Sutanu Sinha

Classics

3  

Sutanu Sinha

Classics

আসল ভালোবাসা

আসল ভালোবাসা

21 mins
904


অসামান্য প্রতিভাধর ঋষভ বসুকে শুধু নিজের বিদ্যালয়ে নয়, এলাকা ছাড়িয়ে দূর দূরান্তের শিক্ষকেরা এক ডাকে চিনত। আর নিজের বিদ্যালয়ে তো প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা। ঋষভও নিজের অধ্যবসায়ের জোরে উত্তরোত্তর উন্নতির   

 বাবা সৌরভ বসুও এলাকার নামকরা ডাক্তার। সেই সুবাদে বিখ্যাত বিজ্ঞানী সংকেত রায়ের সাথে পরিচয়। পেশেন্ট ও ডাক্তারের সম্পর্ক অবশেষে পারিবারিক বন্ধুত্বে পরিণত। সংকেতবাবুর একমাত্র সুন্দরী কন্যা সুনেত্রাও ঋষভকে চিনত ভালো ছেলে হিসেবে। পারিবারিক সখ্যতায় দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ ঘটঋষভের জীবনে সুনেত্রার গভীরতা আরও বৃদ্ধি পায় ডাক্তারি পড়ার সময়। ঋষভ এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণায় খুঁজে পায় পরশ 

হঠাৎই স্বপ্নভঙ্গ একটি সামান্য ঘটনায়। ঋষভের বইয়ের ভেতর সুনেত্রা আবিষ্কার ক'রে হলুদ খামের চিঠি! খামের উপর সুন্দর হাতের লেখা..."আমার প্রিয় মানুষকে - তোমার প্রিয়তমা বান্ধবী"    ঋষভকে না জানিয়ে খুলে ফেলে খামটি। ঐন্দ্রিলার গভীর ভালোবাসার ছোঁয়ায় দীর্ঘ এক প্রেমপত্র!

 হতবাক সুনেত্রা! কে এই ঐন্দ্রিলা? দ্বিধান্বিত মনে সংশয়ের আকাশ ভেঙে পড়ে এতদিনের প্রেমের বন্ধনে। এদিকে ঐন্দ্রিলার জন্যে বাড়ির থেকে নিউইয়র্কে বসবাসকারী বিজ্ঞানী সংলাপ সেনের বিবাহ প্রায় পাকা।

ঋষভ এর গোপন চিঠি পরে ফেলা কে অনুচিত মনে হলে ও যার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চলেছে তার সম্বন্ধে সব জানা উচিত বলে মনে হলো সুনেত্রা র । সেই সূত্র ধরেই আরো খোঁজ খবর করতে শুরু করলো সে । যদি কোনো ভাবে জানতে পারে কে এই ঐন্দ্রিলা , ঋষভ ও কি এই ঐন্দ্রিলা কেই ভালোবাসে । নিজেকে খুব উৎকণ্ঠিত লাগতে শুরু করলো সুনেত্রা , পাশে রাখা জলের গ্লাস থেকে ২ ঢোক জল খেয়ে নিলো সে । কিন্তু কি করতে পারে সে । ঋষভ কে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে যাওয়াটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না । অনেক অবাঞ্চিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । তার থেকে ভালো নিজে ভিতর ভিতর খোঁজ নেয়া ।ঋষভ এমনিতেই ওর সরকারি হাসপাতাল এর অনেক গল্প বলে , সুনেত্রা তা খুব মন দিয়ে শোনে । ভালো ও লাগে তার । নিজের নার্সিংহোএম এর হরেক রকম কাজ কর্মের এর সাথে ও কোথাও মিল খুঁজে পাই সে । দু জন্যেই নিত্যদিন হরেক রকম রুগী দের সমুক্ষিন হয় ,শুধু তাদের নার্সিংহোমে এ রোগের উপসর্গ গুলো অনেকটাই এক এ রকম থাকে , কিন্তু সরকারি হাসপাতাল এ অনেক রুগীর সাথে থাকে রোগের ও বিশেষত্ব । তার ঋষভ এর সাথে শেষ কবছরের পরিচয়এ যা মনে হয়েছে, ও পড়া পাগল ছেলে। রীতিমতো রাত জেগে আজ ও পড়াশোনা করে । ডাক্তারি করাটা তার একরকম নেশা বা ভীষণ ভালো লাগা বলতে যা বোঝাই । এমডি করার পর হয়তো আরো কিছু ভাবতে পারে । কোনোভাবেই ঋষভ লুকিয়ে প্রেম করা বা ২টো মেয়ের সাথে ঘোরার মতো কাজ করতে ও পারে না , আর করার উপযুক্ত সময়এ নেই । কিন্তু এতো কিছু জানা সত্ত্বেও মনের মধ্যে থেকে খিঁচ টা কিছুতেই যাচ্ছে না সুনেত্রার । একটা মেয়ে এরকম একটা ছেলের প্রেম এ পড়তেই পারে, তাকে ভালোবাসার চিঠি লিখে পাঠাতে ও পারে , কিন্তু যেটা সুনেত্রা কিছুতেই মানতে পারছে না , এরকম একটা চিঠি ঋষভ নিজের ডায়েরি মধ্যে এতো যত্ন করে কেন রেখে দিয়েছে ?ঋষভ কি তাহলে ঐন্দ্রিলা কে , না আর ভাবতে পারছে না সুনেত্রা । ফোন এর দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় রাত ২ টা । তাই বিছানায় শুয়ে ১ থেকে ১০০ আর ১০০ থেকে ১ বিড়বিড় করতে লাগলো সে । ছোটবেলায় মা বলতো ঘুম চোখে না এলে এটাই নাকি অদম্য উপায় ,যে কোনো ঘুমের ঔষধ এর থেকে ও ভালো কাজ করে ।


কলেজ স্ট্রিট এর অর্ধেক দোকান যে আজ বন্ধ জানা ছিল না ঋষভ এর । অনেক গুলো দোকান ঘোরার পর , বইটা যখন কিছুতেই পাবে না ভেবে চলে যাবে ভাবছে , তখন হঠাৎ এ বাবার এক পেশেন্ট এর কথা মনে পড়লো তার, বই পাড়ায় দারুন পসার । দেরি না করে নম্বর টা খুঁজে ফোন লাগালো । ভদ্রলোক ফোন টা ধরে আমার পরিচয় পেয়ে বললো, আপনি একটু অপেক্ষা করুন , আমার লোক ১০ মিনিট এর মধ্যে আপনাকে ফোন করে সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছে । হাতে একটু সময় পাওয়ায় কফি হাউস এ গিয়ে বসলো ঋষভ । অনেক দিন পর কফি হাউস এ এলো সে । এখানে এলেই পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে পরে যাই , যার অনেক টাই ঐন্দ্রিলা কে ঘিরে । যাই হোক একটা কফি অর্ডার করে খেতে খেতে মনে হলো , আরে সুনেত্রা তো আজ সকাল থেকে ফোন করেনি । ফোন টা সুইচ অফ বা কোনো কারণ এ শুনতে পাইনি এরকম হলো না তো ? তাহলে এখন টানা একটি সপ্তাহ গেলো । ম্যাডাম রাগ যতক্ষণ না কমবে স্বাভাবিক তো হবে না , দেখা ও করবে না , আর যদি বা কথা বলে অথবা দেখা করে , তাহলে ওর জীবন সব সম্যসার জন্য সারাক্ষন আমাকে দায়ী করে যাবে । আর তাতে যদি একটা প্রত্যুত্তর পাই , তাহলে তো আরো একটা সপ্তাহ এরকম অবস্থা চললে ও চলতে পারে । এসব হাবিজাবি ভেবে খুব সন্তর্পনে মোবাইল টা বার করলো সে । না সুনেত্রার কোনো ফোন আসেনি । যাক বাঁচা গেলো । সাথে সাথে একটা ফোন লাগালো সে সুনেত্রা কে , ফোন টা রিসিভ করলো না সে । আরো এক বার করলো , না এবারে ও রিং হয়ে যাচ্ছে দেখে কেটে দিলো । না বার বার ফোন করাটা ঠিক হবেনা , ও দেখলে নিশ্চয় আবার ফোন করবে । ফোন টা পকেট এ রাখতে গিয়ে অনেক গুলো নোটিফিকেশন দেখলো ঋষভ । তার মধ্যে সুনেত্রার একটা মেসেজ দেখে তাড়াতাড়ি খুললো সে হোয়াটসআপ । অদ্ভুত ভাবে সুনেত্রা কিছু মেসেজ লিখে আবার ডিলিট করে দিয়েছে ।তখন ১:৩০ হবে । এতো রাত্রি তে সুনেত্রা জেগে কি করছিলো ? কাল রাত প্রায় ১২টা অব্দি কথা হয়েছে বটে, কিন্তু সেরকম কিছু তো ঘটে নি । এই সময় হঠাৎ মনে হলো , সুনেত্রা বলছিলো বটে আমার কিছু একটা কাছের জিনিস সে নিয়ে গেছে, সেটা পরে সে ফিরিয়ে দেবে । কিন্তু কি কাছের জিনিস না ঋষভ বুঝতে পেরেছে না সুনেত্রা বলতে চেয়েছে ।তাতে বেশি মাথা ঘামাই নি ঋষভ । কিন্তু এখন মনে একটু চিন্তা হতে শুরু করলো। তাহলে কি সুনেত্রা কোনোভাবে..ঐন্দ্রিলার কিছু হাতে পেলো নাকি।...কিন্তু কি পেতে পারে সে ??? এমন সময় ফোন টা আবার বেজে উঠলো , বুক ষ্টল এর লোক টি এসে গেছে , তাড়াতাড়ি করে কফি শেষ করা বই কিনতে বেরিয়ে পড়লো ঋষভ ।


ঐন্দ্রিলা দিনটা যেন কিরকম একটা চলছে । সকাল বেলা মা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে তুলে দিলো ওই বিজ্ঞানী সংলাপ সেনের সাথে কথা বলার জন্য । এমন ভাবে তুললো যেন ঐন্দ্রিলার খুব দরকারি কোনো পরীক্ষা আছে । ছোটবেলা পরীক্ষার দিন মা এভাবেই তুলে দিতো । পেশায় সাংবাদিক ঐন্দ্রিলা বরাবর ই খুব স্পষ্ট বক্তা , নেকা নেকা প্রেম তাকে দিয়ে যে হবেনা এ কথা সে বাবা মা কে বোঝাতেই পারছে না । অনেকবার সে মা কে বলেছে , তার পছন্দের ছেলে টি কে যখন তাদের পছন্দ নয় ,তাহলে এসব কথা বলার কোনো দরকার নেই , যার সাথে তোমরা চাইছো আমি বিয়ে করতে প্রস্তুত । কিন্তু মা এর দাবি , এখন কার যুগ এ ছেলেটি কেমন জানতে গেলে কিছুটা কথা বলা জরুরি । তবে এই ছেলে টিকে বিয়ে করলে আমেরিকা চলে যেতে হবে জেনে মনে মনে খুব খুশি হয়েছে ঐন্দ্রিলা, অন্তত ঋষভ এর থেকে না অনেক দূরেই চলে যেতে পারবে সে । সকাল এ সংলাপ সেন এর সাথে কথা বলে হঠাৎ ওই বেটা ঋষভ এর কথা মনে পরে গেলো । এতো গুলো বছর হয়ে গেলো, তাও যেন মন থেকে বেরোয় না । এতো গেলো মনের সমস্যা , তার সাথে যোগ হয়েছে, বাস উঠতে গিয়ে ছোট্ট একটা হোঁচট , বেশ জুতো টা গেলো ছিঁড়ে ।লেডিস সিট এর সুযোগ নিতে কোনোদিন এ খুব একটা পছন্দ করে না ঐন্দ্রিলা , কিন্তু আজ কের সুযোগ নিলো । জুতো টাই যা হোক করে একটা পিন আটকে ব্যবস্থা করে চুপ চাপ বসে রইলো সে । ভাবতে লাগলো সব পুরোনো কথা , স্কুল বা কলেজ জীবন এর সেই পরিকল্পনাহীন দৌড়োনোর জীবন । আর কলেজ মানেই এসে পরে সেই ঋষভ এর কথা । কত পাগলামো মেরেছিলো সে ঋষভ কে , কি না কি করেনি । আর শেষমেশ যখন সে রাজি হলো , তখন বাবা মা কে রাজি করানো গেলো না । কেন জানিনা বাবা মা এর ঋষভ কে ভালো লাগতো না । তবে পরে ঋষভ এর বাবা নাকি কিছু করেছিল । কি করেছিল বা বলেছিলো আজ ও বাবা মা পরিষ্কার করে বলে না । শুধু বলে ওর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখিস না মা । .... হঠাৎ খুব জোরে একটা হর্নের আওয়াজ এ সম্বিৎ ফিরলো । সল্টলেকে ঢুকে গেছে বাস টা । উঠে পড়লো ঐন্দ্রিলা, একটু আগেই নামতে হবে আজ কে । জুতো টা সরিয়ে নিয়ে তারপর অফিস ঢুকবে সে ।


রোজকার এর মতো সংলাপ সেন রাতের বেলাতেই নিজের ঘরের সাধারণ কাজ গুলো শেষ করার কাজেই ব্রত হয় ,আজ তার একটু অন্যরকম করতে হলো । তাকে একটি মেয়ের সাথে কথা বলতে হলো । বিয়ে করবে না বলে এক রকম ভেবেই রেখেছিলো সংলাপ , কিন্তু বাবা মা কে বোঝানোর ক্ষমতা তার নেই । মা এর সেই এক কথা কোথাকার কোন মাস্টারমশাই এর মেয়ে তোকে না বললো , সেটা রেখেই তুই সারাজীবন একলাই থেকে যাবি । তোকে বড় করলাম , বিজ্ঞানী বানালাম এই কারণ এ । সংলাপ কতবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে , মাস্টারমশাই সংকেত রায় শুধু তার স্যার নয়, বৈজ্ঞানিক হিসাবে তার পথপ্রদর্শক , আর সুনেত্রা কে সে ভালোবাসতো ঠিক কথা , কিন্তু তার জন্য যে সে বিয়ে করতে চাইছে না , এটা ও ঠিক নয় । আসলে আমেরিকা আসার পর , তাদের জীবন ধারণ করার নিয়ম এর সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে ,কখনো নিজেকে এক মনে হয় না , আর কারোর সান্নিধ্য পাবার ও দরকার পরে না । নিজের কাজ , নিজের আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই ভালো লাগে । সংকেত স্যার এর দেয়া রেফারেন্স এই মিস্টার এডওয়ার্ড সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে সংকেত । তাই ভালো ভাবে কাজ করে স্যার এর মুখ উজ্জ্বল করাটাই সংকেত নিজের এক মাত্র কর্তব্য বলে মনে করে । তবে মেয়েটির সাথে কথা বলে মনে হলো খুব ই স্বাধীনচেতা মেয়ে । চাকরি টা ও তো সংবাদিকতার । এরকম মেয়ে বাবা মা এর যে কি করে ভালো লাগলো জানিনা । মা কে জিজ্ঞেস করলে বললো , এরকম এ মেয়ে তোর সাথে গিয়েওই দেশে থাকবে , আর তোকে লাইন এ আনতে পারবে । আলোচনা এখানেই শেষ হয়ে গেলো , আর কথা বাড়ানোর কোনো মানেই দাঁড়ায় না । কিন্তু মেয়েটির সাথে কথা বলে কোথাও যেন নিজের দেশের কথা খুব মনে পরে গেলো সংলাপ এর । মনে পরে গেলো সুনেত্রা র সাথে কাটানো সেই আনন্দের দিনগুলো । মেয়েদের সাথে কথা বলতে না পারার বদনাম সুনেত্রা ই কাটিয়ে দিয়েছিলো । ওই ২ টা মাস এখনো ভুলতে পারেনা সংলাপ । ওই ২ তো মাস আর সুনেত্রার কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লো সে । স্বপ্নের কঠিন বাস্তব তাকে বার বার নিয়ে গিয়ে ফেলতে লাগলো ফেলে আসা সেই পোড়া দেশ ভারতবর্ষে , নিজের চেনা শহর কলকাতাতে, আর সঙ্গে থাকলো সুনেত্রার মধুর স্মৃতি ।


সন্ধেবেলায় ঘরে ঢুকে চা এর কাপ টা নিয়ে টিভি র সামনে একটু বসেছে সুনেত্রা । সারাদিন এর এই ১ ঘন্টা সময় সে টিভি দেখতে বসে । এমন সময় বাবা পাশে এসে বসলো , বললো মা একটা কথা বলার আছে । বাবা কে সব সময় যে একটা আলাদা সম্মান দিয়ে এসেছে সুনেত্রা । মানুষ টা র চিন্তা ভাবনা যেন একটু অন্যরকম । জিজ্ঞেস করলো সুনেত্রা , কি বলবে বাবা । সংকেত বাবু রাখঢাক না করেই বললো , আমার এক বৈজ্ঞানিক ছাত্র ফিজিওলজি উপর কিছু একটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলো । সেটার উপর ওর একটা বড় প্রেজেন্টেশন আছে, অনেক বড়বড় বৈজ্ঞানিক আর ডাক্তার রা আসবে । ফিজিওলজি তো ঋষভ এর ও খুব পছন্দের বিষয় ,আর তুই ও ব্যাপার টা কে পছন্দ করিস । তা তোরা দু জন এ এক বার যাবি নাকি ? হঠাৎ ঋষভ এর কথা শুনে ঐন্দ্রিলার ব্যাপার টা মাথায় এসে গেলো । আজ অনেক ভেবে সে ঠিক করেছে সরাসরি ঋষভ কেই জিজ্ঞেস করবে , কে এই ঐন্দ্রিলা ? তবে যে দিন দেখা হবে সেদিন এ বলবে সে । তার আগে নয় ।সুনেত্রা কে চুপ করে থাকতে দেখে , সংকেত বাবু আবার বলে উঠলেন , কি রে তোরা যাবি তো ? তাহলে টিকেট কাটতে বলবো । হঠাৎ টিকেট কাটার কথা শুনে সম্বিৎ ফিরলো সুনেত্রার , কোথায় হবে এটা বাবা ? আর কবে ? , সংকেত বাবু বলে উঠলেন , আমেরিকা তে রে , এরকম কনসার্ট আর আমাদের দেশে কবে হলো । দিনটা ভারতীয় হিসাবে আরো ৫ দিন পর । বাবা ভালো করেই জানে মেয়ে কি কি প্রশ্ন করতে পারে , তাই তৈরি হয়ে এসেছিলো । আজ পর্যন্ত মেয়ে তার কোনো কথায় ফেলে নি । সুনেত্রা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো , "ঠিক আছে বাবা যাবো , তুমি টিকিট কাটো ।" সংকেত বাবু একটু হেঁসে বলে উঠলেন "টিকিট কাটবো না , সংলাপ কে জানিয়ে দেব ,ও পাঠিয়ে দেবে । তুই তাহলে ঋষভ কে জানিয়ে দিস । " সংলাপ এর কথা শুনে কিছুক্ষন থেমে গেলো সুনেত্রা । বাবার সব থেকে প্রিয় ছাত্র এই সংলাপ । জীবন এর এক গুরুত্বপূর্ণ ২-৩ টা মাস কাটিয়েছিলো সুনেত্রা এই সংলাপ এর সাথে । সুনেত্রা কে ভীষণ ভালো ও বাসতো ছেলে টি । কিন্তু বাবার প্রিয় ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও , সুনেত্রা যখন প্রথম বাড়িতে এসে সংলাপ এর কথা বলে বাবা এক কথায় বলেছিলো, "না সেটা সম্ভব নয় ,তুমি কাল না বলে দিয়ো । " বাবার কথার উপর কথা ক্ষমতা সুনেত্রার কোনো কালেই ছিল না । তাই না বলে দিয়েছিলো। এর পর ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ঋষভ এর সাথে আলাপ আর প্রেম । যাই হোক অনেক দিন পর ২ তো ব্যাপারে মনে মনে খুশি হলো সুনেত্রা , এক আমেরিকা যাওয়া প্রায় ১০বছর পর , আর দুই সংলাপ দার এর সাথে দেখা হওয়া , নাকি খুব বড়কিছু নিয়ে গবেষণা করছে সে । ফোন টা বার করে তাড়াতাড়ি করে ঋষভ কে ফোন লাগলো সে ।


অবশেষে সুনেত্রার ফোন এলো সন্ধেবেলা । শেষ ৩-৪ বছর এ সুনেত্রার সাথে ঘনিষ্ঠতা এতটাই হয়ে গেছে যে এক দিন ফোন না করলে কিরকম একটা লাগতে শুরু করে । কিন্তু আজ ফোন টা ছাড়ার পর, সুনেত্রা কে নিয়ে কি রকম যেন অন্য অনুভূতি হলো । কোনো এক সংলাপ সেনের জন্য তার উচ্ছলতা দেখে অদ্ভুত লাগলো । এক বার মনেই হলো না আজ সারা দিন সে এক বার ও ফোন এ করেনি ঋষভ কে । যাই হোক আমেরিকা যাবার জন্য সুনেত্রার অনুরোধ ভেবে দেখা যেতে পারে । প্রতিদিন রুগী দের নিয়ে থাকতে থাকতে অনেকটাই বিরক্ত হয়ে যাওয়া এই জীবন থেকে কিছুটা ছুটি পেতে পারে সে । আসলে সরকারি হাসপাতাল এর রুগীর চাপ অনেক বেশি থাকে । আরো যদি ডাক্তার হিসাবে এক বার নাম কিনে যাও , আর বসার সুযোগ অব্দি পাওয়া যাই না । সুনেত্রা অনেক বার বলেছিলো , ঋষভ এর বাবা মানে সৌরভ বসুর নার্সিং হোম এ যোগদান করতে । কিন্তু ঋষভ করেনি । সে নিজের অস্তিত্ব নিজেই বানাতে চাই । বাবা মা সবার কাছে যাই , তাদের পাশে থাকে , কিন্তু নিজের কাজের জগৎ সে নিজের মতো করে বানাতে চাই । প্রথম যে দিন সে বাবা কে এই কথা বলেছিলো , পুরোপুরি চমকে গেছিলো সৌরভ বাবু , চমকে যাবার এ কথা । প্রতিভাধর ঋষভ বসু কে নিয়ে কম গর্ব ছিল না ডাক্তার সৌরভ বসুর । সেই ছেলে ই বলছে সে বাবার নার্সিংহোমে নয় ,সরকারি হাসপাতাল এ চাকরি করবে । যাই হোক কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মেনে নিয়েছিল সৌরভ বাবু, শুধু বলেছিলো , যদি কখনো প্রাইভেট এ করি , তাহলে যেন তার নার্সিংহোমে এই যোগদান করি । খুশি মনে তাতে সায় দিয়ে,বাবা কে প্রণাম করে , এই অজানা উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো ঋষভ । তাই ঠিক করলো বাবার কাছ থেকে এক বার আমেরিকা যাবার অনুমতি নিয়ে সুনেত্রা কে নিশ্চিৎ করে দেবে । যদি ও কি ভাবে যাবে বা কবে যাবে , কে টিকেট কাটবে ব্যাপারে এক বার স্যার মানে সুনেত্রার বাবার সাথে কথা বলে নিতে হবে । সুনেত্রার বাবা ঋষভ এর মাস্টারমশাই না হলে ও , ভদ্রলোক এর কাজ করার পদ্ধতি আর নিজের পার্সোনালিটি দেখার মতো , তাই ঋষভ তাঁকে স্যার বলেই সম্বোধন করে । সুনেত্রা আজ কথা বলার সময় এতটাই উৎসাহিত ছিল সংলাপ সেন কে নিয়ে ,যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ই সুযোগ হয়নি ঋষভ এর । কে এই সংলাপ সেন এক বার জানার ইচ্ছা হলে ও মনের মধ্যে রেখে দেয়াএ ভালো ।

সকাল সকাল মা এসে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে গেলো, এক কাপ চা দিয়ে বললো, ফোন এলে কথা বলিস । খুব বিরক্ত লাগলে ও কিছু প্রকাশ করলো না ঐন্দ্রিলা । ওদিক থেকে ঠিক সকাল ৮:৩০ তে ফোন এলো । তবে ছেলেটির সময় এর জ্ঞান আছে । যে দু দিন ফোন করেছে এক দম ৮:৩০ তাই ফোন করেছে , আর ঐন্দ্রিলা কে অফিস যেতে হবে বলে ১০-১৫ মিনিট এর বেশি কথা বলেনি । তবে আজ হঠাৎ করেই সংলাপ সেন তাকে সরাসরি আমেরিকা আসার আহ্বান জানালো । কোনো বিশাল বড় সাইন্স কনফারেন্স এ সংলাপ কিছু একটা বড়সর প্রেসেন্টেশন দেবে । বললো তুমি ও এস ভালো লাগবে ।ঐন্দ্রিলা ভাবলো এক বার বাবা কে বলবে পুরো কথাটা । কিন্তু চেপে গেলো পুরোপুরি । অন্য কিছু পরিকল্পনা করতে হবে , কারণ আমেরিকা একা একা যাবো বললে বাবা মা কখনোই ছাড়বে না । আর যখন আমেরিকা গিয়ে থাকা আর খাওয়া নিয়ে চিন্তা নেই তখন এক বার ঘুরে এলেই তো হয় ।এই সব ভাবতে ভাবতে অফিস এর জন্য বেরিয়ে পড়লো ঐন্দ্রিলা, বাস এ যেতে যেতে হঠাৎ এ মাথায়একটা বুদ্ধি খেলে গেলো । অফিস এ গিয়ে যদি বস কে কনভিন্স করানো যাই , যে খুব বড় একটা সাইন্স কনফারেন্স হচ্ছে আমেরিকা তে । অনেক বড়বড় বৈজ্ঞানিক ও আসছে , তাদের ইন্টারভিউ আর গবেষণা সম্পর্কে প্রচুর গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যাবে , আর ওখানে থাকা , খাওয়া কিছুর এ খরচ লাগবে না , শুধু যাবার আর আসার ফ্লাইট এর খরচ লাগবে । তাহলে পুরো এক ঢিল এ দুই পাখি মারা যাবে । বাড়িতে বলবো অফিস থেকে পাঠাচ্ছে , আর ওই সংলাপ এর কাছে বলে দেব টিকেট এ র খরচ আমি অফিস থেকে পাবো । যদি সত্যি ব্যাপার টা সফলভাবে কার্যকর করা যাই , তাহলে দারুন হবে ব্যাপার টা । মনে মনে খুশি তে মন টা ভোরে উঠলো ঐন্দ্রিলার ।


সারাদিন এডওয়ার্ড স্যার এর গবেষণাগারে কাটিয়ে সন্ধের দিকে ঘরে ফেরে সংলাপ , তারপর নিজের রান্না টুকু করে তাড়াতাড়িএ খাওয়া দাওয়া করে নেই সংলাপ , আগে একটু টেনিস খেলতে যেত , কিন্তু এখন সেই দল টা আর নেই । খাওয়া হয়ে গেলে মা বাবা কে ফোন করে নিয়ে আবার কাজে বসে যেত । এখন একটা অতিরিক্ত কাজ হিসাবে ঐন্দ্রিলা কে এক বার ফোন করে সংলাপ । আজ ঐন্দ্রিলা এর সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো সংলাপ এর । মেয়েটা সত্যিই ভীষণ স্বাধীনচেতা আর বুদ্ধিমতী । বস কে বুঝিয়ে আমেরিকা আসা টা কে নিজের অফিসিয়াল টুর বানিয়ে নিলো, ফলে ওর আসা , যাওয়া ,থাকা , খাওয়া সব ই দেবে অফিস থেকে । শুধু একটাই জিনিস দিতে হবে সংলাপ কে , বিজ্ঞানী দের নাম যারা ওই কনফারেন্স এ আসবে , আর তাদের ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা করে দেয়া ।এই কাজ করা খুব একটা চাপের ছিল না সংলাপ এর কাছে । তা সরাসরি রাজি হয়ে গেলো প্রস্তাবে । তবে কোথাও যেন একটু অস্বস্তি লাগছে সংলাপ এর , যেহেতু সুনেত্রা আসছে । সুনেত্রা কে সরাসরি কিছুই বলেনি সে । স্যার কে জানিয়েছিল ,আর এক বার আসার অনুরোধ করেছিল । আজ স্যার ফোন করে জানালো , স্যার , সুনেত্রা , আর ঋষভ বলে একটি ছেলে আসবে । কে এই ঋষভ ছেলে টি, সেটা স্যার কে জিজ্ঞেস করার মতো সাহস ছিল না সংলাপ এর । স্যার যা বলেন সাধারণত মাথা নাড়িয়ে মেনে নেয়া ই অভ্যাস সংলাপ এর । কি পরিচয় দেবে সে ঐন্দ্রিলা র ? বলবে সংবাদিক বন্ধু , কিছু একটা বলে ব্যবস্থা করা যাবে এখন । কিন্তু এতদিন পর সুনেত্রা কে দেখার সুযোগ পেয়ে মন টা কেমন যেন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো সংলাপ এর ।


সমাপতন

কখন যে ভগবান কার জন্য কি ভাবনা করে রাখেন তা বোঝা সত্যিই অসম্ভব । অনেক দূরে ছিটকে যাওয়া চার বন্ধু কে কিরকম অদ্ভুত ভাবে সুযোগ করে দিলো আবার এক সাথে মিলিত হবার । দেখা যাক এর পর কি হতে চলেছে ।

সুনেত্রা , ঋষভ আর সংকেত বাবু এক দিকে , আর অন্য দিকে ঐন্দ্রিলা । সবাই এক সাথে গিয়ে পৌঁছলো আমেরিকা । বুদ্ধি করে একটা কাজ করলো সংলাপ , বিশেষ কাজে ব্যস্ত বলে কাউকেই এয়ারপোর্ট এ আনতে গেলো না সে । শুধু এটুকু তাকে নিশ্চিত করতে হবে কোনো ভাবেই যেন ঐন্দ্রিলা আর সুনেত্রা দেখা না হয়ে যাই । দু জন এর জন্য আলাদা হোটেল বুক করেছিল সংলাপ । হোটেল এ এলে ২ জন এর সাথে আলাদা দেখা করবে সে এমনটাই ঠিক করলো । এদিকে ঋষভ আর সুনেত্রার মধ্যে এখনো চলছে এক চোরা স্রোত , আজ সুনেত্রা সরাসরি ঋষভ কে জিজ্ঞেস করেছে কে ঐন্দ্রিলা । উত্তর এ কিছুটা হোঁচট খেয়ে ঋষভ জানিয়েছে তার স্কুল এর বন্ধু । কিন্তু উত্তর টা যে সুনেত্রার খুব পছন্দ হয় নি সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই । এক এ ভাবে ঋষভ সুনেত্রা কে যখন এ জিজ্ঞেস করেছে কে এই সংলাপ , একটাই উত্তর এসেছে বাবার প্রিয় ছাত্র, তার সাথে আলাপ ছিল । কিন্তু দু জন কোথাও যেন বুঝতে পারছিলো কিছু আরো আছে যা কেউ পরিষ্কার ভাবে বলতে চাইছে না । দু জন এর মনে প্রশ্ন কেন ? এতো বছর এক সাথে চলার পর , এটুকু বিশ্বাস কি করা যেত না । নাকি দু জন এর মনেই তাদের জন্য কোনো অন্যরকম চিন্তাভাবনা আছে । সংলাপ এর সাথে যখন দেখা হলো , তখন সুনেত্রা র ব্যবহার ও ভারী অদ্ভুত , এমন কিছু কথা বার্তা বলছিলো যা যে কোনো প্রেমিকের মনে হিংসার সেই পরম জ্বালা জ্বালিয়ে দিতে পারে । ঋষভ যত দেখেছে নিজেকে আরো বেশি শান্ত ও সংযত করার চেষ্টা করে গেছে । আর মনে মনে শুধু ভেবে গেছে কি করে এই সংলাপ কে পড়াশোনার মাধ্যমে সুনেত্রার সামনে জব্দ করা যাই ।

 

সুযোগ ও এসে গেলো । কি বিষয়ে সংলাপ এর কালকের প্রেজেন্টেশন সেটা জানা বেশি জরুরি । এই বিষয় নিয়ে ঋষভ সংলাপ এর সাথে আরো কথা বলতে শুরু করলো । আলোচনার বিষয়বস্তু টা ও ঋষভ এর জানা বিষয় হয়ে যাওয়ায় আরো সুবিধা হলো । আরো বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে সংলাপ চলে গেলো । ঋষভ এটুকুনি বুঝেছে সংলাপ ছেলেটির জ্ঞান প্রচুর , একে জব্দ করতে গেলে একটি প্রশ্ন , তার উত্তর আর তার প্রত্যুত্তর নানা প্রশ্ন নিয়ে তৈরি থাকতে হবে । সুনেত্রা আর স্যার একটি ঘরে আর ঋষভ অন্য একটি ঘরে ছিল , তাই বেশ সুবিধা হয়ে গেলো ঋষভ এর পড়াশোনা করাতে । আর রাগারাগি হয়েছে বলে সুনেত্রা কোনো ভাবেই গল্প করতে আসবে না । সুযোগ টা কে সম্পূর্ণ রূপে কাজে লাগালো ঋষভ । অনেক রাত অব্দি পড়াশোনা করে প্রশ্ন, উত্তর আর তার প্রশ্নোত্তর তৈরি করলো ঋষভ । বেশ কিছুটা তৈরি হয়ে সে যেতে পারবে কনফারেন্স ।

 

এদিকে ঐন্দ্রিলার সাথে দেখা করে সংলাপ বৈজ্ঞানিক দের একটা নাম এর একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলো । এদের মধ্যে ৩ জন ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়েছে ।সংলাপ আগে থেকে কথা বলে রেখেছে তাদের সাথে । সময় আর কতক্ষন কথা বলবেন তার একটা রূপরেখা সে দিয়ে দিলো ঐন্দ্রিলা কে । সব কিছু মেনে নিয়ে খুশি মনে থাকা ঐন্দ্রিলার পুরোনো স্বভাব । এক্ষেত্রে ও তার পরিবর্তন হবার নয় ।


সকাল হতেই সবাই তৈরি হয়ে চলে এলো কনফারেন্স । সবাই আয়োজনদেখে অবাক এ হয়ে গেলো । কত দেশের কত নামি নামি বৈজ্ঞানিক রা এসেছেন , তাদের কথা বার্তা বা আচার আচরণ একেবারেই অন্যরকম । সবাই ই নিজের নিজের কাজের কিছু উদাহরণ এনেছেন , যা যখন দেখাতে উঠলেন এমন সুন্দর ভাবে দেখালেন বিশ্বাসযোগ্য হয়না ।এরকম এক জায়গায় না আসলে সত্যি হয়তো অনেক কিছুই না জানা থেকে যেত । ঋষভ , সুনেত্রা , ঐন্দ্রিলা ৩ জন্যেই যেন বিভোর হয়েসব কিছু দেখতে লাগলো । অনেকেই প্রচুর প্রশ্ন করছে , কেউ উত্তর করছে , কেউ বা করছে না । এমন কি কনফারেন্স ঘর এর মধ্যেই রীতিমতো ডিবেট শুরু হয়ে যাচ্ছে, যা যথেষ্ট উপভোগ্য ।

শেষ মেশ সেই সময় এলো যখন সংলাপ এডওয়ার্ড স্যার সুযোগ করে দিলো সংলাপ কে কিছু দেখানোর । সুযোগ পাবার পর নমস্কার করে সংলাপ যখন শুরু করলো পুরো হল স্তব্ধ । সুনেত্রা যেন অবাক হয়ে সংলাপ এর সমস্ত আচরণ কে গিলে খাবার চেষ্টা করছে । মনের মধ্যে কি আজ তার অন্য কিছু ঝিলিক দিচ্ছে । পাশে বসা ঋষভ ভাবতে লাগলো কি ভাবে প্রশ্ন বানে জর্জরিত করা যাই সংলাপ কে , যাতে সুনেত্রা র সমস্ত চিন্তাভাবনা মার্ খেয়ে যাই, আর ভাবতে শুরু করে সংলাপ এ সবার সেরা নয় ।ঐন্দ্রিলা ও দেখতে বা বুঝতে চেষ্টা করতে শুরু করলো কি বলতে চাইছে সংলাপ , সাংবাদিক হিসাবে প্রশ্ন করা তার স্বভাব, কিন্তু কিছু এ করতে গেলে তাকে বিষয়টা উপলব্ধি করা ভীষণ দরকার ।


অনেকক্ষন বক্তিতা রাখার পর যখন সংলাপ প্রশ্ন করার জন্য সময় দিলো, আসতে করে নিজেকে গুছিয়ে নিলো ঋষভ । যা করার এখন এ করতে হবে , ভেবে করেই ফেললো প্রথম প্ৰশ্ন , সংলাপ এর কাছে এই প্রশ্ন উত্তর যেন তৈরি এ ছিল , তার বচন ভঙ্গিমায় স্পষ্ট প্রকাশ পেলো কতটা গভীর ভাবে সে এটার উপর গবেষণা করেছে । কিন্তু এবার একটু অন্যরকম প্রশ্ন করতে শুরু করলো ঋষভ , যা আর পাঁচ টা সাধারণ প্রশ্ন থেকে বেশ অনেক টা আলাদা । নিজের পছন্দের বিষয় ,আর সরাসরি প্র্যাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা থাকা ঋষভ এর প্রশ্নের ধারণ যেতে লাগলো এমন কিছু দিকে , যার উত্তর এক মাত্রা সে এ দিতে যাবে যে প্রতিদিন তার উপর প্রাকটিক্যাল এ কাজ করে চলেছে । কোনো ভাবনা বা দু একটা পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর কথা বলছে না । সংলাপ শেষ মেশ মানতে বাধ্য হলো , এর কিছু ধরণের পরীক্ষা তার বাকি রয়ে গেছে, যা সম্পূর্ণ না হয় অব্দি তার আবিষ্কার সম্পূর্ণ সঠিক বলা চলে না ।

সবাই যখন ভাবলো এই অব্দি বুঝি শেষ হলো , তখন ই সুনেত্রা দাঁড়িয়ে বলে উঠলো আমি কিছু বলতে চাই । সংলাপ যে সুনেত্রার এক সময় হিরো, যাকে ভালোবেসে বিয়ে করবে ঠিক ই করে ফেলেছিলো সে , তার অপমান সহ্য করা সম্ভব ছিল না । ঋষভ কে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সে বলে উঠলো , আপনি যে সমস্ত পরীক্ষা গুলো করতে বলছেন তার কি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে , শুধু মাত্র আপনার কিছু বাহ্যিক ধারণা উপর ভিত্তি করে আপনি একজন বৈজ্ঞানিক এর আবিষ্কার কে ছোট করতে পারেন না । এটাই যেন চাইছিলো ঋষভ , বলে উঠলো , সুনেত্রা ম্যাডাম পেশাগত ভাবে আমরা দু জন্যেই ডাক্তার , তাই এরকম অনেক উদাহরণ আপনার কাছে ও থাকতে বাধ্য । সুনেত্রা বলে উঠলো , না এরকম কোনো উদাহরণ আমার কাছেই নেই , এটা অবাস্তব চিন্তাভাবনা । মানুষের শরীর এর যে বিশেষ বৈশিষ্ট কথা আপনি বলতে চাইছেন তা কার্যত খুঁজে পাওয়া অসম্ভব । তাই এই কারণ কোনো মোটেই সংলাপ সেন এর আবিষ্কার কে ছোট করা যাই না । আপনার এই ভুল পথে চালনা করার চেষ্টা থেকে বিরত থেকে বিজ্ঞানী সংলাপ সেন এর আবিষ্কার কে স্বীকার করে নিন মিস্টার ঋষভ । মেয়ে দের সাথে তর্কে পেরে ওঠা ঋষভ এর কম্মো নয় ।আর তাছাড়া যা ঋষভ বলছে পুরোটাই তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা । তার কোনো সরাসরি প্রমান বা কোনো কাগজপত্র ছিল না ঋষভ এর কাছে । তাই ঋষভ মেনে নিলো সুনেত্রার প্রস্তাব ।


ঐন্দ্রিলা পুরো অবাক হয়ে দেখতে লাগলো কাকে দেখছে সে সামনে । ঋষভ , ও এখানে কি করছে ? ঋষভ এর কথাবার্তা , আচার আচরণ যেন অন্য দুনিয়াতে নিয়ে যাচ্ছিলো তাকে । কিন্তু হঠাৎ ই ঋষভ এর হেরে যাওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না ঐন্দ্রিলা । তাই যখন সবাই থেমে গেলো , তখন নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে উঠলো ঐন্দ্রিলা । শুরু করলো , ঋষভ বসু ভুল বলছেন না । অবাক হয়ে পিছনে ফিরে ঐন্দ্রিলা কে দেখে বাক্যহারা হয়ে গেলো ঋষভ । ভাবতেই পারছে না পুরো ব্যাপার টা সত্যি না মিথ্যা । ঐন্দ্রিলা কিছু একটা মোবাইল খুলে বলতে শুরু করলো , সবাই কে বোঝাতে শুরু করলো , ঋষভ এর মাথায় কিছু যেন ঢুকছিল না । হঠাৎ সবাই হাততালি দিয়ে উঠায় সম্বিৎ ফিরলো ঋষভ এর । পেরেছে ঐন্দ্রিলা , হারতে দেয়নি তার এতদিনের ভালোবাসা কে । এগিয়েএসে সবাই অভিনন্দন দিতে লাগলো ঋষভ কে । এমন একটি পর্যবেক্ষণ এর জন্য । কিন্তু ঋষভ এর চোখ খুঁজছিলো তার ঐন্দ্রিলা কে ।

এর পর যখন সবাই আসতে আসতে বেরিয়ে গেলো, হল টা অনেকটাই খালি হয়ে গেলো, ঐন্দ্রিলা এগিয়ে এলো ঋষভ এর কাছে । বললো তুমি এখানে কি করছো ? এস আমার সাথে । ভাগ্যের অনাবিল টানে যেন ঋষভ এগিয়ে যেতে লাগলো ঐন্দ্রিলার সাথে । আজ কের ঐন্দ্রিলা যেন অনেক পরিণত , কথাবার্তা আচরাচরণ সব এ যেন আরো বেশি করে আকৃষ্ট করছিলো । ঋষভ কিছু উত্তর করার আগেই এক উষ্ণ আলিজ্ঞন এ ভরিয়ে দিলো ঋষভ এর মন প্রাণ । নিজেকে সামলানোর আগেই যেন টের পেলো তার কাঁধ টা ভেসে যাচ্ছে অশ্রু জল এ । আর মন টা ভোরে উঠছে ফিরে পাবার আনন্দে ।

 

ঠিক সেই মুহূর্তে সুনেত্রা র পিঠে এসে হাত রাখলো বৈজ্ঞানিক সংলাপ সেন । সেই বাড়িয়ে দেয়া হাতে নিজের মুখ টা গুঁজে দিয়ে যেন জীবন এর সব থেকে বড় আশ্রয় খুঁজে নিলো সুনেত্রা । কোথাও যেন হারানোর দুঃখ থেকে ও বড় হয়ে উঠলো পাবার আনন্দ । আর সংলাপ যেন ফিরে পেলো তার সেই ভালোবাসা কে , যাকে সব কিছু দিয়ে সে পেতে চেয়েছিলো ।ভালোবাসার এই অদ্ভুত মিলন এর সাক্ষী হয়ে থেকে গেলো এই বিশাল বড় কনফারেন্স ঘর । সবার হাততালির আওয়াজ ই যেন জানিয়ে দিলো ভালোবাসার জয় সর্বত্ত ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics