STORYMIRROR

Pamor Kantak

Others

3  

Pamor Kantak

Others

পাগল

পাগল

3 mins
156

নর্দমার মধ্যে বোধহয় এই মাত্র কেউ নবজাতকটিকে ফেলে রেখে চলে গেছে, বা গত কালও ফেলে থাকতে পারে, ব্যস্ত সব মানুষেরা কেউই এখনও অবধি লক্ষ্য করেনি, মরা বাচ্চাটা, তার দেহ ভাসছে নর্দমার নোংরা জলে, সেটাকে দেখে জিভ লকলক করছিল কুকুরটার, কারন অনেক ক্ষণ ধরেই অভুক্ত সে, নর্দমার মধ্যে থেকে শিশুটির দেহ তোলার জন্য সে সেখানে ঝাঁপ দিতেই যাচ্ছিল, ঠিক এমনই সময় একটা ভীষণ জোরে রাগত ক্রুদ্ধ কণ্ঠের চিৎকার শুনে মুখ তুলে ঘুরিয়ে দেখল সে, পাড়ার মধ্যে একটা লোক একটা লাঠি বাগিয়ে ধরে তেড়ে যাচ্ছে একটা বাড়ির দিকে, মানুষকে কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করতে দেখে সেই সারমেয়ও যথেষ্ট অবাক, লোকটার মুখে অজস্র নোংরা খিস্তি, কাকে উদ্দেশ্য করে সে সেই কথাগুলো বলছে তা সেই কুকুরটিও প্রথমে বুঝতে পারছিল না, শুধু একটা বাড়ির ছাদের দিকে তাকিয়ে সে বলে যাচ্ছে সেই সব খিস্তি গুলো, সেই ছাদের দিকে নজর ফেরাতেই সেই কুকুরটি দেখতে পেল, যে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক, তার মাথার সব চুল পেকে সাদা আর উসকোখুসকো, লোকটার মুখে একটা ধোঁয়া ধরানো, সে সেই চেল্লানো লোকটার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখে তার পর অন্য দিকে সরে গিয়ে ছাদের মাথা থেকে অদৃশ্য হল, আর নীচে দাঁড়ানো সেই লোকটা তখনও তাকে উদ্দেশ্য করে গালি গালাজ করেই চলেছে।

যেই লোকটাকে খিস্তি করা হচ্ছে, সে একটা পাগল, তার দুই মেয়েই তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে, এক জন ভিন রাজ্যে আরেক জন ভিন দেশে, লোকটাকে দেখার কেউ নেই, তার বাড়ির মতই তারও প্রায় ভগ্ন দশাই, একেক সময় তার বাড়ির নানা জায়গা থেকে বিশাল বড় বড় চাঙর তার বাড়ির বাইরে ভেতরে নানা জায়গায় ভেঙে ভেঙে পড়ে, কিন্তু এখনও অবধি কোনোটাও তার মাথায় বা ওপরে পড়ে নি, সেটা তার দুর্ভাগ্যই বলা চলে, কষ্টেই বেঁচে আছে সে, অনেক সময় খিদে পেলে নানা লোকের কাছে গিয়ে খাবার চায় সে, পাড়ার লোক বলে তাকে অনেক সময়ই অনেক লোকে দয়া দাক্ষিণ্য করে, এমনকি তার ধোঁয়া কেনার টাকাও অনেক সময় অনেকে দিয়ে থাকে, লোকটা যে পাগল তাও অনেকে জানে, কারন অনেক সময়ই রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় পাগলের মত, আর ভাট বকে, মাঝে মধ্যে একটা ছোট পিড়ি মত জোগাড় করে বসে থাকে নিজের বাড়ির সামনের বাগানের মধ্যে এমনই বা ধোঁয়া টানতে টানতে, কিন্তু আজ সকাল থেকেই সেই পাড়ার সেই গলি যেখানে সে থাকে, সেখানের নানা লোককে নিজের বাড়ির মধ্যে থেকে চিল্লিয়ে নানা আজেবাজে নোংরা নোংরা কথা বলে যাচ্ছিল আর খিস্তি দিচ্ছিল সে, অনেক লোকেই সে সব কথা শুনেছে, শুনে তাদেরও মাথা হয়ে গেছে গরম, ফলে তারাও সব তেড়ে গেছে লাঠি বাগিয়ে যাওয়া সেই লোকটার মত, কুকুরটা দেখল, অনেকেই জড়ো হয়েছে রাস্তায়, লাঠি বাগিয়ে আসা প্রথম সেই লোকটা বলছে সেই পাগলটাকে উদ্দেশ্য করে, “কিরে খানকির ছেলে, আয়, খাবার চাইতে আসবি না?!” কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে সেই সব কথা গুলো, তার এখন আর টিকিটিও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যে সেই সব জড়ো হওয়া লোক গুলো তাকে খিস্তি মারলেও বা লাঠিসোঁটা নিয়ে এলেও তার বাড়ির ভেতরে কেউই ঢুকছে না, সবাই বাইরে থেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে গালমন্দ করে যাচ্ছে, কুকুরটা সেটা দেখেও বেশ অবাক হল, সে নিজেও অনেক বারই কোনো বাড়ির ভেতরের কুকুরের সাথে সেই বাড়ির ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই ঝগড়া করেছে, কিন্তু কখনোই বাড়ির পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢোকেনি, বা সেই কুকুর যার ওপর সে ঘেউ ঘেউ করেছে, সেও কখনো শেকলে বাঁধা না থাকলেও সেই দেওয়াল বা পাঁচিল টপকে বাইরে তাকে গিয়ে আক্রমণ করেনি, তার তখন সেই ঝগড়া দেখে সেই সব কথা মনে পড়ে গেল, এমনকি সেই বাচ্চাটার লাশটাকে উদরস্থ করার কথাও বেমালুম ভুলে গেল সে, তখন সে শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই ঝগড়া হই হট্টগোলই দেখে যাচ্ছে, কিছুক্ষণ ধরে তা চলল, তার পর গর্জন করা সব লোকগুলোও একে একে সেখান থেকে জায়গা পরিষ্কার করে চলে গেল যে যার ঘরে, আর সেই পাগল টি তখনও বাড়ির ভেতরেই লুকিয়ে থাকল। যখন সব ঝগড়া থেমে গেল, তখন সেই কুকুরটির সেই বাচ্চাটির লাশের কথাটা মনে পড়ায় নিজের পরিকল্পনা মত সে ছলাৎ শব্দে ঝাঁপ দিল সেই নর্দমার মধ্যে।      


Rate this content
Log in