Sutanu Sinha

Action Fantasy Thriller

4  

Sutanu Sinha

Action Fantasy Thriller

প্রফেসর সাম্য - ভাইরাস

প্রফেসর সাম্য - ভাইরাস

23 mins
3.7K


১লা জানুয়ারী , ২০১৯

বছর এর শুরু টা বরাবর ই একটু বন্ধু দের সাথে মজা করেই কাটাতে ভালো লাগে । এবার বোধয় সেটা আর হলো না । আসলে কাল রাতে অদ্ভুত এক চিঠি এসে হাজির হলো আমার পোস্ট বক্স এ । চিঠি আসার ব্যাপার টা এখন অনেক টাই বন্ধ হয়ে গেছে । এই হোয়াটস আপ এর যুগ এ আর চিঠি কেউই সেরকম লেখে না । তাই বেশির ভাগ সময় পোস্টবক্স খালি ই পরে থাকে, সে ভাবে দেখা ও হয় না । এই চিঠি টা মনে হয় ডাকবক্স এ অনেক দিন ই পরে ছিল । যাই হোক চিঠি তে যে দিন দেখা করার কথা লেখা আছে , তার আগেই যে হাতে পেয়েছি এটাই অনেক বড় ব্যাপার । তা যেটা বলছিলাম , চিঠি টি এসেছে কেরালা সরকার এর স্বাস্থ দপ্তর থেকে , লেখা আছে খুব মামুলি কিছু কথা , কিন্তু আমার মনে হছে ব্যাপার টা আদৌ খুব একটা সোজা সাপ্টা ব্যাপার নয় । চিঠি তে বলেছে , বন্যা পরবর্তী কেরালা কে তৈরি করার জন্য তারা দেশের সমস্ত বৈজ্ঞানিক দের এক সাথে চাই । কিছু সমস্যা র ব্যাপার এ আলোচনা করে উপায় বাতলানোর জন্য । কিন্তু আমার মনে হছে সমস্যা টা খুব সোজা সাপ্টা নয় । কারণ চিঠির শেষে লেখা আছে ব্যাপার টা যতটা সম্ভব সবার কাছে গোপন রাখা ভীষণ ভাবে ব্যঞ্ছনীয় । এখানেই আমার সন্দেহ টা ঠেকছে । যাও হোক , মনের আকুন্ঠ সন্দেহ ,মেটানোর জন্য কাল যাওয়া টা ভীষণ জরুরি । আর দেশের বিজ্ঞানী হিসাবে দেশের কোনো কাজে লাগতে পারলে সত্যি ই গর্ব বোধ হবে ।

এখন হঠাৎ করে কোথাও যাবার পরিকল্পনা করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না । নতুন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে রাতুল বলে একটি ছেলে কে পেয়েছি । খুব পরিশ্রমী আর বুদ্ধিমান ছেলে । অল্প দিনের মধ্যেই আমার বেশ বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে । ওকে কদিন আমার ‘পুনরায় ঘটমান’ যন্ত্র টির এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কাজ করতে বলে বেরিয়ে যাবার প্ল্যান করতে শুরু করলাম । আমার সব জিনিস গুছিয়ে নিতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয় । আর সেই সাথে বছর এর শুরুতেই হঠাৎ ই এরকম একটা অ্যাডভেঞ্চার এর স্বাদ পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না । তাই ব্যাগ গুছিয়ে কাল কের ই বেরিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে ফেললাম । যদিও পরের দিন মিটিং টা হবার কথা । কিন্তু বন্যা পরবর্তী কেরল কে দেখার ও ভীষণ দরকার আছে এই মিটিং এ যাবার আগে । যেহেতু এখানে আলোচনার বিষয় টি ই বন্যার সাথে ভীষণ ভাবে জড়িত ।

২রা জানুয়ারী , ২০১৯

ভারী অদ্ভুত শহর এই কেরালা । এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল যাবার পথে রাস্তার চারিপাশ দেখেই মনের মধ্যে কিরকম হতে লাগলো । কারণ আগের দেখা কেরালা আর এখন কার কেরালা তে ভালোই পরিবর্তন হয়েছে । থিরুভানানথাপুরাম শহর টাতে আগে ও এসেছি । কিন্তু সেই সৌন্দর্য্য টা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । মানুষ এর গরিবত্ত ও সব হারিয়ে যাবার ছবিটা যেন ফুটে বেরোছে । যেতে যেতে ড্রাইভার কে বলে রাখলাম , হোটেল এ পৌঁছেই আমরা কিন্তু আবার বেরোবো । বন্যায় তথাকথিত সব থেকে খারাপ অবস্থার জায়গাগুলোএকবার দেখবো । ড্রাইভার কার্তিক এক কথায় রাজি হয়ে গেলো । হোটেল এ ফ্রেশ হয়ে ১০ মিনিট এর মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম সেই অজানা জায়গাগুলো কে দেখতে । কার্তিক নিয়ে গেলো সেই সব জায়গাগুলো তে যেখানে যাহোক করে ত্রাণ র পয়সায়এখনো মানুষ গুলো বেঁচে আছে । খুব ভালো ভাবে লক্ষ করে ও সে রকম কিছুই নজর এ পড়লো না, যার জন্য সরকার তাকে চুপি চুপি ডেকে আনতে পারে । যেহেতু গোপন রাখার ব্যাপার আছে , তাই কাউকে আলাদা করে ফোন করিনি । এমনকি এই কেরালা তেই অনেক কাছের বন্ধু আছে তাদের থেকে ও পরামর্শ নিইনি । হোটেল এ ফিরে আসার পর এক রকম মানুষিক বিষাদ যেন কোথা থেকে এসে গ্রাস করলো । কিছুই যেন সেভাবে ভালো লাগছিলো না । এমন সময়ই একটা ফোন এলো । অজানা নম্বর দেখে সাধারণত ফোন টা ধরি না । কিন্তু আজ ধরলাম । ওদিক থেকে ভয়েস টা কার ঠিক ধরতে পারলাম না , কিন্তু প্রশ্ন টা চমকে দেবার মতোই ছিল । একটু ভারী গলায় পরিষ্কার ইংলিশ এ কেউ জিজ্ঞেস করলো "কাল কের আসছেন তো ?"। একটু সময় নিলাম উত্তর দিতে , ভাবছিলাম কার গলা হতে পারে । বললাম আসছি, কিন্তু আপনি ? ওদিক থেকে বেশ রাশভারী গলাতেই ভেসে এলো , "চিনতে পারছো না । আমি শ্রীধরণ বলছিলাম । তোমার সাথে দেখা হয়েছিল দিল্লীতে সাইন্স এক্সবিশন । তুমি দেখিয়েছিলে তোমার এক অদ্ভুত আবিষ্কার । তোমার সেই স্ট্যাচু করে দিতে পারা বন্দুক।", মনে পরে গেলো শ্রীধরণ কে , বললাম মনে পড়েছে ,তুমি ও কি কাল আসছো ? শ্রীধারণ জানালো সব বলবো , তুমি কি হোটেল এ আছো ? রুম নম্বর বোলো আমি এখুনি আসছি । শ্রীধরণ কে মনে পড়লো ভালো করেই, কিছু অদ্ভুত রোগের আন্টি ভাইরাস এর উপর কাজ করছিলো সে । এমন কি ভালো করে জানাই পর্যন্ত নি কি নিয়ে সে কাজ করছে , শুধু তার কিছু ইফেক্ট সে এক্সটিবিশন এ দেখিয়েছিলো ।আমার নিজের লোক টিকে খুব ই ইন্টেলিজেন্ট মনে হয়েছিল । কিছুক্ষন এর মধ্যেই ফোন বেজে উঠলো হোটেল এর । এসে গেছে শ্রীধরণ । হোটেল এর দরজা খুলতেই হাতে একটা বিয়ার এর বোতল নিয়ে প্রবেশ করলো সে । ২ টো গ্লাস নিয়ে ২জন এর জন্য বিয়ার ঢেলে সোফায় মাথা রাখলো । তারপর বললো "কেমন আছো ?", বললাম ভালোই । কিন্তু কি ব্যাপার বলতো এই ভাবে তলব কেন ? প্রশ্নের উত্তর এ শ্রীধরণ এর কাছে যা শুনলাম সত্যি ই ভয় এর ব্যাপার ।

বন্যা হবে যাবার পর কিছু এক অজানা ব্যাধিতে আক্রান্ত একটি বিশেষ অঞ্চল এর কেরালা বাসি । এবং তা নাকি ভয়ানক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ।এই অজানা ভাইরাসে সাধারণ মানুষ এর আচরণ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যাছে । তারা ভীষণ হিংস্র হয়ে উঠছে । আর অন্য কোনো মানুষ কে কামড়ে বা আছড়ে দিলে সে ও কিছুক্ষন এর মধ্যে সেরকম ই হয়ে যাছে । এই অদ্ভুত ভাইরাস এর নাম হছে H2A ভাইরাস । এর এন্টিভাইরাস নিয়েই এতদিন গবেষণা করছিলো শ্রীধরণ । কিন্তু গবেষণা শেষ হবার আগেই এরকম পরিস্তিতি । তাই কেরল সরকার কে সে ই অনুরোধ করেছিল আমাকে নিয়ে আসতে ।

সব শুনে সত্যি অবাক হচ্ছিলাম, এরকম ঘটনা হলিউড এর সিনেমাতে দেখা যাই , এরকম যে সত্যি ই হয় বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । জিজ্ঞেস করলাম , আমাকে তোমার কি রকম ভাবে লাগবে । আমার গবেষণার বিষয় কোনো ভাবেই ভাইরাস জড়িত নয় । বললো আমি তা জানি সাম্য , তোমাকে আমার দরকার তোমার আবিষ্কৃত ওই বন্দুক টির জন্য । বললাম কি রকম ? উনি বলে চললেন , আমার গবেষণা শেষ করার জন্য আমাকে পৌঁছতে হবে আমার নিজের গবেষণাগারে । সেখানে পৌঁছনোর জন্য আমাকে যেতে হবে কেরালার সেই জায়গার উপর দিয়ে যেখানে প্রায় সবাই এই ভাইরাস এ এফেক্টেড । তাদের সাম্মান্য আঁচড় বা কামড় আমাদের কে ও ওদের মতো করে দিতে পারে । আমার তোমাকে চাই এই গবেষণা গার এ পৌঁছনোর জন্য । একটু সাহায্য করো প্লিজ । বললাম , সব এ বুঝলাম , দেশের জন্য কিছু করতে পারা ভীষণ ই গর্বের ব্যাপার , কিন্তু আমি কি ভাবে হেল্প করতে পারি । শ্রীধরণ বলে চললো , এই সব লোক গুলো যতই ভয়ানক হোক, এরা প্রত্যেকে অসুস্থ রুগী , আমি ফোর্স নিয়ে গেলে , ওরা ওদের কে গুলি করে শেষ করে দেবে , এমন কি সরকার ও বলে দিয়েছে ওদের কে মেরে দিতে যাতে এই রোগ টা আর না ছড়ায় । শুধু আমার অনুরোধেই তারা কিছুদিন অপেক্ষা করতে রাজি হয়েছে ।তখন ই আমার হঠাৎ মনে পরে গেলো তোমার সেই অদ্ভুত বন্দুক এর ব্যাপার টা । তাই তোমাকে চিঠি পাঠাতে বললাম । এবার বলো তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে ?

এক অদ্ভুত দোলাচলে ফেলে দিলো শ্রীধরণ , এরকম এক রোগ এর কথা কখনো শুনেছি বলে তো মনে হয়না ।একটু ইন্টারনেট সার্ফ করে এই ব্যাপার এ জানার ইচ্ছা করছিলো । আমাকে চুপ থাকতে দেখে শ্রীধরণ বললো জানি এরকম অদ্ভুত আবদার এর কোনো উত্তর সাথে সাথে দেয়া সম্ভব নয় ।এর পর তুমি যদি কাল মিটিং এ আস বুঝবো রাজি আছো । না হলে আমাকে একাই যেতে হবে ওই দুরূহ জায়গায়। দেশের জন্য এটুকু করা ভীষণ জরুরি ।

এ কথা বলে বিদায় নিলো শ্রীধরণ । মনের মধ্যে নিভে থাকা সেই অদ্ভুত দেশপ্রেম কে যেন জাগিয়ে দিয়ে গেলো সে । ইন্টারনেট সার্চ করে ও সেরকম কিছু ইনফরমেশন পেলাম না । এমন অদ্ভুত পরিস্তিতিতে কখনো পড়িনি নিজের এই কয়েক বছরের বৈজ্ঞানিক জীবন এ । বিয়ারএর শেষ টুকু গলায় ঢেলে দিয়ে সামনের অদ্ভুত দিন গুলোর কথা ভাবতে লাগলাম । সব শেষে ঠিক করলাম কাল মিটিং এ আগে যাই , বাকি মানুষ গুলোর সাথে কথা বলি , তারপর ভাবা যাবে । ফোন করে খাবার অর্ডার দিয়ে সে দিন এর মতো শুয়ে পড়াকেই উচিত মনে করলাম ।

৩রা জানুয়ারী ,২০১৯

সকাল হতেই সামান্য কিছু জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম এই অদ্ভুত মিটিং এর উদ্দেশ্যে । আগে ভালো করে জানা দরকার কি অবস্থা , তারপর সিদ্ধান্ত । শুধু মাত্র ডঃ শ্রীধরণ এর কথা শুনে ফাইনাল কিছু ভেবে নেয়া ঠিক হবেনা বলে মনে হয় ।মিটিং এ এসে একটু অবাক ই হলাম । কারণ আর কোনো বৈজ্ঞানিক কে এখানে দেখতে পেলাম না । আর মিটিং টা যে যথেষ্ট গোপনীয় সেই ব্যাপার এ কোনো সন্দেহ রইলো না । মিটিং এর ঘরে ঢুকে দেখলাম ডঃ শ্রীধরণ বসে আছেন , খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু করছেন নিজের ল্যাপটপ এ । আর বাকিদের মধ্যে একজন আর্মি অফিসার আর এক জন পুলিশ এর কোনো হেড হবেন । পরে শ্রীধরণ এর কাছেই জানলাম , এনি ত্রিবান্দ্রম এর পুলিশ কমিশনার , আর এক জন আর্মি চিফ , সবাই অপেক্ষা করছে মুখ্যমন্ত্রী আসার জন্য । তারপরেই শুরু হবে মিটিং ।

মিটিং এর শুরুতেই একটা জিনিস খুব পরিষ্কার হয়ে গেলো, সরকার যা চাইছে , আর ডঃ শ্রীধরণ যা চাইছে দুটো এক ই নয় ।আলোচনার শুরুতেই শ্রীধরণ একটি ভিডিও দেখালো , তাতে যা দেখলাম সত্যি অবিশ্বাস্য । সাধারণ মানুষ হঠাৎ ই জানোয়ার এর মতো আচরণ করছে । সবাই কেমন যেন সবার রক্ত খেতে চাইছে । এরকম ও সম্ভব নাকি ? সত্যি বিশ্বাস করা যাচ্ছিলো না । শ্রীধরণ এর ব্যাখ্যা শুনে বুঝলাম , এই ভাইরাস নাকি এতটাই ভয়ঙ্কর, মানুষ এর স্বাভাবিক জীন গত পবিত্রী কেই নাকি বদলে দেয় ।যা মানুষ কে আর কোনোমতেই মানুষ এর মতো ব্যবহার করতে দেয়না । একটা হিংস্র পশুর মতো আচরণ করে সে । সত্যি বিশ্বাস করা কঠিন কিন্তু সামনে যা হছে তাকে মানা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ।কিন্তু বিতর্ক আসলে অন্য জায়গায় । সরকার চাইছে জায়গা টাকে বোমা দিয়ে পুরো নিশ্চিন্ন করে দিয়ে তারপর সীল করে দেবে । তাতে কোনোদিন ই এই ভাইরাস বাইরে আসতে পারবে না । কিন্তু এতেই আপত্তি আমাদের শ্রীধরণ এর । প্রসঙ্গত শ্রীধরণ এর গবেষণাগার সেই জায়গাতেই অবস্থিত । আর শ্রীধরণ এর মতে এরা রোগগ্রস্থ , আর তাদের কে সরিয়ে তোলার এন্টি ভাইরাস শ্রীধরণ তৈরি করে ফেলেছে । শুধু তাই নয় তার বেশ কিছু গবেষক কর্মী সেই গবেষণাগার এ আছে , যারা তার জন্য অপেক্ষায় আছে । তাই শ্রীধরণ কিছু দিন সময় চাইছে সরকার এর কাছে । এরকম কথোপকথন যখন চলতেই থাকছে , তখন হঠাৎ ই মুখমন্ত্রী বলে উঠলেন , ঠিক আছে ডঃ শ্রীধরণ আমি আপনাকে কাল কের দিন টা সময় দিলাম । এর মধ্যে আপনি যা করার করুন । যদি সত্যি এন্টি ভাইরাস বানাতে পারেন তাহলে সে তো দেশের গর্ব । কিন্তু না পারলে আমরা এর থেকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে পারবো না । কথা শেষ করে তিনি বললেন আপনার কাকে কাকে চাই কমিশনার কে জানান , উনি সাহায্য করে দেবেন । কিন্তু এটা মনে রাখবেন কাল ঠিক সকাল ৮টাই আমরা বিস্ফোরণ এর ভাবনা তে আছি । আপনারা ফিরে এলে খুব ভালো, না হলে হয়তো আপনাদের অপেক্ষা ও আমরা করতে পারবো না । তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন, আপনার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলা যেতে পারে প্রফেসর সাম্য । অবশ্যই বলে এগিয়ে গেলাম তার দিকে । উনি আর্মি চিফ কে ও সাথে নিয়ে নিলেন । আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে বললেন, আপনাকে কিছু বলার ছিল , ডঃ শ্রীধরণ যা করতে চাইছেন খুব একটা বিচক্ষণ এর মতো কাজ যে নয় তাতো আপনি ভালো করেই বুঝতে পারছেন । আপনার কথা আমি আর্মি চিফ এর কাছ থেকে শুনলাম , আপনি দেশের সম্পদ , তাই আপনাকে অনুরোধ করছি এরকম একটা মিশন না গেলেই ভালো করবেন । ডঃ শ্রীধরণ শুধু মাত্র ওনার গবেষণাগার আর নিজের গবেষণার পেপার গুলো কে রক্ষা চাইছেন । এরকম কোনো এন্টি ভাইরাস উনি বানিয়েছেন বলে তো মনে হয়না । উত্তর এ আমি বললাম , কিছু মনে করবেন না স্যার , একজন বৈজ্ঞানিক এর কাছে তার গবেষণাগার ই মন্দির হয় ।তাই তাকে বাঁচাতে ও যদি ডঃ শ্রীধরণ এই সাহস দেখান তাকে সম্পূর্ণ সাহায্য করাটা আমার কর্তব্য মনে হয় ।আর তাছাড়া যদি সত্যিই তিনি এন্টি ভাইরাস বানিয়ে থাকেন, তাহলে এতগুলো মানুষ এর মধ্যে কিছু মানুষ কে তো বাঁচাতে পারবেন , সেটাই বা কম কিসের ? আমার উত্তর শুনে এই প্রথম আর্মি চিফ মুখ খুললেন , বললেন আমি বলেছিলাম স্যার প্রফেসর সাম্য আপনার কথা শুনবেন না । ঠিক আছে আপনি যান , কিন্তু আমি ঠিক সকাল ৭:৩০ এ একটা হেলিকপ্টার পাঠাবো অপনাদের উদ্ধার করার জন্য , আর কেউ না থাকুক আমি কিন্তু আপনাকে যেন এই হেলিকাপ্টার এ দেখতে চাই । হাসি মুখে বললাম নিশ্চয় ।এরপর মুখ্যমন্ত্রী বিদায় নিলেন । আর আমরা পরিকল্পনা শুরু করলাম , 'অপারেশন ভাইরাস ' এর ।

এতক্ষন যা বলা হয়নি ,ডঃ শ্রীধরণ এর সাথে একটি ছেলে আছে , যে কিনা ওই এলাকার ই , কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তার শরীর এ এই ভাইরাস এর কোনো ইমপ্যাক্ট হয়নি ।তাই ডঃ শ্রীধরণ এর মতে , এই ছেলেটির রক্ত থেকেই এই এন্টি ভাইরাস তৈরি সম্ভব । আর ছেলে টি ও যেতে চাই ডঃ শ্রীধরণ এর সাথে , তার পরিবার এর সবাই কে বাঁচানোর জন্য । পরিকল্পনা করা হল , আর্মি র একটি হেলিকাপ্টার আমাদের ৫ জন মানুষ ও একটি কুকুর কে ডঃ শ্রীধরণ এর গবেষণাগার এর ৫ তলার ছাদে নামিয়ে দিয়ে আসবে ঠিক রাত ৮ টাই , হাতে থাকবে ১২ টি ঘন্টা তার মধ্যেই যা করার করতে হবে । আমরা ৬ জন মানে , আমি , ডঃ শ্রীধরণ , ২ আর্মি, আর এই ছেলে টি , আর কুকুর টি হলো ডঃ শ্রীধরণ এর নিজের পোষা কুকুর , যার নাকি অদ্ভুত ক্ষমতা আছে আশেপাশে কোনো এই ভাইরাস ইমপ্যাক্ট মানুষ থাকলে তা সে খুব দ্রুত বুঝে ফেলতে পারে ।

সবাই যে যার মতো ফিরে যাওয়া হলো, হোটেল যাবার পথে ডঃ শ্রীধরণ নিজের গাড়িতেই লিফ্ট দিলেন । আর ধন্যবাদ জানালেন অনেক । কিন্তু কোথাও যেন মনে হচ্ছিলো কিছু একটা পরিষ্কার করছেন না ডঃ শ্রীধরণ । তাও আমি জানিয়ে রাখলাম, আমার কাছে বন্দুক থাকলে ও বুলেট কিন্তু ৫০ টাই আছে । শুনে বললেন ঠিক আছে অন্ততঃ ৫০ জন কে তো বাঁচাতে পারবো ।

হোটেল ফিরে মনে হলো এক বার বাড়িতে ফোন করি । কারণ যে এডভেঞ্চার এ যাচ্ছি বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা খুব ই ক্ষীণ । বাড়িতে মা, বাবার সাথে ফোন এ কথা বলে একটু শান্তি হলো । রাতুল কে ও ফোন করলাম , আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলাম, আমার গবেষণা টা সে যেন কন্টিনিউ করে । এর পর খাওয়া সেরে নিয়ে রাত ৮ টার অপেক্ষায় সময় গুনতে লাগলাম ।

৪ঠা জানুয়ারী , ২০১৯

বেঁচে আছি আমি । অবাক আর বিস্ময় যেন কাটতেই চাইছে না । লাস্ট ১২ ঘন্টা যেন আমার জীবন এর এক সম্পূর্ণ আলাদা দিন হিসাবেই থেকে যাবে । দুঃখ আর বিস্ময় কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা শুরু করলাম কাল কের পুরো ঘটনা ।

রাত ৮টার সময় যথারীতি আমরা সবাই তৈরি হয়ে এসে গেলাম নিজেদের পরিকল্পনা করা একটি জায়গায়, যেখান থেকে সহজে কেউ জানতে বা দেখতে পাবে না । এর আগে কখনো হেলিকাপ্টার এ ওঠা হয়নি আমার । তাই কিছুটা হলে ও অস্বস্থি হচ্ছিলো । হেলিকাপ্টার যখন চলতে শুরু করলো তখন অস্বস্তি এমনিতেই দূর হয়ে গেলো । হেলিকাপ্টার আমাদের সবাই কে এনে একটি ৫ তোলা বাড়ির ছাদে নামিয়ে দিয়ে গেলো । বাড়ি না বলে এটিকে একটা ছোট খাটো কমার্শিয়াল বিল্ডিং বলা যাই । কিন্তু অন্ধকার আর ভীষণ এক শান্ত পরিবেশ কিরকম যেন অজানা আতঙ্ক তৈরি করছিলো মনের মধ্যে । বাড়ির ছাদে নামিয়ে দিয়ে হেলিকাপ্টার এ বসা আর্মি চিফ আমাদের কে বেস্ট অফ লাক দিয়ে বিদায় নিলো । আর জানিয়ে গেলো কাল সকাল ৭:৩০ এর আগে তারা আর এদিকে আসছে না । যদি কোনো ভাবে তার আগে সব কিছু হয়ে যায়,তাহলে ২ জন আর্মির ফোন থেকে জানাতে বলেছে । ছাদে নামার পর , ডঃ শ্রীধরণ নিজের কুকুর টিকে আগে এগিয়ে দিলো, আর আমাকে বললো ঠিক তার পিছন এ থাকতে আমার বন্দুক হাতে । আমি এক বার জিজ্ঞেস করলাম , কিন্তু শ্রীধরণ এখানে তো অশান্তির কিছুই সে ভাবে চোখে পড়ছেনা । শ্রীধরণ তখন বললো এস সাম্য আমার সাথে তোমাকে দেখায় ।বলে ছাদের ধরে নিয়ে গেলো , নিচে কিছু দেখতে পাচ্ছো ? নিজের অনেক গুলো মাথা দেখা যাচ্ছিলো , কিন্তু পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো না । তখন শ্রীধরণ এক আর্মি অফিসার এর থেকে বাইনোকুলার টা নিয়েআমাকে দেখতে বললেন । অল্প একটু দেখেই চমকে উঠলাম । এ আমি কি দেখছি , এটা ও কি সম্ভব । সমস্ত মানুষ গুলো যেন ভীষণ রকমের এক হিংস্র প্রজাতি হয়ে গেছে, সবাই যেন সবার রক্ত খেতে ব্যস্ত , ভুলেই গেছে নিজেদের মানুষত্ব । শ্রীধরণ বলে উঠলো , এবার বুঝলে সাম্য কি ভয়ানকএই ভাইরাস । চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন । তারপর বললাম চলো শ্রীধরণ যে ভাবে হোক এদের কে আমাদের বাঁচাতেই হবে । হাসলো শ্রীধরণ বললো চলো । জানতে চাইলাম , এরকম ভাইরাস এফেক্টেড মানুষ কি এই বিল্ডিং এর মধ্যে ও আছে । শ্রীধরণ জানালো আছে , আমি যখন এখান থেকে এই ছেলে টিকে বাঁচিয়ে পালিয়েছিলাম,তখন অন্ততঃ ১০ - ১২ জন ছিল । এখন আমি জানিনা । তবে আমার ৫ জন গবেষক এই বিল্ডিং এর গ্রাউন্ড ফ্লোর এ গবেষণাগার এর মধ্যে আছে । তারা সম্পূর্ণ সুস্থ আর অপেক্ষা করছে আমার জন্য । বললাম চলো , আমার দিক দিয়ে যতটা সম্ভব আমি সাহায্য করবো । আমাদের একেবারে সামনে আর্মি অফিসার ২ জন চললেও তাদের কে শ্রীধরণ বলে রেখেছিলো হঠাৎ গুলি না চালাতে । প্রথম গুলি আমি চালাবো , কোনো কারণ এ সব কিছু ম্যানেজ না হলে , তারা যেন গুলি চালায় । ছাদ থেকে ৫ম ফ্লোর এ নামলাম আমরা । বিল্ডিং এর মধ্যে আলো ভালো করেই আছে , তাই সব কিছু পরিষ্কার ই দেখতে পাচ্ছিলাম । হঠাৎ দেখলাম ডঃ শ্রীধরণ কুকুর টি একটি বিশেষ দিকে তাকিয়ে চিল্লাতে শুরু করলো, শ্রীধরণ বললো রেডি সাম্য , সময় এসে গেছে । হঠাৎ ই একটা পিলার এর পিছন থেকে একটি সম্পূর্ণ মানুষ বেরিয়ে এলো। এই প্রথম এই ভাইরাস এর ক্ষতিগ্রস্ত কোনো মানুষ কে সামনে থেকে দেখলাম । কি ভয়ানকভাবে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিলো । শ্রীধরণ চিল্লে উঠলো , ফায়ার সাম্য । আমি সামনে এগিয়ে আসতে এই ভয়ানক রাক্ষস টি আমার দিকেই এগিয়ে আসতে লাগলো খুব দ্রুত । শ্রীধরণ এর গলা আবার শুনতে পেলাম । চালালাম আমার বন্দুক টি , খুব বেশি হলে ২০ মিটার দূরত্ব ছিল মানুষ রাক্ষস টির । ম্যাজিক কাজ করতে বেশি সময় নিলো না । স্ট্যাচু হয়ে গেলো রাক্ষস টা । হার্ট এর ধকধক টা যেন কিছুক্ষন এর জন্য থেমে গিয়ে আবার নতুন করে চলতে শুরু হলো । আর্মি অফিসার দু জন সাথে সাথেই তাকে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো । এই প্রথম মানুষ টিকে দেখলাম , কি ভয়ানক দেখতে হয়ে গেছে তাকে । সেই ছোট বেলায় ঠাম্মার মুখে শোনা রাক্ষস দের থেকে খুব একটা আলাদা মনে হলো না । ডঃ শ্রীধরণ কে দেখলাম ওই মানুষ টির শরীর থেকে রক্তের স্যাম্পল নিতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন । তারপর আর্মি অফিসার দের বাইরে পাহারা দিতে বলে আমাকে আর এই ছেলে টিকে নিয়ে একটা রুম এ ঢুকলেন । এরপর নিজে একটা টেস্ট টিউব বার করে কি সব টেস্ট করতে শুরু করলেন । ৫ মিনিট এর মধ্যে দেখলাম তিনি আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন । বললেন পেরেছি সাম্য , আমি পেরেছি । আমার ধারণা ভুল নয় ।কিছুক্ষন পর একটু শান্ত হলে , বললেন , কিছু মনে করো না সাম্য , একটা কথা আমি তোমাদের সবাই কে গোপন করে গেছিলাম । যে ভাইরাস এর এন্টি ভাইরাস নিয়ে আমি কাজ করছিলাম , এটাই সেই ভাইরাস কিনা আমি সম্পূর্ণ রূপে কন্ফার্ম ছিলাম না । কারণ আমি কোনো রুগী র রক্ত পরীক্ষা করার সুযোগ পাইনি । তাই বলতে পারো কিছুটা রুগী দের আচরণ এর ধরণ দেখেই আমি এতো বড় একটা প্রদক্ষেপ নিয়েছিলাম ।তুমি আমাকে সুযোগ করে দিলে রক্তের স্যাম্পল নেবার । আমি এই মাত্র দেখলাম আমার ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক । এটা সেই ভাইরাস যা নিয়ে আমি কাজ করছিলাম । আর এই ছেলেটির রক্ত থেকেই যে এন্টি ভাইরাস পুরোপুরি কাজ করবে , সেটা ও আমি দেখে নিয়েছি । আমাকে দেখালো শ্রীধরণ কি ভাবে এই ছেলে টির রক্তের স্যাম্পল ওই রাক্ষস তীর স্যাম্পল এর এফেক্টেড ভাইরাস গুলো কে মেরে ফেলছে । এখন আমাদের শুধু একটাই কাজ সাম্য যেমন করেই হোক , ছেলে টিকে নিয়ে যেতে হবে আমাদের গবেষণাগার এ । চলো রওনা হওয়া যাক ।আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম , আমরা যত সম্ভব লোক গুলোকে মারার কম চেষ্টা করবো , কারণ এন্টি ভাইরাস তৈরি হয়ে গেলে আমরা এদের কে বাঁচাতে পারবো ।

এখান থেকে লিফ্ট এর ব্যবস্থা থাকলে ও ,আর্মি অফিসার দের কথা মতো , সিঁড়ি দিয়ে নামার ই সিদ্ধান্ত হলো । তাদের মতে অজানা শত্রূ দের নাকি ফাঁকা জায়গাতেই কন্ট্রোল করা সোজা । ৪ নম্বর ফ্লোর এ পা দিলাম আমরা । পা দেবার কিছুক্ষন এর মধ্যেই শ্রীধরণ এর কুকুর টি অদ্ভুত ভাবে চিল্লাতে লাগলো , এক জন কে দেখতে পেয়ে বন্দুক ধরে মারার আগে কিছুক্ষন অপেক্ষা করছিলাম আমি , কিন্তু ভয় আর শ্রীধরণ এর চিল্লানো তে বেশ অনেক গুলো গুলি নষ্ট করে ফেললাম । কিছু তার গায়ে লাগলো না , আর কিছু গায়ে লাগলে ও কোনো ইমপ্যাক্ট হলো না দূরত্ব এর জন্য । অবশেষে যখন এফেক্ট হলো ১০ থেকে ১২ টা গুলি নষ্ট হয়ে গেলো । একে দড়ি দিয়ে বাঁধতে যেতে সবে উদ্যোগী হয়েছি এমন সময় কুকুর এর চিৎকার এ পিছন ফিরে দেখি আরো এক জন , চোখ বন্ধ করে গুলি চালালাম , সে স্ট্যাচু হলে ও , আমার পাশ থেকে আরো এক জন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো,যার উপর বন্দুক উঁচিয়ে গুলি মারা কোনো পরিস্তিতি আমার হাতে ছিল না , চোখ বুজিয়ে যখন পরে যাচ্ছি , কোথা থেকে যেন সেই ছেলে টি এই রাক্ষস এর সামনে চলে এলো , রাক্ষস টি ছেলে টির ঘাড়ে কামড়ে ধরলো , এসব এর মধ্যেই আমি আবার গুলি চালালাম শান্ত হলো রাক্ষস টি । এই ৩ জন কে দড়ি দিয়ে বাঁধার সাথে সাথে , ডঃ শ্রীধরণ ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লো,ছেলে টির ট্রিটমেন্ট করতে । ছেলে টি জানালো লাস্ট যে রাক্ষস টি আমাকে কামড়াতে এসেছিলো সে নাকি তার স্ত্রী । সত্যি বোঝা সম্ভব হচ্ছে না ছেলে না মেয়ে ।এর মধ্যেই হঠাৎ ই মনে হলো শ্রীধরণ এর কুকুর টি কোথায় ,পিছন ফিরে দেখি কুকুর টা হঠাৎ ই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলো আমার উপর , আর্মি অফিসার রা দেরি না করে গুলি করলো , ছিটকে পড়লো শ্রীধরণ এর ভীষণ প্রিয় সেই কুকর টি । স্টপ বলে খুব জোরে চিল্লে উঠলেন শ্রীধরণ , কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছিলো । কোথাও যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলো শ্রীধরণ , শুধু মুখ থেকে একটি ই আওয়াজ বেরোলো মারো একে , পিছন থেকে শ্রীধরণ এর দিকে দৌড়ে আসা আর একটি রাক্ষস , আর্মি অফিসার দের গুলি তে ঝাঁজরা হয়ে গেলো সে । যা হোক করে ৪ নম্বর ফ্লোর কাটাতে তো পারলাম আমরা , কিন্তু পরের ফ্লোরে যাবার আগে আমাদের সব থেকে বড় শক্তি শ্রীধরন এর কুকুর টি ই আর রইলো না । আমার ও গুলি প্রায় শেষের পথে । কাজেই ভরসা আর্মি অফিসার এর গুলি । তাই এবার তাদের কে সামনে রেখেই এগোতে থাকলাম আমরা । ৩ নম্বর ফ্লোর এ পা দিতেই বুঝে গেলাম এখানেই সব থেকে বেশি নরখাদক আছে । কারণ এখানেই এই একটি সিনেমা হল আছে । প্রচুর নর খাদক বেরিয়ে আসতে লাগলো চার দিক থেকে , আর আর্মি অফিসার রা অনবরত গুলি করতে লাগলো । অনেক গুলো গুলি আমি ও করলাম , কিছুক্ষন পর যখন আপাত দৃষ্টি তে মনে হলো সব একটু শান্ত হয়েছে। শ্রীধরণ বললেন সবার যদি কোনো ছোট আঘাত ও লেগে থাকে যা থেকে রক্ত বেরোছে , তাহলে যেন জানানো হয় ।আমাদের ভাগ্য সত্যি খারাপ ছিল । একটি আর্মি অফিসার এর আঘাত পাওয়া গেলো, সে জানালো এক জন হঠাৎ পাশ থেকে আক্রমণ করাই , গুলি করার আগে তার সাথে কিছুক্ষন হাত দিয়ে মার পিঠ করতে হয় ।সে জন্য ই এই ক্ষত হতে পারে । তাকে আমরা দড়ি দিয়ে ভালো করে বেঁধে ছেড়ে আসতে বাধ্য হলাম । কারণ শ্রীধরণ এর মতে আর কিছুক্ষন এর মধ্যেই ও রাক্ষস হয়ে যাবে । কিন্তু আমরা যদি এন্টি ভাইরাস বানিয়ে ফিরতে পারি তাহলে ওদের কে বাঁচাতে পারবো । তাই এক জন আর্মি অফিসার আর আমার হাতের ১০ টি গুলি নিয়ে এগিয়ে চললাম আমরা ২নম্বর ফ্লোর টির দিকে । শ্রীধরণ আগেই জানালো এই ফ্লোর টিতে একটু কম রাক্ষস থাকতে পারে , কারণ এই ফ্লোর এ কোনো দোকান ই খোলে না । সত্যি সেরকম কাউকে দেখতে না পেয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম আমরা । হঠাৎ ই উপর থেকে কেউ যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো আমাদের উপর , আক্রমণ করলো ওই ছেলেটির উপর আবার , যে আমাদের সব কিছুর আশা ভরসা । কিছু না ভেবেই পর পর কয়েকটি গুলি চালালাম আমি । তার ২ টি গুলি এই রাক্ষস টির গায়ে লাগলো । সম্পূর্ণ স্ট্যাচু হবার আগে , ছেলে টিকে ভালো মতোই কামড়ালো সে । এতো রক্ত বেরোনোই ছেলেটি ভালো মতো দুর্বল হয়ে পড়ছিলো ।শ্রীধরণ আবার কিছুটা সময় নিলো ওর শুশ্রূধা করার জন্য । কিছু লিকুইড ও খায়েই দিলো তাকে । একটু ভালো বোধ করলে আমরা আবার রওনা হলাম পরের ফ্লোর টির জন্য । এই প্রথম কোনো ফ্লোর এ যাবার আগে আমাদের টীম থেকে কেউ কম হয়ে গেলো না । এই ফ্লোর এ নামার পর অনেক রাক্ষস র দেখা পাওয়া গেলো , কিন্তু আর্মি অফিসার এর গুলি তে তারা সরে যেতে লাগলো । সিঁড়ির কাছে এতো নরখাদক ছিল , সে আমাদের কে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিলো ।জিজ্ঞেস করলো সাম্য স্যার আপনার কাছে কটি গুলি আছে ? আমি দেখলাম একটি গুলি ই আর আছে । এরপর তিনি বললেন শ্রীধরণ স্যার , এই একটা ফ্লোর আমাদের কে লিফ্ট এ যেতে হবে , কারণ সিঁড়িতে যত রাক্ষস আছে অতজন কে মারার মতো গুলি আমার কাছে নেই । তাই কথা মতো ডঃ শ্রীধরণ নিজে গেলেন লিফ্ট এর সুইচ টিপতে পিছন থেকে আর্মি অফিসার টি প্রটেকশন দিতে লাগলো । লিফ্ট এর সুইচ টিপে নিরাপদে ফিরে এলো শ্রীধরণ , কিছুক্ষন এর মধ্যেই লিফ্ট এসে গেলো । সবাই মিলে দৌড়ে লিফ্ট এর কাছে চলে এলাম আমরা , লিফ্ট টা খুলতেই ভেতর থেকে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর , বন্দুক টির শেষ গুলি চালিয়ে ফেললাম আমি, না এই গুলি টি নষ্ট হলো না , স্ট্যাচু হলো মানুষ টি , লিফ্ট উঠতে যাবার মুহূর্তে হঠাৎ ই চকিত আক্রমণ আর্মি অফিসার টিকে , যাহোক করে বন্দুক দিয়ে মেরে গুলি চালালেন আর্মি অফিসার টি , শেষ হয়ে গেলো রাক্ষস টির জীবন বাতি । লিফ্ট উঠে পড়লাম সবাই , গ্রাউন্ড ফ্লোর পৌঁছে লিফ্ট খুলতেই বুঝলাম প্রচুর নরখাদক দাঁড়িয়ে আমাদের আর গবেষণাগার এর মাঝে । তাই একটু চুপচাপ লুকিয়ে আমরা পাশের একটি ঘরে চলে গেলাম । এখান থেকে নাকি একটি গোপন রাস্তা আছে এই গবেষণাগার এ যাবার । সেই গোপন রাস্তাতে যেতে গিয়েও আমরা আরো অন্তত ১০-১২ জন রাক্ষস দেখতে পেলাম , আর্মি অফিসার টি জানালো সে ২ জন কে নিয়ে যেতে পারবে , আর যে কোনো এক জন কে অপেক্ষা করতে হবে এখানেই , জীবন এর ঝুঁকি নিয়ে ।কারোর কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম আমি ই অপেক্ষা করছি , কারণ ডঃ শ্রীধরণ আর এই ছেলেটির গবেষণাগার এ যাওয়া টা ভীষণ জরুরি , আর সত্যি যদি তারা জয়লাভ করে তাহলে তো আমার কিছুই হবে না । ডঃ শ্রীধরণ প্রথম এ না বললে ও পরে মেনে নিলেন আমার প্রস্তাব । যাবার আগে শুধু একটাই কথা বলে গেলেন আমি আপনাকে বাঁচাবোই । আমাকে সাহায্য করতে এসে আপনার মতো বৈজ্ঞানিক মারা যেতে পারে না । আমি আসবো , আপনি শুধু অপেক্ষা করবেন । সবাই চলে গেলো গবেষণাগার এর দিকে , আর্মি অফিসার এর মূহুর মূহুর বন্দুকের শব্দে আর নরখাদক গুলোর চ্যাঁচামেচিতে নিজের সমাধি রচনা করতে লাগলাম মনে মনে । যে কোনো মুহূর্তে কোথা থেকে ওই নরখাদক গুলো আসতে পারে সত্যি জানা নেই আমার । চুপ করে লুকিয়ে রইলাম, আর অপেক্ষা করতে থাকলাম , যদি অলোকিক কিছু হয় ।এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেছিলো আমার বুঝতে পারিনি । হঠাৎ একটা শব্দে চোখ খুলে গেলো , ঘড়ির দিকে দেখলাম ৬:১৫, মানে সকাল হয়ে গেছে । কিন্তু রাক্ষস এর বাড়িতে কি বা সকাল কি বা রাত । হয় রাক্ষস এর হাতে মরবো , না হয় বিস্ফোরণ এ । কেমন যেন মনে হলো আমার বাঁচা আর মরার মধ্যে শুধু যেন ডঃ শ্রীধরণ এ দাঁড়িয়ে আছে । হঠাৎ যেন মনে হলো ডঃ শ্রীধরণ এর গলা শোনা যাচ্ছে। প্রফেসর সাম্য বলে ডাকছেন তিনি । বেরিয়ে এলাম আড়াল থেকে, বললাম আপনি এখানে তার মানে বানাতে পেরেছেন । বললো , সব পরে বলবো চলো আমার সাথে , তোমাকে এ ভাবে আমি মরতে দিতে পারিনা । সেই গোপন রাস্তা দিয়ে একরকম জোর করেই নিয়ে চললো সে ,চারিদিকে ছড়িয়ে নরখাদক দের মৃতদেহ । তার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললাম আমরা । হঠাৎ শ্রীধরণ আমার হাত টা খুব জোরে চেপে ধরে বললো তাড়াতাড়ি চলো, বলে দৌড়োতে শুরু করলো , আমি ও দৌড়লাম তার সাথে, দূরে দেখতে পেলাম আর্মি অফিসার টি দাঁড়িয়ে আছে একটি গেট এর ওপারে । শ্রীধরণ আমাকে সেখানে পৌঁছে দিলে গেট এর মধ্যে এখুনি ঢুকতে বলছিলো , গেটে ঢোকার আগে শ্রীধরণ এর দিকে চাইতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম, এক ই অবস্থা শ্রীধরণ এর , নরখাদক দের মতো হয়ে গেছে , হঠাৎ ই আমার ঘাড় লক্ষ করে কামড়ে দিলো সে, কোনো প্রতিবাদ করার আগেই , আর্মি অফিসার এর গুলি তে শেষ হয়ে গেলো এতো বড়এক জন বৈজ্ঞানিক এর জীবন ।

গলায় কামড় নিয়ে ভেতরে এলে ও আমি ও যে আর কিছুক্ষন এর মধ্যে ওই রকম এক নরখাদক হতে চলেছি , বেশ বুঝতে পারছিলাম । এমন সময় কিছু লোক গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে এলো আর জানালো তাদের এন্টি ভাইরাস তৈরি । কোনো কিছু না ভেবে তারা প্রথম আমার উপরই তা প্রয়োগ করতে চাইলো , আমি রাজি হয়ে গেলাম, তাছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না । একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে আমার হাত শক্ত একটি বেল্ট দিয়ে বেঁধে দিলো , তারপর একটি ইঞ্জেকশন দিলো , কিছুক্ষন এর মধ্যেই শরীরটা কি রকম করে উঠলো , তারপর মাথার এক অদ্ভুত ব্যথা তে , চোখ বুজিয়ে গেলো আমার । এর পর আর কিছুই মনে নেই । যখন চোখ খুলেছিলাম আমি হাসপাতাল এর বেড এ । সম্পূর্ণ সুস্থ এক মানুষ । সেই আর্মি অফিসার আর আর্মি চিফ আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেলো মিশন কমপ্লিট করার জন্য । পরে জানলাম ডঃ শ্রীধরণ তার গবেষক দের কাছে ছেলে টিকে পৌঁছে দিয়ে ,সমস্ত রকম ইন্সট্রাকশন দিয়ে এন্টি ভাইরাস বানাতে বলে । তারপর এ সে ইচ্ছা প্রকাশ করে যেমন করে হোক আমাকে বাঁচাবে । আর্মি অফিসার এর কোনো বারুন সে শোনেনি , তাকে শুধু পিছন থেকে গুলি সাপোর্ট দিতে বলে একা এ একটা শক্ত লাঠি নিয়ে এগিয়ে যাই আমাকে বাঁচাতে । গুলি তে অনেক নরখাদক মারা গেলে ও কিছুর সাথে সে নিজেই লাঠি হাতে লড়াই করে, তখন ই কেউ কামড়ে দেয় তাকে, নিজে রাক্ষস হতে চলেছে জেনে ও , এন্টি ভাইরাস নিতে সে পিছন এ যায়নি ,উদ্ধার করতে এসেছে আমাকে । শুনে মন টা খারাপ হয়ে গেলো, ডঃ শ্রীধরণ এর এতো বড় আত্মদান এর কোনো মূল্য এ আমি দিতে পারলাম না । এন্টি ভাইরাস কাজ করতে শুরু করলে , আর্মি অফিসার টি খবর দেন আরো আর্মি পাঠানোর জন্য । তারা এসে আমাদের কে উদ্ধার করে , শুধু তাই নয় ,যাদের কে বেঁধে রাখা হয়েছিল ,সবাই কে বাঁচানো গেছে । কিন্তু বাকিদের এই মুহূর্তে শেষ করে দেয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ।

কিছু টা সুস্থ হতেই মুখ্যমন্ত্রী দেয়া ফুলের স্তবক নিয়ে ফেরার এরোপ্লেন ধরলাম বটে , কিন্তু প্রতিজ্ঞা করলাম , কোনোদিন যদি সত্যি আমার সময় পরিবর্তনের যন্ত্র টিকে দাঁড় করাতে পারি, তাহলে ডঃ শ্রীধরণ এর সাথে দেখা করে তার যোগ্য সম্মান আমি ফিরিয়ে দেব । এটাই হবে ডঃ শ্রীধরণ কে আমার দেয়া সব থেকে বড় উপহার ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action