গাঁওকো র
গাঁওকো র
“ওহ নো ওওও … প্লিজ…”
অপ্রান্ত থেকে চিৎকারটা ভেসে আসতেই চমকে উঠে সেদিকে তাকায় রিশা। দেখে গাড়ির সঙ্গে বাঁধা একটা গরু শিং উঁচিয়ে খুর ঘষছে মাটিতে আর তার সামনেই প্রপাত ধরণীতলে পড়ে আছে আণিকা। চিৎকারটাও ওরই গলা দিয়ে বেরিয়েছে। দেবদত্ত ছুটে গিয়ে মাটির থেকে তুলে নেয় ওকে। পায়ে পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায় রিশা, “কি করে পড়লে ওখানে?”
“আ… আমি তো জাস্ট এই কার্টটার একটা ছবি নিতে গিয়েছিলাম আর তাতেই ও ক্ষেপে গেল।” ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলে আণিকা।
“রিল্যাক্স”, আণিকার পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে রিশা, “কিচ্ছু হয়নি। ডোন্ট ওয়ারি।”
আণিকা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসতেই ওর কাছ থেকে সরে আসে রিশা, মাথাটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে শুরু করে গ্রামটাকে। খড়ের চাল, টিনের ছাউনি দেওয়া ঝুপড়ি, ধানের মরাই, গরু ভর্তি গোয়ালগুলো দেখতে ভারতবর্ষের আর পাঁচটা গ্রামের মত সাধারণ হলেও রিশা জানে এই গ্রামটা আদপে দেশের আর পাঁচটা গ্রামের মত নয়। গোটা ভারতবর্ষ যখন শতাব্দী প্রাচীন যুক্তিহীন রীতিনীতিগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে মত্ত, এমনকি গ্রামাঞ্চলগুলোও পা বাড়াতে শুরু করেছে সামনের দিকে তখন এই দেবলপুরের মত কিছু গ্রাম এখনও বিদ্যমান যাদের পদক্ষেপ সর্বদা পশ্চাদবর্তী। শিক্ষার প্রদীপ এখানে তেলের অভাবে ধুঁকছে সর্বদা, যেটুকু আলো আবার আসে কোনোক্রমে সেটুকুও যেন অন্ধকারের দাসত্বেই খুঁজে নেয় নিজের সুখ।
রিশা, দেবদত্ত আর প্রাচীন… ওরা তিনজনেই এঞ্জেল ফাউন্ডেশন নামে এক এন.জি.ও’র কর্মী আর আণিকা থাকে ইউনাইটেড স্টেটসে। ওখানকারই এক সংস্থার প্রতিনিধি হয়ে তার ভারতে আসা। ওই সংস্থার সঙ্গে এঞ্জেল ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এখন ভারতের পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে মেয়েদের হিতের জন্য কাজ করতে তৎপর। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় সাফল্যও এসেছে তাদের। আর তাই তাদের আজকের কর্মস্থল মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামটি, নাম দেবলপুর।
★★★★★
মেঝেতে পাতার চাদরটা গায়ে জড়িয়ে জড়সড় হয়ে বসল ফুলমতি। গা’টা শিরশির করছে তার। আকাশটা অনেকক্ষণ থেকেই অন্ধকার হয়ে আছে কিন্তু ফুলমতি জানে এটা সন্ধ্যার অন্ধকার নয়। এখন শেষ দুপুর কিংবা বড়জোর বিকেল হতে পারে কেননা আই খানিক আগেই এই ঝুপড়ির সামনে খাবার আর জল রেখে গেছে। অন্ধকারটা যত বাড়ছে ততই ঝুপড়ির পেছনে থাকা ঘন জঙ্গলটা থেকে হরেক রকম আওয়াজ ভেসে আসছে প্রতিমুহূর্তে। মাঝে মাঝে সে আওয়াজের তীব্রতা এতটাই ভয়ঙ্কর যে কেঁপে কেঁপে উঠছে ফুলমতি। তলপেটের চিনচিনে ব্যাথাটা আজও গেল না, আই অবশ্য বলেছিল অন্তত দিন তিনেক লাগবে ব্যাথাটা যেতে আর আজ তো সবে দু’দিন। এখনও একটা পুরো দিন সহ্য করতে হবে এই যন্ত্রনা। কিন্তু পেটের ব্যাথাটা চলে গেলেও অন্য যন্ত্রনাটা কি মিটবে আদৌ! আই তো বলেছে এবার থেকে প্রতি মাসে পাঁচদিন তাকে কাটাতে হবে এই গাঁওকোরে। এতদিন সে দেখতো আই, চাচী সবাই মাঝেমাঝেই যেন বাড়ির থেকে কোথায় চলে যেত কয়েকদিনের জন্য, সেই সময় খুব মন খারাপ করত ফুলমতির কিন্তু সে জানতো না ওরা কোথায় যায়। কাউকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায়নি কোনোদিন। খুব কৌতূহল হত তার জানার জন্য, কেউ উত্তর না দিলে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে থাকতো সে, কিন্তু আজ যখন অবশেষে সেই উত্তরটা পেলো তখন মনে হচ্ছে যেন না জানলেই ভালো ছিল সব। খুব কষ্ট হচ্ছে তার, ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কাল আসার পর থেকে যে কতবার কেঁদেছে তার ইয়ত্তা নেই। সবচেয়ে বেশি ভয় করছিল তো রাত্রে। সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি সে, শুধু মনে হচ্ছিল এই বুঝি ঝুপড়ির নড়বড়ে দরজাটা ভেঙে কোনো কোল্হা বা ভালু ঢুকে পড়ল! আজও যখনই মনে পড়ছে আর কিছু পরেই রাত নামবে তখনই ভয়ে ওর গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। তাকে এখানে ছেড়ে দিয়ে যাওয়ার আগে চাচী বলছিল ফুলমতির ভাগ্যটা খুব খারাপ তাই তো প্রথমবারেই কোনো সঙ্গী পেলোনা এখানে থাকার জন্য।
কোনোক্রমে উঠে বাঁশের নড়বড়ে দরজাটা একটু ঠেলে বাইরের দিকে উঁকি দেয় ফুলমতি। দেখে সারা আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। শনশন করে বাতাস বইছে চারিদিকে আর তাতেই সামনের মাঠের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা জিনিসগুলো গোল হয়ে পাক খেতে খেতে ছুটছে এদিক সেদিক। জঙ্গল থেকেও আওয়াজ উঠেছে বেশ ভালো রকমই। ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে এলো সে। এইরকম সময়টা ফুলমতির বড্ড প্রিয়, হাওয়ার মধ্যে দু’হাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছুটে যাওয়ার মজাই আলাদা। ঠিক যেন একটা পাখি মনে হয় নিজেকে, মনে হয় যেন সেই পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে আকাশে, উঠে পড়ছে উঁচুতে, অনেক উঁচুতে। বাবা অনেকসময় তাকে কোলে তুলে নিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন আর ফুলমতিও তাতে হেসে ওঠে খিলখিল করে। কিন্তু আজি দেখতে পেলেই বকে দেয় বাবাকে, বলে মেয়েদের অতো মাথায় তুলতে নেই, মেয়েদের সবসময় নীচেই রাখতে হয়। বাবাকে বকে দেওয়ার পর আজি এবার ফুলমতির দিকে তাকিয়ে বলেন মেয়েরা কোনোদিনও আকাশ ছুঁতে পারেনা, ফুলমতি যেন এসব স্বপ্ন দেখা ছেড়ে ঘরের কাজ শেখে ভালোভাবে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দু’হাত মেলে ছুটতে গেল ফুলমতি, কিন্তু পারল না। তার আগেই পেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হল আর নীচের দিকটা জ্বালা করে উঠল। হাত দিয়ে পেটটা চেপে ধরল ফুলমতি আর তখনই টুপ করে এক ফোঁটা জল এসে পড়ল ওর নাকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল বড় বড় ফোঁটা পড়তে আরম্ভ করেছে ইতিমধ্যেই। কোনোক্রমে পেটটা চেপে ঘরের মধ্যে ঢুকে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ল ফুলমতি। এতো জ্বালা করছে নীচটা যে দরজা লাগানোর কথা খেয়ালই রইল না তার। আচমকা একটা পাতা উড়ে এসে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়তে তখন ফুলমতির খেয়াল হল দরজাটা লাগানো হয়নি। সে কষ্ট নিয়েই উঠতে গেল কিন্তু তার আগেই হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল দুজন। মেঘে ঢাকা আকাশের আবছা আলোয় ফুলমতি একজনকে চিনতে পারল, তাদের গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মনোহর চাচার ছেলে ধীরজ। ওদের এখানে দেখে অবাক হল ফুলমতি। সে বিস্ময়ভরা গলায় কিছু বলতে গেলো, “ধীরজ ভাও…” , কিন্তু ওই ভেজা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেদুটোর চোখের দিকে তাকাতেই বাকি কথাটুকু গলায় আটকে রয়ে গেল ফুলমতির। কোনো অজানা বিপদ আশঙ্কা করে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল সে…
★★★★★
“আমাদের গাঁয়ের নিয়ম পাল্টানোর আপনারা কে মশাই? দু’পাতা ইংরেজি পড়ে নিয়ে ভাবছেন সব জেনে গেছেন?” চিৎকার করে উঠল মনোহর ল
াল।
প্রাচীনের মাথাটাও গরম হয়ে উঠছিল কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল, “দেখুন সরপঞ্জ সাহিব আমরা আপনাদের ভালো চাই। শিক্ষা তো আদপে মানুষের মঙ্গল করার জন্যই তা সে ইংরেজি হোক কি অন্য কোনো ভাষার শিক্ষা। আপনি আমাদের কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন…”
“আপনারা যেটা করছেন সেটা রিডিকুলাস, ইললজিক্যাল,এক্সট্রিমলি আন হাইজিনিক। জানেন মাসিকের সময় মেয়েদের কতটা যত্নে রাখতে হয়? বিদেশে গিয়ে দেখুন মাসিক নিয়ে এরকম কোনো ট্যাবু নেই, তারা আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই কাটায় এসময়টা আর তাতে তাদের বা কারুর কোনো ক্ষতি হয়না।” প্রাচীনের কথা শেষ হওয়ার আগেই উত্তেজিত ভাবে কথাগুলো বলে ফেলল আণিকা। আর তাতেই আরও ক্ষেপে গেলেন মনোহর লাল, “খুব বিদেশ দেখাচ্ছেন না? এ আমাদের পূর্বপুরুষরা বলে গেছেন। মেয়েরা এই সময় অপবিত্র থাকে। এই সময় ওরা যদি সংসারে থাকে ছুঁতমার্গ করে তাহলে সংসারে ঘোর অমঙ্গল নেমে আসে।”
“উফফ রিডিকুলাস…আবার সেই অপবিত্র… অমঙ্গল…!” বিরক্তি ভরা গলায় বলে উঠল আণিকা।
“শুনুন ম্যাডাম” উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন মনোহর লাল, “আপনারা ভালোয় ভালোয় চলে যান এখান থেকে। এই অপবিত্র মেয়েদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমরা কি করতে পারি আপনারা ভাবতেও পারবেন না। কি ভেবেছেন কি মেয়েদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের গ্রামের সর্বনাশ করবেন? এই সময় মেয়েদের ঘরে রাখলে ওরা পুরুষকে ছুঁয়ে দেয় যদি তখন কি হবে!”
“কি হবে?” এতক্ষণ পেছনে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথোপকথন শুনেছিল রিশা। এবার আচমকাই সামনে এগিয়ে এসে প্রশ্নটা করল সে। ওর গলার স্বরের মধ্যে এমন কিছু ছিল যা ক্ষনিকের জন্য হলেও নাড়িয়ে দিল মনোহর লালের আত্মবিশ্বাস। লোকটা একটা ঢোঁক গিলে নিয়ে বলল, “এই সময়… এ সময় মেয়েরা ছুঁয়ে দিলে ছেলেরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, মারাও যেতে পারে।”
“তাই? তাহলে তুমি কি করে এখনও বেঁচে আছো মনোহর কাকা?” ব্যাঙ্গের সুরে মনোহর লালের দিকে কথাগুলো ছুঁড়ে দিল রিশা। চমকে উঠল উপস্থিত সকলেই। দেবদত্ত শুধু অস্ফুটে একবার বলে উঠল, “রিশা…”, কিন্তু বাকি কথাখানা অব্যক্তই রয়ে গেল; তার আগেই মনোহর লাল বলে উঠলেন, “মানে? কি বলতে চাইছো কি?”
“ফুলমতিকে মনে পড়ে কাকা?”“
ফুলমতি?” গুঞ্জন শুরু হল পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে।
হুমম ফুলমতি। এই গ্রামেরই কৈলাস পরিয়ার মেয়ে ফুলমতি। যাকে তোমার ছেলে ধীরজ নৃশংসভাবে ধর্ষণ করেছিল…” শেষ কথাগুলো বলতে বলতে চেঁচিয়ে উঠল রিশা। সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই মনোহর লালও চিৎকার করে উঠলেন, “মিথ্যে… মিথ্যে… এই মেয়েটা মিথ্যে বলছে। সবাই জানে যে কৈলাসের মেয়েটার চরিত্র ভালো ছিল না, শুধু উইচিংড়ের মত উড়ে বেড়াতো। ওই সেদিন আমার ছেলেটাকে একলা পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ওর গায়ে।”
“সত্যিই? একটা দশ বছরের বাচ্চা মেয়ের গায়ে কিরকম ভাবে কলঙ্ক চাপিয়ে দিতে পারো তোমরা? একটা দশ বছরের বাচ্চা যে ঠিক করে জানতোও না তার সাথে কি হচ্ছে, কেনই বা তাকে বাড়ি ছেড়ে অতদূরে ওই নির্জন জঙ্গলের ধারে গিয়ে একলা থাকতে হচ্ছে সেই মেয়েটা তোমার অতবড় ছেলেকে বিপথে চালিত করেছিল বলতে চাও? সত্যিই? সে তো বুঝতেও পারেনি তার অতি পরিচিত ধীরজ ভাও কি করছে তার সঙ্গে! সে শুধু অনুভব করতে পেরেছিল এক নারকীয় যন্ত্রনা, যে যন্ত্রণার কথা শব্দে বর্ণনা করা যায় না….” কথাগুলো বলতে বলতেই গলার স্বরটা জড়িয়ে গেল রিশার। তখনই পঞ্চায়েতের একজন বলে উঠলেন, “কিন্তু আপনি ফুলমতির কথা জানালেন কি করে?”
উত্তর দিলো না রিশা, তার আগেই মনোহর লাল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য গলা চড়িয়ে বলে উঠল, “ওই মেয়েটা ছুঁয়েছিল বলে আমার ধীরজ কেমন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তাকে মামাবাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়। গাঁয়ের সবাই সাক্ষী আছে।”
“মিথ্যে কথা… স্রেফ মিথ্যে কথা। তুমি আর তোমার ছেলে মিলে অসুস্থতার নাটক করেছিলে কাকা। কিচ্ছু হয়নি তোমার ছেলের। ওর কুকীর্তি ঢাকতে তোমরা অসুস্থতার নাটক করে ফুলমতিকে গ্রামছাড়া করেছিলে,” গর্জে উঠল রিশা, “আর কাকা ফুলমতির ছোঁয়ায় যদি অসুস্থ হওয়ারই ছিল তাহলে তুমি কেন অসুস্থ হলে না?”
“মানে?” বিস্ময় আর খানিক ভয় মিশ্রিত গলায় প্রশ্নটা করল মনোহরলাল।
দৃঢ় গলায় রিশা উত্তর দিল, “মানেটা তুমি ভালোই জানো কাকা। মনে পড়ে যেদিন মেয়েটা প্রথম ঋতুমতী হয়ে গাঁওকোরে গিয়েছিল সেদিনই দুপুরে তুমি কোনো কারণে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলে আর তোমার পেছন পেছন তোমাকে ছোবল মারতে ছুটেছিল এক কাল নাগিনী। অন্যদিকে ওই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা, চঞ্চলামতী মেয়েটাই সেদিন ওই দৃশ্য দেখে দু’বার না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তোমাকে বাঁচাতে। তার সঙ্গে থাকা ছোট্ট ছুরির জোরে শেষ করে দিয়েছিল ওই কাল নাগিনীকে। এদিকে তুমি তো তাকে ধন্যবাদ দেওয়া তো দূরের কথা পালিয়ে এসেছিলে সেখান থেকে, বেমালুম চেপে গিয়েছিলে এই ঘটনার কথা এবং শুধু তাই নয় এই একদিন পরেই যে মেয়েটা তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছিল তাকে গোটা গ্রামের সামনে বিনা অপরাধে চরম লাঞ্ছিত করে গ্রাম ছাড়া করেছিলে। আচ্ছা কাকা সেদিন তোমাকে বাঁচানোর সময় তো তোমাকে ছুঁয়ে ফেলেছিলাম তাহলে তোমার কিছু হল না কেন? পারবে এর উত্তর দিতে?”
“ক্ক… কে তুমি? ফুলমতি?”
“হ্যাঁ আমিই সেই ফুলমতি যাকে তোমরা অমানুষিক অত্যাচার করে গ্রামছাড়া করেছিলে মাত্র দশ বছর বয়েসে, আমিই সেই ফুলমতি।
আমার ভাগ্য ভালো ছিল বলে সেদিন অসহায় অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করেন এক সহৃদয় ব্যক্তি, তোমাদের দেওয়া শাস্তি আমার জীবনে হয়তো আশীর্বাদ হয়ে নেমে আসে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সেদিন থেকে এখন অবধি প্রতিটা রাতেই যেন সেই ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়ায়, একটু অন্ধকার দেখলেই বুকটা কেঁপে ওঠে। আর কোনোদিনও বৃষ্টি নামার আগে পাখির মত উড়তে পারিনি…” গলাটা আবার যেন বুজে এলো রিশার, “আর তাই তো সংকল্প নিয়েছিলাম একদিন আবার ফিরবো এই দেবলপুরে, ভেঙে ফেলবো তোমাদের এই ভন্ড প্রথার নামে অনাচার। দেবলপুরের মেয়েরাও আকাশ ছোঁবে কাকা… এই আমি কথা দিলাম।”
রিশার কথাটা শেষ হতেই এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এলো গোটা জায়গাটা জুড়ে। কারুর মুখে কোনো কথা ফুটল না আর। সবাই শুধু চেয়ে দেখল এই প্রত্যন্ত গ্রামের বুকেই জন্মানো মেয়েটার চোখে এক আকাশচুম্বী দৃঢ়তা…
শেষ।