STORYMIRROR

Bula Biswas

Tragedy Inspirational Others

3  

Bula Biswas

Tragedy Inspirational Others

#স্বতন্ত্র জীবনীশক্তি

#স্বতন্ত্র জীবনীশক্তি

3 mins
121


         ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজারের বাড়িতে কাজ করে ধানি মুর্মূ। বয়স বোঝা দায়। নিত্য দারিদ্র ওদের সঙ্গী। বাবুদের বাড়ি কামিন খাটে। তাতে সংসার চলে না। মেসো ইট ভাঁটায় কাজ করে। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ বুড়োকে ইট ভাঁটার মালিক আর নিতে চায় না। বলে, 'তু এবার ছুটি লে রে, কুনকির বাপ। তুকে দিয়ে কুনো কাজ হবেক লাই দেকচি। তু ঘরকে যা। তুর জুয়ান মরদ ছেলে গুলাকে ইদিক পানে আইসতে বল। তুকে আর লিতে লারি।'


বুড়া উদাস ভাবে আকাশ পানে চায় আর বিড়বিড় করে বলে, 'ও ছেলেগুলা হারামী হই গেছে। উয়ারা মানুষ লয়গো, বাবু। সারাটা দিন ঘুরবেক, ফিরবেক, বিটিছিলাদের সাথে মশকরা কইরবেক। 

কাজকাম কইরবেক লাই।'

বাবুর মন গলে না। 

সারাটা পথ ধুঁকতে ধুঁকতে এসে, বাঁশের খুঁটি ধরে মেসো মাটির দাওয়ায় বসে পড়ে। 

'শুনছিস বৌ, কাইজটা আর লাই রে। উয়ারা মুকে লিবেক লাই।'

ধানী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে একঘটি জল মেসোর হাতে দিয়ে বলে, 'মু তো আছি। ব্যাঙ্কবাবুকে বইলে একট গরুর লোন লিব।'


মাসি কাজ করতে এসে ব্যাঙ্কবাবুকে ওর ঘরের অভাবের কথা বলে, একটা গরু কেনার জন্য লোন চায়। ব্যাঙ্ক বাবু বলেন, 'মাসি তোমার কিছু আছে, যা বন্ধক দিয়ে লোন নেবে?'

মাসি বলে, 'আছেতো বাবু। উ ছুটো জমিটা, ঘরটা আছে বটে।'

ব্যাঙ্কবাবু ওগুলোর বিনিময়ে একটা গোরুর লোন করে দেয়। 

মাসীর মুখে হাসি ধরে না। দুধ বেচে প্রতি মাসে মাসি লোন শোধ করতে থাকে। 


কিন্তু দিনতো সমান যায় না। হতদরিদ্র মাসির নিজেদের খাবার ভালো করে জোটে না। গোরুটার খাবার জোটানো দায় হয়ে ওঠে। গোরু আগের মত দুধ দেয় না। কাজে বেরোবার সময় মাসি, একটা খোলামাঠে একটা খুঁটিতে ধলীকে বেঁধে দিয়ে কাজে যায়। ওখানেই চড়ে চড়ে যতটা ঘাস পায় ধলী খায়। এরপরেও কাজের বাড়ি থেকে ধলীর জন্য মাসী ফ্যান, সব্জীর খোসা যা জোগাড় করে আনে, ধলী গোগ্রাসে তা নিমেষে খেয়ে নেয়। এতেও ওর খিদে মেটে না। গরুটা জীর্ণশীর্ণ হতে শুরু করে। মাসীও সেভাবে কাজ করতে পারে না। সাঁওতাল রমণী রুক্ষ শুষ্ক পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চেষ্টা করলেও, মাঝে মাঝেই মুখ থুবড়ে পড়ে। 

ব্যাঙ্কবাবু জিজ্ঞেস করেন, 'মাসী, তুমিতো আর লোন শোধ করছো না।'

মাসী মুড়ি চিবাতে চিবাতে অসহায়ের মত একগাল হেসে বলে, 'বাবু, আর যে লারি। উয়ার বড় খিদা। দুধ সেরম হয় লাই। হাঁরে বাবু, তুমরা কি মোর জমিটুকা, ঘরটুকা লিয়া লিবেক?'

ব্যাঙ্কবাবুর ওকে দেখে মনে বড় দয়া হয়। বলেন, 'মাসী, অত চিন্তা কোরো না। লোন দেবার সময় ব্যাঙ্ক থেকে তোমার গোরুর কানে যে ফুটো করে দিয়েছিলো, সেই গোরুটা আছে তো? বেচে দাওনিতো?'

মাসী আবার খিলখিল করে হেসে বলে, 'ই কাজ মু কইরবোক লাই। উটা মুর ধলী। উ আছে বটেক। খড় কিনতে লারি বাবু।'

'ঠিক আছে। কাল তুমি তোমার গোরুটা নিয়ে ব্যাঙ্কে এসো। আমি দেখছি কী করতে পারি।'

পাঁজর বের করা গোরুটাকে নিয়ে মাসি ব্যাঙ্কের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। 

ব্যাঙ্কবাবু বলেন, 'মাসি, ওকে একটা খুঁটিতে বেঁধে আমার ঘরে এসো।'


মাসির সব লোন শোধ করে দিয়ে ব্যাঙ্কবাবু মাসিকে ওর জমি জায়গার কাগজ মাসির হাতে দিয়ে বললেন, 'মাসি, আমারতো বদলী হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি, তোমাদের মত প্রান্তিক মানুষদের দুরবস্থার শেষ নেই। আমি চলে গেলে আর কেউ আসবেন। কিন্তু লোন শোধ করতে না পারলে, নিয়মমতো তোমার জমি জায়গা সব চলে যেতো। তাই আমি সব শোধ করে, এ লোন থেকে তোমায় মুক্তি দিলাম।'


মাসীর মুখে হাসি ধরে না। 

উস্কোখুস্কো চুল, ধুলোমাখা পা, পরণে মলিন মোটা শাড়ি, চোখজুড়ে সারল্য। মাসী ব্যাঙ্কবাবুর প্রতি হাতজোড় করে বলে, 'তুমি দেবতা বাবু।'


ধলীকে নিয়ে মাসী ওর ঘরের পথে পা বাড়ায়। আর ব্যাঙ্কবাবু উদাস হয়ে দূরপানে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, এই প্রান্তিক মানুষগুলোর দুরবস্থা কি কোনোদিন কাটবে? ধানিমুর্মূরা কি আলোর পথ আদৌ দেখতে পাবে?


          -----------------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy