সৌরদীপ সৌমিত্র চৌধুরী "চন্দ্রচূড়"

Horror Thriller Tragedy

4.5  

সৌরদীপ সৌমিত্র চৌধুরী "চন্দ্রচূড়"

Horror Thriller Tragedy

স্ক্রু ড্রাইভার

স্ক্রু ড্রাইভার

8 mins
431


- "ঘুরতে আসার ভালই জায়গা বাছলে তুমি," গার্গীর গলায় ভয়-মিশ্রিত ব্যঙ্গের সুর, "শেষমেশ এই জঙ্গলের মধ্যে আমাদের সাত দিন কাটাতে হবে?"
- "আরে জঙ্গলের এখনই কী দেখলে?" হেসে উঠল রথীজিৎ, "এখনও প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা বাকি।"
ঘন বনের মাঝখান দিয়ে উঁচু-নিচু সর্পিল পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে ছুটে চলল ওদের গাড়িটা।

- "নমস্কার, আমি সুব্রত ভৌমিক। এই রিসর্টের ম্যানেজার।"
- "আমি রথীজিৎ রায়। আমাদের দুজনের নামে একটা রুম বুক করা আছে।"
- "হ্যাঁ হ্যাঁ," ম্যানেজার রেজিস্টার চেক করে বললেন, "বিভাস....অ্যাই বিভাস! যা, গিয়ে স্যার কে রুম নং ১০২'টা দেখিয়ে আন।"

ঘরখানা কিন্তু চমৎকার! বেশ বড় আর খোলামেলা। পশ্চিম দিকে এক বড় উন্মুক্ত বারান্দা। সেখানে কাঠের একটা সুন্দর দোলনা লাগানো রয়েছে।
- "রুমটা তো ভাল, কিন্তু...."
- "কিন্তু কী গার্গী?"
- "না, মানে জায়গাটা কেমন যেন একটু বিদঘুটে গোছের। চারিধারে ঘন ঝোপজঙ্গলে ঘেরা, দূরে-দূরে শুধু কয়েকটা সাঁওতাল বস্তি। বলি এসব জায়গায় কেউ ভেকেশন প্ল্যান করে?"
- "হাহাহা! আচ্ছা গার্গী, আমরা তো দেশ-বিদেশের বহু জায়গায় চরে বেরিয়েছি। কিন্তু নিজের এই মাতৃভূমিটা কে ঠিক করে এক্সপ্লোর করে দেখেছি কি? তুমি যেগুলো কে 'ঝোপঝাড়' আর 'সাঁওতাল বস্তি' বলছ, সেগুলো আমাদের বাংলার লোকসংস্কৃতির এক অভিন্ন অঙ্গ। আমাদের কালচারের বহুমূল্য সব অ্যাসেট...."
- "আচ্ছা বেশ বেশ, ঢের হয়েছে। তাহলে এবার বলো, আমাদের আজকের প্ল্যানটা কী?"
- "এতক্ষণ টানা ড্রাইভ করে এসেছি, তাই আজ রাতটা রেস্ট নেব। কাল ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ব গ্রামবাংলার শোভা দেখতে।"
- "শোভা না ছাই!" এখনও খুঁতখুঁত করে গার্গী, "এই জঙ্গলমহলে ঘুরে দেখার মতো আদৌ কিছু আছে কি? আমার তো যথেষ্ট সন্দেহ আছে।"
- "সে নাহয় কাল বেরোবার আগে ম্যানেজার বাবুকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যাবে'খন।"

রাত ন'টা নাগাদ রুমে ডিনার নিয়ে এল বিভাস। খাবারের প্লেটগুলো টেবিলে নামিয়ে রেখে ও এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
- "কিছু বলবে বিভাস?"
- "না স্যার....ইয়ে মানে....একটা কথা বলার ছিল।"
- "বলো শুনি?"
- "বলছিলাম যে, আজ একটু চোখ কান খোলা রাখবেন। একা-একা বাইরে যাবেন না।"
- "কেন হে বিভাস?" একটু থতমত খেয়ে গেল রথীজিৎ, "এ অঞ্চলে বন্য পশুদের উপদ্রব আছে নাকি? বাঘ বা বুনো হাতির...."
- "আজ্ঞে না স্যার," বিভাস একখানা দেঁতো হাসি হেসে বলল, "এখানে জঙ্গল পাতলা। বাঘ বা হাতি জাতীয় বড় জন্তু এদিকপানে খুব একটা আসে না। বনের আরও গভীরে ঢুকলে ওদের দেখা পেলেও পেতে পারেন। তবে এইখানে ওদের তেমন দৌরাত্ম্য নেই।"

- "তবে যে তুমি বললে চোখ কান খোলা রাখতে?"
- "হ্যাঁ স্যার। আসলে আজ তো অমাবস্যার রাত, তাছাড়া জায়গাটাও নিতান্তই গ্রামাঞ্চল...."
- "গ্রামাঞ্চল তো ঠিক আছে, কিন্তু এই অমাবস্যার গেরোটা কী?"
- "ও....ও কিছু না স্যার," যেন খানিক অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল বিভাস, "শুধু আপনাদের একটু হুঁশিয়ার থাকতে অনুরোধ করছি। এবং আমি যা বললাম, সেইসব কথা ঘুণাক্ষরেও ম্যানেজার বাবু কে জানাবেন না। নয়তো উনি নির্ঘাত আমার চাকরি খাবেন।"
- "কেন?"
- "উনি হয়তো ভাববেন যে আমি খামোখা ভয় দেখিয়ে রিসর্টের বোর্ডারদের ভড়কে দিচ্ছি। কিন্তু আমার মনে হল যে আপনাদের আগেভাগেই সাবধান করে রাখাটা দরকার। শেষে বিদেশ-বিভুঁয়ে এসে...."
বিভাস আর দাঁড়াল না। দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

- "কী গো?" গার্গী ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, "কী সব বলে গেল ছেলেটা?"
- "আরে ছাড়ো তো!" হেসে উড়িয়ে দিল রথীজিৎ, "গ্রামের ছেলে তো; এরা সবাই এই আধুনিক যুগেও কুসংস্কারের ঘোর অন্ধকারে ডুবে আছে। এদের ফালতু কথায় এত পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি ডিনারটা সেরে শুয়ে পড়ো। সারাদিন যা ধকল গেল!"

খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে ওরা সাড়ে ন'টা নাগাদ শয্যা নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রথীজিতের প্রবল নাসিকাগর্জন আরম্ভ হল। তবে গার্গীর চোখে যেন কিছুতেই ঘুম আসছে না। মাথার মধ্যে শুধুই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভাসের সাবধানবাণী। কী বলে গেল ছেলেটা? কেনই বা বলল? মনটা কেমন যেন কু ডাকছে। অনেক এপাশ-ওপাশ করেও দু'চোখের পাতা এক করা গেল না। মনের ভিতরে সমানে একটা অস্বস্তি কাজ করে চলেছে।

না, এভাবে ঘুম আসবে না। বিছানায় উঠে বসে মোবাইলটা অন করল গার্গী। রাত সোয়া দশটা। খুব জল তেষ্টা পেয়েছে। গ্লাসে জল ঢেলে সবেমাত্র মুখে তুলতে যাবে, হঠাৎ হালকা এক 'ক্যাঁচ ক্যাঁচ' শব্দে ওর ধ্যানভঙ্গ হল। ক্ষীণ অথচ স্পষ্ট। একটু মনোসংযোগ করতেই গার্গী বুঝল, আওয়াজটা বারান্দা থেকে আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাল গার্গী। বারান্দা কিন্তু একদম জনশূন্য। শুধু কাঠের দোলনাটা অল্প-অল্প দুলছে....ঠিক যেন এতক্ষণ ওখানে বসে কেউ দোল খাচ্ছিল। সেটাকে দৃষ্টিবিভ্রম ভেবে গার্গী আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

হয়তো চোখটা একটু লেগে এসেছিল। হঠাৎ 'খুট্' করে একটা শব্দ হতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসল গার্গী। বাতাসে ভুরভুর করছে কোনও অজানা বুনো ফুলের সুমিষ্ট গন্ধ। এদিক-ওদিক তাকাতে গিয়ে চোখটা চকিতে আটকে গেল বারান্দার দিকে। সেখানে জিরো পাওয়ারের একটা নাইট-ল্যাম্প টিমটিম করে জ্বলছিল। সেই মৃদু আলোয় ও লক্ষ্য করল....দোলনায় কে যেন একজন বসে রয়েছে। পিছন থেকে দেখে মনে হল একটা বাচ্চা মেয়ের অবয়ব। পরনে সাদা ফ্রক। ঘাড়টা একদিকে হেলিয়ে নিথর ভাবে বসে আছে বাচ্চাটি। কিন্তু ওর হাতে ওইটা কী? নাইট-ল্যাম্পের স্বল্প নীল আলোর মধ্যেও ওই ধাতব বস্তুটা ঝকঝক করছিল।
- "কে? কে ওখানে....?"
গার্গীর ডাকে মেয়েটা ফিরেও তাকাল না। রথীজিৎ অঘোরে ঘুমোচ্ছে। না, ওকে জাগানোর দরকার নেই। গার্গী নিজেই বিছানা থেকে উঠে বারান্দার দিকে এগোল।

মেয়েটা এখনও ওভাবেই পিছন ফিরে বসে আছে। ওর লম্বা খয়েরি চুলগুলো হাওয়ায় এলোমেলো ভাবে উড়ছে। গায়ের রং অস্বাভাবিক রকমের বিবর্ণ। মেয়েটা বাঁ হাতে কিছু একটা জিনিস আড়াল করে রেখেছে। অনেক চেষ্টা করেও সেটা দেখতে পেল না গার্গী।

- "অ্যাই মেয়ে! ওঠ!" গার্গীর গলায় ধমকের সুর, "কী হল? কথা কানে যাচ্ছে না? কী চাই তোর? কেন এসেছিস এখানে? ওঠ বলছি!"
মেয়েটা তখনও সেভাবেই একদিকে ঘাড় কাত করে বসে রইল; ওর প্রশ্নে কোনওরকম কর্ণপাতই করল না। এবার প্রচণ্ড রাগ হল গার্গীর। মেয়েটার হাতটা ধরে একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিল সে।

কিন্তু পরক্ষণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো ছিটকে দূরে সরে গেল গার্গী। হাতটা আশ্চর্য রকমের ঠাণ্ডা! কাঁধে ওর স্পর্শ পেয়ে মেয়েটা এবার আস্তে-আস্তে উঠে দাঁড়িয়েছে। ওর হাতে ধরা জিনিসটা এতক্ষণে চোখে পড়ল, একটা বড় এবং ভারী স্ক্রু-ড্রাইভার।

- "কী চাই তোর? এখানে কেন এসেছিস? অ্যাই মেয়ে! শুনছিস আমার কথা?"
মেয়েটা এতক্ষণ গার্গীর দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে এবার সে ধীরে ধীরে ওর দিকে মুখ ফেরাল। সেই বীভৎস মুখ দেখে গার্গীর সর্বাঙ্গে যেন এক ঠাণ্ডা শিহরণ বয়ে গেল। ও দুঃস্বপ্নেও এমন ভয়ঙ্কর মুখের কল্পনা করেনি কোনওদিন। বিস্ফারিত চোখে দেখল, বাচ্চা মেয়েটার ফ্যাকাসে সাদা মুখটা ডিমের খোলার ন্যায় মসৃণ এবং সমান। চোখ, নাক, ঠোঁট....কোনও কিছুরই অস্তিত্ব নেই। ঠিক যেন কেউ ধারালো ছুরি চালিয়ে গোটা মুখটা চেঁছে দিয়েছে। মেয়েটা দৃষ্টিহীনের মতো দু'হাত প্রসারিত করে এলোপাথাড়ি হাতড়ে বেড়াচ্ছে।

গার্গীর বুঝতে এতটুকু সময় লাগল না যে এটা কোনও সাধারণ মেয়ে নয়। ভয়ে হতবুদ্ধি হয়ে ও এক পা-এক পা করে পিছু হটতে শুরু করেছে। এবার মেয়েটা ওর নাগাল পাওয়ার জন্য দু'হাত উঁচিয়ে পাগলের মতো এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াতে আরম্ভ করেছে। হাতের ধাতব স্ক্রু-ড্রাইভারটা থেকে-থেকে ঝলসে উঠছে নাইট-ল্যাম্পের দুর্বল নীলচে আলোয়।

ঠকাস্....!

সন্তর্পণে পিছনে সরতে গিয়ে হঠাৎ গার্গীর হাতে ধাক্কা খেয়ে একটা পিতলের ফুলদানি সশব্দে আছড়ে পড়েছে মাটিতে। ক্ষণিকের স্তব্ধতা....তারপর ধীরে-ধীরে প্রেতিনী ঘাড় ঘোরাল সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে। দৃঢ় পায়ে একটু-একটু করে এগোতে আরম্ভ করল সেইদিকে। ওই অলৌকিক রূপধারিণী চোখ-নাক-মুখবিহীন প্রেতমূর্তি কে নিজের দিকে অগ্রসর হতে দেখে গার্গীর মুখ দিয়ে একটা অস্ফুট চিৎকার বেরিয়ে এল। কিন্তু ও কিছুতেই নিজের পা'দুটো কে নাড়াতে পারল না। যেন কেউ মেঝের সঙ্গে ওর পা'দুটো পেরেক ঠুকে আটকে রেখেছে।

মরিয়া হয়ে পালাতে গিয়ে গার্গী হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ল। প্রেতিনী এখন অনেকটা কাছে এসে পড়েছে। সেই অভিশপ্ত লেপামোছা মসৃণ ডিম্বাকৃতি মুখাবয়ব এখন ঠিক ওর সম্মুখে। শেষ বারের মতো নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল গার্গী........

- "রথীজিইইইইইৎ!!!"

পরমুহূর্তেই একটা ঝকঝকে ফলা সবেগে নেমে এল গার্গীর কণ্ঠদেশ লক্ষ্য করে। পিশাচিনী তার হাতের স্ক্রু-ড্রাইভারটা আমূল বিদ্ধ করে দিয়েছে ওর গলায়। যন্ত্রণায় ছটফট করছে গার্গী....শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে ও দেখল, প্রেতিনীর সাদা ফ্রকটা একটু-একটু করে লাল রঙে ভিজে উঠছে ওর গলা থেকে ফিনকি দিয়ে ছুটে আসা উষ্ণ রক্তের ধারায়। ক্রমেই দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এল গার্গীর। একটু-একটু করে দু'চোখ জুড়ে নেমে এল অমাবস্যার নিকষ কালো রাতের আঁধার।

শান্তি....চিরশান্তি....

গার্গীর সেই অমানুষিক চিৎকার শুনে বিছানায় ধড়মড়িয়ে উঠে বসেছে রথীজিৎ। চারিদিক পুরো ঘুটঘুটে অন্ধকার; মনে হয় লোডশেডিং হয়েছে। মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে দেখল, বিছানায় ওর পাশে কেউ নেই। স্ত্রীর নাম ধরে ডাকতে-ডাকতে রথীজিৎ গোটা জায়গাটা খুঁজে বেড়াতে লাগল। আশ্চর্য! কোথায় গেল মেয়েটা? বেডরুম আর বাথরুম চেক করা হয়ে গেছে, এখন ও বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যমনস্ক ভাবে এদিক-সেদিক আলো বোলাচ্ছিল রথীজিৎ, হঠাৎ মনে হল বারান্দার এক অন্ধকার কোণায় সাদা মতো কিছু একটা পড়ে আছে। কিন্তু সেদিকে আলো ফেলতেই যা দৃশ্য প্রত্যক্ষ করল, তা দেখে রথীজিতের হাত থেকে ফোনটা সশব্দে খসে পড়ল।

মাটিতে অসহায়ের মতো পড়ে আছে গার্গীর নিষ্প্রাণ দেহ। গলায় গভীর ভাবে বিঁধে রয়েছে এক বিশালকায় ভারী স্ক্রু-ড্রাইভার। কাঠের মেঝেটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আশেপাশে কোত্থাও কেউ নেই।

আচমকা চোখের সামনে এমন ভয়াল দৃশ্য সহ্য করতে পারল না রথীজিৎ। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল স্ত্রীর মৃতদেহের পাশে।

**** পাঁচ মাস পর ****

- "হ্যালো, ইন্সপেক্টর দেবজ্যোতি মিত্র স্পিকিং।"
- "স্যার, আমি থানা থেকে নস্কর বলছি।"
- "হ্যাঁ, বলো নস্কর। সব জায়গায় ফোর্স পাঠানোর ব্যবস্থা হয়ে গেছে তো?"
- "ইয়েস স্যার।"
- "ওকে। খুনী প্রত্যেক মাসে অমাবস্যার রাতেই খুন করতে বেরোয়। সেই হিসেব অনুযায়ী আজ রাতে আরেকটা খুন হওয়ার কথা। তবে আমাদের সেটা যে কোনও মূল্যেই আটকাতে হবে।"

- "আমাদের জন্য কী-কী ইনস্ট্রাকশন্ আছে স্যার?"
- "যে কোনও সন্দেহভাজন লোক কে দেখলে তাকে সঙ্গে-সঙ্গে কাস্টডিতে নেবে। যেহেতু খুনীর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি, তাই আমরা হলফ করে বলতে পারছি না যে সে নারী না পুরুষ....বৃদ্ধ না কিশোর। তবে খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রটা কিন্তু সেই একই:- একটা ভারী মেট্যালিক স্ক্রু-ড্রাইভার। চোখ কান খোলা রাখবে, যে কারও উপর সন্দেহ হলে তাকে বিনা বাক্যে আটক করে জেরা করবে। ক্লিয়ার?"
- "ইয়েস স্যার।"
- "গুড। লাস্ট এক বছর ধরে এই কেসটা পুলিশ মহকুমার গলায় কাঁটার মতো বিঁধে আছে। প্রতি মাসের অমাবস্যায় একটা করে হত্যা হচ্ছে এই তল্লাটে। ধারাবাহিক খুনগুলো আটকাতে আমাদের এই বিফলতার জন্য উপরতলার থেকে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে। মেক সিওর, যেন এইবার কোনওরকম ভুল না হয়। আজ রাতের মধ্যে আমাদের এই কেসের একটা দফারফা করতেই হবে।"
- "ওকে স্যার। আমি ফোর্স নিয়ে বেরোচ্ছি। আপনি তাড়াতাড়ি থানায় চলে আসুন।"
- "হ্যাঁ, এক্ষুনি আসছি।"

পুলিশ কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি জিপে উঠে বসলেন ইন্সপেক্টর মিত্র। গাড়িতে স্টার্ট দিতে যাবেন, হঠাৎ যেন মনে হল গাড়ির পিছনের সিটে কেউ একটা বসে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন....সাদা ফ্রক পরা বছর দশেকের এক মেয়ে। মাথা হেঁট করে বসে রয়েছে প্রস্তরপ্রতিমার মতো। গাড়ির ভিতরকার বাতাস কোনও এক বন্য ফুলের মিষ্টি সুবাসে ভারী হয়ে উঠেছে।

- "অ্যাই! কে রে তুই? এখানে উঠে বসেছিস কেন? জানিস না এইটা পুলিশের জিপ? নেমে যা, নেমে যা বলছি!"
ইন্সপেক্টর সাহেবের কড়া ধমকে মেয়েটা একটুও বিচলিত হল না। শুধু ঘাড়টা একদিকে সামান্য কাত করে নিজের বাঁ হাতটা উঁচিয়ে ধরল।

স্ট্রীট-লাইটের মরা আলোয় ইন্সপেক্টর মিত্র স্পষ্ট দেখলেন....সেই হাতে রয়েছে একটা বড় স্ক্রু-ড্রাইভার। যার নৃশংস ধাতব ফলাটা থেকে-থেকে চকচক করে উঠছে কোনও রক্তপিপাসু দানবের ক্ষুধার্ত চোখের মতো।

**** সমাপ্ত ****


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror