সুন্দরী ও রাক্ষস
সুন্দরী ও রাক্ষস
"নর্দমার মধ্যে থেকে এক সারমেয়র তৎপরতায় উদ্ধার পোটলাবন্দি জীবন্ত শিশু"
"ভাগাড়ের মধ্যে থেকে শিশুর আধখাওয়া লাশ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য"
"ডোবার মধ্যে থেকে নাড়িসুদ্ধ ভাসমান নবজাতকের দেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য এলাকায়"
রাজলক্ষ্মী নামের বেশ্যাটা থাকে যে ঘিঞ্জি এলাকায়, সেখানে নানা অবৈধ বহুতলের রাজত্ব চলে, তেমনই এক সুউচ্চ কূটাগারের মধ্যে একটা ভাঁড়া করা ছোট্ট ঘরের মধ্যে থাকে রাজলক্ষ্মী, যদিও তার আসল নাম রাজলক্ষ্মী নয়, তার আসল নাম যে কী তা সে বেচারি নিজেও জানে না, ফলে কেউ তার নাম জিজ্ঞেস করলে একেক সময় একেক জনকে একেক নাম বলে, যদিও কেউ তার নামধাম তেমন জিজ্ঞেস করেও না, যেসকল খদ্দের তার কাছে আসে তারা টাকা দিয়ে নিজেদের চামড়ার খিদে মিটিয়ে নিয়েই চলে যায়, অনেকটা ঐ ফেলো কড়ি মাখো তেল এর মত ব্যাপার আরকি, সেই এলাকায় নানা দোকানি পথচলতি সাধারন মানুষ কুকুর বেড়াল পাখি যানবাহন নানা হাঁক পাড়ে, অনেক সময় বিকট শব্দে মানুষ পশু পাখি মড়া সকলের ঘুম ভাঙিয়ে সবার মুণ্ডুগুলোর অনেক উপরে নানা উৎকট উড়োযান চলে যায়, সবার মাথার উপর দিয়ে মাকড়সার জালের ন্যায় কালো চকচকে বিদ্যুতের তারগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিকার ধরবে বলে, সেগুলোর উপরে বসে অনেক সময় অনেক পাখি বা বাঁদর, বা সেগুলো থেকে ঝুলে থাকে কিছু বাদুড়, ব্যস, অনেকসময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে মাটিতে বা মরে ঐ তার থেকেই ঝুলতে থাকে, রাস্তায় নোংরা শাক সবজি মাছ মাংসের উচ্ছিষ্ট এঁটোকাঁটা গোবর হাগু হিসুর উগ্র গন্ধের মধ্যে সবাই সেখানে থাকে, চলাফেরা হাঁটাচলা কথা বলা সবই করে পোকামাকড়ের মত, রাজলক্ষ্মীর মত আরও অনেক রাড়িয়া সেখানে সেই এলাকায় একটু খোঁজ করলে পরে পাওয়া যাবে, রাস্তা দিয়ে সদা সর্বদা হেটেচলে বেড়ায় ব্যস্ত কতগুলো ঘোলাটে আঁকাবাঁকা রেখা, পথের ধারের মানুষ কুকুর বেড়ালরা তাদের কাছে গিয়েও পাত্তা পায় না, হয়ত কোনো অসুস্থ মানুষ পড়ে আছে রাস্তায়, তাকে তোয়াক্কা না করে সেইসব রেখারা ছুটে যায় নিজেদের মত, হয়ত কোনো লোক যে এমনিতে রাস্তায় কোনো মরা বাঁদর পড়ে থাকতে দেখলেও ভগবানকে শ্রদ্ধা জানাতে সেই বাঁদরের লাশের গায়ে ফুলের মালা চড়াতে ছাড়ে না, সেও তাকে দেখতে পেয়ে লক্ষ্য করে যায় তার কাছে কোনো টাকাপয়সা বা ওরম দামি জিনিস কিছু পাওয়া যায় কি না শুধু তা দেখার জন্য, আর পেলে পরে তা নিয়ে চুপচাপ নিজের মত সেখান থেকে আবার নিজের কাজে চলেও যায়, আর ওদিকে সেই অসুস্থ লোকটা তলিয়ে যায় মৃত্যুর কোলে, এই তো কদিন আগেই সেই এলাকাতেই সেরম একটা ঘটনাই ঘটেছিল যা নিয়ে পরে খবরে কাগজে টিভিতে কদিন তোলপাড় চলেছিল, বাড়িটা চারতলা, এরম আরো অনেক বাড়িতে মুরগীর খাঁচার থেকেও ছোট্ট সব ঘরেতে থাকে রাজলক্ষ্মীর মত আরো অনেক মানুষ, নীচে সব দোকানপাট দেওয়া, সবেরই মালিক মাড়োয়ারি সকল, রাজলক্ষ্মীর সেই ভাড়া বাড়িটা পরিচর্যার অভাবে এমন রুগ্ন জরাজীর্ণ হালতে আছে বর্তমানে যে যে কোনো সময় ভেঙে গড়িয়ে পড়তে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার উপরেও আবার আরেকটা তলা বসাতে চলেছে বাড়ির মালিক নাকি খুব শীঘ্রই, সেখানে নানা ধরনের লোকেদের বাস, একেবারে নীচে একটা মুরগি কাটার দোকান, সেখানে মুরগি কাটে আর বিক্রি করে একটা বিহারি মোল্লা, সেই একতলাতেই সে থাকে, দোতলায় একটা ছোট্ট ঘর ভাঁড়া নিয়ে থাকে রাজলক্ষ্মী, তিনতলায় থাকে এক জ্যোতিষী, নিজের ছোট্ট ঘরের মধ্যেই ব্যবসা পেতে বসেছে, একেবারে চারতলায় থাকে একটা লোক, সে কী করে কেউ জানে না, বেশিরভাগ সময় ঘর থেকেও বেরোয় না সে, রাজলক্ষ্মী কী করে, তা যদিও সেই বাড়ির লোকে আর তার সাথে আরও অনেকে জানে তবু তাকে তারা কেউ কিছু বলে না বরং তার সাথে ভাল ভাবেই কথা বলে দেখা হলে, তার ঘরে খদ্দেরও জোটে বেশ ভালই, অনেক সময় অনেক লাল বাতি এলাকাতেও ঘোরাফেরা করে সে, অনেক হোটেলে যায়, অনেক সময় নিজের বাড়িতে থেকেই নিজের ফোনে, যাকে বলে, লাইভ স্ট্রিমিং করে, তাকে হাজার হাজার তৃষ্ণার্ত বুভুক্ষু মানুষ নিজেদের ফোন বা ল্যাপটপ, ট্যাবলয়েড বা ডেস্কটপের পর্দা হাতরে হাতরে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখে অশ্লীল সব ওয়েব সাইটের পাতায় আত্মমৈথুন করতে করতে, তাদেরকে কখনো রাজলক্ষ্মী নিজের নগ্ন শরীর দেখায়, কখনো বা তাদেরকে নগ্ন হয়ে মৈথুন করে দেখায়, আবার অনেক সময় তারই মত একই কাজে থাকা আরও কিছু লোককে, পুরুষ মহিলা যেই হোক, সাথে নিয়ে একত্রে সেই সব ভিডিও বানায়, মাঝখানে চারদিকে কী এক মারন ভাইরাসের সংক্রমণের খবর ছড়ানোর পর থেকে চারদিকে সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য আরও অনেকের মত তার আয় যখন বেশ কমে গেছিল তখন তো এই ফোন দিয়েই অন্তর্জালের সাহায্যে সামান্য কিছু উপার্জন চালিয়ে গেছিল সে, সে সময়টা তার আর তার মত আরও অনেকের জন্য বেশ কঠিন হয়েছিল, এখন যদিও আবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়েছে, আর তার নিজের সেই জীবাণু থেকে কোনো রকম সংক্রমণ বা কিছু হয়নি, আবার অনেক সময় অনেক লোককে নিজের বাটীতেও নিয়ে আসে সে, তার বাটীতেও আসে তার নতুন পুরোনো অনেক খদ্দের, যেমন আজ একটা লোক এসেছে।
লোকটাকে নীচে থেকেই লক্ষ্য করেছিল রাজলক্ষ্মী, নিজের ঘরের জানলা থেকে, লোকটাকে উপর থেকে ইশারাও করেছিল সে, সামনে রাস্তায় মুরগির ছাট ও রক্তের দুর্গন্ধের মধ্যেই সেই লোকটা ঘোরাফেরা করছিল, শ্রীকান্ত নাম লোকটার, লোকটা একটা লোফার, ভাবলেশহীনভাবে নানা জায়গায় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। সেদিন সেখানে যেমন হাটাহাটি করছিল, আর মুরগি কাটা দেখছিল, মুরগি কাঁটা দেখতে লোকটার কেমন যেন একটা অদ্ভূত মজা লাগে, যখন মুণ্ডহীন মুরগির ধরগুলো মাটিতে পড়ে ছটফটাতে থাকে, দারুন হাঁসি পায় তার ওটা দেখে, কেন, তা সে নিজেও জানে না, কিন্তু শুধু হাঁসি পায়, এটুকুই জানে সে, মুখটা উপরে তুলে আপন মনে জরাজীর্ণ ইমারতটার দিকে তাকাতেই রাজলক্ষ্মীকে নজরে পড়েছিল তার, আর রাজলক্ষ্মী তার আগে থেকেই সেখানে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আপন মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখেছিল সেই লোকটা, মানে শ্রীকান্তকে। রাজলক্ষ্মীর যদিও বয়স সেই ছোকরা গোছের লোকটার থেকে বেশ বেড়, তবুও সেই লোকটা মানে শ্রীকান্তর কেন কে জানে, রাজলক্ষ্মীকে দেখে বেশ ভাল লেগেছিল, রাজলক্ষ্মীর চোখে চশমা, তাও তাকে পছন্দ হয়েছিল শ্রীকান্তর, রাজলক্ষ্মী তাকে ইশারা করে প্রথমে, নেহাতই মজা করেই সেটা করেছিল সে, পাল্টা শ্রীকান্ত আবার তাকে পাল্টা ইশারা করে, তার পর রাজলক্ষ্মী তাকে ইশারায় ইঙ্গিতে ওপরে আসতে বলে, শ্রীকান্ত প্রথমে একটু ইতস্তত করে মনে মনে, কারন মুরগির রক্তমাখা পালক আর ছাট এর তীব্র গন্ধ পেরিয়ে সেই জরাজীর্ণ বাড়ির ভেতরে ঢুকতে কেউই চাইবে না, কিন্তু কিছুক্ষণ পর রাজলক্ষ্মীর কথায় উপরে উঠে আসে সেই বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে, মুখ থেকে সিগারেটটা ফেলে দেয়। রাজলক্ষ্মী তাকে সত্যি সত্যিই উপরে আসতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছিল, সত্যি বলতে, সে ভাবতেই পারেনি যে ছেলেটা সত্যি সত্যিই উপরে তার কাছে আসতে চাইবে, কারন সে নিজে তো নেহাতই ইয়ার্কিই করছিল তার সাথে। তবে সে সত্যিই আসছে দেখে নতুন এক খদ্দেরের জন্য ভালও লাগছিল তার। গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক বার নিজের চুল ঠিক করে নিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে শুরু করে দিল রাজলক্ষ্মী, ইতিমধ্যে নিজের দরজায় কয়েক বার টোকার আওয়াজও শুনতে পেল সে, বুঝতে পারল এ নির্ঘাত সেই ছেলেটাই হবে, গিয়ে হাঁসি মুখে আয়নার সামনে থেকে সরে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে দেখল রাজলক্ষ্মী, বাইরে সত্যিই সেই ছোকরাটা দাঁড়িয়ে, তাকে হাঁসি মুখে হাসতে হাসতে ভেতরে আসতে বলল রাজলক্ষ্মী, শ্রীকান্তও ঢুকল রাজলক্ষ্মীর ঘরের ভেতরে, ঘরটা ছোট্ট, কিন্তু তাও বেশ পরিপাটি করেই সাজানো, অন্তত বাড়িতা বাইরে থেকে যতটা নোংরা আর ছন্নছাড়া দেখতে তার তুলনায় অনেক বেশি পরিপাটি আর গোছানোই বলা চলে, একটা কোনায় একটা খাট, একটা ছোট্ট টিভি এক পাশে, ঘরের মধ্যে আবার কিছু জায়গায় দেওয়াল জুড়ে ছোট টুনি আলো দিয়ে সুন্দর করে সাজানো, রাজলক্ষ্মী দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরের মধ্যে একটা জায়গায় এসে দাঁড়াল, সেই ছেলেটা ঘরের মধ্যে হেঁটে ঘুরে ঘরটা দেখতে দেখতে শেষে বিছনায় এসে বসল যখন রাজলক্ষ্মী তাকে বলল বিছনায় আরাম করে বসতে, রাজলক্ষ্মী তাকে হেঁসে জিজ্ঞেস করল যে সে মদ বা চাখনা কিছু খাবে কি না, ছেলেটা জানাল একটু মদ হলে পরে আরও ভাল হয় কারন তাহলে আমেজটা আরও ভাল করে তৈরী করা যাবে, শুনে রাজলক্ষ্মী পাশে রান্না ঘর থেকে ছোট্ট ফ্রিজটা খুলে মদের বোতলটা বের করে একটা গ্লাস নিতে গিয়ে জানলা দিয়ে হঠাৎ করে দেখল ব্যাপারটা, বা বলা ভাল, তার চোখে পড়ে গেল সেটা। বাইরে বাড়ির উলোদিকে সরু গলিটায় রাস্তার ওপর একটা কুকুর দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রাজলক্ষ্মীকে দেখছিল, রাজলক্ষ্মীও প্রথমে কুকুরটাকে দেখে বেশ মজাই পেয়েছিল, ভারি সুন্দর দেখতে কুকুরটা, কিন্তু প্রথমে তার মুখে থাকা জিনিসটা যে কী সেটা সে ভাল করে ঠাহর করতে পারেনি, পরে হলুদ হ্যালোজেনের আলোয় জিনিসটা সে ভাল করে লক্ষ্য করল, সেই কুকুরটার মুখে একটা কাটা হাত ঝুলছে, প্রথমে রাজলক্ষ্মী সেটা দেখে নিজের মনে ভাবল যে সে নিশ্চয় ভুল দেখছে, কাঁটা হাত না, নিশ্চয় অন্য কিছু হবে হয়ত, কিন্তু পরে চশমা দিয়ে আরও ভাল করে নিরীক্ষণ করে দেখল, যে সেটা আদতে একটা কাটা হাতই, একটা বাচ্চার মানে কোনও শিশুর কাটা হাত, কারন সেটা একটা গোটা হাত, এবং যেভাবে সেটা কাঁপছিল সেই কুকুরটার মাথার হালকা ঝাঁকুনিতে তাতে করে বোঝা যাচ্ছিল যে সেটা কোনো শিশুরই কাটা হাত হবে কারন তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে বেশ নরম আর তুলতুলে ওটা ঠিক কোনো বাচ্চার হাতের মতই, যেটা সেই কুকুরের মুখ থেকে ঝুলে বেরিয়ে আছে আর সেই হ্যালোজেনের আলোয় নজরে পড়ছে রাজলক্ষ্মীর, কুকুরটা রাজলক্ষ্মীকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে তার পর সেখান থেকে চলে গেল সেই কাঁটা হাতটা মুখে করে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে ছুটতে ছুটতে, আর তার পর গিয়ে গলির মোড়ে অদৃশ্য হল। রাজলক্ষ্মীর গোটা গা জুড়ে একটা গা গোলানো এবং ঘিনঘিনে ভাব চাড়া দিয়ে উঠল, স্পষ্ট বুঝতে পারল সে, সেই দৃশ্যটা দেখার পর, তার হাত থেকে সেই মদের বোতলটা প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু সেটাকে সময় মত ঠিক ধরে সামলে নিল রাজলক্ষ্মী, তার গা টা ভেতর থেকে মোচর দিয়ে গোলাতে আরম্ভ করল, তার তখন প্রায় বমি করতে ইচ্ছে করছে, ওদিকে সে নিজে একটা বাচ্চা ছোকরাকে নিজের ঘরে ডেকে এনেছে সেই খেয়াল তখন তার মাথা আর স্মৃতি থেকে উবে গেছে, যাই হোক, সেই মদের বোতল টা আর দুটো গ্লাস হাতে করে নিয়ে তার পর তো সেই ঘরে সেই ছেলেটার কাছে নিয়ে গিয়ে বিছনার উপর রাখল সে, শ্রীকান্ত নিজেও লক্ষ্য করল, রাজলক্ষ্মীর মুখের ভাব দেখে, যে তার মধ্যে কেমন একটা যেন অস্বস্তি হচ্ছে নিশ্চয়, কিন্তু সে তাকে মুখে কিছু জিজেস করল না, শুধু তাকে হাত ইশারায় বলল নিজের কাছে বিছনায় এসে বসতে। রাজলক্ষ্মী তাই করল। কিছুক্ষণ তারা দুজনেই শুধু চুপচাপ বসে থাকল, কোনো কথা না বলে, একে অপরকে খুটিয়ে খুটিয়ে লক্ষ্য করে গেল নিঃশব্দে, রাজলক্ষ্মী দেখল তার পাশে বসা জোয়ান আগন্তুককে, তার গায়ে একটা হাতা গোটানো জামা, পায়ে একটা ছেঁড়া জিনস যা দেখলে মনে হয় যেন ইঁদুরে খেয়েছে কিন্তু আজকাল তো আবার এই সবই যাকে বলে ফ্যাশান, বুকের বোতামগুলো খোলা, তার বুকের কিছু হালকা লোম নজরে পড়ে সেই ফাকের মধ্যে দিয়ে, তার দুই পায়ে ময়লা চপ্পল, মাথার চুলগুলোতে ধুলোর গুঁড়ো লেগে আছে, শ্রীকান্তও দেখল রাজলক্ষ্মীকে, তার লম্বা কেশরাশিতে লাল রঙ করা, নিশ্চয় কলপ করেছে যাতে তার বয়সটা বোঝা না যায়, চোখে একটা চশমা আঁটা ঠিকই, কিন্তু তাতে যেন তাকে দেখতে আরও বেশি সুন্দর দেখায়, বুকে একটা শক্ত হাতাকাটা ব্লাউজ আর তাতে করে তার বুকটা যেন আরও বেশি ডবকা লাগছে, তার হাতগুলো যেন মাখনের মত কোমল আর নরম বলে মনে হয়, গায়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়েনি কোথাও এখনও তেমন, শাড়ির আঁচলের ফাক ফোকর দিয়ে তার মাংসল পেট ও পুষ্ট বুক বেশ ভালই নজরে পড়ে, তার ঠোঁটে সুন্দর লিপস্টিক মেখেছে, গা থেকেও একটা আঁতরের মিষ্টি সুবাস এসে লাগছে শ্রীকান্তর নাকে, তার গাল গুলো লাল টুকটুকে যেন একেবারে কাশ্মীরি আপেলের মত, গায়ের রংও একটু ফরসা, এই সব কিছু তার পাশে বসে বসে লক্ষ্য করল শ্রীকান্তও, তারা উভয়েই একে অপরকে আড়চোখে লক্ষ্য করে গেল কিছুক্ষণ এভাবে বসে বসে, তার পর রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তকে বলল পাশে কলঘরে ঢুকে তার মাথায় লেগে থাকা ধুলো সব পরিষ্কার করে, হাত মুখও একটু ধুয়ে নিয়ে তার পরে বসতে তাহলে তার মেজাজ আর সাথে শরীরটাও একটু হালকা হবে, কিন্তু তার সে কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে সেই মদের বোতলটা খুলে বিছনায় রাখা দুটো গ্লাসের মধ্যে থেকে একটা টেনে নিয়ে তাতে ঢালল শ্রীকান্ত, আরেকটা গ্লাসে রাজলক্ষ্মীর জন্যও ঢালতে যাচ্ছিল সে, কিন্তু তাতে রাজলক্ষ্মী আবার বাঁধ সাধল, বলল, যে তার গা টা এখন কেমন যেন ম্যাজ ম্যাজ করছে, তাই সে মদ খাবে না, শ্রীকান্ত যদিও তাকে হেঁসে বলল, যে মদ খেলে পরে তার গায়ের সেই ম্যাজ ম্যাজ ভাবটা কেটে যাবে, কিন্তু তাও রাজলক্ষ্মী মানা করায় সে আর তার জন্য গ্লাসে মদ ঢালল না, আসলে তার গা টা যে তখন বেশ গোলাচ্ছে ওই দৃশ্যটা দেখে ফেলার পর তা শ্রীকান্তকে বলতে চায়নি সে, ওদিকে শ্রীকান্ত নিজেই নিজের জন্য মদ ঢেলে তাতে চুমুক দিল একটা , তার পর আবার জিজ্নেস করল রাজলক্ষ্মীকে, যে তার কাছে চাট বা ওই জাতীয় কিছু আছে কি না তাহলে ব্যাপারটা আরও জমত, রাজলক্ষ্মী তার কথায় "দাঁড়া বাবু, দেখছি" বলে আবার করে ঢুকল রান্না ঘরে ফ্রিজটা খুলে দেখার জন্য, কিন্তু তখনও তার গায়ের মধ্যে থেকে সেই গোলানো ভাব আর ম্যাজ ম্যাজ ভাব কাটল না, প্রথমে তো আবার সেই রান্না ঘরে ঢুকতেই মন চাইছিল না তার, যেই দৃশ্য সে নিজের চোখে দেখেছে একটু আগে, সেটা বার বার তার মনে মাথাতে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘোরাফেরা করতে শুরু করে দিয়েছে, বরং সে নিজে যতই সেটা না মনে করার চেষ্টা করছে নিজের মনে, ততই সেটা আরও বেশি করে তার চোখের সামনে, তার মনের আয়নায় ভেসে উঠছে, সে মনে মনে ভাবল, অন্তত ভাবার চেষ্টা করল, যে সে নিজে নিশ্চয় ভুলই দেখেছে, ওটা কোনও খাবারের টুকরো বা ওরম কোনো নোংরাই হবে হয়ত, কিন্তু এটা মনে করতেই পরক্ষণেই তার চোখের সামনে আবার করে সেই দৃশ্যটা ভেসে ওঠে, যেখানে সে দেখতে পায় পরিষ্কার যে সেই কুকুরটার মুখের মধ্যে তার দাঁতের কপাটের মধ্যে আটকে আছে একটা লকলকে কাঁটা হাত, যেটা একটা বাচ্চা শিশুর বাহুর দৈর্ঘ্যেরই, এবং সেই দৃশ্যটা মনে হতেই আবার করে রাজলক্ষ্মীর গা টা ঘিনঘিনিয়ে উঠছে, ফ্রিজের দরজাটা খুলে সে দেখল, ভেতরে সেরম চাখনা জাতীয় কিছু নেই খাওয়ার মত, তাই সে আবার করে ফিরে এসে সেই কথা সেই ছেলেকে জানাল, ছেলেটা তা শুনে বলল, থাক, দরকার নেই আর অন্য কিছুর তার, তার পর আরও এক চুমুক মদ খেয়ে মুখ দিয়ে 'চাক' করে জোরে একটা শব্দ করে রাজলক্ষ্মীকে আবার নিজের কাছে এসে বসতে বলল, রাজলক্ষ্মী হাঁসি মুখে এসে তাই বসল, কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে হাঁসি লেগে থাকলেও তার মনে আর শরীরে সেই অস্বস্তি আর গা গোলানো ভাব তখনও ছিল, শ্রীকান্ত তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করল, রাজলক্ষ্মী তার নাম বলল, তার পর একইভাবে শ্রীকান্তের নাম জিজ্ঞেস করল এবং সে উত্তর দিল। তার পর শ্রীকান্ত তাকে একটা নিষিদ্ধ প্রশ্ন করে বসল, তার বয়স জানতে চাইল সে, এটা শুনে হেঁসে ফেলল রাজলক্ষ্মী। "কেন রে?!" "এমনই।" "তোর কী মনে হয়, কত হতে পারে?" "আমি জানি না।" "তাও আন্দাজ কর।" শ্রীকান্ত মনে মনে একটা আন্দাজ করে রাজলক্ষ্মীকে বলল, রাজলক্ষ্মী আবারও হেঁসে ফেলে তাকে তার পর তার নিজের আসল বয়সটা বলল, শুনে অবাক হয়ে শ্রীকান্ত তাকে বলল যে তাকে মোটেও অত বয়স্ক দেখতে লাগে না, এটা শুনে মনে মনে বেশ খুশিই হল রাজলক্ষ্মী, মজার ছলে শ্রীকান্তকে বলল "তাই?" "হ্যাঁ।" উত্তর এল। তার আরও কাছে এসে বসল রাজলক্ষ্মী, শ্রীকান্ত তাকে আরও এক বার ভাল করে দেখে নিল, "কীরে, নেশা হয়েছে?" রাজলক্ষ্মী এক বার জিজ্ঞেস করে তাকে, শ্রীকান্ত তাকে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না, স্রেফ কামার্ত নজরে তার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে, রাজলক্ষ্মীর শরীর নিরীক্ষণ করে, তার পর আস্তে আস্তে করে তার কাছ আরও কাছে সরে বসে ক্রমে ঢোলে পড়ে রাজলক্ষ্মীর গায়ের উপর, তার ঘাড়ের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়, নিজের ঘাড়ের উপর শ্রীকান্তর গরম নিঃশ্বাস ও উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া অনুভব করে রাজলক্ষ্মী, উত্তেজনায় শ্রীকান্তর কাঁধের উপর নিজের হাতের নখ দিয়ে তার জামা খামচে ধরে চোখ বোঁজে রাজলক্ষ্মী, কিন্তু সেটা করতেই, তার মনের ভেতরে সেই এক দৃশ্য ভেসে ওঠে, একটা কুকুরের মুখের মধ্যে থেকে বেরিয়ে একটা শিশুর রক্তাক্ত কাঁটা বাহু যেন, আর সেটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ভয়ে বিরক্তিতে আবার করে চোখ খোলে রাজলক্ষ্মী, তার আবার করে গায়ের মধ্যে সেই গা গোলানো ভাবটা আরও বেশি বেড়ে যায়, অস্বস্তিতে শ্রীকান্তকে নিজের কাছ থেকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজেও সরে বসে রাজলক্ষ্মী, তাতে বেশ অবাক এবং হালকা বিরক্তও হয় শ্রীকান্ত, কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশ ভদ্রভাবেই জিজ্ঞেস করে বসে যে হঠাৎ কী হল, তাতে রাজলক্ষ্মী প্রথমে কিছু বলে না তাকে, পরে সে আরেক বার তাকে শুধোলে পরে সে বলে যে তার নাকি হঠাৎ শরীরটা ভাল লাগছে না, শ্রীকান্ত এই কথা শুনে মনে করে, যে নিশ্চয় রাজলক্ষ্মী টাকার জন্যই এরম করছে কারন হাজার হোক, সে একজন বেশ্যা, খেটে খায়, আর তার সাথে টাকার কথাটা তো বলেই নি শ্রীকান্ত, কিন্তু তাকে মানে শ্রীকান্তকে মুখ ফুটে ইচ্ছে করেই দুষ্টুমি করে কিছু বলছে না। তাই এটা মনে হওয়াতে শ্রীকান্ত নিজের পকেট থেকে তার কাছে যত ছিল, এক সাথে বেশ কিছু টাকা বের করে হাতে করে তুলে ধরে রাজলক্ষ্মীর সামনে, সেটা দেখে বেশ অবাক হয় রাজলক্ষ্মী "এখনও শরীর খারাপ করছে?" বলে তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় শ্রীকান্ত, রাজলক্ষ্মী এক বার অবাক হয়ে তাকায় শ্রীকান্তর দিকে, তার পর আবার তাকায় সেই টাকার বান্ডিলটার দিকে, এবং আস্তে করে ইতস্তত ভাবে হাত বাড়িয়ে সেই টাকাটা নিয়েও নেয়, এবং সেটা নিয়ে অন্য একটা ঘরে গিয়ে প্রথমে সেয়ানার মত নিজের একটা ছোট্ট ব্যাগের মধ্যে গুনে নিয়ে ভরে রাখে, এবং তার পর আবার করে ফিরে আসে, এসে বসে আবার করে শ্রীকান্তর কাছে, শ্রীকান্ত রাজলক্ষ্মীর এই কাজ দেখে মজা পেয়ে মনে মনে তাকে "সেয়ানা মাগী" বলে, তার পর শ্রীকান্ত আবার করে তার কাছে গিয়ে বসে আস্তে করে খসিয়ে ফেলে প্রথমে তার বুকের আচল, এবং তার পর তার চোখ থেকেও চশমাটা খুলে রেখে তার কপালটা নিজের দু হাত দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে প্রথমে আদর করে সেখানে একটা চুমু খায়, তার পরে সেখান থেকে তার ঠোঁট জোড়া ক্রমে রাজলক্ষ্মীর নাক, ঠোঁট, থুতনি, গলা, ঘাড় বেয়ে তার বুকের ওপর এঁকে দেয় উষ্ণ চুম্বন, কিন্তু ওদিকে রাজলক্ষ্মীর মাথার আর মনের মধ্যে থেকে তখনও সেই দৃশ্যটা যায়নি মুছে, এবং সেটা তখনও তার মাথায় এবং মনে সমানে আঘাত দিয়ে চলেছে, ওদিকে শ্রীকান্ত নীচু হয়ে ঝুঁকে সমানে তার, মানে রাজলক্ষ্মীর বুকের ওপর নিজের ঠোঁট, জিভ ও দাঁতের ছোঁয়া ও কামড় যথাক্রমে বসিয়ে চলেছে, একে একে তখন সে বসে রাজলক্ষ্মীর বুকের ব্লাউজের বোতামগুলো খুলছে, রাজলক্ষ্মীর দুই হাত তখন তার মুখ ও ঘাড়ের কাছে জড়িয়ে আছে, কিন্তু রাজলক্ষ্মীর মনের মধ্যে সমানে সেই এক ভয় ও ঘেন্না ও গা গোলানো ভাব কাজ করে চলেছে, না চাইতেও হাজার বারও এই ঘটনাটা মনে না করার চেষ্টা করলে পরেও তার চোখের সামনে সেই এক কুকুরের মুখের মধ্যে একটা শিশুর কাটা হাতের যে দৃশ্য সেটা বার বার ফিরে এসে উঁকি দিচ্ছে, এবং ততই আরও বেশি করে তার গা টা গুলিয়ে উঠছে, ওদিকে শ্রীকান্ত রাজলক্ষ্মীর ব্লাউজের বোতামগুলো একেক করে আস্তে আস্তে খুলতে খুলতে তার এক বাহুতে জিভ দিয়ে চাটছিল ও চুমু খাচ্ছিল, এমন সময়েই হঠাৎ করে রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তের ঘাড় ও মাথা জুড়ে ঘেন্নায় হড়হড় করে বমি করে বসল, যখন প্রথম তার মাথায় ঘাড়ে গায়ে সেই টক গরম বমিটা পড়ল, তখন রাজলক্ষ্মীকে ধরে চুমু খাওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকায় সেটাকে অনুভবও করতে পারেনি শ্রীকান্ত, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্তর পাশ থেকে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সোজা কলঘরের দরজা খুলে ঢুকে পড়ল, যাওয়ার পথেও মেঝেতে বমি করতে করতে গিয়েছিল সে, ওদিকে অবাক হতবাক শ্রীকান্ত রাজলক্ষ্মী তার কাছ থেকে উঠে চলে যাওয়ার পরেই লক্ষ্য এবং অনুভব করেছিল, যে তার ঘাড়ের কলার বেয়ে কী একটা যেন গরম তরল স্রোত নেমে আসছে তার বুকের খোলা অংশ অবধি এবং সাথে একটা কীরম যেন বাজে টক গন্ধও পাচ্ছে সে, সেই একই আঠালো থকথকে তরল তার মাথার পেছন ও দুই কান বেয়েও গড়াচ্ছে তখন, তখনই সে দেখল নিজেও তার গায়ে লেগে থাকা সেই বমিটাকে, তার ঘাড়ে, হাতে এবং তার জামার আরও বেশ কিছু জায়গায় লেগেছে সেটা, ঘেন্নায় এবারে তার নিজেরও মেজাজটা ক্রুদ্ধ এবং বিরক্ত হয়ে গেল, ওদিকে রাজলক্ষ্মী তার ছোট্ট বাথরুম-পায়খানাটায় ঢুকে পায়খানার প্যানটার ওপর উপুর হয়ে ঝুঁকে বমি করতে লাগল, ঘেন্নায় আর নিজের ভেতরের এই বমি চেপে রাখতে পারেনি সে বেচারি, আর তাছাড়া চেহারা এখনও ধরে রাখলেও বয়স তো হয়েইছে, সুতরাং দুর্বল মন হলে পরে যা হয় আরকি। ওদিকে শ্রীকান্ত বিরক্ত হয়ে সেই অবস্থাতেই বসে রইল বিছনার ওপর, রাজলক্ষ্মীর হঠাৎ কী হল তা দেখতেও গেল তার সাথে, শুধু বসে রইল, বুঝে উঠতে পারল না যে কী করবে আর কী করেই বা নিজের গা টাকে পরিষ্কার করবে। তার গা তখন বমির তীব্র দুর্গন্ধে ভর্তি। কিছুক্ষণ পর বমি করা হয়ে গেলে পরে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মগে করে জল দিয়ে আপাতত যতটা পারে বমিগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে রাজলক্ষ্মী বেরিয়ে এল নিজের সেই কলঘর থেকে, এসে দেখল যে শ্রীকান্তের কী অবস্থা আর মেঝেতে আর বিছনাতেও সে বেশ কিছু জায়গায় বমি করে বসে আছে, ওদিকে শ্রীকান্তের মুখটা তখন গম্ভীর ও থমথমে, রাগে, বিরক্তিতে, ওদিকে রাজলক্ষ্মী আমতা আমতা করে শ্রীকান্তকে বলল যে তার সাথে গিয়ে জামাটা খুলে কলঘরে গিয়ে নিজের গা মাথা সব পরিষ্কার করে নিতে, এবং তাকে আরও বলল, যে তার কাছে নিজের জামাটা রেখে দিতে, সে পরিষ্কার করে দেবে, রাজলক্ষ্মী তাকে বরং নিজের কাছ থেকে একটা জামা বের করে দিক, সে আজকে সেটা পড়ে যাক, পরে এসে নিজের জামাটা না হয় শ্রীকান্ত আবার নিয়ে যাবে ফেরত, কিন্তু ওদিকে বিরক্ত শ্রীকান্ত তার সে সব কোনো কথায় কর্ণপাত বিন্দুমাত্র না করে তাকে হুকুমের ভঙ্গিতে গম্ভীর গলায় বলল, তার যা টাকা রাজলক্ষ্মী নিয়ে রেখেছে, তা তাকে ফেরত দিয়ে দিতে তৎক্ষণাৎ সে সেগুলো নিয়ে সেই মুহূর্তে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছিল, কিন্তু রাজলক্ষ্মী ওদিকে সেই টাকাটা তাকে ফেরত দিতে চাইছিল না, ফলে সে তাকে নানাভাবে ঠান্ডা মাথায় "বাবু" বলে সম্বোধন করে ভোলানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু ওদিকে শ্রীকান্তও সাফ জানিয়ে দিল যে সে সেখানে বসতে বা রাজলক্ষ্মীর সাথে বসে গল্প করতে চায় না, এমনিতেও তখন সেই ঘরে বিছনায় এবং মেঝেতে বমি ছড়িয়ে রয়েছে, সুতরাং সেখানে বসে গল্প করার মত পরিবেশও নেই আর, অন্য কিছু করা তো দূরস্থ, কিন্তু ওদিকে রাজলক্ষ্মী টাকাটা তাকে দিতে রাজি নয়, এই এক সমস্যা মানুষকে নিয়ে, টাকার লোভ আর যায় না, আর ওদিকে সে যতবারই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে, ততবারই শ্রীকান্ত তাকে বলে গিয়ে তার টাকাটা যেখানে রেখেছে সেখান থেকে সেটা বের করে নিয়ে এসে তাকে ফেরত দিতে না হলে সে নিজেই গিয়ে সেটা নিয়ে নেবে, যখন রাজলক্ষ্মী দেখল যে ছেলেটাকে ফোসলানো বা ভোলানো তো আর যাচ্ছে না, তখন সে তাকে সরাসরি বলল, "বেশ তো, তাহলে থাকবি না যখন তো গলাবাজি না করে এখান থেকে ফোট না!" শুনে একেবারে আকাশ থেকে পড়ল শ্রীকান্ত, রাজলক্ষ্মীকে প্রথমে বেশ ভাল লাগলেও সে যে বেশ একটা জাহাবাজ বেশ্যা মেয়েছেলে, সেটা এখন টের পেয়ে শ্রীকান্ত আবার করে নিজের টাকাটা চাইল তার কাছ থেকে, "দেব না টাকা, কী করবি রে তুই?!" "নিজে গিয়ে নিয়ে নেব।" "যা না, যা, নিয়ে দেখা।" হাসতে হাসতে তাকে ব্যাঙ্গ করতে করতে কথাটা বলল রাজলক্ষ্মী, টাকা নিয়ে তাদের বেশ বিবাদ চলছে তখন, রাজলক্ষ্মীকে একটা খিস্তি দিতেই সে একেবারে ফণা তুলে ফোঁস করে উঠল রীতিমত, তার পর উল্টে শ্রীকান্তকেই ভয় দেখাতে লাগল চিল্লিয়ে লোক জড়ো করার। ওদিকে শ্রীকান্তরও তখন মাথায় যাকে বলে রক্ত উঠে গেছে ওদিকে একেবারে, তার মুখ চোখ লাল টকটকে রাগে বিরক্তিতে আর অপমানে, সে প্রথমে ছুটে গিয়ে বজ্র মুষ্টিতে রাজলক্ষ্মীর গলাটা চেপে ধরল, তার শ্বাস ও স্বর দুটোই রুদ্ধ হয়ে এল, তার পর তার মাথাটা নিয়ে একেবারে জোরে ঠুকে দিল দেওয়ালে, পর পর বেশ কয়েক বার ঠুকল, যখন রাজলক্ষ্মীর গলাটা সে ছাড়ল, তখন ধপ করে তার নিথর শরীরটা পড়ল মাটিতে, দেওয়াল জুড়ে একটা রক্তের লম্বা মোটা দাগ এঁকে। শ্রীকান্তের তখন হুশ হল, যে একটা ভয়ংকর বাজে কান্ড ঘটিয়ে বসল সে রাগের মাথায়। এবারে সে কী করবে, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না, তার মনের মধ্যেও একটা ভয় উত্তেজনা কাজ করতে শুরু করে দিল, এক বার নীচু হয়ে ঝুঁকে বসে রাজলক্ষ্মীর লাশের ওপর দৃষ্টিপাত করল সে, তার দুই চক্ষু বিস্ফারিত, মুখটা অল্প খোলা, চোখদুটো ওপরে ছাদের দিকে নিষ্পলক চেয়ে। এক বার তার নাকের কাছে নিজের ভয়ে কাঁপতে থাকা হাতের আঙুলগুলো ধরল সে, না, নিঃশ্বাস পড়ছে না, এটা বুঝতেই এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াল শ্রীকান্ত কিছুক্ষণ পর যেন কোনো তড়িতাহতের মত, তার পর সেই ঘর থেকে, সেই ইমারত থেকেও সেই বমি গায়ে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে পালিয়ে গেল, যেই টাকার জন্য বচসা থেকে খুন অবধি হয়ে গেল, সেটা না নিয়েই।
