রাজনীতি ও প্রেম নবম কিস্তি
রাজনীতি ও প্রেম নবম কিস্তি
সমাপতন
নিজের ভাবনা কে ফলপ্রসূ করার জন্য একটু ধীরে এগোতে চাইলো রাতুল । এমনকি সুনেত্রা কে ও সে পুরোটা জানালো না । শুধু বললো চলো আমার সাথে । সুনেত্রা কে নিয়ে সে প্রথমেই চলে এলো সুবীর এর কাছে । ভিতরে ঢুকেই সে নার্স কে জানালো আমি সুবীর এর কাছে কিছুক্ষন থাকতে চাই । নার্স বেরিয়ে গেলে, রাতুল সুনেত্রা কে জানালো আসল কাহানি । সুবীর এর বুকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বার করে আনলো আড়ালে থাকা একটা ছোট্ট ক্যামেরা চালানো ফোন । এবার সুনেত্রা দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি যখন তোমার ওরকম একটা ফোন কল পেলাম , তখন কিছুক্ষন এর জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছিলাম । তারপর বুঝলাম সুবীর এর রিস্ক টা আমাকে নিতেই হবে সে যে পরিস্তিতি এ হোক । তখন এ পকেট এ থাকা সুবীর এর ক্যামেরা ফোন টা এমন ভাবে লাগিয়ে দিয়েছিলাম,যে কেউ সুবীর কে কিছু করতে এলে তার ভিডিও হয়ে যাবে । অরিজিৎ আগেই বলেছিলো সুবীর এর দায়িত্ব ও নিয়েছে ।তাই এবার আমি দেখবো অরিজিৎ দায়িত্ব নেয়া সত্যে ও এই কাজ টা কে করলো ।" সুনেত্রা শুধু অবাক হয়ে শুনছিলো, আর মনে মনে তারিফ করছিলো রাতুল এর উপস্থিত বুদ্ধির । কিন্ত এতো চালাকি সত্ত্বেও অসুবিধা একটা হলো , এতক্ষন এর বড় ভিডিও মোবাইল এ যাহোক করে সেভ হলে ও , স্পেস এর জন্য মোবাইল এতো স্লো হয়ে গেলো যে কিছুই করা যাচ্ছিলো না । বার বার রিস্টার্ট দিয়েমোবাইল তাকে ঠিক করতেই আধা ঘন্টা চলে গেলো । তারপর ওই দীর্ঘ ভিডিও টি দেখতে বসলো রাতুল আর সুনেত্রা । অনেকক্ষন দেখার পর যখন সে রকম কোনো সূত্র খুঁজে পাচ্ছিলো না রাতুল রা , তখন এ চোখে পড়লোসেই হাসপাতাল এর ডাক্তার টাকে , যে সুবীর কে একদম প্রথম দেখেছিলো আর খুব চিল্লাচ্ছিল । এই ডাক্তার এখানে কি করছে দু জন এই বুঝতে পারলো না । রাতুল বললো , "হয়তো উনি এখানে প্রাইভেট এ প্রাকটিস করেন । ওনার নাম টা যেন কি ছিল সুনেত্রা ? ", সুনেত্রা সুবীর এর ট্রিটমেন্ট এর কাগজ দেখে বললো , "পলাশ মন্ডল । ", রাতুল সবে সুবির এর এখনকার ডাক্তার কে ফোন করতে যাবে , এমন সময় ভিডিও টা দেখে চমকে উঠলো রাতুল আর সুনেত্রা , সুবীর এর জ্ঞান ফিরেছিল , তার সামনে দাঁড়িয়েছিল ডাক্তার পলাশ মন্ডল আর অরিজিৎ , অরিজিৎ হঠাৎ বলে উঠলো , "কি রে আমার সম্পর্কে সব জানিয়ে দিতে চেয়েছিলিস না ? এবার তুই আর তোর বন্ধু রাতুল দুটো কে এক সাথে মারার পরিকল্পনা করেছি । ওখানে ওকে আলুওয়ালিয়া মস্তান গুলো মারবে , আর এখানে তোকে আমি মারবো । আর পরে রইলো সুনেত্রা ও তো আজ বিকালেই বিদেশে বিক্রি হয়ে যাবে । আর আমি পাবো লক্ষ লক্ষ টাকা । " , বলে খুব জোরে হেঁসে উঠলো সে । "মর সালা মর , কি পলাশ বাবু কিছু করুন ।" পলাশ বাবু হাস্তে হাস্তে অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দিলো , তারপর দু জন এ বেরিয়ে গেলো । ভাগ্যক্রমে মাত্রা ১-২ মিনিট এর মধ্যেই ডাক্তার সেন মানে রাতুল এর সেই চেনা ডাক্তার টি দেখতে এসে এই অবস্থা দেখে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেন । তাই এ যাত্রায় সুবীর বেঁচে গেছে ।
রাতুল চুপ চাপ বসে একটু ভাবতে লাগলো । তার হাতে আছেই একটি ভিডিও ও একটি অডিও রেকর্ডস , যে গুলো অনবদ্দ প্রমান এই বদমাস গুলো কে ফাঁসানোর জন্য । কিন্ত এদের হাতে এতো পাওয়ার আছে, ঠিক বেঁচে বেরিয়ে যাবে, উল্টে রাতুল একা কাউকে বাঁচাতে পারবে না । তাহলে উপায় ,হঠাৎ রাতুল এর হাতের মোবাইল এ কিছু একটা মেসেজ এলো , অন্যমনস্ক ভাবে মেসেজ টা দেখতে গিয়ে নজর এ পড়লো একটা বাক্য , "ওমেন্স ডে অফার ।"। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেলো মাথায় রাতুল এর । সুনেত্রার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো , "ওমেন্স ডে কবে সুনেত্রা ?" । সুনেত্রা বললো কাল কের এ তো । বেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো রাতুল , এদের সবাই কে জব্দ করার সত্যি কারের উপায় হচ্ছে মিডিয়া ।রাতুল এর হঠাৎ মাথায় এসে গেলো, ওমেন্স ডে তে মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনো একটি ওপেন শো তে আসবে । কোনো ভাবে যদি সুনেত্রা র এই অডিও টা কে সুনেত্রা সমেত দেখানো যাই মুখ্যমন্ত্রী কে এরকম একটা ওমেন্স ডে শো তে তাহলে আর দেখতে হবে না । যেমন ভাবনা তেমন কাজ , ওই শো এর কর্ণধার এর সাথে এক বার আলাপ হয়ে ছিল রাতুল এর । কিন্ত কোনো নম্বর ছিল না । নিজের মিডিয়া লেভেল এর কন্টাক্ট থেকে রানা কে বার করলো সে । ফোন করতেই চিনতে পারলো রানা , বললো "বলুন স্যার , অধম কে মনে করার কারণ ।" রাতুল বলে চললো , "একটা খুব দরকার এ ফোন করলাম , আমার আজ তোদের ওমেন্স ডে শো এর কর্ণধার এর নম্বর টা চাই । " রানা মজা করে চললো , "কেন ভাই আমাকে বল না , যদি অফিস কাঁপানো কোনো খবর দিয়ে চাকরিতে একটু উন্নতি করতে পারি । " রাতুল একটু হেঁসে বললো , "ঠিক আছে একটা অডিও পাঠাচ্ছি সেটা মন দিয়ে শোন, তারপর আমাকে কল করিস । এখুনি কাউকে জানাস না । " রানা কিছুক্ষন এর মধ্যেই কল ব্যাক করলো , খুব অবাক হয়ে বলতে লাগলো, " এ কি রে রাতুল , এরকম সরাসরি , মনে তো হচ্ছেই লোক টা কে মেরেই ফেলি ।" রাতুল বললো , "বুঝতে পারছিস এটা তোদের ওমেন্স ডে অনুষ্ঠান টা কে পুরোপুরি হিট করে দেবে ।" , রানা বলে উঠলো , "কিন্ত এটা কে কেন, এর পর কি হলো সব কিছু বল । মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দেখানো হবে বুঝতেই পারছিস ।", রাতুল বললো , "তোর এই সব উত্তর দেবার জন্য ভিক্টিম মেয়েটিকে নিয়েতোর অফিস এ আসছি । মেয়েটিকে শুধু তোদের জিম্মায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়া অব্দি রাখবি ।আর কি ঘটেছিলো সেটা ও তোদের কে গুছিয়ে বলবে । " ফোন টা রেখে দিয়ে সুনেত্রা র দিকে তাকিয়ে বললো, পারবে তো সুনেত্রা সব বদমাস গুলোর মুখোশ খুলে দিতে ? এই এক টা সুযোগ আমাদের হাতে সবাই কে এক সাথে জব্দ করার । না হলে কিন্ত এতো প্রমান থাকা সত্ত্বেও ওরা আমাদের কে জব্দ করে দেবে । সুনেত্রা ঘর নাড়িয়ে জবাব দিলো, "পারবো রাতুল দা , আমি পারবো ।" সুনেত্রা কে পুরো ঘটনা রাতুল আবার গুছিয়ে বললো, কি ভাবে আর কেমন করে সে সুনেত্রা র কাছে পৌঁছোতে পেরেছে সব কিছু ।