Bula Biswas

Tragedy Crime

4  

Bula Biswas

Tragedy Crime

#শর্তসাপেক্ষে

#শর্তসাপেক্ষে

8 mins
352


ছোটগল্প

বিষয়: আঞ্চলিক

কলমে: বুলা বিশ্বাস 

শিরোনাম:

#শর্তসাপেক্ষে


      'কই রে হইল তর? আর তর সাইজতে লাইগবেক লয়।' মাটির দাওয়ায় বাঁশের খুঁটি ধরে টালমাটাল শরীরটাকে ঠ্যাকনা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ডুংরু নেশা জড়ানো গলায়, ওর সোহাগিনী কুমলীকে ডাকতে থাকে। আজ একটু বেশিই নেশা করে ফেলেছে ও! ওর ভালোবাসাকে যে আজ ওর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপর পুরুষের হাতে তুলে দিতে হবে। নিজের উপর ওর ঘেন্না হচ্ছে। এভাবেই আজ ও ওর মনিবের কাছ থেকে নেওয়া বিরাট ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পাবে। 

ডুংরু ভাবতে থাকে, ডুংরু পারেনি বলেই ওর কুমলীকে ডুংরুর দায় নিতে হচ্ছে। বড় অপদার্থ ও যে! ও তো মরদের মত কাজ করতে পারলো না। এর থেকে যে ওর মরণ হওয়াই ভালো ছিলো। 


কুমলী বাবুকে খুশি করতে যাচ্ছে। আর কুমলী যদি আজ বাবুকে পুরোপুরি খুশ করে দিতে পারে, ঋণ শোধ করতে না পারার জন্য ডুরুকে আর বাবুর চোখ রাঙানি সহ্য করতে হবে না। বরং ডুংরু ঋণমুক্ত হয়ে মাথা তুলে চলতে পারবে! কিন্তু ডুংরুতো এ ধরণের সমাধান চায় নি। 

অসহায় ডুংরু এসব ভাবতে ভাবতে, ডুকরে কেঁদে ওঠে।


ঠোঁটে লাল রং, মাথায় লাল ফুল, গায়ে সুগন্ধি লাগিয়ে পাটভাঙা বিয়ের ঐ পাটের লাল শাড়ি অঙ্গে পড়ে, কুমলী খিলখিল করে হাসতে হাসতে বেড়ার দরজাটা ঠেলে, ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। গায়ে উগ্র আঁতরের সুবাস, মুখে ধেনো মদের গন্ধ, বাতাসটাকে যেন মাতাল করে দিচ্ছে। এ কি সাজ সেজেছে আজ কুমলী, প্রকৃতিতে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ও!

কমলীর চোখে মুখে নেশা ধরে আছে। ডুংরুও নেশাগ্রস্ত। ওও আর টাল সামলাতে পারছেনা। কুমলীর কালো পাথরের মতো গায়ের রঙ, কোঁচকানো চুল, সুঠাম দেহ, ডাগর চোখদুটোতে, এ কোন সর্বনাশা নেশা আজ ডুংরুকে পাগল করে তুলছে! বউটার উগ্র সাজ দেখে, ডুংরু আত্মহারা! নেশা জড়ানো চোখে, ডুংরু ওর কুমলীর সারা শরীরের উন্মুক্ত প্রতিটা খাঁজ যেন নতুন করে নিরীক্ষণ করছে। ও কেবলই ভাবছে, এ কুমলীতো শুধু মাত্র ওর একার। ও তো অন্য কারোর দেহসঙ্গী হতে পারে না। 


কিন্তু বিধাতার নির্মম পরিহাসে, আজ কুমলী হস্তান্তর হতে চলেছে। ওকে ভোগ করবে গ্রামপ্রধান রতন সমাদ্দার আর তারপরে তার পারিষদবর্গ।  

এরা বংশপরম্পরায় গায়ের জোরে গ্রাম প্রধানের পদ অধিকার করে, অত্যাচারী শাসক হিসেবে খুব দুর্নাম অর্জন করেছে। ওরা নিজেদের স্বার্থে আইন তৈরি করে। গ্রামবাসীরা স্বাধীনভাবে কোনো কাজ করতে পারে না। তাদের কথা বলা, চলাফেরা করা সবকিছুই শাসকশ্রেণী নিয়ন্ত্রণ করে। শাসকশ্রেণীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই তারা মুখ খুলতে পারে না। এর অন্যথা করলে শাস্তিস্বরূপ শাসকশ্রেণীর গুণ্ডাবাহিনী অসহায় লোকগুলোর উপর বেধড়ক অত্যাচার চালায়। এমনকি প্রাণ নিতেও দ্বিধা বোধ করে না। মনে মনে অনেকেই ওদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চায়, কিন্তু তা খুব মুষ্টিমেয় লোক। ওদের মধ্যে সংঘবদ্ধতা ছিল না, বরং বলা যায় ওরা সংঘবদ্ধ হতে ভয় পায়। কারণ শাসকশ্রেণীর গুপ্তচর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। আর তা না হলে গ্রামের সব খবর, প্রধান রতনবাবুর কানে পৌঁছায় কেমন করে? 

তবে ধিকি ধিকি করে বিদ্রোহের আগুন যে জ্বলছিলো না, তা নয়। প্রকাশ্যে আসছিল না বটে। আসলে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসতেই একটু সময় লাগছিলো।


ডুংরু ওর চাষের কাজের জন্য গ্রামপ্রধানের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছিল, ফসল ঠিক মত উৎপাদন না হওয়ার কারণে ও ঠিক সময়ে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। ঋণের দায়ে, চাষের ঐটুকু জমি পর্যন্ত বেঁচে দিয়েছে। ঋণ শোধের জন্য ডুংরু জন খেটে, মাটি কেটে যে যৎসামান্য উপার্জন করেছে, তাতে কোনোমতে একবেলা, কখনো অর্ধাহারে, কখনো বা অনাহারে থেকেও শাসকের দেনা সব শোধ করতে পারে নি। গ্রাম প্রধান ডুংরুকে ওর ঋণ শোধের শেষ দিনও ধার্য করে দিয়েছিল। কিন্তু ডুংরুর শেষ রক্ষা আর হল না। ডুংরু অপারগ হয়ে পড়েছে।

দৌর্দণ্ডপ্রতাপশালী, অত্যাচারী শাসক গ্রামবাসীদের জানিয়ে দিয়েছে, ঋণের বকেয়া সে রাখবে না। যেভাবেই হোক, খেটেখুটে, ঘরবাড়ি, সম্পত্তি,জমিজমা বেচে, না হলে ছেলেপুলেদের তার অধীনে বেগার খাটিয়ে ঋণ শোধ করতে হবে। কিন্তু সত্যি কি তাই? সত্যি কি এভাবে ওরা কোনোদিন ঋণ শোধ করতে পারে? কারণ ঋণশোধের হিসেব রাখতো, শাসকশ্রেণীর লোকেরাই। তাই শেষ উপায়টাও ওরা প্রজাদের পরোক্ষে জানিয়ে দেয়। তা হল, সব কিছু করেও যদি ঋণ শোধ না হয়, তবে ঘরের ডবকা মেয়ে, বৌকে যে ওদের হাতে তুলে দিতে হবে। তারা সুদে আসলে নারীশরীর ভোগ করে সব সঅঅঅঅব ঋণ মুকুব করে দেবে। 

আর এর অন্যথা হলে, ওরা মরদটিকে সর্বসমক্ষে চাবুক দিয়ে মেরে পিঠ ফালাফালা করে রক্তাক্ত করবেন। আর তারপর ঔ রক্তাক্ত অচৈতন্য দেহটাকে টানতে টানতে নিয়ে পাহাড়ের টিলার উপর উঠে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন একেবারে নীচে, যেখানে পাহাড়ের ঝর্ণায় পুষ্ট স্রোতস্বিনী নদীতে ক্ষুধার্ত কুমির ওৎপেতে বসে আছে।


ডুংরুর ঋণের বোঝা যত বাড়তে থাকে, শাসকের চোখ রাঙানি আর ওনার ঐ নিয়মগুলো কানে বাজতে থাকে। কুমলীকে ও সব জানিয়েছে। কুমলী আঁৎকে ওঠে। কোনোমতেই ও ওর ভালোবাসার মরদকে মরতে দিতে পারে না। ভগবান ওকে যে আগুন ঝরানো রূপ-যৌবন দিয়েছে, তা তো ফেলে দেবার নয়। ও তাই দিয়েই ওর মরদকে ঋণ মুক্ত করবে। তা না হলে, ওর ভরা যৌবন যে বৃথা! কুমলী ডুংরিকে জানিয়ে দেয়, রতনবাবুর কাছে ও যাবে।


কয়েকবার ডুংরু, ওর কুমলীকে রতনবাবুর বাড়িতে রতনবাবুর অসুস্থ বৌয়ের সেবা শুশ্রূষার জন্য কাজে দিয়েছিল। সতেরো বছরের কুমলির নধর চেহারা দেখে, সেদিনই নোলা থেকে জল গড়িয়ে ছিল, রতনের। সেদিন থেকেই সে তক্কে তক্কে ছিলো, কিভাবে ডুংরুর বৌটাকে ভোগ করা যায়।  

শত চেষ্টা করেও ডুংরু যখন শাসনকর্তার দীর্ঘদিনের দেনা শোধ করতে পারেনি, ডুংরুকে চুপিচুপি ডেকে রতনবাবু দেনা শোধের সহজ উপায় বাৎলিয়ে দেয়। শুনে ডুংরুর সারা শরীর কেঁপে উঠেছিলো। ডুংরু রতনবাবুর পায়ে ধরে বলে, ও সারাজীবন ধরে রতনবাবুর দাসত্ব করে দেনা শোধ করে দেবে, কিন্তু ও ওর বৌকে দিতে পারবে না।

কিন্তু কে শোনে কার কথা! 



ঋণের বোঝায় ন্যুব্জ ক্যুব্জ ডুংরুর হাড়িয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে বসে থাকতে দেখে, কুমলীর হাসি পায়। ও খিলখিল করে হাসে আর ডুংরুকে বলে, 'হাঁরে, মরদ লুকের অত ভাইঙলে চলে। উ রতনবাবুকে আমি ভাল কইরে চিনি। উ বড় ভাল লুক বটে। বুড়হারে মু খুশি কইরে দিব। তু কুছু ভাবিস লয় রে। আর শুন, উয়ার ঘরকে লিয়্যা গিয়্যা তু যেন কাঁইদবিক লয়। তু না মরদ! ডরাস কেনে? উখান থেইকে ফিরা তু মুকে লিয়া অনেইক দূরে পলায়ে যাবি। এই থানে আর থাইকব লয় রে। ঠিক কিনা? ডুংরুর থেকে দুঢোঁক ধেনো মদ গলায় ঢেলে কুমলী আবার খিলখিল করে হেসে ওঠে। 


ডুংরু ধুকছে। ও যেন ঝিমিয়ে পড়ছে। কুমলীর ভয় হতে থাকে। ঠিক সময়ে যদি বাবুর কাছে না যাওয়া যায়, বাবুর লোকেরা, ওর মরদকে মেরেই ফেলবে। ডুংরুকে টেনে তুলে কুমলীরা হাঁটা শুরু করল। বাবুর বাগানবাড়ির কাছে আসতেই, ডুংরু দেখে, ওর বাবু রক্তচক্ষু করে ওর দিকে এগিয়ে এসে এত দেরি হবার কারণ জিজ্ঞেস করে, ওকে বেশ কয়েক চড় কষিয়ে দিল, আর বলল , 'এখুনি এখান থেকে দূর হয়ে যা। আর এখানে আসার নাম করবি না।' 


বাবুর লোকেরা ডুংরুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে বের করে দিয়ে, বিরাট লোহার গেট ওর মুখের সামনে বন্ধ করে দিল। ঘেয়ো কুকুরের মত ও সারারাত ওরই আশেপাশে পড়ে রইল। সকাল হলে, ও যে কুমলীকে যাবে। 


ওদিকে ভিতরে কুমলী ভয়ে তো অর্ধেক হয়ে গেছে। সেখানে খানাপিনা সবই চলছে। রতনবাবুর ক্ষুধার্ত চোখ যেন ওকে গিলে খেতে আসছে। আজ প্রতিক্ষণে কুমলীকে ব্যবহার করে, ও যে ওদের ঋণের বোঝা মুকুব করবে! এছাড়া অন্য কোন উপায়ই নেই যে!!!! কুমলীকে বিবস্ত্র করতে করতে রতনবাবু এসব কুমলীকে বুঝিয়ে দেয়।


সাঁওতাল মেয়ে, শরীরের যত শক্তি আছে তা দিয়ে, বহু যুঝবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু একের পর এক পুরুষের পাশবিক অত্যাচারে কুমলী আর শেষ রক্ষা করতে পারল না। দাঁত নখের আঁচড়ে, কুমলীর নিজেকে প্রতিরোধ করাটা বৃথাই আস্ফালনে পরিণত হল।


ভোর বেলায়, ডুংরু এসেছে, ওর সোহাগিনীকে নিয়ে যেতে। ওর আজ আনন্দের দিন। ও আজ ঋণমুক্ত। ও স্বাধীন। ওর নেশা ছুটে গেছে। কালো পাথরের মত শক্ত সবল দেহে, পেশল বাহুদুটো বাড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে, 'কুমলী, অ কুমলী, দ্যাখ বটে। তুকে লিয়্যা যাব বুলেই তো ভর ভর আইস্যে গ্যাছি। আয় চইল্যে আয়।'  

চওড়া বুকের পাতা চিতিয়ে, কেবলই বলতে থাকে, 'বাবু মুর কুমলীকে ফিরায়ে দাও। আর তুমার কাইছকে থাইকব লয়। কই গো বাবু কুমলী আইসছে না কেনে? কইনখানে গেল ও,' বলতে বলতে ডুংরু দিক ভ্রান্তের মত যখন এদিক ওদিক করতে থাকে, রতনবাবুর লাঠিধারী পেয়াদারা একটা বড় চাদরে কুমলীর রক্তাক্ত, নিথর, বিবস্ত্র শরীরটাকে ছুঁড়ে রাস্তার ওপারে ফেলে দিল। ছুটে এলো ডুংরু।

ওরা চাদরে জড়ানো শরীরটাকে দেখিয়ে বলল, 'ডুংরু, ওই তোর কুমলী। কোনো ঝামেলা না করে, ওটাকে তুলে নিয়ে, এখুনি তুই এখান থেকে চলে যাবি। টুঁ শব্দটি করলে তোকে জানে শেষ করে দেব। যা, পালা। আর যেন তোকে এ তল্লাটে দেখতে না পাই,' বলে প্রায় প্রাণভয়েই যেন ওরা ভিতরে ঢুকে লোহার গেট বন্ধ করে দিল। 

ডুংরুর চোখে ওরা যে ভাঁটার মতো আগুন জ্বলতে দেখেছে। এবার সত্যিই ওরা ভয় পেয়েছে। ওদের আচরণতো তাই বলে।


ডুংরু অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ছিলো কাপড় জড়ানো পুঁটলির দিকে। মোড়ক আলগা হয়ে বেরিয়ে এসেছিলো ক'টা কালো নিষ্প্রাণ আঙুল, নিকষ তামাটে কোঁকড়া চুলের গাছি। এসবতো ডুংরুর চেনা, বড় আপন! ডুংরু ছুটে এসে টেনে মুখের কাপড় সরিয়ে দিলো। 

একি! কুমলী অমন অকাতরে ঘুমাচ্ছে কেন? নেশা কাটেনি এখনো? 

দু'গালে অশান্ত হাতে চাটি দিতে দিতে বললো, '-----এএ কুমলী, উঠ না কেনে, ঘর যাবিক লাই? তু বইলেছিলি, ইখান থেকে মুরা উই উদিক পানে চইলে যাবো, চল না কেনে। এ কুমলী চুপ থাকিস না। উঠ উঠ বলছি। শুন মোর কথা শুন। মু আর তুকে কষ্ট দিবক লাই।' কথাগুলো বলতে বলতে ডুংরুর কান্নায় গলা ধরে আসছিলো। 

হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে উঠলো, 'শুনছো, সব শুনছো, ডাক্তার দিদিকে খপর দাও না কেনে। একটু জল দে না কেনে।' কুমলীর নিথর দেহটা বুকে জড়িয়ে অবুঝের মত কাঁদতে থাকে ডুংরু। 

ওর গগনভেদী হাহাকারে গাছের ডালে বসে থাকা পাখিরা সব ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে গেলো। 

গতকাল রাতে, ওই দূর মাঠে একলা শুয়েছিলো সে, ঘরে ফেরেনি। দূর শূন্যে চেয়ে ডুংরু অনেক কষ্টে স্বপ্নগুলোকে গুছিয়েছিলো। ঋণ মুকুব হলে, ওরা দূরে কোথাও চলে যাবে। নতুন কাজ খুঁজবে। দু'জনে মিলে একসাথে খাটবে। 

কত লুকের মাথায় ছাদ নেই, শূন্য থেকে শুরু করে কত কী করা যায়। কারা যেন বলেছিলো, 'কুনো কাজই ছুটো লয়।' কারা বলেছিলো, ডুংরু অনেক ভেবেও মনে করতে পারলো না। 


আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা বুকফাটা কান্নায় ভয়ে এক ঝাঁক পাখি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আকাশপানে উড়ে গেল। গ্রামবাসীরা এরকমই কিছু আন্দাজ করেছিল। 

এবার ওরা লাঠিসোটা, বল্লম এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র যার যা ছিল সব নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ওদের মধ্যে প্রধানের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল,সবার অলক্ষ্যে তা কখন যে ঘনীভূত হয়েছে, তা কেউ বুঝতে পারেনি। ডুংরুর সমস্যা আজ ওদের সকলের সমস্যা। আর ওরা অত্যাচার সহ্য করবে না। সবাই ডুংরুর পাশে এসে দাঁড়াল। 


কুমলী নেই। ডুংরু আর ওর জানের পরোয়া করে না। প্রতিশোধ ও নেবেই। 

বাইরে প্রচণ্ড হট্টগোল। প্রধান তার সশস্ত্রবাহিনীকে নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল, জনতাকে শান্ত হতে বলল।

কিন্তু ক্ষিপ্ত জনতার তখন প্রধানের কোনো কথা শোনার পরিস্থিতি নেই।

শুরু হল প্রচণ্ড লড়াই। দুপক্ষেরই বহু লোক আহত হয়েছিল। মারাও গিয়েছিল বেশ কিছু লোক। ডুংরুর হাতে ছিল শাবল। ছুটে গিয়ে প্রধানের মাথায় সজোরে আঘাত করতেই ফালাফালা হয়ে যায় প্রধানের মাথা। ছিটকে পড়ে ঘিলু। নিমেষে প্রধানের রক্তাক্ত দেহ ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। নিমেষে সব শেষ। সাথে সাথেই গুলির আঘাতে ডুংরুর বুক ঝাঁঝরা করে দিল প্রধানের দেহরক্ষী। কিন্তু জনতার আক্রোশে, প্রধানের মস্তান বাহিনী রক্ষা পেল না। মারের বদলা মার দিয়ে, তবেই গ্রামবাসীরা শান্ত হল।


এটাই হবার প্রয়োজন ছিল। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শাসকের অত্যাচার জনগণ বেশিদিন সহ্য করে না। আজ নয় তো কাল, মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেই। যে রক্ষক, সে-ই ভক্ষক, এ বিষয়টি সর্বজনবিদিত। কিন্তু বিরোধী পক্ষ থাকে বলেই, শাসকের বাড়বাড়ন্ত বেশিক্ষণ চলে না। 

নিশিন্দপুর গ্রামে আজ শান্তি বিরাজ করছে। আজও ওখানে ডুংরু কুমলীর কাহিনী লোকের মুখোমুখি ফেরে।


             -----------


কলমে: বুলা বিশ্বাস 

ফোন নাম্বার: 7980205916

মেল আইডি:

bulabiswas60@gmail.com 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy