#বেসামাল জীবন
#বেসামাল জীবন
ছোটগল্প
বিষয়:নিম্ন শ্রেণীর সমাজ
কলমে: বুলা বিশ্বাস
শিরোনাম:
#বেসামাল জীবন
'এক আঁখ মারু তো পর্দা হট্ যায়/
দুজু আঁখ মারু তো কলিজা কট যায়।'
বীভৎস সুরে গানটা গাইতে গাইতে হাঁড়িয়ার ঠেক থেকে মদন টলতে টলতে বেরিয়ে আসে। ওর খুশি যেন চলকে পড়ছে! আজ বোধ হয় ওর প্রাপ্তির ভাণ্ডারটা কিছু উপচিয়েই পড়েছে। যেমন আয়টা হয়ত খানিক বেশি হয়েছে। হাঁড়িয়ার মাত্রা বোধ হয় দুগ্লাসের জায়গায় তিন অথবা চার হয়েছে। ওর পা দুটোতে আর ভার নেই। সবকিছুই বেসামাল অবস্থা। এখন শুধুই ফুলকলি!
চায়ের দোকানে বেকার ছেলে ছোকরারা চা খেতে খেতে ফচকেমি করে হাসতে হাসতে বলে 'ও কাকা, তোমার তো দুটো চোখই বন্ধ। কোনো চোখই আর মারতে হবে না।'
সারাদিন কুলিগিরি করে যা পয়সা পায়, এই হাঁড়িয়ার নেশায় সাথীদের নিয়েই অর্ধেকের বেশি খরচ করে মদন ফুলটু মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে।
আর সংসার! 'ধ্যূর! ওটা আমার বৌ। কিন্তু ওই একগুষ্টি ছেলেপিলে, ও বাপু আমার না! ঘরে গিয়েই সবক'টাকে বের করে দরজায় খিল এঁটে, আমার ফুলকলি আর আমি। এই যাঃ, তোরা ভাগ এখান থেকে। যাঃ যাঃ।
মা কালির দিব্যি বলছি, আমার ফুলুকে বার করে দেবো না গো। দেখে নিও। মাইরি বলছি, ও যে আমার ফুলকলি গো!' নেশার ঘোরে নিজের মনে কথা বলতে বলতে আবার ও গুন গুন করে ওই গানের সুর ভাজতে থাকে।
ফুলকলি ওকে ভালোবাসে। 'মরদ মানুষ ওটুকুতো করবেই। মেয়েছেলেদের পাল্লায়তো পড়ে নাই। উ আমাকেই ভালবাসে।' ফুলকলি আপন মনে বলে।
দোরের সামনে টাল খেতে খেতে মদন এসে পড়ে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ও। ঘরের খুঁটিটা ধরে ধপ করে বসে পড়ে।
ওর ট্যাঁক থেকে যা পায়, ফুলকলি কেড়ে নেয়। ওটুকু পয়সা দেখে, ফুলকলির চোখে হতাশা।
ফুলকলি ঘরে মরদ ঢোকায়। পয়সা আয় করে। মদন জানতে পারে না। এই অভাবের সংসারে, ফিবছর বাচ্চা, ওদের মুখেতো খাবার তুলে দিতে হবে!
ফুলকলি বাইরে গিয়ে আয় করুক, এটা মদনের না পসন্দ। কিন্তু ওতো বোঝে না। ওতো ফূর্তি করেই খালাস। ফূর্তির ফসলগুলো যে না খেতে পেয়ে মরে যাবে। মা হয়ে ফুলকলি তা দেখবে কী করে? তাছাড়া ওদের মতন ঘরের লোকেরা এটা তো করবেই! ফুলকলির মনে ওসব ভালো মন্দের বিচার আসে না, আসতে নেই যে!!
-----------------
কলমে: বুলা বিশ্বাস
ফোন নাম্বার: 7980205916
মেল আইডি:
bulabiswas60@gmail.com