছুক্ষণ দোনামনা করে বললাম, "হ্যাঁ দেখতে যাব।"
রাত্রে ডিনার সেরে শুয়ে পড়েছিলাম। চোখ দুটোও জাস্ট লেগে আসছিল, হঠাৎ বিরক্তিকর ভাবে ফোনটা বেজে উঠল। ফোন তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশে এক ভদ্রলোক বললেন, "হ্যালো অনির্বাণ বলছ?"
বললাম, "বলছি বলুন?"
ভদ্রলোক বললেন, "তুমি নিহারিকার বন্ধু তাই তো?"
ভাবলাম, "নিহারিকা হয়তো আমাকে ফোনে না পেয়ে অন্যকাউকে দিয়ে ফোন করাচ্ছে।"
বিরক্ত গলায় বললাম, "নিহারিকা নামে আমি কাউকে চিনিনা, ফোন রাখুন।"
মরিয়া গলায় ভদ্রলোক বললেন, "আমি নিহারিকার বাবা বলছি বাবা, অনেক আশা নিয়ে তোমাকে ফোন করেছিলাম।"
আমি চমকে উঠলাম। বললাম, "হ্যাঁ বলুন?"
ভদ্রলোক বললেন, "নিহারিকা তোমাকে একবার দেখতে চাইছে। কাল তুমি নীলরতন ক্যানসার হসপিটাল একবার আসতে পারবে?"
আমি চমকে উঠলাম। বললাম, "হ্যাঁ নিশ্চয় যাব।"
পরদিন সকালে আমি ক্যানসার হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। হাসপাতালের বেডে শুয়েছিল নিহারিকা। বহুকষ্টে শ্বাস পড়ছিল। বলল, "আমার হাত ছেড়ে দেবেনা কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিলে তো? দেখ, আমার কি হল?"
কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম, "এটা কিভাবে হল নিহারিকা?"
নিহারিকা বলল, "এটা আজকের রোগ নয় গো, গত ছ'বছর ধরে আমি ব্রেন টিউমারে ভুগছি। তিন বছরের বেশি আমার বাঁচার কথাই ছিলনা, কিভাবে যে ছ'বছর বেঁচে গেলাম উপরওয়ালাই জানে! তোমার ভালবাসাই হয়তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এতদিন। তবে এবারে বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে গেল!"
আর থাকতে পারলাম না আমি। আমার বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠল। পুরুষত্বের অহংকার চূর্ন বিচূর্ণ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললাম, "তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি প্রমিস করছি আর কখনো তোমাকে হোয়াটস অ্যাপে ব্লক করবনা, আর কখনো তোমাকে ফোনের ব্লকলিস্টে ফেলবনা, আর কখনো তোমার উপরে রাগ করে থাকবনা, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা নিহারিকা।"
আমার চোখের জল মুছিয়ে দিল নিহারিকা। দুটো হাত শক্ত করে ধরে বলল, "ধুর পাগলা! আমার কিচ্ছু হবেনা, তুমি তো এসে গেছ, দেখবে এবারে আমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাব। আর সুস্থ হয়ে গেলে এভাবেই তোমার দুটো হাত শক্ত করে সারাজীবন ধরে রাখব!"
সব গল্পের নায়িকারা সুস্থ হয়না। নিহারিকাও সুস্থ হয়নি। ব্রেন টিউমারের উপরে নিমোনিয়া। শ্বাস কষ্টেই মারা গেল মেয়েটা। আমি পারিনি, ওর দুটো হাত শক্ত করে ধরে রেখেও ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। শূন্যতা আমাকে গ্রাস করেছিল। কেবলই মনেহত আমার জন্যই নিহারিকা মারা গেল। প্রতিটা দিন বুকের ভিতরটা মুচড়ে মুচড়ে উঠত। অজান্তেই চোখ দিয়ে অবিরত ধারায় অশ্রু ঝরে পড়ত। কয়েকটা দিন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আবার সুস্থ জীবন। আবার ফ্যামেলিতে ফিরে যাওয়া। আবার জীবন যুদ্ধ। আবার অস্তিত্বের সংগ্রাম। কিন্তু নিহারিকা রয়ে গিয়েছে আমার মনের গোপন কুঠুরিতে। ও বলেছিল, "আমি তোমাকে ছেড়ে যাবনা অনি, সারা জীবন তোমার দুটো হাত শক্ত করে ধরে রাখব।" আমি কোনো প্রতিকূলতায় পড়লে আজও টের পাই, কেউ যেন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার দুটো হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। দেখতে পাই, একটা অস্পষ্ট অবয়ব আমার কাঁধ চাপড়ে দিচ্ছে। আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলছে, "ফাইট অনি ফাইট, ফাইট অনি ফাইট।"