সৌরদীপ সৌমিত্র চৌধুরী "চন্দ্রচূড়"

Action Tragedy Inspirational

5.0  

সৌরদীপ সৌমিত্র চৌধুরী "চন্দ্রচূড়"

Action Tragedy Inspirational

দেশমাতৃকা

দেশমাতৃকা

2 mins
609


ঘরটা প্রায়ান্ধকার। শুধু ঘরের সুদূর প্রান্তে এক উজ্জ্বল আলোর আভাস। তবে সেখানে পৌঁছানো অসম্ভব। একটুও নড়বার ক্ষমতা নেই আমার। পরাধীনতার গুরুভারে আজ আমার দেহ এক কঠিন প্রস্তরপ্রতিমায় পরিণত হয়েছে। পরতন্ত্রের লৌহশৃঙ্খল আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে আমার অস্তিত্ব। কিন্তু নিজের দেশকে ভালবাসা কি পাপ?

না, আমি একেবারেই অনুতপ্ত নই....গর্বিত। চোখ ফেটে জল আসছে আত্মগৌরবে। কিন্তু মূর্তির কি আর কান্না সাজে? হয়তো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল আমার হাতের দাহ্য। বরাতজোরে বেঁচে গেছিল আমার শিকার কিংসফোর্ড। তবে এই বিফলতা নেভাতে পারেনি আমার অন্তরের স্ফুলিঙ্গ।

ইতিমধ্যেই ঘরের নিশ্ছিদ্র অন্ধকার থেকে পিলপিল করে জন্ম নিতে শুরু করেছে অসংখ্য দানব। এদের বাইরেটা যতটা উজ্জ্বল, ভিতরটা ঠিক ততটা কালো। প্রত্যেকের হাতেই চাবুক, বন্দুক। ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে তারা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সপাটে চাবুকের ঘা পড়ল আমার পিঠে। ব্যথা নেই। মূর্তির আবার বেদনা! শুধু একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার....পিঠের যেখানে আঘাত পড়ল, সেখান থেকে একটুকড়ো পাথর সশব্দে খসে পড়ল মাটিতে।

একটু-একটু করে অত্যাচার ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। চাবুক, বন্দুকের বাট, জুতো, লাথি, ঘুষি....সবই চলছে আমার উপর। পাথুরে চোখের অশ্রু শুকিয়েছে, এখন সেখানে নরকের ধকধকে বহ্নিশিখা। প্রত্যেকটা মারের সঙ্গে শরীর থেকে খসে পড়ছে খণ্ডখণ্ড পাথর। আমার দেহ আবার ফিরে পাচ্ছে আগেকার নমনীয়তা। হাতটা যেন অল্প নাড়াতে পারছি এখন।

মার! মার! আরও মার!! আমার শরীরে আছড়ে পড়া প্রত্যেকটা ক্ষত তোদের শবাধারের এক-একটা পেরেক।

দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল অমানুষিক মারধর। এতক্ষণে আমার শরীর থেকে পাথরের আবরণটা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে দু'টুকরো হয়ে গেছে পায়ের বেড়ি। আমি আবার আগের মতো হাত-পা নাড়াতে পারছি।

হঠাৎ একটা ধনুষ্টঙ্কারে আততায়ীদের মধ্যে হৈহৈ পড়ে গেল। এক তেজস্বিনী নারীমূর্তি কাল হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রণক্ষেত্রে। দানবদের আর্তচিৎকারে গমগম করছে গোটা ঘরটা। আমার চোখের আগুন এতক্ষণে দাবানলের রূপ গ্রহণ করেছে, সেই অনলে ক্রমেই বেষ্টিত হয়ে যাচ্ছে নীচ দানবকুলের সর্বাঙ্গ। আকাশছোঁয়া লকলকে শিখায় ধ্বনিছে স্বাধীনতার জয়গান!

বন্দে মাতরম্!!!

এক ঝটকায় সমস্ত বাঁধন ভেঙে দৌড় লাগালাম ঘরের শেষ প্রান্তে। সেখানে এখনও ঝলমল করছে মুক্তির আলো।
ছুট ছুট ছুট!
যেন আমার এতকালের তৃষিত দু'চোখ ক্রমশঃ ধুয়ে যাচ্ছে সেই পবিত্রালোকে। ঝাঁপ দিলাম মুক্তির সেই অসীম পাথারে। জলে পড়লাম না, তার আগেই আমাকে কোলে তুলে নিল সেই জ্যোতির্ময়ী নারী। তাঁর সেই রণরঙ্গিনী রূপ উধাও, এখন সেখানে জ্বলজ্বল করছে মাতৃবাৎসল্য। পরম স্নেহে ভারতমাতার দুটি কোমল বাহু আলিঙ্গন করল আমার কণ্ঠদেশ........

এক পুরুষকণ্ঠের রুক্ষ হুঙ্কারে ঘুমটা ভেঙে গেল।
- "অ্যাই! অ্যাই ব্যাটা ক্ষুদিরাম! ওঠ, ফাঁসির সময় হয়ে গেছে।"

**** সমাপ্ত ****


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action