STORYMIRROR

Bula Biswas

Tragedy Inspirational

4  

Bula Biswas

Tragedy Inspirational

হে বন্ধু, হে সখা

হে বন্ধু, হে সখা

8 mins
305

'সেলেব্রেটিং হর'

বিষয়: নারী

গল্প

শিরোনাম:

#হে বন্ধু, হে সখা


         প্রবাসী বাঙালী মিনির বিয়ে হয়েছে, কোলকাতার ভবানীপুরে এক 

অভিজাত পরিবারে। অর্থ, প্রভাব, প্রতিপত্তি কোনো কিছুর অভাব ছিলো না। পাত্র ব্যাঙ্কের বেশ বড়সড় পোষ্টে চাকরি করেন। নিজেদের বাড়িঘর আছে। কোনো বার্ডেন নেই। বলাই বাহুল্য এহেন পরিস্থিতিতে মিনিরতো সুখের সাগরে ভেসে থাকারই কথা ছিলো। 

কিন্তু নাহ্। ওর ভাগ্যে সেটা হয় নি। গল্পের ট্যুইস্ট এখানেই। 

আসলে এটা গল্প নয়, গল্পের আদলে, এ এক বাস্তব সত্য। মিনির মুখ থেকে শোনা, তারপর ওর সাথে বন্ধুত্ব চলাকালীন আমরা একে অপরের বাড়িতে আসা যাওয়া করতে করতে আসল সত্য প্রত্যক্ষ করি। তবে ওর সাথে দেখা হওয়া থেকে বন্ধুত্বের পর্যায়ক্রমে একজন সম্পূর্ণ নারী হিসেবে মিনিকে পেয়ে, সত্যিই আমি ধন্য। ওর বহু কিছু বিষয় আমার ভালো লাগে, আমাকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে যে কোনো বিপদে পড়লে, ওর মত ভালো পরামর্শদাতা আমার খুব কমই আছে। 

আমার ছেলে আর ওর ছেলে এক স্কুলে পড়াকালীন, ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আমরা মায়েরা যখন একসাথে থাকতাম, তখন প্রাণোচ্ছ্বল, হাসিখুশি মিনিকে দেখতাম, খুব স্পষ্টবাদী। কথায় কথায় ও প্রকাশ্যে ওর স্বামীর বদগুণের কথা বলতো। ও যে ওর স্বামী, শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতারিত, সেটা ও সরাসরি আমাদের কাছে বলতো। 

তবে কখনো ওকে কাঁদতে দেখিনি বা মনোবল ভেঙে পড়তে দেখিনি। 

সদাই ও হাস্যমুখী। 

বিভিন্নজন ওর সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বললেও আমার কোথাও মনে হয়েছিলো, ও মিথ্যে বলে না। আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারণ আমার মনে হয়েছিলো খাওয়া পরা সব কিছু থেকে যখন ও প্রত্যাখ্যাত হয়, তখন এর প্রতিবাদ করা দরকার। প্রথম প্রথম ও প্রতিবাদ করেছিলো বইকি। ও খুব বলিষ্ঠ মেয়ে। কিন্তু কোলকাতার বুকে ওর আপনজনের সংখ্যা খুবই কম। যাঁরা আছেন, তাঁরা অর্থবল যার, তার দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকেন। কপর্দকশূন্য মিনির কথা শোনার মত কেউ ছিলো না। তাই ওর প্রতিবাদের কোনো মূল্যই ও পায় নি।

এহেন অবস্থায় আমার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব যখন বেশ গাঢ় হচ্ছে, ও আমাকে ওর সব কথা খুলে বলে।

ওদের বিয়েটা হয়েছিলো, এক হঠকারি সিদ্ধান্তে। মনীশের এক গার্লফ্রেন্ড ছিলো। নাম রত্না সেনগুপ্ত। একই সাথে ওরা কলেজ, ইউনিভার্সিটি করেছেন। ওদের বাড়িতে রত্নার আসা যাওয়া ছিলো। সবাই জানে, ওদের বিয়ে হবে। রত্নার গায়ের রং কালো হলেও, দেখতে অপরূপা। মনীশ ওকে আদর করে 'কষ্ণকলি' বলে ডাকতেন। রত্না বেশ উচ্ছ্বল স্বভাবের মেয়ে। অপরদিকে মনীশ বেশ গোঁয়ার এবং রগচটাও বটে। 

মনীশ যখন চাকরি পেয়ে যান, রত্নাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ওনার কথা মত সেইবছরেই ওঁদের বিয়ে হবে।

রত্না হেসে বলেছিলেন, সেটা হবার নয়। কারণ ওর দাদা আছেন, আগে ওর দাদার বিয়ে হবে, তারপর ওর। 

মনীশ তৎক্ষণাৎ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বলেন, উনি যে দিনক্ষণ ঠিক করেছেন, সেদিনই উনি বিয়ে করবেন। রত্না যদি রাজি না হয়, ও অন্য কারো সাথে বিয়ে করবেন। 

রত্না হেসে বলেছিলেন, 'যদি পারো করো।'

মনীশ মাত্র একুশদিনের দেখাশোনায় নিজের মায়ের গ্রামতুতো বোন শিলা মাসির মেয়ে মিনিকে পছন্দ করেন। মিনি শিক্ষিত, ফর্সা, দোহারা চেহারা, সুশ্রী। তিন ভাইবোন, মা বাবা নিয়ে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জ্যেষ্ঠা মিনির বাবা, এরকম লোভনীয় সম্বন্ধ হাতছাড়া করতে পারেন নি। কোনো দাবী দাওয়া নেই। শঙ্করবাবু ছেলে সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর পর্যন্ত নিলেন না। ভেবেছিলেন এই সম্বন্ধটা যখন নিজেদের মধ্যে, তখন ভালোই হবে। হঠকারিতার বশে উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মিনিকে উনি মনীশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। 

সায়েন্স গ্রাজুয়েট, ধীর স্থির মেয়ে মিনি বিয়ের রাত থেকেই বুঝতে পারে, ও ঠকেছে। বেশি রাত পর্যন্ত কোনো নারীর সাথে ফোনাফুনি, ওর সাথে চড়া মেজাজ করা, মিনির খুব খারাপ লেগেছিলো। এরপর ও যখন দেখে, ও ব'কলমে স্ত্রী হলেও রত্নাদি'র সাথে মনীশ বেশি সময় কাটান আর এতে মনীশের বাড়ির লোকের সায় আছে। 

প্রথম প্রথম ওর খুব কষ্ট হতো। ও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলো। সব কিছুই মনীশের উগ্র ব্যবহারে প্রত্যাখ্যাত হয়। ও চাকরি করতে চাইতো। কিন্তু মনীশ ওর সব স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন। ওকে বলা হয়েছিলো, ও শুধু খাওয়া পরাটুকু পাবে। তবে ওরা যা দেবে, সেটুকুই। নিজের ইচ্ছে ফলানো যাবে না। 

ও ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়েছিলো। ও এসব কথা ওর বাবা মা'কে জানাতে চায় নি। কারণ ওর মনে হয়েছে, এতে তাঁদের কষ্ট হবে। ও যথেষ্ট বুঝদার মেয়ে ছিলো। ও দেখলো, তখনো ওর ভাই বোন পড়াশুনা করছে। ওর সমস্যার কথা শোনার পর ওদের পুরো পরিবার হতাশায় নিমগ্ন হয়ে যাবে। 

তাই নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় তৎপর হয়ে ওঠে। 

নিজের একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য মিনি গাছ করতে লাগলো। নিত্য গাছের পরিচর্যা করা আর তারপর সেখান থেকে যখন ফল ফুল পেতে লাগলো, খুশিতে ও ডগমগ হয়ে পড়তো। 

ও ভীষণ পেটলাভার। ওর বাপের বাড়ির সবাই ভীষণ কুকুর ভালোবাসে। নিজেদের দু'টো কুকুর আছে তাছাড়াও ওরা রাস্তার কুকুরগুলোকেও যে ক'টাকে পারে যত্ন করে। মিনির স্বভাবেও এটা ছিলো। ওর শ্বশুরবাড়িতে একটা কুকুর ছিলো। মিনির যত বন্ধুত্ব ওর সাথে। তাছাড়া রাস্তার কুকুরগুলোকেও নিজের খাবার থেকে বাঁচিয়ে খাবার দিয়ে আসতো। এভাবেও বাঁচা যায়, ওর কাছে থেকে এটা শিক্ষণীয় বিষয় ছিলো। শুধু তাই নয়, ও ভীষণ বই পড়ে। রাত জেগে ও বই পড়ে। বাড়িতে যেগুলো আছে, সেগুলোতো পড়েই, তাছাড়া ও বহু বিদেশী বই ফোনে আপলোড করে পড়ে।

নিজের মধ্যে নিজের একটা জগৎ তৈরি করে ফেলে। ওর সেভাবে বাইরে বেরোনো বারণ ছিলো বলে বন্ধুও কেউ ছিলো না। 

মিনির শ্বশুরবাড়ির মানুষজন যখন দেখলেন, ও ওঁদের ছাড়াই বেশ খুশিতে আছে, ওর মনোবল ভেঙে দেবার জন্য, ওকে ঠিকমত খাবার দিতেন না, পরিধানের কাপড়টাও পর্যন্ত ঠিকঠাক সময়ে ও পেতো না। বলা যায় ওর প্রতি অসম ব্যবহার চরমে উঠতে থাকে। খিদের জ্বালায় ও গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে জল জমিয়ে যে কলমি শাকের চাষ করেছিলো, সেগুলো সিদ্ধ করে খেতো। এভাবে এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে ওর একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। ওর ব্যস্ততা বাড়ে। সংসারের কাজ, নিজের ভালোলাগাগুলোকে প্যাম্পার করা, সাথে বাচ্চাটাকে বড় করে তোলা। 

দিন যায়, মিনির বাপের বাড়ির লোকেরা মিনির বাড়িতে আসতে পারেন না, বলা যায়, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। তখন তাঁরা বুঝতে পারেন, মিনি মুখে যতই বলুক, ও ভালো আছে, ও কিন্তু মোটেই ভালো নেই। এরপর থেকে মিনির ভাই যখন মিনির সাথে দেখা করতে আসতো, বাড়ির সামনের পার্কে মিনি ওর সাথে দেখা করতো। মিনি ওকে সব কথা খুলে বলেছে। ওর ভাই, ওর বাবা ওকে আর্থিক সাহায্যের কথা বললে, ও নিতে অস্বীকার করে। ও ভীষণ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মেয়ে। ও বলেছিল, 'এভাবে হাত পেতে নিতে নিতে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। একটা অহেতুক এক্সপেক্টেশন তৈরি হয়ে যাবে। এটা কারো জন্যই ভালো জিনিষ নয়। আর তারপর একদিন কোনো কারণে সেটা আসা বন্ধ হয়ে গেলে, আমি অসুবিধায় পড়ে যাবো। এর থেকে তোমাদের সাথে আমার এই মিষ্টি সম্পর্কটুকুও শেষ হয়ে যাবে। সর্বসাকুল্যে তখন আমার বলে আর কেউ থাকবে না যে। এইতো বেশ আছি।'

মিনিকে ওরা যতই কষ্ট দিক, ওর আর গায়ে লাগে না। প্রথম প্রথম স্বামীর ওর প্রতি দুর্ব্যবহার, ওকে ঠকানো, বিশেষ করে স্বামীর ভাগ কেউ নেবে, এটা ও মানতে পারতো না, কোনো মেয়েই পারে না। তারপর থেকে এটা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ওর তখন একটাই চিন্তা ছেলেটাকে যেন ও মানুষের মত গড়তে পারে। 

তারপরেই আমার সাথে ওর আলাপ।

ওর প্রতি এ ধরণের পাশবিক অত্যাচার আমি মেনে নিতে পারিনি। ওর অনিচ্ছাসত্ত্বেও একদিন সব বন্ধুদের নিয়ে ওর বাড়িতে চলে যাই। এর কারণ ওর শ্বশুরবাড়ির মানুষজন দেখুক, ও একা নয়। ওর পিছনে অনেকেই আছে। তাই বেশিদিন এসব চলতে পারবে না। জনতার রোষ ওঁদের গায়ে পড়লে, ওঁরা বাঁচতে পারবে না। 

মিনির স্বামীর সাথে আমি নিজে কথা বলি। আমি এটুকুই বলি, 'আপনি যদি ওকে ওর বাঁচার ন্যুনতম জিনিষ থেকে বঞ্চিত করেন, আমি আপনার বাড়িতে এসে ওকে সব দিয়ে যাবো। তাতে যদি আপনার সম্মান বাঁচে, ঠিক আছে। দেখুন আপনি কী করবেন।'

এভাবে মনীশের মুখের উপর ততদিন পর্যন্ত কেউ কথা বলতে পারে নি। ও ম্যানেজমেন্টের লোক। ও বুঝতে পারে, এবার কিছু একটা গন্ডগোল বাঁধতে পারে। মনীশ চুপ করে থাকেন। 

এরপর থেকে দেখা গেলো, ধীরে ধীরে মিনির প্রতি ওই অসম ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। নিদেন পেট ভরে খেতে দিতো। ওকে ছেঁড়া কাপড় পরে থাকতে হতো না। যদিও আমি সবসময়ই ওর পাশে থাকতাম। তাঁরা পছন্দ করুক চাই না করুক, আমি মাঝেমাঝেই ওদের বাড়িতে যেতাম। 

ফোনে ফোনে ওর সাথে যোগাযোগতো আছেই। আমি আমার বাড়িতে মিনিকে নিমন্ত্রণ করতাম। ওর সাথে সখ্যতা বেড়েই চললো। 

মিনির আর্থিক স্বাধীনতা ছিলো না। কিন্তু প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা ওর যা সম্পদ ছিল, সেটা খুব কম জনেরই থাকে। ও বড় সদর্থক মনের মানুষ। কোনো ভাবে ও হেরে যেতে শেখেনি। আপাত হার হলেও, ও সেটাকে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনতো না। সব দুঃখকে যে জয় করেছে, নতুন করে তাকে আর দুঃখ পেতে ভয় হয় না। এভাবেই ওর জীবন চলে।

খুব ঠাণ্ডা মাথার মানুষ এই মিনি। এমনও হয়েছে, যদি কোনো সমস্যায় পড়েছি, সমাধানের পথ পাচ্ছি না, ওকে ফোন করে জানাতেই, ও কেমন সাথে সাথে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে, 'অত তাড়াহুড়ো করিস না।' তারপর ভীষণ যুক্তিসহকারে আমাকে ঠিক সমাধানের পথ বাতলে দেয়। শুধু তাই নয়, ও বলে 'কথায় কথায় অত ওষুধ খাবি না তো। প্রকৃতি থেকেই সুস্থ রাখার সব কিছু পাওয়া যায়। ও বলে, খাবারের পাতে রোজ একটা করে পাতিলেবু খাবি। ওতে ভিটামিন সি থাকে। ও বলে, মুঠো মুঠো ক্যালসিয়াম না খেয়ে, বাড়িতে পাতা টক দই খাস।' এরকম নানাবিধ প্রাকৃতিক টিপসগুলো এত সুন্দর করে বলে যে, ওর কথামত ঠিক ঠিক চললে, সত্যি করেই সেভাবে ওষুধের দ্বারস্থ হতে হয় না। এসব অবশ্য ও ওর বাপের বাড়ি থেকে ইনহেরিট করেছে। আর ভালো ভালো বই পড়ার সুফল। 

ওর ছেলে এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। ছোট্ট থেকে যে শিশুটা মা'কে ওর বাড়ি থেকে প্রতিনিয়ত খাওয়া পরা থেকে কষ্ট পেতে দেখেছে, খারাপ ব্যবহার পেতে দেখেছে, সেই শিশু এখন মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। ও বুঝেছে আর্থিক স্বাধীনতা না থাকলে, মানুষকে অনেক কষ্ট পেতে হয়। এখন ও ওর মা'কে অর্থের প্রাচুর্যে ভরিয়ে রেখেছে। তাই বলে বাবাকে ও অসম্মান করে না। বাবার প্রতি ওর যথাযথ ব্যবহার ও ঠিক রাখে। এর কারণ মিনি নিজে কষ্ট পেলেও, কোনোদিন সৌরিশকে ওর বাবা বা কারো প্রতি কোনো খারাপ ব্যবহার করতে শেখায় নি। কোনোদিন ও ছেলের কাছে, নিজের কষ্টের কথা বা বাড়ির লোকেদের অসদ্ব্যবহারের কথা বলে নি। ছেলেটাকে ও প্রকৃত মানুষ করতে চেয়েছিল। আজ সত্যিই ও মানুষের মত মানুষ। এ জগতে মা ওর সবথেকে প্রিয়জন। একথা ও অকপটে স্বীকার করে।

মিনির স্বামী এখন বেশ অসুস্থ। ভালো করে হাঁটতে পারেন না। রত্নাদি কবে ওকে ছেড়ে চলে গেছেন। মিনি কিন্তু প্রতিশোধপরায়ণ নয়। ওর ছেলে রাঁচী হাজারিবাগে পোষ্টিং। ভালো কোয়ার্টার পেয়েছে। ইচ্ছে করলেই মিনি সব ছেড়েছুড়ে ছেলের কাছে চলে যেতেই পারতো। যায়, তবে চার পাঁচদিনের জন্য, স্বামীর জন্য থরে থরে সব খাবার করে রেখে যায়। বেশিদিন থাকে না। চলে আসে, নিজের ডেরায়। কর্তব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারে না। ইদানীংতো আর ও যেতে পারে না। মনীশ যেন দিনে দিনে অথর্ব হয়ে পড়ছে।

যে মানুষটা মিনির সাথে একটা কথা বলতো না, এখন যেন কথা বলতেই থাকে, বলতেই থাকে। 

মিনি সব কথার উত্তর দেয় না। বলে, কিন্তু খুব কম। দরকারি কথা ছাড়া বলে না। সবকিছু না পেতে পেতে ও যেন কেমন হয়ে গেছে। এখন অর্থের কষ্ট, খাবারের কষ্ট না থাকলেও ও সেই অতিসাধারণ হয়েই থাকে। বরং ও এখন মা ভগবতীসম। ওর চোখে পড়ে যত অসহায়, দরিদ্র, তাদের জন্য ও নিঃসাড়ে করতে থাকে। বাড়ির কুকুরটা মারা গেছে। আর ও কুকুর পোষে না। কিন্তু রাস্তার কুকুরদের জন্য ও প্রতি মাসে চালের বস্তা কিনে রাখে। চারবেলা ভাত আর মাংস সহযোগে নিজে হাতে রান্না করে, হরিশ পার্কের কাছে, জগুবাবুর বাজারের কাছে, ২৩ পল্লীর কাছে, বাড়ির সামনে প্যাকেট প্যাকেট করে খাবার দিয়ে আসে। ওতেই ওর পরম তৃপ্তি। 

মিনি বড় অভিমানী। বিয়ে হয়ে আসা মিনি আর ঘাতপ্রতিঘাতে গড়ে ওঠা মিনি একেবারে আলাদা দুই মানুষ যেন। সময়ের সাথে ও এখন পরিণত ঔ পরিপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। 

স্বামীর প্রতি যথাযথ কর্তব্য করে, সংসার করে। কিন্তু সেই যে বহুদিন আগে থেকে স্বামীর কাছ থেকে সরে গিয়ে আলাদা ঘরে বিছানা করে একা ঘুমায়, আজও তাইই করে। এটাই বোধ হয়, ওর অন্তরাত্মার কান্না এবং মৌন প্রতিবাদের একটা ইঙ্গিত। 


           ------------------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy