Sutanu Sinha

Crime Drama

3  

Sutanu Sinha

Crime Drama

রাজনীতি ও প্রেম ষষ্ঠ কিস্তি

রাজনীতি ও প্রেম ষষ্ঠ কিস্তি

15 mins
3.2K


রাতুল ,

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো রাতুল এর । রাতুল সাধারণত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেই অভ্যস্ত । আসলে কাল ২:৩০ অব্দি গল্প করেছে রাতুল সুনেত্রার সাথে । পুরো ব্যাপার টাই ভীষণ অবাক করে দিয়েছে রাতুল কে । জীবন এ কখনো রাতুল এতো গল্প কারোর সাথে করেনি । আজ ওদের দেখা করার কথা আছে । কেন জানেনা রাতুল এর খুব ইচ্ছা করছে সেই ৩ টা শব্দ বলে দিতে । কিন্ত নিজেকে সংযত রাখাটা ভীষণ দরকার । ফ্রেশ হয়ে নিচে যখন খেতে গেলো রাতুল , তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে । মা ও হয়তোএকটু অবাক হলো । শুধু জিজ্ঞেস করলো কাল অত রাত অব্দি লাইট জ্বলছিল কেন রে তোর ঘরে ? রাতুল বললো , একটু পড়াশোনা করছিলাম । মা বললো , তুই আর পড়াশোনা ? ভালো । রাতুল কোনো কথা না বলে চুপ রইলো । সত্যি আগে রাতুল কত বই পড়তো , বলতে গেলে বই এর পোকা ছিল সে । আর এখন ভাবলে রাতুল এর সত্যি ই খারাপ লাগে । কি আর করা যাবে রাজনীতি নামক কোনো এক জিনিস এর প্রতি আমখ টান কে সে যে কোনো ভাবেই ফেলতে পারেনা । তাই মা এর কোথায় মন খারাপ না করে সুজয়দা এর বাড়ীর দিকে বেরিয়ে পড়লো সে । সুজয়দা কারখানার ব্যাপার টাই তাকে যে সরাতে চেয়েছে সে সম্বন্ধে সে নিশ্চিৎ । কিন্ত সুজয়দা এর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা সে করতে পারবে না । সে ভালো করেই জানে কারখানার মালিক এর ভালো রূপের ভিতরে একটা ভীষণ খারাপ রূপ আছে । যাকে সে কোনো ভাবেই অস্বীকার করতে পারেনা । সুজয়দার বাড়ি পৌঁছে হঠাৎ মনে হলো অদ্ভুত ভাবে কাল থেকে সুবীর আমাকে এক বার ও ফোন করেনি, এমনকি আজ আমার সাথে আসার আবদার ও করেনি । সুজয়দার ঘরে ঢোকার আগে সুবীর কে ফোন লাগালো রাতুল । ফোন টা সুইচ অফ পেলো । একটু অদ্ভুত লাগলে ও অপেক্ষা না করে সুজয়দার ঘরে ঢুকে গেলো । একটা মিটিং চলছিল তখন । সুজয়দা রাতুল কে দেখে ডেকে ইশারায় বললো আমার পাশে বস । রাতুল সুজয়দার পাশে গিয়ে বসলো । পার্টির আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । আরো যুব নেতা তুলতে হবে , যারা সামনে থেকে এসে নেতৃত্ব দেবে । এমন কি কোনো এক যুব নেতাকেই সামনের বিধানসভার লড়াইএ ভোটে দাঁড় করানো যাই কিনা এসব নিয়েও অনেক আলোচনা হতে লাগলো । সুজয়দা বললো যুব নেতা তৈরি হচ্ছে , কিন্ত এখুনি ভোট এ দাঁড়িয়ে দলকে জিতিয়ে আনার জায়গায় তারা কেউ এ আসেনি । তবে সমস্ত নতুন প্রজন্মের লিডার দের মধ্যে সব থেকে এগিয়ে এই ছেলেটি , বলে সুজয়দা রাতুল এর সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলো । যে লোকটি এতক্ষন কথা বলছিলো সে হঠাৎ বলে উঠলো , শুনেছি স্যার ফোন করে আমাকে বলেছে । ওকে আমরা উত্তর বাংলায় যুবদের যে দল তৈরি হচ্ছে ওখানে নিয়ে যাবো । এক জন ভালো লিডার এর বড়ো অভাব সেখানে । কি রাতুল পারবে তো ? রাতুল একটু হেঁসে জবাব দিলো সুজয়দার দেয়া কোনো কাজ এ আমি না করিনা । তবে একটাই অনুরোধ , আমার সাথে আরো এক জন যাবে , তার নাম সুবীর , খুব ভালো ছেলে । নাম টা শুনে ভদ্রলোক কেমন যেন চুপটি মেরে গেলো , এই প্রথম সুবীর এর নাম কোথাও প্রস্তাব করলো রাতুল , তাই একটু সংকোচ ছিল তার মধ্যে । কিন্ত সামনের ভদ্রলোকের একটু অবাক হবার ধরণ দেখে রাতুল এর ও একটু অদ্ভুত লাগলো । জিজ্ঞেস করে ফেললো সে , আপনি কি সুবীর কে চেনেন ? ভদ্রলোক যেন নিজেকে একটু সামলে নিলো , তারপর বললো না না , সে তুমি যাকে ভালো বোঝো নিয়ে যেতে পারো , তবে সুজয়দা র সাথে কথা বলে নিয়ো ।ঠিক আছে বলে বসে পড়লো রাতুল । এতো বড়ো বড়ো লিডার দের আপ্পায়ন ,নিজের খাওয়া, সুজয়দা সাথে মাঝে মাঝে আলোচনা করা সব মিলিয়ে সুবীর কে ফোন করার খুব ইচ্ছা থাকলে ও করতে পারলো না রাতুল । খুব ব্যস্ত তার মধ্যেই পকেট এর ফোন টা বেজে উঠলো রাতুল এর । বার করে দেখে সুনেত্রার ফোন । একটু সবার আড়ালে গিয়ে ফোন টা ধরলো রাতুল , কি ব্যাপার সুনেত্রা কিছু খবর আছে নাকি ? তোমার বন্ধু সুবীর কে কি অন্য কাজ দিয়েছো ,ওকে কিন্ত আমার পিছনে আর দেখতে পাচ্ছি না । অরিজিৎ দা কে ফোন করেছিলাম , ওনাকে ও দেখলাম সুবীর কে নিয়ে একটু টেনশন করছে । রাতুল বললো , কিন্ত অরিজিৎ এর সব তো জানা উচিত , কারণ সুবীর যা এ করুক অরিজিৎ কে না জানিয়ে কিছু করবে না । ঠিক আছে সুনেত্রা তুমি সাবধানে থাকো আমি দেখছি । সুনেত্রার ফোন টা রেখে একবার সুবীর কে ফোন লাগালো রাতুল , এখনো সুইচ অফ , কিছু একটা নিশ্চই হয়েছে সুবীর এর , না হলে ফোন এতক্ষন সুইচ অফ থাকে না । সুবীর এর বাড়িতে ফোন লাগলো সে , কাকিমা ফোন ধরে বললো ও তো শেষ ফোন করে ছিল কাল রাতে বললো তোমার কাছে যাচ্ছে, তুমি নাকি ডেকেছো । ও তোমার সাথে নেই বাবা ? রাতুল বুঝলো টেনশন এর ব্যাপার, বললো না না কাকিমা আছে, কোথাও গেলো , ভাবলাম বাড়িতে কিনা । ফোন টা রেখে দিয়ে তৎক্ষণাৎ অরিজিৎ কে ফোন লাগালো রাতুল । ফোন টা ধরেই অরিজিৎ বললো , সুবীর এর খোঁজ পাচ্ছিস না তো ? আমি ও পাচ্ছি না । আমার ধারণা ছেলে টা কোনো একটা গোপন খবর জেনে ফেলেছিল , তোর ওই কারখানা সম্বন্ধে । রাতুল বললো , জেনে ফেলেছিলো কেন রে ? অরিজিৎ বললো , বলতে খুব খারাপ লাগলে ও , আমার ধারণা সুবীর আর নেই । চমকে উঠলো রাতুল , কি বলছিস তুই অরিজিৎ ? অরিজিৎ বলে চললো , আমার সন্দেহ তোর ওই সুজয়দা কেই , খুব কায়দা করে তোকে সরিয়ে দিলো, এবার তোর চেলা তাকে মেরে ফেললো ।

তবে একটা কথা কোনো কিছু মাথা গরম করে করিস না , হালকা হাসি দিয়ে যদি কোনো ভাবে তোর ওই সুজয়দা র পেট থেকে জানতে পারিস সুবীর কোথায় ,তাহলে ও কাজে দেবে । তবে মনে হয়না বাঁচিয়ে রাখবে ওকে । চল এখন রাখলাম , কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিস আমাকে জানাস, অফিস এর খাতার বাইরে থেকে যতটা সাহায্য তোকে করা যাই করবো । বলে ফোন টা রেখে দিলো অরিজিৎ । সারা শরীর কেমন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে রাতুল এর , সুবীর তার একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য চেলা তাকে মেরে দেবার কি মানে আছে ? সুজয়দা যখন এ বলেছে কারখানার ব্যাপার টা থেকে বেরিয়ে আসতে তখন ই সে বেরিয়ে এসেছে । তাহলে কেন ? পার্টি র মধ্যে থেকে সুজয়দা কে ডাকা বেশ চাপের , সুজয়দা কে পছন্দ করলে ও , সুজয়দা র কিছু গোপন আড্ডা রাতুল এর ও জানা আছে । কায়দা করে বেরোতে যাবে মুকেশ দার সাথে দেখা হয়ে গেলো । বললো কেমন আছো রাতুল ? কোথায় যাচ্ছ ? রাতুল বললো , বাবার হঠাৎ একটু শরীর টা খারাপ লাগছে মুকেশ দা , তুমি সুজয়দা কে একটু বলে দিয়ো ,আমি কিছুক্ষন এর মধ্যেই আসছি । মুকেশ বললো সাবধানে যাও , আর দরকার পড়লে ফোন করো । বাইরে বেরিয়ে এসে রাতুল প্রথম এই স্থির করলো শান্ত থাকবে সে , আর কি ভাবে সুবীর কে বাঁচানো যাই তাকে ভাবতে হবে , আর যদি সত্যি মৃত্যু হয় সুবীর এর তাহলে এই সুজয়দা কে সে কোনো মতেই ছাড়বেনা । প্রথম কাজ সে করলো , তার নিজের একটা পার্সোনাল নম্বর আছে, যেটা খুব কম সে ব্যবহার করে । নিজের পড়ানোর পয়সায় কেনা সেটা , এখন কার নম্বর টা সুজয়দা র দেয়া ।অপেক্ষা না করে ফোন থেকে দুটো হোয়াটসআপ মেসেজ করে দিলো নিজের নতুন নম্বর তাকে অরিজিৎ আর সুনেত্রা কে । তারপর ফোন টা সুইচ অফ করে , নতুন নম্বর তাকে শুধু ওন রাখলো । শেষ সুবীর কে সে কারখানার শেষ প্রান্তে পার্ক এর কাছেই ছেড়েছিলো। প্রথম স্কুটার টা নিয়ে সেই জায়গায় চলে এলো সে । তারপর স্কুটার টা এনে শম্ভু দার চা এর দোকানের কাছেই রেখে , একটু জিজ্ঞাসা করতে লাগলো সে । এখানে এমনিতেই রাতুল কে সবাই চেনে, এক জন বললো সুবীর বাবু তো চা খেয়ে ওই দিকে হাঁটা দিলো । যে দিকে দেখালো সে দিকে ই সুনেত্রা র বাড়ি ,র তখন এ রাতুল এর মনে পরে গেছিলো , ওর সাথে বলা সুবীর এর শেষ কথা । রাতুল বলেছিলো , আমি এখন সুজয়দা র বাড়িতে যাচ্ছি, তুই একটু সুনেত্রা র দিকে নজর রাখিস , কারণ পুরো ব্যাপার টা আমার খুব একটা সুবিধার ঠেকছে না । তাতে বেটা মজা করেছিল , এবার কি বৌদির পিছন পিছন না গিয়ে কথা বলতে পারি ? বললাম ঠিক আছে পারিস কিন্তু খুব সাবধানে । তুই চিন্তা করিস না , উত্তর দিয়েছিলো পাগল সুবীর টা । কত বোকা বোকা কিন্তু কঠিন কাজ যে সে অনায়াসে রাতুল এর জন্য করে দিতো , ভাবা যায়না ।এগোতে থাকলো রাতুল সুনেত্রার বাড়ির দিকে , যদি কিছু সূত্র পাওয়া যাই ।হঠাৎ এ পিছন থেকে একটি ছেলে তার হাত ধরে টানলো , রাতুল প্রতিবাদ জানাতে যাবে , এমন সময় ছেলে টি বললো , মাফ করবেন , তাকে সুনেত্রা পাঠিয়েছে ।এই চিঠিটি আপনার জন্য । রাতুল এর অবাক লাগলো ,সুনেত্রা তো বেশ বুদ্ধিমান মেয়ে ,কিরকম এক জন এর হাত দিয়ে চিঠি পাঠালো , উপর থেকে দেখতে পেলো নাকি সে, ভেবে এক বার উপর দিকে তাকালো রাতুল । প্রচন্ড সূর্যের আলোয় কিছুই দেখতে পেলো না সে । আমি আসছি দাদা বলে ছেলে টি চলে গেলো । চিঠি টি খুলে আরো চমকে উঠলো রাতুল । চিঠি তে লেখা , "সুবীর মারা যায়নি রাতুল, ও কিডন্যাপ হয়েছে ,আমি খবর পেয়েছি, ওই তনয়এর লোক গুলোই ওকে কিডন্যাপ করেছে , তুমি ওই বান্টি র দল তাকে চেপে ধর, ওরা সব খবর রাখে । " রাতুল চিঠি টা মুড়ে নিয়ে, দৌড়ে স্কুটার এর কাছে চলে এলো , স্কুটার টা স্টার্ট করে পুলিশ স্টেশন এর দিকে চলতে লাগলো সে । অরিজিৎ এর সাথে দেখা করা তা বেশি দরকারি , কারণ বান্টি দের জব্দ করতে গেলে , একটু পুলিশ এর হাতের দরকার আছে । অরিজিৎ এর কাছে এসে , সবে ওর সামনের সিট এ বসেছি । অরিজিৎ ব্যস্ত ছিল কিছু ফাইল শেষ করতে । বললো একটু বস রাতুল , একটা ছোট্ট কেস মিটিয়েএখুনি আসছি । রাতুল বললো কিন্ত, জানি তোর দরকার টা ও বড়ো ,আমাকে শুধু ৫ মিনিট দে । ফোন এ আবার একটা টেক্সট ," তুমি খুব সাবধানে থেকো , আমার টেনশন হচ্ছে তোমাকে নিয়েও ।" , সুনেত্রা বোধহয় রিস্ক টা একটু বেশি এ নিয়ে ফেলছে । আজ রাতে ফোন করে ওকে মানা করে দিতে হবে । অরিজিৎ একদম ৫ মিনিটেই ফিরে এলো । সিট এ বসে জাল খেতে খেতে বললো , কি হয়েছে বল? রাতুল সুনেত্রা র চিঠি টা অরিজিৎ এর হাতে দিয়ে বললো, তোর একটু সাহায্য চাই ভাই ।

চিঠি টা ভালো করে পড়ে ,অরিজিৎ বললো, তুই সুনেত্রার হাতের লেখা চিনিস ? রাতুল জানালো না । তাহলে কি করে নিশ্চিত হচ্ছিস এটা সুনেত্রা লিখেছে ? রাতুল হেসে বললো কারণ শেষের ওই সিম্বল টা , এটা আমাদের দু জন এর কাল কের সিদ্ধান্ত । অনেক কিছু অনুচ্চারিত শব্দের এটা একটা সিম্বল । অরিজিৎ বললো , বুঝলাম , কিছু মনে করিস না ভাই , পুলিশ এ কাজ করি তো স, সন্দেহ করা অভ্যাস হয়ে গেছে । কিন্ত বান্টি দের কে জিজ্ঞেস করাটা এমন কিছু চাপ এর কাজ নয় , ওরা এমনিতেই আমার ইনফর্মার হিসাবে কাজ করে । বান্টি কে ফোন লাগলো অরিজিৎ ,কি ব্যাপার শুনছি আমার এরিয়া তে অনেক কিছু ঘটছে আর তোমাদের কাছেই খবর থাকছে না? বান্টি বললো , কি রকম খবর চাইছেন বলুন স্যার ? সব খবর নিয়ে এই বান্টি হাজির । কিন্ত চার্জ টা যদি একটু বাড়াতেন স্যার । অরিজিৎ বললো , চার্জ বাড়াতে গেলে সে রকম চার্জিং খবর চাই , তোমার কাছে তো আজ কাল শুধু ওই খুচ খাচ চুরির খবর মেলে । যাতে না আমার কিছু আসে , আর তোমাকে বেশি সাহায্য করতে পারি । বান্টি জানালো , আমাকে ১৫ টা মিনিট দিতে পারবেন স্যার , আপনাকে একেবারে হটকেক নিউস দেব । অরিজিৎ বললো , ১৫টা মিনিটে নিয়ে তুমি কি করবে , খবর তৈরি করবে নাকি ? ওদিক হেঁসে উঠলো বান্টি , বললো , আমি ফাটা কেষ্ট স্যার , খবর তৈরি করি । বলে ফোন টা কেটে দিলো সে । অরিজিৎ রাতুল এর দিকে তাকিয়ে বললো , ১৫ মিনিট সময় দে, কিছু একটা ভালো খবর নিশ্চই দেবে । আর সুবীর যদি বেঁচে থাকে ওকে উদ্ধার মনে হয় করতে পারবো । কিন্ত সুবীর কে বাঁচিয়ে রাখার কোনো কারণ আমার মাথায় ঢুকছে না । পুরো ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো না রাতুল দের , ১০ মিনিট এর মধ্যে একটা অন্য নম্বর থেকে ফোন চলে এলো অরিজিৎ এর কাছে । অরিজিৎ চোখের ইশারায় বোঝালো , এসে গেছে । ওদিক থেকে কি কথা হলো রাতুল ভালো করে বুঝতে পারলো না । চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো । অরিজিৎ মাঝে মাঝে নিচু গলায় সম্মতি সূচক কিছু আওয়াজ দিলে ও , ওদিক এর কথা বার্তা বোঝা সম্ভব হচ্ছিলো না রাতুল এর । মন ছটফট করলে ও নিজেকে সংযত করে বসে ছিল সে । প্রায় ১০মিনিট কথা বলার পর অরিজিৎ যখন ফোন টা রাখলো , মুখ টা খুব থমথমে লাগছিলো । রাতুল জিজ্ঞেস করলো কি বললো ? খবর খুব ভালো নোই রে রাতুল , অরিজিৎ বলে উঠলো । ওরা সুবীর কে মারার জন্য এ তুলেছে । বান্টি ধারণা সুবীর গোপন কিছু কথা জানতে পেরে গেছে , তাই ওকে বাঁচিয়ে রাখা রিস্কি । সব কিছুর মাথা কিন্তু তোর ওই সুজয়দা । প্রথমে ওরা বান্টি কে এ কিডন্যাপ করতে বলেছিলো , কিন্তু পরে ওরা সুবীর কে মারার সিদ্ধান্ত নেই , তাই বান্টি কে দায়িত্বনা দিয়ে বাইরে থেকে লোক এনেছিল । তবে বান্টি যা বললো, ওকে সরাসরি গুলি করে বা কিছু দিয়ে মারা হয়নি ,ওকে মারার পরিকল্পনা এমন ভাবে করা হয়েছে ,যাতে সাপ ও মরবে অথচ লাঠি বেঁকবে না । বান্টি র ধারণা ওকে কারখানার মধ্যেই অন্য কোনো ভাবে মারা হবে , কিন্ত কি ভাবে আর কখন সেটা সে জানে না , এমন কি এখন সুবীর বেঁচে আছে কিনা তা সে বলতে পারলো না । পুরো কথা টা বলে একটু দম নিলো অরিজিৎ , বললো এক বার সুনেত্রা কে ফোন কর , ও যদি কারখানার ভিতরে কোনো সন্দেহ জনক ঘর দেখে থাকে । রাতুল বললো , সুনেত্রা কারখানার মধ্যে কিছুই চেনে না , তবে ওকে ফোন করি , ও পরামর্শ গুলো খুব এ ভালো দেয় ।সুনেত্রা কে ফোন করে পুরো ঘটনা টা বললো রাতুল । সব শুনে সুনেত্রা বললো , তুমি এখুনি যাও কারখানায় গিয়ে খোঁজ লাগাও , অথবা পারলে এক বার তোমার পরিচিত কোনো শ্রমিক যদি পারো কোনো বয়স্ক শ্রমিক কে জিজ্ঞেস করো না ,ওরা তো তোমাকে ভগবান এর মতো শ্রদ্ধা করে । ঠিক বলেছো তুমি সুনেত্রা , এই জন্য এ তোমাকে ফোন করে ছিলাম । চলো এখন রাখলাম । চল অরিজিৎ বুড়োদার বাড়ি যাই, এখুনি । অরিজিৎ এর স্কুটার টা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা, বুড়োদা র বাড়ি ৫মিনিট এর রাস্তা , ঘরে ঢুকতেই বুড়োদা র সাথে দেখা হয়ে গেলো । বললো অরে আসুন রাতুল বাবু । আপনি এখানে হঠাৎ । জল বাতাসা দিতে যাচ্ছিলো আমাদের কে। রাতুল বলে উঠলো ওসবের কিছু দরকার নেই বুড়োদা । আমার শুধু একটা তথ্য চাই কারখানা সম্বন্ধে । বুড়ো বললো বলুন কি রকম তথ্য । কেউ কাউকে মারতে বা লুকিয়ে রাখতে চাইলে কারখানায়কি এমন কোনো ঘর আছে যে টা কে ব্যবহার করা যেতে পারে ? বুড়োদা বললো লুকোনোর তো অনেক ঘর আছেই রাতুল বাবু , কিন্ত যদি কাউকে অস্ত্র ছাড়া মারতে হয় তাহলে কারখানায় একটা গুদাম ঘর আছে, অনেক বছর ওখানে সে ভাবে সূর্য্যের আলো ঢোকে নি । ভীষণ বিষাক্ত সাপ আর ও কি সব বিষাক্ত জিনিস আছে, অনেক এ আবার বলে ওই ঘরে ভূত আছে । কারণ আগে ও যখন কোনো শ্রমিক নিখোঁজ হতো, আমাদের ধারণা ওই ঘরেতে তার সলিল সমাধি হয়েছে । আমাদের কখনো সাহস হয়নি ওই ঘরে ঢোকার । কিন্ত কেন জানতে চাইছেন এসব রাতুল বাবু ? আমার বন্ধু সুবীর ছেলে টা খুব বিপদে গো বুড়োদা , দেখি বাঁচাতে পারে কিনা । চিন্তা করবেন না বাবু , আমি আমার এই নাতি টা কে পাঠাচ্ছি , ও ওই ঘরের হাল হকিকত সব এ জানে ।বুড়োদা কে ধন্যবাদ দিয়ে তার নাতিটিকে নিয়ে রওনা দিলাম কারখানার দিকে । অরিজিৎ এক বার বললো ফোর্স ডেকে নেবো ভাই ? বললাম দেরি হয়ে যাবে , আর তাছাড়া কোনো রকম নালিশ না করলে তুই কি ফোর্স নিয়ে আসতে পারবি ?

অরিজিৎ বললো , সেটা ঠিক বলেছিস । কোনো কেস লেখা হয়নি এখনো এটা নিয়ে ।ঠিক আছেই চল চুপি চুপি কাজ করে নেবো । কারখানা থেকে একটু দূরে গাড়িটা রেখে দিলো অরিজিৎ । রাতুল কে জিজ্ঞেস করলো , কখনো বন্দুক চালিয়েছিস । রাতুল জানালো, না, তবে দেখেছি । অরিজিৎ নিজের পকেট থেকে একটা বন্দুক বার করে বললো , এটা রাখ , আমি সব সেট করে দিয়েছি ,এটা টিপলেই গুলি বেরোবে , শুধু বন্দুক টা শক্ত করে ধরে রাখিস , না হলে উল্টে যেতে পারিস । কারখানার পিছন দিয়েএকটা জঙ্গল এর রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো বুড়োদা র নাতি । রাতুল জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি ? বাবু আমাকে সবাই বুড়োদার নাতি বলেই ডাকে । শুধু মা ডাকে নন্টে বলে । যেতে যেতে হঠাৎ থমকে গেলো সে , এক ধরণের গাছের পাতা কেটে নিয়ে বললো, সারা গায়ে লাগিয়ে নিন, ওই ঘরে যা মশা বা পোকা আছে তার থেকে রক্ষা করবে । সারা গায়ে ওই পাতা ঘষে নিয়ে ,বললাম তা বুড়োদার নাতি ওই পাতা আরো কিছু টা দাউ , নিজের কাছেই রেখে দিতাম । ছেলেটি আরো কিছু পাতা তুলে দিলো । তিন জন্যে মিলে এগিয়ে চললাম, জঙ্গল এর রাস্তা বেশ দুর্গম , অরিজিৎ কে দেখলাম একটা লাঠি কেটে নিয়ে মারতে মারতে এগিয়ে আসছে । কিছু টা এগিয়ে আসার পর, ছেলে টি হাত দেখিয়ে কারখানার পিছন দিকে একটা পর ঘর দেখালো , বললো ওই সেই ঘর , এর বেশি আমি আর যাবো না বাবু , দাদু বকবে । এই টর্চ লাইট টা নিয়েযাও , জায়গাটা ভীষণ অন্ধকার । আর যে গাছের পাতাটি গায়ে মাখলে ওটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কাজ করবে, তার মধ্যে যদি না বেরোয় ,বিষাক্ত সাপ এ কামড়ানোর হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না । তবে লোকে বললেও ওই ঘরে আমি ২ বার গেছি , সাপের বিষ চুরি করতে , কোনো ভূত দেখিনি । তাই ওসব ভয়পাবার কোনো কারণ নেই । ছেলে টিকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি আর অরিজিৎ এগিয়ে চললাম, সত্যি ই যত এগিয়ে যেতে লাগলাম, জঙ্গল যেন আরো ঘন হতে শুরু করলো । একটা কালো জল বেরিয়ে আসছিলো কারখানা থেকে , তার উপর টর্চ লাইট ফেলতেই বোঝা গেলো জলে রক্ত আছে । অরিজিৎ বললো , চল সবে সবে কিছু ফেলেছে মনে হচ্ছে । ঘর টা ভীষণ রকমের অন্ধকার , মাঝে মধ্যে সুপ সাপ যে আওয়াজ হচ্ছে সে গুলো যে সাপ বাবাজি দের আওয়াজবেশ বোঝাই যাচ্ছে । টর্চ লাইট দিয়ে চার দিক ঘোরাতে লাগলাম , রাতুল এর হঠাৎ কি মনে হলো , সুবীর সুবীর বলে ডেকে উঠলো । অরিজিৎ ধমক দিলো , আসতে লোক গুলো যদি কাছাকাছি থাকে আমাদের ও সলিল সমাধি হয়ে যাবে । এই ঘরে যদি সুবীর কে ফেলে রাখে নিশ্চই বুঝতে পারবো । এক দম শান্ত হয়ে, চুপ করে দু জন এ কোনো আওয়াজএর অপেক্ষায় রইলাম, নিজেদের দম এর আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না । হঠাৎ একটা ছোট্ট গোয়ানির আওয়াজ মনে হলো শোনা যাচ্ছেই ঠিক তাদের পিছন দিক থেকে , পিছলে দঙ্গল করে রাখা কিছু কাঠ নামাতেই ২ তো একটা সাপ বেরিয়ে এলো, তবে খুব একটি বিষাক্ত মনে হলো না , আর একটা বস্তা দেখতে পেলাম আমরা । সাথে সাথে বস্তা টা খুলতেই বেরিয়ে এলো সুবীর এর রক্তাক্ত মুখ ।

অরিজিৎ নাকে হাত দিয়ে বললো এখনো বেঁচে আছে । রাতুল সাথে সাথে সঙ্গে আনা গাছের পাতা বুলিয়ে দিলো সুবীর এর গায়ে ।তারপর দু জন এ মিলে ধরা ধরি করে বার করে আনা হলো সুবীর কে ওই জতুগৃহ থেকে । হাসপাতাল এ নিয়ে গিয়ে সাথে সাথে ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েগেলো সুবীর এর । অরিজিৎ থাকায় পুলিশ ডাকা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খুব একটা ঝামেলা করেনি । শুধু বললো ছেলেটির অবস্থা খুব খারাপ যদি মারা যাই । সামনের ৬-৭ ঘন্টা বেশ সম্যসা জনক এই ছেলেটির জন্য । রাতুল অরিজিৎ কে চলে যেতে বলে নিজে হাসপাতাল এ থেকে গেলো । ঘন্টা খানেক ধরে শুধু ভাবতে লাগলো , সুজয়দা র উপর প্রতিশোধ সে কি ভাবে নেবে । এমন সময় সুনেত্রা এসে হাজির হাসপাতাল এ , বললো কিছু খাবার করে এনেছি চলো খেয়েনাও । সুনেত্রার কথা ফেলতে পারলো না রাতুল , কিছুটা খাবার মুখে দিলো । তারপর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না সে । সুবীর আমার নিজের ভাই এর থেকে ও বড়ো , ওরা ওকে মারার চেষ্টা করলো ? ওই সাধাসিধে ছেলে টা ওদের কি ক্ষতি করতে পারতো বোলো তো ? ওদের আমি কাউকে ছাড়বো না সুনেত্রা , শুধু তুমি আমার পাশে থেকো । বলে এই প্রথম সুনেত্রা কে জড়িয়ে ধরলো রাতুল , আর যেন পেলো সেই অসীম জোর যা দুনিয়ার যেকোনো বড়ো বাঁধা কে এক লহমায় টপকে দিতে পারে ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime