STORYMIRROR

Pamor Kantak

Others

4  

Pamor Kantak

Others

জিমি

জিমি

20 mins
331

শহরে জায়গায় জায়গায় পুরোনো বাড়ি ভেঙে পড়ছে পরিচর্যার অভাবে আর প্রশাসনের উদাসীনতার জন্য, কোথাও বা দশ পনেরো বছরের বহুতল ভেঙে বা হেলে পড়ছে অন্যান্য বাড়ি দোকান ও মানুষের গায়ে, প্রশাসনের লোকেদের সাফাই - ওরম বাড়ি গোটা শহরে শয়ে শয়ে আছে, খুঁজে খুঁজে মেরামত করা সম্ভব নয় তো আবার অনেকে বলেছে তারা ঠিকই কোনো ব্যবস্থা নেবে যেমনটা প্রায়শই বলে থাকে তো অনেকে আবার দায় ঠেলছে আগের সরকারের উপর বা বিরোধীদের ওপরে বা সোজাসুজি নিজেরা মুখের ওপরে সব দায় অস্বীকার করছে, আবার অনেক জায়গায় হেলে পড়া বহুতল ভাঙার নির্দেশ দেওয়া এবং তা কার্যকরও করা হচ্ছে আবাসিকদের বেঘর করে তো আবার কোথাও তা করতে গিয়ে পুলিশ প্রশাসনের লোকেদের সেই সব আবাসিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলেও মাইবাপদের বিরুদ্ধে পুলিশ বা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে অপারগ, নানা বাড়ির বাইরে ঝুলছে বোর্ড আর তাতে কঙ্কাল হাসছে দাঁত কেলিয়ে, নীচে লেখা "সাবধান!", ওরম অনেক বাড়ি আছে ভেঙে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়, মানুষজন কোনো বহুতলের বা বাড়ির গায়ে ভয়ে পেচ্ছাপ অবধি করা বন্ধ করে দিয়েছে কখন কোন দেওয়াল ভেঙে পড়ে তার ভয়ে, গত কাল একটি বাচ্চা মেয়ে তার মায়ের সাথে পড়া সেরে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ভেঙে পড়া কংক্রিটের তলায় আরশোলার মত চাঁপা পড়ে পটল তুলেছে, মা ভর্তি হাঁসপাতালে জখম হয়ে, আর এভাবে একের পর এক মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জলঘোলা রাজনীতি, একদল বিরোধীরা রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে নিজেদের বাল ছিঁড়ছিল জমায়েত হয়ে, সেখানে হঠাৎ শোরগোল অশান্তি, কী হয়েছে শালা? না, কোত্থেকে একটা হিংস্র পাগলা কুত্তা ছুটে এসে সব্বাইকে সেখানে কামড়াতে শুরু করে দিল, অনেক জনকে জখম করেছিল, আর একজন মহিলার কন্ঠনালী চিরে দিয়ে তাকে খুন করেছে সেই জমায়েতের মধ্যেই, ফলে লোকজনকে ক্ষেপে গিয়ে শেষমেশ নিজেদের আত্মরক্ষার্থে সেই কুকুরটিকে একটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হল, সেই কুকুরটি মরে যাবার পরেও নিশ্চিত হবার জন্য একটা ভারি পাথর তুলে সেই কুকুরটির দেহ থেঁতলে দিতে হল, সেটা করতেও প্রথমে ভয় পাচ্ছিল লোকে, পাছে আবার করে উঠে বসে তেড়ে আসে তাদের দিকে, একটা পাথর তুলে একটা লোক একেক পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, আবার এক পা এগিয়ে দু পা পিছিয়ে আসছিল, আবার করে এগিয়ে যাচ্ছিল, তার পাশের কিছু লোকজন তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল, "যা, যা আরে যা না বাল!" সেই ভীতুচোদা মালটা প্রথমে সেই ভারী পাথরটা তুলে সেই কুকুরটার শবের উপর দূর থেকে হালকা করে ছুঁড়ে মারল, পড়ল গিয়ে কুকুরটার গায়ে, তারপর যখন দেখল যে সেই কুকুরটা কিছুতেই সারা তুলছে না তখন কাছে গিয়ে সেই পাথরটা তুলে সেই কুকুরটার লাশটাকে কিছুটা থেঁতলে তারপর আবার সেই পাথরটা ছুঁড়ে ফেলে দিল, আবার আরেকজন এসে সেটা তুলে নিয়ে সেটা দিয়ে থেঁতলে দিতে লাগল সেই কুকুরটাকে, সেটার ভিডিও আবার ঘুরপাক খেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে চারদিকে, নানা লোকে সেই বর্বরতা দেখে ছি ছি করেছে, যারা সেই কুকুরটিকে মারল, তাদের গ্রেপ্তারির দাবিতে আবার কয়েক দল বালের পশু প্রেমীরা রাস্তা দখল করেছে, কয়েক দিন আগেই সেরমই একটি পশু প্রেমী সংস্থার একজন মাড়োয়ারি মহিলা কর্ণধারের ফোনের কথোপকথনের অডিও ঘুরপাক খেয়েছিল চারদিকে যেখানে তিনি একজন লোককে টাকার জন্য শাসাচ্ছিলেন এবং তা না দিলে সেই লোকটির পোষ্য কুকুরটিকে বাড়ি থেকে তুলে এনে মেরে ফেলার হুমকি অবধি দিচ্ছিলেন এবং আজকে আবার সেই একই সংস্থার লোকেরাও মিছিলে কুকুর খুনের এই ঘটনার জন্য রাস্তায় অন্যান্য আরও বালের পশু প্রেমীদের সাথে নেমেছে ভাবলেও হাসি পায়, সেই বিরোধী দলের লোকেদের মধ্যে দুজনকে আবার পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে সে ঘটনার জন্য, এতে আবার সেই বিরোধীদের একাংশ কুকুরের গোটা ব্যাপারটাকে আদতে শাসক দলের লোকেদেরই একটা নোংরা চক্রান্ত বলে দাবি করেছে, শাসক দলের লোকেরাই ইচ্ছে করে বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাস্তার ঘেয়ো কুকুর নিয়ে এসে তাদের মধ্যে ছেঁড়ে দিয়েছে, এই উদ্ভট যুক্তি নিয়েও আবার নানা গণমাধ্যমে চারদিকে নানা হাসিঠাট্টা ও মজা ইয়ার্কি শুরু হয়েছে, তবে যেই কুকুরটি মারা পড়ল তার ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না।

সাধারণত রাস্তার ধারের তারকাটা পাগলা চোদা পথ কুকুরদের কোনো ভাল নাম থাকেও না, কিন্তু সেই কুকুরটি রাস্তার পাগলা ঘেয়ো কুকুর এ পরিণত হওয়ার আগে একটা ভাল বাড়ির কুকুর ছিল, তার নাম তখন সেই বাড়ির লোকেদের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল জিমি।

খানকির ছেলে মনুষ্যজাতিকে যে কোনোদিনও ভরসা করা উচিত নয়, তা ধীরে ধীরে বুঝে উঠতে পেরেছিল জিমি, যেই জায়গাতে সে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল সেটাকে জিমি চিনেছিল একটা ছোট্ট খাঁচা হিসেবে, সে মাটিতে নিজের মায়ের গুদ থেকে বেরোনোর পর তার গায়ের সব রক্ত চেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছিল তার মা, তখন তার ভাল করে চোখও ফোটেনি, তার পর যখন সে আস্‌তে আস্‌তে করে একটু বড় হল, তখন সে সেই কয়েদখানার ভেতরে বন্দি থেকে দেখত যে নানা ধরনের দেখতে মানুষ তার সেই খাঁচার সামনে এসে ভিড় করত, আর নিজেদের ভাষায় কী সব বলত, তার পর আবার চলে যেত, তার পাশেই একটা খাঁচায় আবার একটা বেড়াল থাকত, তার সাথে আবার জিমির সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, হঠাৎ এক দিন, জিমি দেখল অবাক হয়ে, যে সেই বেড়ালটাকে কিছু লোকেরা খাঁচা থেকে বের করে আরেকটা ছোট্ট খাঁচায় ভরল, আর তার পর সেই খাঁচাতে করে তাকে বাইরে নিয়ে গেল, সেই বেড়ালটা জিমির জন্য কাতরভাবে আওয়াজ করছিল, আর জিমিও, তার পর থেকে সেই বেড়ালটাকে জিমি দেখতে পায়নি, তাকে মানুষগুলো কোথায় কেন নিয়ে গেল তা শুধু নিজের মনে ভেবে যেত জিমি, আর উদাস মনে নিজের ছোট্ট খাঁচার একটা কোণে পড়ে থাকত, অনেক সময় নিজের খাবারটাও খাঁচার মধ্যে সে খেতে চাইত না, তার মা অনেক শুধোলে খেত, তার ভেবে অবাক লাগত, কেন, কোন অপরাধে তারা দুজনে সেখানে সেই ছোট্ট কুঠুরির মধ্যে বন্দি হয়ে আছে, তার কোনো কিনারা হাজার ভেবেও করতে পারত না সে, বন্যদের ভালোর জন্যই যে তাদেরকে মানুষ খাঁচার মধ্যে বন্দি করে রাখে, এরম একটা অজুহাত হয়ত জিমির প্রশ্নের উত্তররূপে খাঁড়া করাই যায়, রাষ্ট্রও তো অনেক সময় তাদের সব অত্যাচারের জুলুমের স্বপক্ষে একইরকম যুক্তি খাঁড়া করে, তবে এখানে আর রাজনৈতিক কথাবার্তা না বলাই ভালো,   তার পর হঠাৎ এক দিন জিমিকেও একইভাবে সেই খাঁচার মধ্যে একটা বিশাল বড় মানুষের হাত ধরে বের করে নিয়ে ভরে দিল একটা ছোট্ট খাঁচার মধ্যে, জিমি কিছুই বুঝতে পারল না, যে তাকে তারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেই বেড়ালটার ঘটনার পর থেকে সে এটুকু ঠিকই বুঝতে পারল যে তাকে তারা নিশ্চয় এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যেখানে থেকে সে আর কোনোদিন নিজের মায়ের কাছে ফিরে আসবে না, ফলে তখন সেও একেবারে পাগলের মত হাত পা ছুঁড়তে আর খাঁচার তারগুলো নিজের দাঁতগুলো দিয়ে পাগলের মত কামড়াতে লাগল, তার মাও তার জন্য পাগলের মত চিৎকার করছিল, মায়ের মন তো, জিমিকে সেদিন তারা একটা গাড়ির মধ্যে সেই খাঁচার মধ্যে করে রেখে দিয়ে এল, সেখান থেকে নিজের মাকে দেখতে পাচ্ছিল না জিমি একেবারে, তার পর তাকে নিয়ে সেই গাড়ি রওনা দিল, জিমির পাশেই বসেছিল এক দাঁত বের করা রাক্ষসী, যে মাঝে মধ্যে অতি উৎসাহের সাথে খাঁচার মধ্যে আটক জিমিকে দেখছিল আর নিজের ভাষায় বাচ্চাদের মত স্বরে কীসব অং বং চং বলছিল, যার এক বর্ণও জিমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিল না, যখন তাকে খাঁচা থেকে বের করা হল, তখন এই মহিলা এবং আরও বেশ কিছু লোক জিমি আর তার মায়ের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখে কীসব বলছিল নিজেদের মধ্যে, বাকি সেইসব লোকগুলোও তখন ছিল সেই গাড়ির মধ্যে।

যেখানে গিয়ে সেই গাড়িটা থামল, সেটা জিমির স্বাভাবিকভাবেই একেবারে অচেনা একটা জায়গা, একটা বিশাল বড় পাঁচিল ঘেরা বাড়ি, প্রায় কোনো রাজকীয় রাজপ্রাসাদের মত, সে গাড়ির ভেতর খাঁচার মধ্যে থেকে যতটুকু দেখেছিল তাতে তাই বুঝতে পেরেছিল, গাড়ির থেকে সবাই একে একে বের হয়ে সেই খাঁচাসুদ্ধ জিমিকেও নিয়ে গেল, বাড়ির ভেতরটাও গোল গোল চোখে অবাক হয়ে ভয়ের সাথে দেখছিল জিমি। ঝা চকচকে সব বড়লোকি ব্যাপারস্যাপার, বাড়ির ভেতরেও কিছু লোক আর বাচাকাচ্চা ছিল, তারাও সব জিমিকে ড্যাবড্যাব চোখে অতি উৎসাহের সাথে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল, আর জিমি ভয়ে তাদেরকে দেখে খাঁচার মধ্যে আরও সিটিয়ে যাচ্ছিল, কারন সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যে এর পর তার সাথে কী হতে চলেছে, ব্যাপারটা তার নিজের খুব একটা সুবিধের ঠেকছিল না, তাকে সমেত সেই খাঁচাটাকে সেই সব লোকগুলো নিয়ে গিয়ে রেখে দিল একটা ঘরের মধ্যে মেঝেতে, একটা লোক টুক করে সেই খাঁচার দরজাটা খুলে দিল আর ঝুঁকে বসে জিমিকে আদর করে বাচ্চাদের গলায় বাইরে আসার জন্য আবদার করতে লাগল, কিন্তু জিমি একেবারে সিটিয়ে ছিল ভয়ে সেই খাঁচার মধ্যে, বেরোতে কিছুতেই সাহস পাচ্ছিল না, লোকটাকে আরেকটা লোক কী একটা বলাতে সে আবার উঠে পেছনে গিয়ে বাকি সবার সাথে দাঁড়িয়ে পড়ল, তারা সবাই এক সাথে দেখছিল জিমির দিকে, হাসি হাসি মুখে, কিন্তু তাদেরকে দেখে জিমির মনে হচ্ছিল যেন অনেকগুলো মানুষরুপী হায়না বা ওই জাতীয় কোনো হিংস্র জন্তু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ছোট্ট অসহায় শিকারের জন্য, সে বাইরে বেরোলেই একেবারে তার উপর ঝাঁপাবে, বেশ কিছুক্ষন ভয়ে সেই খাঁচার ভেতরেই কাটানোর পর জিমি অনেক সাহস নিয়ে আস্‌তে করে বেরোল সেই ছোট্ট কয়েদখানার ঘেরাটোপের মধ্যে থেকে, তার পর সেখানেই দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত ড্যাবড্যাব চোখে দেখতে লাগল সেই লোকগুলোকে, একটা লোক আরেকটা লোককে হঠাৎ নিজের ভাষায় কী যেন বলল, তার পর যেই লোকটাকে বলল সে সেখান থেকে কোথায় যেন গেল, দেখল জিমি সবই অবাক হয়ে। বাকি লোকগুলো কেউ তখনও তার দিকে এগিয়ে আসেনি, জিমি বরং এবারে নিজেই একটু ভরসা নিয়ে আস্‌তে আস্‌তে করে একেক পায়ে সেই লোকগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তার পর হঠাৎ যেই লোকটা তাদের মধ্যে কোথায় গেছিল সে এল, হাতে আবার একটা বাটি, তাতে গরম দুধ। বাটিটা নিয়ে এসে সে রাখল ছোট্ট জিমির সামনে, জিমি প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল, সেই বাটিটা জিমির সামনে মাটিতে রেখে দিয়ে সেই লোকটা হাসতে হাসতে আবার করে পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়াল বাকি মানুষগুলোর সাথে, জিমি প্রথমে একটু করে এগিয়ে গিয়ে নিজের নাকটা সেই বাটিটার কাছে নিয়ে গিয়ে শুকল, দুধের সুন্দর গন্ধ, কিন্তু প্রথমেই তার সেটা খেয়ে দেখতে ভরসা হচ্ছিল না, ফলে এমনি সে দাঁড়িয়েই রইল, তার পর আবার গাড়িতে তার পাশে বসে থাকা সেই রাক্ষসীটা তাকে উদ্দেশ্য করে শিস দিতে দিতে মিষ্টি গলায় বাচ্চাদের আদর করার মত করে বলতে লাগল তাকে দুধটা খেয়ে নিতে, কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে, তখন জিমির ইচ্ছে করছিল ছুটে গিয়ে সেই মহিলার কুৎসিত বিচ্ছিরি মুখের থলথলে ভাঁজ পড়া মাংসের ভেতরে নিজের দাঁতগুলোকে বসিয়ে দিতে, যদিও জিমি তখন তা করেনি, কারন মনে ভয় আর রাগ থাকলেও পেটে খিদেও ছিল, ফলে একটা সময় ঠিকই আস্‌তে আস্‌তে করে মুখ ডুবিয়ে চুক চুক করে বাটির দুধটাকে একটু একটু করে খেতে লাগল সে, গোটাটা পেট ভরেই খেল, তার মনের ভয়টা তখন অনেকটাই কেটে গেছে, ছোট্ট বাচ্চাগুলো তাকে ছুঁয়ে দেখতে চাইছিল, কিন্তু জিমি ভয়ে সরে সরে যাচ্ছিল তাদের কাছ থেকে, তাকে শোয়ার জন্য একটা ছোট্ট নরম গরম বিছনাও করে দিয়েছিল তারা, সেখানে শুয়ে জিমি কয়েকক্ষনের মধ্যে ঘুমিয়েও পড়ল, তাকে হাসিমুখে সব লোকগুলো আর বাচ্চাগুলো ঘুমোতে দেখছিল, যখন ঘুম থেকে সে উঠল তখন তার পাশে কয়েকটা ছোট্ট বাচ্চা ছেলে এসে বসেছে, আর তাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করছে, ততক্ষণে নিজের মায়ের কথা সে বেমালুম ভুলেই গেছে, আর তার মনের ভয়ও কেটে গেছে একেবারে পুরোপুরি, তার আগে তার কোনো নামও ছিল না, তার এই 'জিমি' নামটা সেই মানুষগুলোরই দেওয়া, তাদেরকে আস্‌তে আস্‌তে ভরসা করতে শিখেছিল সে।

দেখতে দেখতে সে বেশ বড় আর স্বাস্থ্যবানও হয়ে উঠতে লাগল সেই মানুষগুলোর আদর পেয়ে, আর তাদের সাথে তার ভাল মন্দ নানা রকম স্মৃতি তৈরী হল।

ভাল স্মৃতির মধ্যে তেমন বিশেষ কিছু নেই, ওই একটু আধটু আদর আপ্যায়ন আর নেকুপুষুপনা। তাকে একটা ছোট্ট সুন্দর ঘরও বানিয়ে দিয়েছিল তারা যাকে ইংরেজিতে বলে ডগ হাউস, বাড়ির বাইরেই। সেখানে সে রাতে শুত আর বাড়ি পাহারা দিত, অনেক সময় ঘুমিয়েও পড়ত। আর কোনো আওয়াজ হলেই সঙ্গে সঙ্গে সজাগ হয়ে যেত।

তবে অনেক মন্দ উদ্ভট স্মৃতিও বা তিক্ত অভিজ্ঞতাও তার আছে সেই বাড়ির লোকেদের সাথে।

কিছু রহস্য, খুব নোংরা, যেসব কথা কেউ কখনো বলে না বা বলবেও না।

সেই বাড়িতে একটি মেয়ে ছিল, তার নাম ছিল মিলি। সে আর জিমি প্রায় এক সাথেই বড় হয়ে উঠেছে, যদিও তখন মিলি খুব বেশি বড়ও হয়নি, এই ষোল, আর একটি ছেলে, তার নাম ঋক, মিলির থেকে ছোট এক বছরের, সে আর মিলি ভাই আর দিদি। এক দিন বাড়িতে তারা দুজনে ছিল একা, বাড়ির সব বড়রা গেছিল কোনো এক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে, বাড়ির চাকরেরা ছিল নিজেদের নিজেদের আলাদা ঘরে, দুটো চাকর, একজন বুড়ো লোক আর এক জন তুলনায় জোয়ান মহিলা। বাচ্চাগুলোর পরীক্ষা চলছে, ফলে তাদেরকে সম্ভবত নিয়ে যায়নি। জিমিও ছিল ঘরের মধ্যেই তাদের সাথে, অনেকক্ষন ধরে মিলি আর ঋক দুজনকেই খেলার জন্য অনেক শুধিয়ে শেষে একটা ঘরের একটা কোণায় এমনি উদাস মনে নিজের মত বসে ছিল, তারা দুজনেই নিজেদের নিজেদের ঘরে বসে মন দিয়ে নিজেদের মত পড়াশোনা করছিল, একটা আরশোলাকে সিরসির করে বুকে ভর দিয়ে যেতে দেখে আবার সেটার পেছনে ছুটতে যাচ্ছিল জিমি, হঠাৎ সে দেখল, প্রথমে ঋক বেরোল নিজের ঘর থেকে, তার পর আস্‌তে আস্‌তে করে গেল মিলির ঘরের দিকে, তার দিকে থেকে নজর সরিয়ে যখন জিমি আবার করে সেই আরশোলাটার দিকে তাকাতে গেল তখন দেখল যে সেটা ততক্ষণে তার দৃষ্টির আড়ালে গিয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়েছে, ফলে সে আবার আগের মত চুপচাপ শুয়ে থাকল সেখানেই, হঠাৎ আবার কিছুক্ষণ পর মিলির ঘর থেকে হালকা স্বরে গোঙানির আওয়াজ শুনতে পাওয়ায় নিজের দুই কান খাঁড়া করে উৎকর্ণ হয়ে শুনতে লাগল সে, কৌতূহল হল তার, ফলে সে উঠে এগিয়ে গেল মিলির ঘরের দিকে, ঋক অনেকক্ষন হল মিলির ঘরেই, ফলে তারা সেখানে করছেটা কী আর সাথে মিলি গোঙাচ্ছেই বা কেন তা জানতে আধ ভেজানো দরজার ফাঁক দিয়ে অবাক হয়ে বিহ্বল চোখে জিমি দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল বিছনার ওপর নগ্ন মিলি আর ঋককে, নিজের দুই পা ফাঁক করে বিছনার ওপর শুয়ে আছে মিলি, আর ঋকের মুখ গোঁজা আছে ঠিক মিলির দুই পায়ের মাঝখানে, ফলে মিলি গোঙাচ্ছে, সাধারণত নিজেদের যৌন খিদে মেটানো প্রধান উদ্দেশ্য হওয়ার ফলে যৌনতার সময় কে ভাই বা বোন বা মা সেসব ব্যাপারে বাছবিছার না করা পশুদের স্বভাব হওয়ার দরুন এই অজাচার পশুদের মধ্যে দেখা গেলেও কিছু মানুষের মধ্যেও যে এই একই স্‌বভাব থাকতে পারে তা জিমি সেদিন একেবারে নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করল, যদিও তারা সেখানে কী করছে, তা ঠিক বুঝতে না পারায় এক বার ঘেউ করে নিজের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল জিমি, তারা দুজনেই চমকে উঠল, "কিরে, তুই এখানে?!" মিলি বলে উঠল, তারা দুজনেই এক বার একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসল, তার পর ঋক আবার জিমিকে ডাকল নিজের কাছে বিছনার ওপর, জিমিও লাফ মেরে উঠল সেখানে, সে সেখানে উঠতেই আবার মিলি হাত দিয়ে ধরল প্রথমে জিমির পুরুষাঙ্গ, তার পর সেটাকে নিজের যোনিতে করাল প্রবিষ্ট, আর জিমি তো কুকুর, স্বভাবের দরুন সেও কুকুরের ন্যায় চুদাচুদি শুরু করে দিল হ্যাংলার মত হাসতে হাসতে, আর ওপাশ থেকে ঋক নিজের যৌনাঙ্গ প্রবেশ করাল জিমির পায়ুতে, এবং তিনজনে এক সাথে বিছনার ওপর সেদিন…।

সেদিন তারা কী করেছিল সেটা কখনো বাইরে আসেনি, চার দেওয়ালের মধ্যেই থেকে গিয়েছিল। এবং এটা আরও কয়েক বার হয়েছিল, এবং তাতে মাঝে মধ্যে জিমিও অংশ নিয়েছিল, এক বার বাড়িতে একা থাকার সুযোগে নিজের যৌনাঙ্গের কেশরাশিতে মাখন ভাল করে লাগিয়ে নিয়ে জিমিকে দিয়ে তা লেহনও করিয়েছিল ঋক, এবং অনেকসময় মিলিও তার সাথে মানে জিমির সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়েছিল, এই সবও মাঝে মাঝে মনে পড়ত জিমির যখন সে সেই বাড়ি ছেঁড়ে পরে রাস্তার কুকুর হয়ে উঠেছিল।

সেই বাড়ির দুই মানুষ, এক পুরুষ ও মহিলা, হঠাৎ বেশ কিছুদিন ধরে নিজেদের মনুষ্য স্বভাব ছেঁড়ে দিয়ে কুকুরদের মতই একে অপরের ওপর ঘেউ ঘেউ করছিল, জিমি অনেক সময় তাদের চিৎকার শুনে আর কান্ড দেখে অবাক হয়ে যেত, অনেক সময় মন খারাপ করে পড়ে থাকত, অনেক সময় ভয় পেয়ে যেত, সেই মহিলা অনেক সময় আবার রাগে পাগলের মত নিজের ঘরের বা হাতের সামনে যেখানে যা কিছু জিনিসপত্র পেত সেসব ছুঁড়ে ফেলত, এক বার তো একটা ফুলদানি প্রায় জিমির গায়েই এসে পড়েছিল, তাদের অশান্তির জন্য বাড়ির বাকি লোকেদেরও বিশেষ করে বাচ্চাগুলোর মন খারাপ থাকত, এক দিন বিকেলের দিকে জিমি সেই মহিলার ঘরে গেছিল, গিয়ে দেখে সেই মহিলা নিজের ঘর অন্ধকার করে একা একা সাজার বড় আয়নাটার সামনে চুপচাপ বসে আছে, আর সমানে গ্লাসে করে কী একটা তরল যেন খেয়ে চলেছে, জিমি প্রথমে বাইরে থেকেই শুধু চুপটি করে দেখে যাচ্ছিল তাকে, জিমির উল্টোদিকে মুখ করে আয়নার সামনে বসে ছিল সেই মহিলা, জিমি আস্‌তে করে ঘরে ঢুকল নিঃশব্দে, সে তখনও সেই মহিলাকে দেখে যাচ্ছিল, সেই মহিলা এক বার কী মনে করে পেছন ফিরে তাকাতে জিমিকে দেখতে পেয়ে অবাক আর বেশ খুশিও হল মনে মনে, আর জিমি যেন তাকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠল, নিজের চোখে ঠোঁটে গাঁঢ় লিপস্টিক লেপে দিয়ে চুল সব উসকোখুসকো করে খুলে রেখে নিজেকে একেবারে পেত্নী বা শাঁকচুন্নির মত করে সাজিয়ে ঘর অন্ধকার করে একা বসে বসে গেলাসে মদ গিলছে সেই মহিলা আবার কখনো বা পাগলের মত নিজের মনেই হেঁসে উঠছে, তখন বাইরে বিকেলের আলো পুরোপুরি মরে যায়নি, ঘরে কিছুটা হলেও আলো ছিল, আর সেই আলো আঁধারে সেই মহিলার সেই বিকট মুখখানি দেখে সত্যিই চমকে উঠেছিল জিমি, একটু ভয়ও পেয়ে গেছিল, তাকে দেখতে পেয়ে কেমন যেন এক অদ্ভূত পৈশাচিক হাসি হেঁসে জিমিকে নিজের কাছে ডাকল সেই মহিলা, একেক পায়ে সাহস আর ভরসা করেই জিমি গেল তার কাছে, জিমিকে কোলে তুলে নিল সেই মহিলা, প্রথমে জিমিকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করল সে, জিমিও তার নোনতা গাল চেটে তাকে আদর করল আর নিজের ভাষায় সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার পরই হঠাৎ কী যে মাথায় হল তার, আচমকা সেই মহিলা গেলাসটা রেখে অ্যাশ ট্রে থেকে তখনো জ্বলন্ত সিগারেটটা তুলে নিয়ে সেটা দিয়ে জিমির গায়ে নানা জায়গায় ছ্যাঁকা দেওয়া শুরু করল, জিমি কোকিয়ে উঠে তার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করল বটে, কিন্তু সেই মহিলা যেন একেবারে বজ্র মুষ্টিতে তাকে ধরে রেখেছিল, ফলে তার কাছ থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে চাইলেও পারছিল না, আর সেই মহিলাও সমানে মদের ঘোরে জিমিকে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েই চলেছে আর জিমির দুর্বোধ্য কীসব আবোলতাবোল বলতে বলতে মুচকি হাসছে, অবশেষে কোনোমতে তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এক লাফ মেরে তার কোল থেকে নেমে গিয়ে একেবারে সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে নীচে নেমে গেল জিমি, পরে মিলি তার গায়ে নানা জায়গায় সেই ছ্যাঁকা পোড়ার দাগগুলো দেখতে পেয়ে সেসব ঘা গুলোতে ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিল।

সেদিনের পর থেকে আর জিমি কোনোদিনও ওই মহিলার ধারেকাছে ঘেঁষেনি, সেই মহিলা তাকে আদর করতে চাইলেও সে তার কাছে যেত না, সেই মহিলা সবই জানত আর বুঝত, তাই আর সেও একটা সময় জিমিকে কাছে না ডেকে ডাকা ছেঁড়ে দিয়েছিল, তার সাথে যা সে সেদিন মদের ঘোরে করেছিল, তার জন্য মনে মনে অনেকসময়ই সেই মহিলা অনুতাপ করত আর অপরাধ বোধে ভুগত। 

আবার এক বার জিমি একটা ভারী দুষ্টূমির কাজ করে বসেছিল, মিলির ঘরের বিছনার ওপর কোনো কাপড় ফেলা থাকলেই অনেক সময় দুষ্টুমি করে মিলি নিজের ঘরে না থাকলে পরে জিমি সেই ঘরে ঢুকে সেই কাপড় মুখে করে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে সকলের নজর এড়িয়ে চোরের মত অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখে দিত, পরে অনেক খুঁজে হয়রান হয়েও মিলি সেটা পেত না আর বকুনি খেত হয়ত ঋক আর তাই দকেহে মজা পেত জিমি, অনেক খোজার পর অনেক সময় হয়ত সেসব পাওয়াও যেত, কিন্তু জিমি কখনো মিলি বা অন্য কারও কাছে এর জন্য ধরা পড়েনি, এমনই এক দিন মিলির ঘরের বিছনা থেকে তার এক অন্তর্বাস তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেছিল সে, আর সেটা রেখে দিয়ে এসেছিলও তো তাদের বাড়িরই এক বুড়ো চাকরের ঘরে, তার খাটের তলায়, তার সেই বুড়ো চাকর নিজের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে সেটা এক দিন কুঁড়িয়ে পেলও, কিন্তু সেটা পেলেও এটা যে কার সেটা সে জানত না, আর সেটা এমনই এক জিনিস যার ব্যাপারে সে বাড়ির কাউকেও কিছু বলতে পারবে না, কিন্তু সে সেটা ফেলেও দেয়নি, বরং সে সেটা নিজের কাছে রাখত এবং মাঝে মধ্যে সেটা শুকে মৈথুন করত, তাকে সেটা করতে জিমি নিজেও অনেক বার দেখেছে, এক বার দেখেছিল সে, সেই লোকটার আলাদা ছোট্ট একটা কুঠুরির মত ঘরের বাইরের আবছা ঘোলাটে জানলার মধ্যে দিয়ে, যে সেই বুড়ো লোকটা ঘরের মধ্যে নিজের বিছনায় বসে এক হাতে সেই অন্তর্বাস নিয়ে আরেক হাত দিয়ে মনের আনন্দে নিজের গোপনাঙ্গ ডলাই-মালাই করছে, বয়স্ক লোকটা উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে, মৈথুন করতে করতে তার একটা হাত যেটাতে মিলির অন্তর্বাস সে নিজের নাকের কাছে ধরে রেখেছিল, সেটা আছড়ে পড়ল সেই জানলাতে, তাতে একটু চমকে গেছিল জিমি, তার পর সেখান থেকে সে আবার চুপচাপ ফিরেও গেছিল, কিন্তু সমস্যাটা হল যখন এক দিন ঘটনা চক্রে সেই বুড়ো চাকরটার ঘর থেকেই মিলির সেই অন্তর্বাসটা আবিষ্কার হল, তখন সারা বাড়িতে একেবারে রে রে পড়ে গেল, সবাই অবাক হয়ে ঘেন্নার চোখে তাকাল সেই বুড়ো লোকটার দিকে যে কিনা সেই বাড়িতে দীর্ঘ কালের বিশ্বস্ত চাকর, জিমি সব দেখে শুনে মোটামুটি এটা আন্দাজ করতে পারছিল যে সেই বেচারা লোকটাকে সেই অন্তর্বাসটা নেওয়ার জন্যই বকাঝাকা মারধর করা হচ্ছে, কিন্তু জিমি একমাত্র নিজেই জানত যে সেটা সেই বুড়ো লোকটা মিলির ঘর থেকে নেয়নি, কিন্তু তাও তাকে মেরেধরে বাড়ি থেকে একেবারে তাড়িয়ে বেরই করে দেওয়া হল এই হুমকি দিয়ে যে ফের যদি কখনো সে সেই বাড়ির ত্রিসীমানাতেও ঘেঁষেছে তো তারা তাকে জেলের ভাত খাওয়াবে চুরির অপবাদ দিয়ে, এমনকি তার ঘরে তার যেসব জিনিসপত্র ছিল সেগুলোকেও বেশিরভাগ তারা সবাই ফেলে দিল অথবা আগুনে পুড়িয়ে দিল, জিমির খুব খারাপ লাগত ব্যাপারটা, কিন্তু আসল সত্যিটা যে কী, মানে সেই লোকটা যে আসলে নির্দোষ, সে কোনোদিনও কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না সেই ব্যাপারটা।

তার পর হঠাৎ আস্‌তে আস্‌তে সেই বাড়ির সব লোকেদের মধ্যে জিমির প্রতি হঠাৎ করে অনাদর দেখা দিতে লাগল, এই যেমন তাকে আর পাত্তা না দেওয়া, ঠিক মত তাকে খেতে না দেওয়া, এমনকি সেই বাড়িতে সে যার সবচেয়ে বেশি নেওটা ছিল মানে মিলি, সেই মিলিও অনেক সময়ই তার প্রতি অনাদর দেখাতে শুরু করে দিল, কিন্তু তার কোনো কারন বুঝতে না পারলেও তার প্রতি হাজারো অনাদর সত্ত্বেও জিমি কখনো রাগ করেনি বা কারও কাছে কোনো নালিশ করেনি, পাড়ার রাস্তার যেসব নোংরা নেড়িরা ছিল তাদের সাথে জিমি বাড়ির গেটের উল্টোপাশে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করে ঝগড়া করত, বাড়ির গেটটা লাফ মেরে টপকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বহুবার গেটের মাথার সূচালো ফলার খোঁচা খেয়েছে সে, এক দিন হঠাৎ করে অতি উৎসাহে পাকামো করে এক লাফ মেরে বাড়ির বাইরে গিয়ে পড়ল, এবং তখন তারা মানে বাইরের সেই কুকুরগুলো তাকে করে দিল একেবারে বাজেভাবে জখম, কোনোমতে আবার করে পালিয়ে নিজের বাড়ির ভেতরে ঢুকেছিল জিমি, কিন্তু ভীষন বাজে রকমের ঘা ভরে গেছিল তার সারা শরীরে, কিন্তু তা দেখেও তার সেই বাড়ির লোকেরা কেউ তাকে সেবা শুশ্রূষা তো করলই না, উপরন্তু যে মিলি তাকে নিজের হাতে করে এক সময় ঘায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিল সে নিজেই তাকে দারুন বকাঝকা করে এক প্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়েই বাড়ির বাইরে বার করে দিল, তার গায়ের সেই ঘা গুলো পঁচে গিয়ে তার এক দিন দারুন জ্বর এল, তার সেই সব ঘায়ে পোকাও ধরে গেল, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই বাড়ির কেউই তাকে ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া তো দূরস্থ, তাকে নিজেদের কাছেও ঘেষতে দিত না, সবচেয়ে কষ্ট তো জিমি সেদিন পেল, যেদিন সে দেখল যে সেই লোকেরা গিয়ে আবার করে একটা নতুন দামি বিলিতি কুকুরছানাকে খাঁচাবন্দি করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে, ভীষন অভিমানে আর দুঃখে সেই দিন জিমি একেবারে লাফ মেরে সেই বাড়ির গন্ডির বাইরে গিয়ে পড়ল আবার করে, আর কখনো ভেতরে না ঢোকার জন্য, বাইরে যদিও আবার সেই নেড়িগুলোর সামনে পড়ে গেলে পরে তাকে তারা আবার করে আচ্ছাসে তুলোধোনা করবে তা জানা সত্বেও সে বাইরেই থাকার সিদ্ধান্ত নিল, এবং সেই সব নেড়িগুলো অনেক সময় তাকে দেখতে পেলেই তার পেছনে ধাওয়া করত অকারনে, সে তখন পালিয়ে বেড়াত তাদের কাছ থেকে, আস্‌তে আস্‌তে তার সারা গা ধুলোয় ঢেকে যেতে লাগল, তার গলায় একটা নীল রঙের বেল্টের কলার জড়ানো ছিল শুধু, তা থেকেই লোকে তাকে দেখলে বুঝতে পারত যে মালটা নিশ্চয় এক সময় কোনও বাড়ির কুকুর ছিল, অনেক সময় রাস্তার লোকেরা তার গায়ে খাবারের টুকরো ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিত, সেগুলোকে মাটি থেকে তুলে তুলে খেত জিমি, অনেকসময় নিজের সেই বাড়ির সামনে দিয়েও ঘোরাফেরা করেছে সে, রাস্তা দিয়ে সেই সব লোকগুলোকেও যেতে দেখেছে, তারা তখন জিমিকে দেখলেও একেবারে চিনতেই পারত না, এমনকি সেই মিলি আর ঋক যার সাথে জিমি মিলে একা ঘরে ঐসব করেছিল তারাও কেউ তাকে একেবারে পাত্তা অবধি দিত না, খুব খারাপ লাগত জিমির এটা ভেবে, মনে সাংঘাতিক কষ্ট আর রাগ হত, অনেক সময় তার ইচ্ছে হত গিয়ে লোকগুলোকে কামড়ে দিতে ছুটে গিয়ে, কিন্তু তাও সে তা করেনি, কারন সে মন থেকে কখনো কারও ক্ষতি চাইত না।

নানা জায়গায় ঘুরেছে সে খাবার আর আশ্রয়ের খোঁজে, কার কাছে গিয়ে খাবার চাইবে, কী খাবার খাবে, ড্রেন থেকে এঁটোকাঁটা তুলে খেতে গিয়ে এক বার একটা সাপের কামড় খেতে খেতে বেঁচেছিল, একবার আবার একটা মাছের বড় কাটা তার জিভে আটকে গেল, সেটা আর সে কিছুতেই তুলতে পারেনি, রক্তাক্ত মুখে সাহায্যের জন্য অনেক লোকের কাছে গেছিল, একটা তার মুখে মেরেছিল কষিয়ে একটা লাথি, এক বার দেখল একটা ফাঁকা জমিতে রাতের বেলা একটা মহিলা একটা পোটলা করে কিছু ফেলে দিয়ে গেছে, সে ভাবল হয়ত এঁটোকাঁটা খাবার দাবার, গিয়ে দেখে সেটা একটা শিশুর লাশ, সেটাকে চিবিয়ে কিছুটা খেতে পারল, কিন্তু জিভে কাঁটা তখনও আটকে থাকার জন্য খেতে বা চেবাতে তার খুব অসুবিধে হচ্ছিল। 

এক বার একটা বেড়ালের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে একটা খালি জমিতে একটা শুকিয়ে যাওয়া কালভার্‌টের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল সে, তার ভেতরে আবার ছিল বেশ কিছু চামচিকের বাসা, একটা বিশাল বড় জীব তাদের ডেরায় হানা দেওয়ায় সেগুলো সব কুৎসিত কিচিরমিচির জুড়ে দিয়ে উড়তে শুরু করে দেয় যথারীতি, এবং একটা গিয়ে একটা কামড় বসায় জিমির নাকে, সেখান থেকে আবার দৌড়ে পালিয়ে ব্যাথায় চিৎকার করতে করতে নিজের মুখটাকে নানা জায়গায় বারি মেরে অনেক কষ্টে সেটাকে নিজের নাকের ওপর থেকে ছাড়িয়েছিল সে, কিন্তু সেখান থেকেই এবং পুরোনো কামড়ের ঘা গুলো থেকে তার মূলত জলাতঙ্কটা ধরে গেল, তখন থেকেই পাগলা খ্যাপাটে খুনে কুত্তা হয়ে গেল জিমি।

তার চোখ দুটো লাল হয়ে থাকত, অনেক সময় থরথর করে কাঁপত সে, ইচ্ছে করত তার গিয়ে কোনো লোককে কামড়ে দিতে, না চাইলেও, মুখ থেকে সব সময় লালা ঝরত, এক বার একটা পাড়ায় একটা বৃদ্ধাকে বাজেভাবে কামড়ে আহত করেছিল, যদিও সেই বৃদ্ধাকে আশপাশের লোকেরা বাঁচিয়ে নিয়েছিল, এবং পাল্টা জিমিকে লাঠিপেটা করতে গেছিল, জিমি তখন সেখান থেকে দৌড় দিয়ে পালায়। আর সেই বৃদ্ধা বেচারি সেই কামড়েই পটল তোলে।

আরেকবার একটা বাচ্চা ছেলেকে কামড়ে মেরেই ফেলে দিল সে, পাড়ায় খেলছিল বন্ধুদের সাথে, একা বাড়ি ফেরার পথে তাকে ধরেছিল আর ভাগিয়ে নিয়ে গেছিল জিমি প্রায় লোকশূন্য এলাকায় একটা নির্জন মাঠের মধ্যে, সেখানেই তার টুঁটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়ে তাকে শেষ করল জিমি, নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও, যেন কোন এক বীভৎস শয়তান তার শরীর মন সমস্ত কিছু অনাধিকার দখল করে নিয়েছে এবং নিজের ইচ্ছে মত তাকে চালিত করছে, সেই বাচ্চাটার শরীরের সিংহ ভাগ উদরস্থ করে সেখান থেকে চলে গেছিল জিমি, সেইদিনই সন্ধ্যে নাগাদ অনেক দেরি হলেও বাচ্চা বাড়ি না ফেরায় তার বাবা মা আর সেই পাড়ার সব লোকেরা খুঁজতে খুঁজতে বাচ্চাটির লাশ আবিষ্কার করে, পাড়ায় চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। দেশে, রাজ্যে এবং শহরে পথ কুকুরদের দৌরাত্ম্যের বিষয় এবং প্রশাসনের তাদের নির্বীজকরণের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তা পরদিন সব খবরের কাগজে এবং চ্যানেলে নতুন করে ইন্ধন জোগায়।  

পরদিন আবার একটা বাচ্চা কুকুরছানাকে ধরে ফেলে একেবারে কেটে চিবিয়ে তার হাড় মাংস সব আলাদা করে দিয়েছিল সে। যখন সে একের পর এক প্রাণকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে শেষ করছে, তখন যে তার অন্‌তরাত্মা একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে কোন এক অদ্ভূত পৈশাচিক আনন্দে তা কিন্তু একেবারে নয়, বরং তার খুব কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু মারন বিষ তার সমস্ত শিরায় ধমনিতে রগে স্নায়ুতে টগবগিয়ে বইতে থাকায় তখন সে আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই।

এবং সেদিন সে ঘোরাফেরা করছিল সেই বিক্ষোভ মিছিলের জায়গাটাতে, সেখানে সব লোকেরা হাতে সব কাগজের প্ল্যাকার্ড নিয়ে কী করছে বা কুত্তাদের মত চিল্লিয়ে সমস্বরে কীসব বলছে সেসব অবধারিতভাবে কিছু বুঝতে না পারলেও তাদেরকেও দেখে ঘেউ ঘেউ করে স্‌বভাববশত তেড়ে গেছিল পাগলা নেড়ি জিমি, কিন্তু তখন সে বুঝতে পারেনি, যে সেই লোকগুলো পাল্টা তাকে কুকুরদের মতই ছেঁকে ধরে তার প্রাণ কেড়ে নিতে পারে, জিমিকে একটা লাঠি জোগাড় করে তারা পেটাতে শুরু করার আগে একজন মহিলার টুঁটি লক্ষ্য করে এক লাফে তার কন্ঠনালী কামড়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলেছিল জিমি, তার পর কোথা থেকে কে একজন সেই কোলাহলের মধ্যে একটা লাঠি বাগিয়ে ধরে নিয়ে এসে জিমিকে সপাটে এলোপাথাড়ি কয়েকটা বারি মেরে তাকে একেবারে রক্তাক্ত করে কাবু করে শুইয়ে ফেলে দিলে, যদিও জিমি বেচারা পাল্টা লড়াই করার অনেক চেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু শেষের দিকে রক্তাক্ত আহত হয়ে পথে শুয়ে থরথর করে স্রেফ কেঁপেই যাচ্ছিল, আর তখনও তার ওপরে লাঠির আর সেই সব লোকেদের লাথির আঘাত নেমে আসছিল একের পর এক, তার প্রাণ প্রায় তখন শরীর ছেঁড়ে বেরিয়েই যাবে, তার রক্তভেজা দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা আর ঘোলাটে হয়ে আসছিল, শেষবার তার সেই বাড়ির সেই সব লোকেদের সাথে কাটানো সব ভাল ও সুন্দর মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল একের পর এক, আর শেষে তার চোখের সামনে ভেসে উঠল ছোটবেলায় দেখা বেমালুম ভুলে যাওয়া খাঁচার মধ্যে বন্দি নিজের মায়ের করুন মুখটা, যে পাগলের মত খাঁচার তারজালিতে নিজের দাঁত বসিয়ে সেটা কামড়ে ছেঁড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে আর জিমিকে ঘেউ ঘেউ করে নিজের কাছে ডাকছে, আর জিমি ছুটে লাফ মেরে পালিয়ে যেতে চাইছে মনে মনে এই হিংস্র মানুষের চক্রব্যূহের মধ্যে থেকে বেরিয়ে নিজের মাতৃক্রোড়ের নিরাপদ আশ্রয়ের মধ্যে।


Rate this content
Log in