Sutanu Sinha

Children Stories Action

2  

Sutanu Sinha

Children Stories Action

প্রফেসর সাম্য ও পাথর

প্রফেসর সাম্য ও পাথর

31 mins
426


১লা ফ্রেবুয়ারি , ২০১৯

অনেক দিন পর সকালের খবরের কাগজ টা মন দিয়ে দেখছিলাম । কদিন ধরে গবেষণাগার থেকে বেরোবার ই সে রকম সুযোগ পাচ্ছিলাম না । 'পুনরায় ঘটমান' যন্ত্রটির কাজ প্রায় শেষ করে এনে ও যেন শেষ হচ্ছে না । কোথাও যেন কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে । এর মধ্যে রাতুল ছেলে টা দুদিন ছুটি নেয়াই ,সুযোগ ই পাচ্ছিলাম না গবেষণাগার থেকে বের হবার । আজ ও আসায় নিজের কষে দেয়া ক্যাল্কুলেশন টা মেলাতে আর যতটা সম্ভব বাস্তবায়ন করে তুলতে বলে নিজে একটু বারান্দায় এসে বসলাম । কার্তিক কে ডেকে খবরের কাগজ টা দিতে বলে , অল্প করে একটু চোখ বুজিয়ে ভাবছিলাম কিছু যান্ত্রিক ত্রূটি থেকে গেলো কিনা , এমন সময় কার্তিক এসে খবরের কাগজ আর চায়ের কাপ দিয়ে জানালো, রথীন বাবু দেখা করতে এসেছে । গত ৩ দিন ধরে নাকি আসছেন , আমি গবেষণাগার এর ভিতরে আছি শুনে উনি বিরক্ত করতে চাইনি । কার্তিক এর এটা একটা গুণ আমি গবেষণাগারে থাকলে সাধারণত কাউকে ঢুকতে দেয়না ।

এই রথীনবাবু এক ভারী অদ্ভুত মানুষ , মাঝে মাঝে এমন সব আবদার নিয়ে আসে, পূরণ করা বেশ কষ্টসাধ্য হয় ।এক বার কোথা থেকে এক পাখি নিয়ে এসে বলে এই পাখিটির বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ কি হতে পারে পরীক্ষা করে বলে দিন । কোনো জীবিত প্রাণীর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে আমি এমনিতেই পছন্দ করি না , আর যদিও বা করি সেটা একেবারে নিশ্চিত না হয়ে করিনা । অনেক ভাবে অনুরোধ করার পর শেষমেশ লড়াই থেকে বিরত হয়ে মন খারাপ করে চলে গেলেন । সে দিন রথীনবাবু কে ফিরিয়ে দিয়ে মন টা খারাপ ই হয়েছিল বটে ।তাই আজ উনি এসেছেন শুনে বেশ ভালো লাগলো । কার্তিক কে বললাম পাঠিয়ে দে । আর এক কাপ চা ও দিয়ে যেতে বললাম । কিছুক্ষন এর মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে ভদ্রলোকের প্রবেশ । চোখে মুখে বেশ বিদ্ধস্ত ভাব , সচরাচর এরকম রূপে রথীনবাবু কে খুব কম ই দেখা যায় । হাতজোর করে বললাম "নমস্কার রথীনবাবু কেমন আছেন ?", সামনের সোফায় বসতে বসতে বললেন , "খুব একটা ভালো নেই সাম্যবাবু । আপনার কাছে এলাম আপনি বিজ্ঞানী মানুষ যদি কোনো পথ দেখতে পারেন ।" এই সময় কার্তিক এসে চা দিয়ে গেলো । বললাম , "আগে চা খান , তারপর সব শুনছি " । চা তে একটা চুমুক দিয়ে গল্প শুরু করলেন রথীন বাবু । যা বললেন তার বেশ খানিকটা অবাস্তব ই বটে , বিজ্ঞান দিয়ে এটা কে ব্যাখ্যা করা খুব সোজা কাজ নয় ।

রথীনবাবুর কথামতো , জানুয়ারী মাসের প্রবল ঠান্ডায় তিনি নাকি কৈলাস এর কাছাকাছি কোনো এক পর্বতে গেছিলেন । ব্যাপার মেনে নেয়া চাপের হলে ও, রথীনবাবুর কাছে খুব একটা অসম্ভব কিছু নয় ।কারণ উনি মাঝে মাঝেই এরকম অদ্ভুত ভ্রমণ এ যান । যাই হোক আসল বিষয় সেটা নয় ,ওখানে গিয়ে রথীনবাবুর কোনো এক সন্ন্যাসী বাবার সাথে দেখা হয় ।তিনি রথীনবাবুকে একটি অদ্ভুত এক পাথর দেন । বলেছিলেন পাথর টাকে প্রতিদিন সকাল এ এক বার করে প্রণাম করে কাজে বেরোতে , সব ভালো হবে । কিন্তু বলে দিয়েছিলেন পাথর টাকে এক বার কোথাও প্রতিষ্টিত করার পর যেন আর ছুঁয়েনা দেখি । তাহলে কিন্তু এই পাথর বিপরীত কাজ করা শুরু করবে । কিন্তু পাথর টির বেশ কিছু অদ্ভুত বিশেষত্ব আছে , যা যে কোনো কাউকে পাথর টি নিয়ে কৌতূহলী করে তুলবে :

 

১. পাথরটির যে কোনো এক দিক সবসময় আলোকিত থাকে , আর একটি দিক অন্ধকার । যদিও সব আলো নিভিয়ে দিলে তবে এটা বুঝতে পারা যায় ।

২. পাথরটির কখনো বেশ গরম হয়ে যাই, আবার কখনো ঠান্ডা ।

৩. পাথরটির কাছাকাছি হাত নিয়ে গেলে একটা খুব হালকা হলে ও চুম্বকের মতো আকর্ষণ আছে । রথীন বাবুর কোথায় মাঝে মাঝে কারেন্ট মারে । তবে কারেন্ট মারে একটা নির্দিষ্ট সময়ে , সারাদিন এ কোনো এক সময় এরকম কারেন্ট মারার মুড্ এ থাকে ।

৪. পাথরটির মধ্যে থেকে খুব সুক্ষ একটা আওয়াজ আসে । পুরো ঘর চুপ থাকলে আর ভীষণ মন দিয়ে শুনলে নাকি শুনতে পাওয়া যাই ।

 

রথীনবাবুর মতে , সাধুবাবার নির্দেশ ছিল ,

১. সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পাথর টির আলোকিত দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে প্রণাম করে কাজে বেরোস , তাতে নাকি শরীর এর দারুন উৎসাহব্যঞ্জক অনুভূতি হবে ।

২. যদি শরীর খুব খারাপ হয় ,বা কোনো ভালো উদ্যেশ্যে বিশেষ কোনো দরকারে পাথর এর শক্তি কে ব্যবহার করতে চাস , তাহলে ওই বিশেষ সময় টা কে বুঝে যে সময় কারেন্ট মারবে , যদি পাথর টা কে ধরা যাই , তাহলে নাকি শরীর এর মধ্যে এমন প্রবল ক্ষমতা তৈরী হবে , যে তাকে কোনো কিছুতেই রোখা সম্ভব হবে না । কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র এক বার ই ধরা যাবে । অন্যথা এই পাথর বিপরীত কাজ করবে ।

৩. সবশেষে জানিয়েছিলেন ,অনেক এর জন্য এই পাথর টি সহ্য হয়না ,কিন্তু এটি নষ্ট করা বা জ্বালিয়ে দেয়া সম্ভব নয় । যদি কোনো রকম অসুবিধা হয়, ,তাহলে পাথর টি যেন জল এ বিসর্জন দিয়ে দেয় ।

 

রথীনবাবুর অভিজ্ঞতা :

১. সকাল ঘুম থেকে উঠে পাথর টির আলোকিত দিকে প্রণাম করে সত্যি নাকি তার কাজের জগৎ এ দারুন উন্নতি হয়েছে ।

২. রথীন বাবুর একদিন রাতে ভীষণ জ্বর আসে । জ্বর এর ঘরেই হোক বা নিছক কৌতূহল বশত সেই রাতে পাথর টির কাছে যান । মনে হয় যেন পাথর টি আলোকিত অংশ টি যেন একটু বেশি এ আলোকিত । সেই সাথে একটা ভীষণ ক্ষীণ আওয়াজ শুনতে ভেসে আসতে থাকলো । কি মনে হতে রথীনবাবু পাথর টিকে হাত দিয়ে ধরলেন, এবং মুহূর্তের মধ্যে ছেড়ে দিলেন । কারণ পাথরটি থেকে কারেন্ট এর মতো কিছু সারা শরীর নাড়িয়ে দিলো । এর পর তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত পায়ে ঘরে চলে এলেন । মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন , কাল এ পাথর টিকে জলে ফেলে দেবেন । এর পর জল খেয়ে শুতে যাবেন আবার , সবে গায়ের চাদর টেনে ঘুমটা যাবেন , হঠাৎ অনুভব হলো গা এর চাদর টা রাখতে ইচ্ছা করছে না । আর সেই মুহূর্তে হঠাৎ তিনি অনুভব করলেন , তার জ্বর টা পুরোটাই সেরে গেছে । আর শরীর গ্লানি বা কষ্ট তো দূর , মানুষিক আর শারীরিক ভাবে ভীষণ চাঙ্গা লাগছে ।

 

এর পর থেকে রথীন বাবু পাথরটির পরিত্যাগ এর পরিবর্তে আরো কাছে টেনে নিলেন । আর ভীষণ উৎসাহিত হয়ে কিছু কাছের বন্ধুদের গল্প ও করে ফেললেন । পাথর এর এরকম অদ্ভুত ক্ষমতা শুনে সবাই ই উৎসাহিত হয়ে পাথর টি একটি বার দেখার , এমন কি এক বার ধরতে ও চাইলো । এরকম এ এক দিন এক বন্ধু তার স্ত্রী কে নিয়ে পাথর টি দেখতে এসেছিলো । বন্ধুর স্ত্রী পাথর টিকে অনেক ক্ষণ ধরে হাত দিয়ে ধরে, কিসব লিখে টিখে চলে গেলো । স্ত্রী নাকি প্রত্নতত্ববিদ , তাই বেশি প্রশ্নে যাবার সাহস পান নি রথীনবাবু ।

এর পর বন্ধুরা যখন চলে যাচ্ছে, রথীনবাবু তাদের কে এগিয়ে দিতে গেলেন । ফিরে এসে দেখেন তার মা অজ্ঞান হয়ে এক দিকে আছে পড়ে আছে , আর অন্যদিকে পাথর টি । এর পর থেকে রথীন বাবুর মা পুরোপুরি শয্যাশায়ী । সবরকম ডাক্তার দেখিয়েছেন ,কিন্তু সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছেন ।

 

সব কিছু শোনার পর বললাম, "তা আমি কি করতে পারি রথীনবাবু ?", তাতে রথীনবাবু নিম্নোক্ত আবদার গুলো করলেন :

১. পাথরটি আসলে কি তা আপনার বিজ্ঞান এর চোখে দেখুন ।

২. আমার ধারণা ২৪ ঘন্টা তে কোনো এক বিশেষ সময়এ ওই কারেন্ট দেয়া পরিস্থিতি তৈরি হয় ।যেটার কোনো একটা অংকের হিসাব আছে । আপনি সেটা বার করে দিন । কারণ আমার স্থির ধারণা এই পাথরটির ওই কারেন্ট দেয়া পরিস্তিতি ই আমার মা কে বাঁচাতে পারবে ।

উপরোক্ত আবদার গুলো করে, আমার কোনো উত্তর এর অপেক্ষা না করে , পাথর টি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রথীনবাবুর শেষ কথা , "যদি দুই দিনের মধ্যে কিছু করতে পারে জানাবেন , না হলে ওটিকে গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়ে দেবেন । আমার মা এর যা অবস্থা হয়তো যা হোক করে আর তিনটি দিন ই হয়তো বাঁচবে ।"

আমার কোনো কিছু বলার বা কোনো অনুভূতি দেখানোর আগেই তিনি নমস্কার করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ।

 

২রা ফ্রেবুয়ারি , ২০১৯

রথীনবাবুর আবদার মেটাতে হলে দুই দিনের মধ্যে আমাকে কিছু করতে হবে । তাই সব কাজ ফেলে এটাতেই হাত লাগলাম । এক জন বিজ্ঞানী হিসাবে আমার মনে হয়েছে ,আমার প্রধান কর্তব্য পাথর টিকে নিয়ে যে আজগুবি বিশ্বাস রথীনবাবু করে আছেন তাকে শেষ করা । কিন্তু কিভাবে করবো তা ভাবতে গিয়ে , বিজ্ঞান এর এক অতীব সহজ আর চরম সত্য কে মনে পড়লো ।কোনো কিছুর পিছনের আসল সত্য কে বুঝতে গেলে , সব থেকে বেশি দরকার পরিস্তিতি টাকে প্রতিস্থাপন করা আর তাকে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা । সিদ্ধান্ত নিলাম সেটাই করবো । পাথর টিকে গবেষণাগারের একটি বিশেষ জায়গায় রেখে দিলাম । অন্ধকারের মধ্যে পাথর টির আলোকিত অর্ধেক কে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল । সত্যি পাথর টা বেশ অদ্ভুত । কোনো অলৌকিক শক্তি যদি থাকে ও নিশ্চয় তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো । কিন্তু দুটো দিন সময়টা বড় কম মনে হচ্ছে । আজ পুরো দিন ভালো করে দেখলে হয়তো কিছু একটা ধরতে পারবো । প্রথম যেটা দেখা দরকার , সারা দিন এ পাথর টার কি কি পরিবর্তন হয় । ২টো জিনিস তো রথীনবাবু ই বলে দিয়ে গেছেন । একটা আলো , অন্ধকার , আর একটি গরম , ঠান্ডা । তাই পাথর টিকে বসিয়ে দিলাম, আমার সেই ছোট কাঁচের ঘর টাতে , যা আমাকে ক্যালকুলেট করে বলে দেবে প্রতি মিনিট এ আলো অন্ধকারের মধ্যের লাইন টা একটু ও সরছে কি, না কি স্থির হয়ে আছে , আর ওর মধ্যে থাকা থার্মোমিটার বলে দেবে প্রতি মিনিট এর উষ্ণতার পরিবর্তন । সব কিছু কে ভালো করে সেট করে সবে কম্পিউটার এ চোখ রেখেছি , এমন সময় কার্তিক এসে ডাকলো , বললো এক জন মহিলা এসেছেন খুব জোরাজোরি করছেন , বলছেন আপনার সাথে দেখা না করে কোনো মতেই যাবেন না । এখন আবার কে এলো , বললাম ঠিক আছে বসতে বল , চা দে, আমি আসছি ।

 

সাধারণত গবেষণাগারে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে বেরোতে ইচ্ছা একেবারেই করেনা । তবে কার্তিক ডাকতে এসেছে মানে মেয়েটা যথেষ্ট চাপ দিয়েছে । বাইরে বৈঠকখানায় যে মেয়েটিকে বসে থাকতে দেখলাম তাকে কস্মিন কালে ও দেখেছি বলে মনে পড়লো না । বললাম "নমস্কার, বলুন কি বলবেন ?" ।

মেয়েটি মোটেই কোনো বাচ্ছা মেয়ে নয়, মোটামুটি মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা । পরনে ভদ্রস্থ শাড়ি ,চোখে চশমা , দেখলে স্কুল টিচার গোছের লাগলো । ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন , "আপনি আমাকে চিনবেন না , আমার নাম ঋতুপর্ণা মুখোপাধ্যায় ।আমি একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ । ইতিহাস নিয়ে পড়া আর পড়ানো দুটোই আমার পেশা আর নেশা । " এত টা বলে কিছু টা দম নিলেন তিনি । তারপর আবার বলতে শুরু করলেন , "আপনার কাছে যে পাথর টি আছে এটি খ্রীষ্টপূর্ব বিংশ শতাব্দীর পাথর । ভীষণ ই কিমতি । আমি চাই এরকম একটি পাথর কে মিউজিয়ামএ রাখতে , আর এটা নিয়ে আরো পড়াশোনা আর গবেষণা করতে চাই ।" , ভদ্রমহিলা একটু চুপ করতে, আমি বলে উঠলাম , "কিন্তু এ পাথর তো আমার নয় ম্যাডাম । এটা। .. ", আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে মহিলা বলে উঠলেন , "জানি ওটা রথীনবাবু আপনাকে দিয়েছে ।আমি রথীনবাবুর বন্ধুর স্ত্রী । ওনাকে অনেক বার অনুরোধ করেছি , কিন্তু কোনো মতেই উনি রাজি হচ্ছেন না । আপনি যদি ওটা দিয়ে আমাকে একটু সাহায্য করতেন ।", হালকা হেঁসে বললাম , "চা টা খান ঋতুপর্ণা দেবী । দেখুন রথীনবাবু আমাকে একটা কাজ দিয়েছেন। সেটা করে দুই থেকে তিন দিন পরে আমি ওনাকে এই পাথর টা ফিরিয়ে দেব ।তখন আপনি ওনার থেকেই চেয়ে নেবেন । আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না । " , শুনে ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন , "প্রফেসর সাম্য , উনি কোনো মতেই দেবেন না , যদি কিছু না হয় জল এ ফেলে দেবেন । আপনি ওই পাথর তো আমাকে দিয়ে দিন , আমি ওর উপযুক্ত ব্যবস্থা করবো । ", কিছুক্ষন চুপ করে থেকে , তারপর আমি বললাম , "ঠিক আছেই পাথর দেবার আগে আমি রথীন বাবু কে অনুরোধ করবো ওটিকে জল এ না ফেলতে ।অন্তত এক বার আপনার সাথে যেন কথা বলে । এখন কার মতো আমাকে যেতে হবে , আমার অনেক কাজ বাকি আছে, মাফ করবেন ।" কার্তিক কে বললাম , "ম্যাডাম যেন চা খেয়ে যাই দেখিস । ", ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময়, শুনতে পেলাম , ভদ্রমহিলা বলছেন , "পাথর টা দিয়ে দিলে পারতেন প্রফেসর সাম্য । বোধহয় সেটাই সবার জন্য ভালো হতো । " এ কথার উত্তর দেবার জন্য আর পিছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করলাম না । কিন্তু কথাটা যে প্রচ্ছন্ন হুমকি তাতে কোনো সন্দেহ থাকলো না ।

 

গবেষণাগারে ঢোকার পর আবার ওই পাথর টা কে নিয়ে পড়লাম । কি এমন আছে ওই পাথর টা তে । ভদ্রমহিলা কেন এতটাই বেপরোয়া ওটা পাবার জন্য । পাথর বা প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আমার বিশদ জ্ঞান না থাকলে ও পাথর টা যদি খুব পুরোনো হয়, আমার পরীক্ষায় ধরা পরবে । যাই হোক আমার এসব করতে করতে আধা ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেলো ,নজর রাখলাম আমার যন্ত্রের ফলাফল এর উপর । যদি কিছু পরিবর্তন ওই পাথর টি তে হয়তা অবশ্যই ধরা পরবে । ফলাফল হাতে নাতে মিলিয়ে দিলো আমার ধারণা । পাথর এর আলো অন্ধকারের মাঝের রেখা ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে । আর আমার যন্তের ফলাফল যদি ঠিক ঠাক হয় ,এই পাথরটির দিন রাতের হিসাব পুরোপুরি আমাদের পৃথিবীর মতো । শুধু পার্থক্য এটাই , ২৪ ঘন্টায় একেবারে ১২ ঘন্টা রাত আর ১২ ঘন্টা সকাল ।

এবার আসা যাক তাপমাত্রার ফলাফল এ । এখানেও রথীনবাবুর কথা মিলে গেছে , তবে একটু অন্য ভাবে , পাথরটির যে অংশ টি আলোকিত থাকছে সেই অংশ টির উত্তাপ অপেক্ষাকৃত বেশি, আর যে অংশ টির আলোকিত নেই সেটা ঠান্ডা । গরম আর ঠান্ডা হবার কারণ তো বোঝা গেলো , পুরোটাই ওই আলোর খেল । কিন্তু আলোর উৎস টা কি , এটা বার করার জন্য আরো কিছু ভাবতে হবে । কিন্তু কি করা যেতে পারে , ভাবতে ভাবতে গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে এলাম ।

পাথরটির আলোর উৎস কি হতে পারে ? কোনো জড় বস্তু আলোকিত কেন হতে পারে । দু রকম ভাবে ভাবা যেতে পারে , হয় বস্তুটির নিজের ভিতরে এমন কিছু আছে যা তাকে আলোকিত করছে । অথবা বস্তু টি কে বাইরে থেকে কেউ আলোকিত করছে । কিন্তু দুটো সম্ভাবনাই বড়ই বেশি অসম্ভব , কারণ একটা পাথর এর ভিতর থেকে আলো এলে ও বাইরে কে আলোকিত করতে পারে না, কিছু কিছু চকমকে পাথর থাকে যা ভীষণ উজ্জ্বল , অন্ধকারে দেখলে মনে হয় যেন কিছু জ্বলছে , কিন্তু এই পাথর টির উজ্জলতার সাথে তার কোনো মিল নেই । আর বাইরে থেকে আলোকিত করা তো সম্ভব নয় , যদি কোনো বস্তু নিজে আলোকিত করে তাহলে সেটি অবশ্যই নজরে আসবে । এরকম কখনো সম্ভব নয় সেটা দেখতেই পাওয়া যাবে না । তাই ২ টো আপাত সাধারণ যুক্তি প্রতিস্থাপিত করা যাচ্ছে না কোনো ভাবে । আর পাঁচ টা সাধারণ মানুষ এটা কে অলৌকিক বলতো , কিন্তু এক জন বৈজ্ঞানিক হয়ে আমি এতো সহজে হার মানতে পারিনা ।

মাথা টাকে আরো খাটানোর জন্য বাইরে বেরিয়ে এলাম । বাগান এর চার দিকে ঘুরতে লাগলাম । সুন্দর ডালিয়া ফুল করেছে কার্তিক । ছেলে টা ভীষণ ভালো , অনেক কাজ আমার অজান্তেই করে যাই ।


বাগান এ ঘুরে মন টা একটু ভালো হয়ে গেলো । এবার আবার একটু নতুন ভাবে পাথর টা কে নিয়ে ভাবতে শুরু করতে হবে । সবে গবেষণাগারে ঢুকতে যাবো দেখি কার্তিক দাঁড়িয়ে আছে, বললো "বাবু এখন কি খেয়ে নেবেন, আমি একটু বেরোতাম । " কার্তিক এরকম অনুরোধ কখনো করে না , তাই না রেখে উপায় ছিল না, বললাম চল খেয়ে নিই । ৩-৪ রকমের পদ করেছে কার্তিক , বললাম , "ঝাল বেশি দিসনি তো ? সব গুলোতে কেমন লঙ্কা ভেসে বেড়াচ্ছে ? ",কার্তিক উত্তর দিলো , "সব কিছু কি খালি দেখে বোঝা যাই বাবু, খেয়ে দেখুন তারপর বলবেন । " কথা টা শুনে হঠাৎ মনে হলো , তাই তো খালি চোখে দেখে কি ভাবে আমি বলছি পাথর টা বাইরে বা ভিতরে কি আছে । আমাকে মাইক্রোস্কোপ এ দেখা উচিৎ । তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করে, দৌড়লাম গবেষণাগারের দিকে ।

গবেষণাগারে এসেই মাইক্রোস্কোপ সবে নিয়েছি ,রাতুল এসে বললো , "স্যার আপনার ক্যালকুলেশন পুরো মিলে যাচ্ছে । কিন্তু আমি আরো কিছু টেস্ট করতে চাই । " রাতুল এর দিকে তাকিয়ে বললাম, "ঠিক আছে কাল এসে করিস ।" রাতুল ছেলে টা ভালো , যতক্ষণ না নিজের মনে হয় সব ঠিক আছে কাজ করেই চলে । এমন কি আমার কথা ও শুনতে চাই না । যাই হোক রাতুল কে হাঁসি মুখে বিদায় দিয়ে, আবার ফিরে এলাম পাথর এর জগৎ এ । যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পাথর টার রহস্য বের করতে হবে , আর রথীনবাবু কে এই পাথর টা দিয়ে দিতে হবে । তারপর উনি যা ভালো ভাববেন করবেন । সকালের মহিলা টি কে ও আমার খুব একটা সুবিধার লাগেনি । যাই হোক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পাথর টার চারদিকে দেখতে গিয়ে পুরো অবাক হয়ে গেলাম । আমার সমস্ত ধারণা কে মিথ্যে করে দিয়ে,দেখলাম একটি খুব এ ক্ষুদ্র , যা খালি চোখে দেখা যাই না, সেটি খুব আসতে আসতে পাথর টার চারদিকে ঘুরছে , আর এটি থেকেই আলো বিচ্ছুরণ হচ্ছে । বস্তু টি পাথর টার এতো কাছে আছে, খুব ভালো করে না দেখলে বোঝাই যাচ্ছে না ।


তার মানে পাথর টির একটি নিজের শক্তি আছে, আর এটা অবশ্যই পৃথিবীর মার্ধ্যাকর্ষণ শক্তির মতোই কিছু হওয়া উচিৎ । আমাকে আরো কিছু পরীক্ষা করতে হবে । সত্যি এ পাথর টা অদ্ভুত , আমার বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা কে অনেক তাই তরান্নিত করে দিলো এই পাথর এর কিছু বৈশিষ্ট ।

দুটো প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো ,

১) মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সত্যি আছে কিনা কি ভাবে পরীক্ষা করা যাই ।

২) পাথর টি র আর কোনো বিশেস্বত্ব আছে কিনা ।

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির পরীক্ষা করার এক মাত্র উপায় , যে অনু টি ওই পাথর টি র চারদিকে ঘুরছে একেবারে ওরকম ভার এর কোনো অনু বানাতে হবে , তারপর ও টি কে একটা নির্দিষ্ট গতিতে ওই পাথর টি র কক্ষপথে ঢোকাতে পারলেই , কেল্লা ফতে । যদি সত্যি পাথর টির কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থেকে থাকে , তাহলে নিঃসন্দেহে ওই অনু টি এর চারধারে ঘুরতে শুরু করবে ।

আমার কাছে সব কিছু তৈরি ই ছিল , কারণ আমার "পুনরায় ঘটমান" যন্ত্র টি র জন্য এরকম একটি পরীক্ষা করার দরকার ছিল । তাই দেরি না করে করে দিলাম চালু করে । আরো ১ টি ঘন্টার অপেক্ষা , কিছুক্ষন এর মধ্যে একেবারে ওই রকম বা ওর থেকে ছোট কোনো কণা তৈরি করে ফেলবে , আর সেটি আগের কণা টার গতিবেগ কে ধরে নিয়ে পাথর টার চারধারে ঘোরা শুরু করবে । যদি এটা সত্যি করা যাই , তাহলে বুঝে যাবে পাথর সত্যি ই আছে মার্ধ্যাকর্ষণ শক্তি ।

যতক্ষন এই যন্ত্র টি কাজ করে ভালো করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পাথর টাকে পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম । যখন পর্যবেক্ষণ এ প্রায় ডুবে গেছি , হঠাৎ শুনতে পেলাম কার্তিক ডাকছে । বললো , "বাবু চা টা খেয়ে নিন । " নিজের ওই কঠিন পর্যবেক্ষণ কে উপেক্ষা করে চা টা হাতে নিয়ে নিলাম ।


কিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকলো কিছু কি আমার চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে । হতে পারে এমন কিছু যা এই পাথরটির আসল পরিচয় বুঝিয়ে দেবে । চা খেয়ে নিয়ে যখন আবার পর্যবেক্ষণ এ বসলাম , আর আরও ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র কণা গুলো কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ শুরু করলাম , তখন ই যেন মনে হলো পাথর টির উপরে কিছু আছে যার বিশেস্বত্ব অনেক টা জীবিত প্রাণীর মতো । সে গুলো রীতিমতো নড়ছে ,আর কিছু যেন বোঝানোর চেষ্টা করছে ।

ব্যাপার টা আমি সত্যি দেখছি , নাকি অতিরিক্ত ভাবনার ফলে কিছু ভুল দেখছি , সেটা বোঝার জন্য কিছুক্ষন এর বিরতি নিলাম । গবেষণাগার এর বাইরে বেরিয়ে এসে একটু লাইব্রেরি তে গেলাম । কিছু পড়াশোনা করা ভীষণ দরকার । ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি র অনেক গুরুহ রহস্য আর এক বার ঝালিয়ে নেয়া দরকার । অনেক কিছুই মাথা থেকে বেরিয়ে যেতে বসেছে ।প্রায় ২ ঘন্টার মত পড়াশোনা করে যখন লাইব্রেরি থেকে বের হলাম , মনের মধ্যে প্রশ্ন আরো বেড়ে গেলো , কিন্তু তার সাথে উত্তর টাও যেন তৈরি হয়ে গেলো । হঠাৎ কার্তিক এর সাথে দেখা হলে , বললাম "কার্তিক, আমার খাবার টা ঢেকে রেখে , তুই আজ খেয়ে নিস্, আমার কত রাত্রি হবে বলতে পারছি না ।" কার্তিক চলে গেলে আবার পাথর টাকে নিয়ে বসলাম । অনেক ক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করে ও সে রকম কিছু খুঁজে পেলাম না । আর আমার অনুসৃষ্টিকাৰক যন্ত্র টা ও কোনো ভাবেই কণা টিকে পাথর টির চারধারে ঘোরাতে পারছে না । এই ভাবে কেটে গেলো অন্তত ৩ ঘন্টা । মনের জোর কমে গেলে ও চিন্তার ধারা কে আরো বাড়াতে শুরু করলাম , যেমন করেই হোক আজ কিছু একটা জায়গায় পৌঁছতে হবে । রাত ১ টার সময় যখন সমস্ত গতিবেগ হিসাব করে যন্ত্র টিকে শেষ বারের মতো চালালাম তখন আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলাম ,কিন্তু সেটাই মিলিয়ে দিলো আমার সব ধারণা , বুঝে গেলাম আছে এক মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এই পাথর টির মধ্যে । আমার বানানো ওই ক্ষুদ্র কণা টি ঘুরতে লাগলো ওই পাথর টির চারধারে । আবিষ্কারের আনন্দে মন টা ভোরে উঠলো ।


৩রা ফ্রেবুয়ারি , ২০১৯

পাথরটির জন্য যে এরকম বিপদে পড়তে হবে স্বপ্নে ও ভাবিনি । আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম , আমার সামনে কেউ এক জন বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে । কি ব্যাপার বোঝার আগেই কার্তিক কে দেখতে পেলাম , মেঝেতে পরে আছে । মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে মনে হলো । "কার্তিক ।।। " বলে ছুটে গেলাম তার কাছে । কোলে তুলে নিয়ে , আমার বিছানায় বসালাম । ফাস্টএইড টা আনার জন্য সবে যাবো , এক মহিলা কণ্ঠ বলে উঠলো , "বড় বজ্জাত আপনার এই চাকর টা , কাল কতো করে বোঝালাম পাথর টা চুরি করে দে , যা টাকা লাগবে দেব । কিছুতেই রাজি হলো না । " তাকিয়ে দেখলাম কাল কের সকালের ভদ্র মহিলা । ফাস্টএইড টা এনে , কার্তিক এর মাথায় ওষুধ লাগাতে লাগাতে , বললাম "কি চান আপনারা ?"। মহিলা কণ্ঠ বলে উঠলেন , "আমাদের চাহিদা তো খুব ই সামান্য প্রফেসর সাম্য । পাথর টি আমাদের কে দিয়ে দিন । কিন্তু একটা মুশকিল হয়ে গেছে, যে পাথর টি কিনতে চাইছিলো , সে এখন বললো যখন পাথর টি আপনার হাতে আছে , তখন পাথর টির আসল রহস্য , কখন এটি কারেন্ট মারে সেটি যদি বার করে দেন , তাহলে আপনাকে আর জানে মারবে না । আর যদি চান কিছু টাকা ও পেতে পারেন । " উত্তরে জানালাম , "আমি তো বিজ্ঞান কে টাকার জন্য বেচি না ঋতুপর্ণা ম্যাডাম ।" মহিলাটি বললো , "তাহলে এই চাকর টার জন্য , সাথে অবশ্য আর ও এক জন আছে , এই ছেলে টি , আপনার গবেষণাগারে কাজ করে শুনলাম । " দেখলাম ২ জন লোক রাতুল এর দিকে বন্দুক তাক করে আছে আর এক জন কার্তিক এর দিকে । এরকম পরিস্তিতিতে আগে ও পড়েছি ,কিন্তু তখন আমার হাতে থাকতো আমার অস্ত্র । আমাকে যেমন করে হোক আমার অস্ত্র অব্দি পৌঁছতে হবে , তাই এই মুহূর্তে এদের শর্ত মেনে নেয়া ছাড়া আমার হাতে কোনো গতি নেই ।

বললাম , "ঠিক আছে আপনারা যা চাইছেন তাই হবে । কিন্তু আপনারা কথা দিন কার্তিক বা রাতুল এর যেন কিছু না হয় ।",মহিলা হাস্যমুখে বললেন , "নিশ্চয় কিন্তু আপনার হাতে সময় রইলো এক দিন , যদি এর মধ্যে বলে দিতে পারেন খুব ভালো , না হলে মৃত্যু জন্য প্রস্তুত থাকবেন । "

কার্তিক কে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে এসে বললাম, "এখন কেমন লাগছে ?", কার্তিক এর পিছন পিছন রাতুল ও বেরিয়ে এসেছিলো । কার্তিক বলে চললো , "বাবু এই মহিলাটি একেবারেই ভালো নয় । কাল আমি বেরিয়েছিলাম শুধু এই মহিলার সব খবর জানতে । উনি যার কাছে পাথর টি দেবে বলছেন তিনি উত্তর ভারতের এক জন বড় বাবাজি । যিনি পাথর টির এই অলৌকিক গল্পকথা শুনে ওটিকে কিনতে চাইছেন । অনেক টাকার লোভ দেখিয়েছেন । " , বললাম , "কিন্তু কার্তিক একটা জিনিস বুঝলাম না , আমাকে এখনো গবেষণা করে পাথর এর রহস্য বার করতে বলছে কেন ?" , কার্তিক বললো , "বাবু ওরা জানতে চাইছে , কারেন্ট লাগার ব্যাপার টা সত্যি কিনা । যদি ওটা সত্যি হয় ,আর ওই সময়টা জেনে যাই , তাহলে বাবাজি প্রচুর ভক্তের কাছ থেকে কোটি কোটি কমাতে পারবে । ", বললাম , "হুম, এবার বুঝলাম ।" কার্তিক বললো , "কিন্তু এখন কি হবে বাবু ?" বললাম , "চিন্তা করিস না , কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে । তুই শুধু গবেষণাগারের বাইরে থাকিস , আর কেউ এলে আমাকে খবর দিস । রাতুল তুই আমার সাথে আই ।"

রাতুল কে নিয়ে গবেষণাগারে প্রবেশ করলাম , চুপি চুপি বললাম , "তুই গিয়ে আমার স্ট্যাচু পিস্তল এর গুলি বানা , কিন্তু কেউ যেন বুঝতে না পারে ।" আমি পাথর টা কে নিয়ে পড়ছি ।

পাথর টার কাছে গিয়ে সবে কাজ শুরু করতে যাবো , কার্তিক এসে বললো , "বাবু ওরা আসছে ", বললাম "তুই কোনো কথা বলিস না, যা বলার আমি বলবো ।"

গবেষণাগারের ভিতরে এসে , মহিলাটি বললেন , "আপনার গবেষণাগার টি তো বেশ সুন্দর প্রফেসর সাম্য । তা এটাই কি সেই পাথর । বা অদ্ভুত দেখতে তো ।", চুপচাপ থাকায় ভালো মনে করলাম । মহিলাটি আবার বলে উঠলেন , "তা কি বার করলেন কাল সারারাত জেগে ? আপনার চাকর তো আপনার কাছে আসতেই দিচ্ছিলো না । বলছিলো বাবু সারারাত জেগে কাজ করেছেন , ওনার সাথে দেখা করা যাবেনা । তাই তো বেটা কে মারতে হলো ।" বললাম , "এখনো বিশেষ কিছু জানতে পারিনি , তবে আপনি যদি সুযোগ দেন , তাহলে আবার চেষ্টা করতে পারি ।", মহিলাটি বলে উঠলেন , "নিশ্চই নিশ্চই , আপনি আপনার কাজ করুন , আজ কের দিন টুকুই তো আর আপনার কাছে আছে । আমরা বাইরে থেকেই পাহারা দিচ্ছি । আপনি শুধু আপনার কার্তিক কে বলুন আজ সারা দিন আমাদের খাবার ব্যবস্থা টা করে দিতে ।" মনে মনে হাসলাম , আর বললাম , "কার্তিক ওনাদের খাবার ব্যবস্থা কর ।" এই টুকু শুনে ওরা বেরিয়ে গেলো । 

মাইক্রোস্কোপ এ দেখে এটা তো স্পষ্ট আমার ছোট্ট কণা টা পাথর টির চারধারে ঘুরে বেড়াচ্ছে । তার মানে পাথর টির একটা আকর্ষণ ক্ষমতা আছে । সেটা নিশ্চিৎ । কিন্তু আজ আমাকে বার করতে হবে ওই কারেন্ট মারার ব্যাপার টা , যেটা আদৌ হয় কিনা সেটাই সন্দিহান । খুব ভালো করে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে শুরু করলাম পাথর টাকে । খুব ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র , অনেকটা পিঁপড়ের মতো যেন কিছু একটা দেখতে পেলাম , আর তারা যেন আমার দিকে তাকিয়ে অনবরত কিছু বলে চলেছে । কি বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না , তবে এটুকু নিশ্চিৎ এই পাথর টির উপর কোনো জীবিত প্রাণী আছে । আর তারা কিছু বলতে চাইছে । কি প্রাণী এরা , কোথা থেকে এলো , এসব জানতে গেলে আমাকে এদের কথা বুঝতে হবে ।

অনেক দিন আগে পিঁপড়েদের কথা বোঝার জন্য একটা যন্ত্র বানিয়েছিলাম , কিন্তু সে ভাবে ব্যবহার করা হয়নি বলে, যন্ত্রটি প্রায় অকেজো হয়ে আছে । সেই যন্ত্রটিকে এক বার ঝেড়ে মুছে বার করে দেখলে কেমন হয় ? রাতুল কে ডাকতে গিয়েও ডাকলাম না , কারণ ও যে কাজ টা করছে সেটা অত্যন্ত জরুরি , না হলে এদের কে আটকাতে পারবো না । তাই নিজেই পুরোনো সব যন্ত্রপাতি ঘেঁটে ওই পিঁপড়ের বা পোকামাকড় এর শব্দের মানে বোঝার বা জোরে পরিষ্কার ভাবে শোনার সুবিধার্থে বানানো যন্ত্রটি বার করলাম । এখন এটি কাজ করে কিনা সেটাই দেখার । যন্ত্র টিকে সঠিক অবস্থান এ বসিয়ে কানে হেডফোন দুটো লাগালাম , তাতে কিছু শব্দ শুনতে পেলে ও তা বোধগোম্ম হচ্ছিলো না । একটু টিউনিং করতে , ও ভালো করে যন্ত্র টিকে খুলে আর এক বার লাগাতে , ওই দিকের আওয়াজ কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছিলো ।

কিন্তু যন্ত্রটির প্রোগ্রামিং কিছুটা পরিবর্তন না করলে, এই জীব গুলির কথা কিছু বোঝার মতো হচ্ছে না । ছোটোখাটো একটু পরিবর্তন করতেই প্রোগ্রাম টি দৌড়োতে শুরু করলো । তাই আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে গেলাম, এবার পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এরা কি বলতে চাইছে । এদের পুরো কথা শোনার বা বলতে গেলে বুঝতে পাড়ার পর, আমি বেশ অনেকক্ষন তাজ্জব হয়ে বসে থাকলাম । এই সব ছোট ছোট জীব যেটা বললো তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় ,


"এরা এসেছে সৌরজগৎ এর কোনো এক প্রান্ত থেকে । এই গ্রহের নাম ও কিছু একটা বললো , যা ভালো করে বোঝা যাই নি । কিন্তু এই গ্রহে , মানে পৃথিবীতে বাঁচার জন্য , তাদের কাছে মাস্ক বা ওই ধরণের কোনো যন্ত্র ছিল । ওরা সংখ্যাই ও প্রচুর ছিল , কিন্তু তারা কিভাবে পৃথিবীতে এলো সেটা খুব ভালো করে বোঝা গেলো না । পৃথিবীতে আসার পর থেকে তারা ওই মাস্ক ছাড়া বাঁচার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজতে থাকে । কিন্তু সেটা খুঁজতে এতো টাই সময় লাগতে শুরু করে , ধীরে ধীরে ওরা মারা যেতে ও শুরু করে , আর তাদের গ্রহ টি ও ছোট হতে শুরু করে । কিন্তু শেষ মেশ তারা খুঁজে পাই , এই গ্রহে বাঁচতে গেলে তাদের কে নিজেদের গ্রহ সমেত সমুদ্রের তোলাই থাকতে হবে । কারণ সমুদ্রের তোলার পরিবেশ এ তাদের জন্য একেবারে উপযুক্ত । সেই মতো অনেক কষ্ট করে তারা তাদের গ্রহ সমেত সমুদ্রের তোলাই চলে যাই । মাঝে মাঝে কেউ কেউ উপরে আসে মাস্ক নিয়ে ,প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আবার জলের তোলাই চলে যাই । আর ওই কারেন্ট লাগার কাহিনী ও পরিষ্কার , ওদের ই বাঁচার জন্য তৈরি করা অস্ত্র , যা আসলে এক ধরণের ইনজেকশন যা সরাসরি নার্ভ কে প্রভাবিত করে, যেটি তারা ২৪ ঘন্টায় এক বার ই ব্যবহার করে , যেহেতু সংখ্যা কমে যাচ্ছে । সেই কারণে কখনো কখনো কিছু মানুষ এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করা দেয় । যাই হোক কোনো এক অজ্ঞাত কারণ এ তাদের ওই গ্রহ টিকে আবার কেউ সমুদ্র থেকে উপর এ নিয়ে আসে । আর ধীরে ধীরে তাদের মাস্ক এর সংখ্যা ও শেষ হতে চলেছে । তাদের একটাই ইচ্ছা তাদের কে আবার সমুদ্রে ফিরিয়ে দেয়া হোক । "

 

 

পাথরটির আসল সত্য জানতে পেরে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলাম আমি । ভাবলাম , যা বুঝলাম সব ঠিক ঠাক কিনা । কিছুক্ষন চুপচাপ বসে, তারপর আসতে করে রাতুল কে ডেকে নিলাম । ওকে সব টা বললাম । তারপর দু জন এ মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, মনুষত্বের খাতিরে পাথর টিকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া ভীষণ জরুরি । কিন্তু ব্যাপার করা মোটেই সোজা হবেনা ।

প্রথমত , রথীনবাবু কে দেয়া কথা , তাকে সব কথা জানানো টা ভীষণ জরুরি ।

দ্বিতীয়ত, এই লোভী মানুষ গুলোর প্রলোভিত চোখ । অর্থ কমানোর এতো বড় একটা সুযোগ কোনো মতেই হাতছাড়া করতে চাইবে না ।

রাতুল এর গুলি তৈরি করা হয়ে গিয়েছে ।কার্তিক কে ও গবেষণাগারের মধ্যেই এরা আটকে রেখেছে । কার্তিক কে ডেকে নিয়ে ,আলাদা করে পরিকল্পনা করতে লাগলাম । কি ভাবে এদের থেকে বেঁচে , রথীনবাবু কে সব বুঝিয়ে ,পাথর টিকে কি ভাবে সুরক্ষিত সমুদ্রে পৌঁছে দেয়া যাই তাই নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম ।

 

৪ঠা ফ্রেবুয়ারি , ২০১৯

আমরা বেঁচে আছি , আর ফিরিয়ে দিতে পেরেছি ওই ছোট জীব গুলো কে তাদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ।তবে এই পুরো কাজ টা কার্তিক না থাকলে সত্যি ই সম্ভব ছিল না । পুরো ঘটনাটা বলতে গেলে এখনো মনে হচ্ছে কার্তিক না থাকলে কি হতো ?

গবেষণাগারে বসেই যে আমরা অস্ত্র নিয়ে তৈরি হতে পারি , তা কল্পনা ও করতে পারিনি বাইরের বন্দুকধারী লোভী গাধা গুলো । শত্রূ হিসাবে বাইরের ওই ৩তে ষণ্ডা আর ওই মহিলা টিকে ধরে আমরা পরিকল্পনা করলাম । কার্তিক বললো , "বাবু আমি ২ জন কে সামলে নিতে পারবো , আপনারা এক জন কে সামলালেই হবে ।" রাতুল একটু নরম সরম প্রকৃতির ছেলে । সে এ সবের মধ্যে একটু ঘাবড়েএ গেছে । আমি নিজের বন্দুক আর গা ঢাকা দেবার চাদর নিয়ে রেডি হয়ে গেলাম । মহিলাটি ঠিক রাত ১২ টা তে ঢুকবে বলেছিলো । কার্তিক কে বললাম তুই দরজার কাছে এই চাদর টা দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকবি, আমি যখন বলবো তখন আক্রমণ করবি । আর রাতুল কে বললাম আমার সাথেই থাক । ১২:০৫ নাগাদ পায়ের আওয়াজ পেয়ে সবাই একটু সাবধান হয়ে গেলাম । ঘরের মধ্যে ২ গুন্ডা প্রবেশ করলো , তার মানে এক জন হয় বাইরে আছে , না হলে ওই মহিলার সাথে আছে । ২ জন এ এসে বললো , "চলুন ম্যাডাম ডাকছে "। হালকা হাতের ইশারায় কার্তিক কে জানিয়ে দিলাম ঝাঁপিয়ে পর । কার্তিক এক সাথে দু জন এর উপর এ ঝাঁপিয়ে পড়লো ।এক টার চোখে ভীষণ জোরে ঘুষি মারলো , কিন্তু আর এক জন এর লাথির হাত থেকে বাঁচতে পারলো না । দরজার উপর খুব জোরে ছিটকে পড়লো । পরিকল্পনা মতো সুযোগ পেয়ে আমি ও আমার স্ট্যাচু বন্দুক থেকে একটি গুলি যার চোখে কার্তিক ঘুষি মেরেছিলো তার দিকে চালিয়ে দিলাম । লোক টি সাথে সাথে স্ট্যাচু হয়ে গেলো । আর এক জন লোক হতচকিত হয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো,বন্দুক টা গেলো হাত থেকে ছিটকে । পড়লো নাকে একটা বিশাল জোর ঘুষি । নাক ফেটে রক্ত পড়তে লাগলো, আর একটা ঘুষি মারার আগেই কার্তিক এর বিশাল জোর লাথি তাকে ছিটকে দিলো আমার উপর থেকে , কিন্তু লোকটি দ্রুত উঠে পালতে গেলে রাতুল বন্দুক টি তৎক্ষণাৎ তুলে নিয়ে গুলি মারলো বটে , কিন্তু লোক টি নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো । আমার নাক ফেটে রক্ত বেরোতে দেখে , কার্তিক মাথা গরম করে ওদের কে মারতে যাচ্ছিলো , যা হোক করে ওকে আটকালাম । বললাম এবার ওরা আরো তৈরি হয়ে আসবে ।

নাকে একটা রুমাল চাপা দিয়ে ,কিছুক্ষন চেপে থাকতে রক্ত টা বন্ধ হলো । রাতুল এর হাত থেকে বন্দুক টা নিয়ে বললাম, এবার তিন জন কেই ওই চাদর এর তোলাই লুকোতে হবে । চাদর টার ম্যাজিক টাই হলো কেউ এটি কে দেখতেই পাবে না আর বুঝতেই পারবে না আমরা কেউ এখানে আছি । তিন জন এ মিলে দরজার কাছে লুকিয়ে পড়ার আগেই স্ট্যাচু হয়ে থাকা গুন্ডা টাকে ভালো করে বেঁধে , মুখ বন্ধ করে একটু আড়াল করে রাখলাম । ২ গুন্ডা আবার ফিরে এলো । দুটো কে বাগে পেয়ে কার্তিক আমার কোনো বাঁধা না শুনেই , ঝাঁপিয়ে পড়লো,একটা কে জোরে লাথি মারলো , সে একটু দূরে ছিটকে পড়তে আমি গুলি চালাতে গেলাম , নাকে লাগাই চোখে একটু কম দেখছিলাম কিনা জানিনা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলো । লোক টা উঠে এসে আমার হাতে ভীষণ জোরে একটা লাথি মারলো , আমার হাত থেকে ছিটকে পড়লো বন্দুক টা । এর পর আমাকে মারতে এলে , রাতুল জোর করে আমাকে ঠেলে দিয়ে লোক টার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ।রাতুল মার খাচ্ছে দেখে কার্তিক কে ডাকতে গিয়ে দেখলাম, কার্তিক আর এক টাকে বাগে এনে ফেলেছে , নিজের মতো করে তার নাকে মেরে নাক ফাটিয়ে রক্ত বার করে দিয়েছে ।কার্তিক এর থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাতুল কে বাঁচাতে যাবো দেখি পা এর কাছেই বন্দুক টা পরে আছে । আর সময় না নিয়ে চালিয়ে দিলাম । স্ট্যাচু হয়ে গেলো লোক টা । কার্তিক প্রায় জোর করেই তুলতে হলো লোক টার উপর থেকে । মেরে প্রায় আধমরা করে দিয়েছিলো লোক টা কে । ২ টা কে ভালো করে বেঁধে , আমরা পরবর্তী আক্রমণ এর জন্য তৈরি হতে লাগলাম ।

এবার আমি পাথর টা কে তুলে নিয়ে রাতুল এর হাতে দিলাম , বললাম , খুব সাবধানে রাখবি , যেন কিছু না হয় ।নিজে বন্দুক হাতে নিয়ে ,কার্তিক বললাম এগিয়ে যেতে । গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে , একটু এগিয়ে গেলে আমার শোবার ঘর । মহিলা টি কে ওই ঘরে বেশ জোরে কথা বলতে দেখলাম কারোর সাথে , সুন্দর সুযোগ পেয়ে সবে বেরোতে যাবো, হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লাম ।ঘরের মধ্যে মেয়ে টি যার দিকে বন্দুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা আর কেউ নয় রথীনবাবু । কার্তিককে বললাম , "কার্তিক , আমি যেতে পারবো না , রথীনবাবু এখানে ।"

কার্তিক আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে খুব দ্রুত গিয়ে মহিলাটির হাতে একটা লাঠি দিয়ে সজোরে মারতে বন্দুক টি খসে পড়লো ।হাতে খুব জোরে লাগাই মহিলা টি পিছনে বেশ অনেক টাই সরে গেলেন । কিন্তু তাতেও মহিলা দমে গেলেন না , বললেন "প্রফেসর সাম্য আপনি পাথর টা দিয়ে দিন, যারা এটা নিতে চাইছে তারা সাংঘাতিক লোক , আমাদের জব্দ করলে ও তাদের পারবেন না । ", উত্তর এ বললাম , "চিন্তা করবেন না , আমি বিজ্ঞান এর সাধক , যেটা সঠিক মনে হয়, সেটা করতে পিছপা হয়না । " কথা বলতে বলতে মহিলাটি কখন হাতে করে একটি ফুলদানি নিয়ে কার্তিক কে মারতে যাচ্ছিলো , সাথে সাথে আমার বন্দুক গর্জে উঠলো ,স্ট্যাচু হয়ে গেলো ঋতুপর্ণা দেবী ।এই প্রথম কোনো মহিলার উপর এই বন্দুক টি চালালাম , কিরকম যেন লাগছিলো নিজের মধ্যে । কিন্তু তারপর মন কে বোঝালাম , অন্যায় যে করে সে পুরুষ হোক আর মহিলা , শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে'।

চার জন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়লাম ,সকাল থেকে কেউ কিছু খাই নি , তাই রাতুল কে বললাম একটা রেস্টুরেন্ট এ চল , আগে কিছু খাই । আর রথীনবাবু কে সব কিছু জানানো ও ভীষণ দরকার । রেস্টুরেন্ট এ এসে লুচি তরকারি দিতে বলে রথীনবাবু কে পুরো ব্যাপার টা বললাম । তিনি পাথর টা হাতে নিয়ে বললেন, "এটি সৌরজগতের কোনো দূর প্রান্ত থেকে এসেছে , আমি তো ভাবতেই পারছি না ।" , বললাম , "কাজেই ওই কারেন্ট খেলে যে আপনার মা সুস্থ হবে এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই , কিন্তু তাও আপনি যদি চান , আমি ব্যবস্থা করতে পারি । কিন্তু আমার মনে হয়না এসব করার দরকার আছে । "

রাজি হলেন রথীনবাবু । বললেন, "আপনার কথা মতো ওটি সমুদ্রের জলেই ভাসানো হোক ।" রাতুল বলে উঠলো , "তাহলে তো আমাদের দিঘা যেতে হবে স্যার ।" বললাম , "ঠিক ই বলেছো , তবে দিঘা নয় ,তাজপুর , অনেকটা খালি থাকে , রাতের দিকে ভাসিয়ে দেয়া যাবে । তবে কাজ টা খুব দ্রুত করতে হবে । কারণ পাথর টা বা ক্ষুদ্র প্রাণী গুলোর আয়ু আর বেশি দিন নয় । " রাতুল বললো , "স্যার আমি সব ব্যবস্থা করছি ।" কিছুক্ষন এর মধ্যেই রাতুল জানালো , "স্যার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে, আজ ১১টা তে ট্রেন , এখন ৯ টা বাজে বাজে , এই ২ ঘন্টা কোথাও গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে । " বললাম , "কোথাও গা ঢাকা দিতে হবে না , গাড়ি ধরে হাওড়া স্টেশন চলো, অত লোকের মাঝে কিছু করতে পারবে না আমাদের । আর তাছাড়াওটা হাওড়া স্টেশন পুলিশ ঘেরাটোপ এ থাকে । "

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ই একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম, উঠে পড়লাম সবাই হাওড়া স্টেশন এর উদ্দেশ্যে । খুব এ ক্লান্ত ছিলাম , সবাই এ রাত জাগা , তাই গাড়ি যখন দৌড়োতে শুরু করলো , কখন যেন চোখ টা বুজিয়ে গেছিলো । কার্তিক এর ডাকে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম ,কার্তিক বলছে , "স্যার দেখুন রাস্তা কিরকম অন্য রকম লাগছে , এটা তো হাওড়া স্টেশন এর রাস্তা নয় । " হঠাৎ দেখলাম , গাড়িটা একটা গলি রাস্তা ধরে খুব জোরে চলতে শুরু করলো , জোরে চেঁচিয়ে বললাম, "দাদা কোথায় যাচ্ছেন ? " ড্রাইভার টা কোনো উত্তর না দিয়ে একটা বড় গেট এর সামনে এসে থামলো । প্রতিবাদ করার আগেই , দেখলাম দুটো ষন্ডা মার্কা লোক গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে ।

আমি একটু রাগ দেখিয়ে বলে উঠেছি, "এসব কি হচ্ছে ?" বলতেই মুখে একটা সপাটে চড়এসে পড়লো ,মাথাটা কেমন ঘুড়ে গেলো, সেই মুহূর্তে দেখলাম , কার্তিক ঝাঁপিয়ে পড়লো লোক দুটোর উপর , দু জন এর সাথে বিশাল মারপিট হতে লাগলো , কিছুক্ষন হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম , যে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো ,তাকে কার্তিক প্রায় শুয়ে ফেলে ঘুষি মারছিলো , আর এক জন অনেক চেষ্টা করে ও কার্তিক কে ছাড়াতে পারছিলো না । আরো ২ জন এগিয়ে এলে, তাদের কে এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে কার্তিক দৌড় মারলো, কে এক জন ভিতর থেকে বললো ধরে আন ওটাকে যেন পালাতে না পারে ।

কার্তিক যে এতো টা ভালো সামাল দিতে পারবে ওই রকম গুন্ডা গুলো কে তা আমি স্বপ্নে ও ভাবিনি ।

আমাদের কে আরো দু জন লোক এসে ভিতরে নিয়ে গেলো । ভিতর থেকে আওয়াজ এলো, "বসুন প্রফেসর সাম্য , আপনার কথা অনেক শুনেছি , আজ চাক্ষুস করতে পারলাম । নমস্কার আমার নাম রামনাথ বাবা ,এরা সব আমার চেলা । " বললাম "কি চান আপনারা?" ,উত্তর এলো "ওই পাথর টা ।", বোঝানোর একটা চেষ্টা করলাম, "কিন্তু আপনারা ওই পাথর টা নিয়ে যা করতে চাইছেন টা বেশি দিন করতে পারবেন না । পাথর টার আয়ু বেশিদিন নয় ।"রামনাথ বাবা বললেন , "আপনি কি আমাকে বোকা পেয়েছেন প্রফেসর সাম্য । পাথর ভালো কোথায় দিয়ে দিন, না হলে নিজের মৃত্যুর জন্য তৈরি হন । " বলেই বন্দুক উঁচিয়ে গুলি মারলো বাবা রামনাথ ।

মৃত্যু নিশ্চিৎ জেনেই চোখ প্রায় বুজিয়ে ফেলেছিলাম, হঠাৎ কেউ আমার গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পরে আমাকে দূরে ঠেলে দিলো । তাতে বাবার চালানো গুলি টা আমার কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো । আর মুহূর্তের মধ্যে কোনো এক অনেকটা সিনেমায় দেখা ক্যারাটে প্যাঁচ দিয়ে বাবার চারপাশে থাকা ৩ চেলা কে কুপোকাত করে দিলো কার্তিক । একটু ঘাবড়ে গিয়ে গুলি চালালো বাবা , কিন্তু কার্তিক এমন কায়দা করে সরে গেলো যে গুলি গিয়ে লাগলো বাবার এক ছেলের গায়ে ।বাবা সাথে সাথে আর একটা গুলি চালালো , এটা সরাসরি লাগলো , কার্তিক এর গায়ে ,ছিটকে পড়লো কার্তিক, কার্তিক পায়ে আরো একটা গুলি করে, বাবা এবার এবার খুব দ্রুত পায়ে আমার দিকে এগোতে লাগলো , সবে গুলি মারতে যাবে , রাতুল সামনে এসে পাথর টা বাড়িয়ে দিলো, বললো "এই নিন আপনার পাথর ।", পাথর হাতে পেয়ে আর তার ওরকম অদ্ভুত রূপ দেখে , লোভী বাবার চোখ মুখ পরিবর্তন হয়ে গেলো । আমি সেই সুযোগ এ দৌড়ে গেলাম, কার্তিক এর কাছে । তাকে কোলে তুলে নিলাম । কার্তিক ঘাড় নাড়িয়ে বললো, "পারলাম না বাবু ।" , কিছুক্ষন এর মধ্যেই , "বিশাল একটা আর্তনাদ করে পড়ে গেলো বাবা , হাত থেকে ছিটকে গেলো পাথর টা ।" তখন পকেট থেকে বন্দুক বার করে , রাতুল তার দুই চেলা কে স্ট্যাচু করে দিলো । রাতুল বললো , "স্যার আমি আপনার যন্ত্র টা দেখেছিলাম , আমার হিসাব মতো ওই ঘুরতে থাকা বস্তু টি যখন পাথর টির সব থেকে কাছে আসে , তখন ই ওদের এই অস্ত্র টি সব থেকে বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে । আর আমার হিসাব মতো আজ এরকম সময়তে ই ওটা সব থেকে কাছে আসার কথা । তাই একটা চেষ্টা করলাম মাত্র । " বলে উঠলাম , "সাবাস রাতুল।"

পাথর টি কে নিয়ে , কার্তিক কে ধরে ওই খতরনাক বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা । রথীনবাবু পুলিশ কে ফোন করে সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স আনালেন , আর বাবার সব চেলা গুলো কে পুলিশ এর হাতে তুলে দিলেন ।

আমি বললাম , "রথীন বাবু অনেক ধন্যবাদ , আপনি কার্তিক কে হাসপাতাল এ নিয়ে যান, আমি আর রাতুল গিয়েএই পাথর টাকে সমুদ্রে ভাসিয়ে আসি । ", সাথে সাথে গাড়ি ধরে আমরা হাওড়াস্টেশন এর উদ্দেশ্যে চলে গেলাম ।

সন্ধেবেলা উপযুক্ত সময় দেখে পাথর টিকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলাম, রাতুল পারে দাঁড়িয়ে পাহারা দিছিলো । পাথর টিকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবার মুহূর্তে খুব ইচ্ছা করছিলো ওই ক্ষুদ্র জীব গুলো কি বলছিলো শুনতে , কিন্তু উপায় নেই শোনার । কিন্তু তাও যেন মনের মধ্যে একটা অনাবিল আনন্দ খেলে গেলো । যা অবর্ণনীয় ,কোনো দিন হয়তো কাউকে ভালো করে বোঝাতে পারবো না , কেন এরকম করলাম । একজন বিজ্ঞানের সাধক হিসাবে উচিৎ ছিল ইসরো বা নাসা এর হাতে পাথরটি তুলে দেয়া ।সৌরজগতের কত গোপন রহস্য হয়তো তারা জানতে পারতো ওই পাথরটির থেকে । কিন্তু মন সাই দিলো না , ওই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলোর আকুতি মনের ভিতর কে বেশি করে নারা দিয়ে গেলো । তাই বিজ্ঞান সত্তার থেকে ও মনুষ্যত্ব অনেক বড় হয়ে উঠলো । আজ কের যেখানে বিজ্ঞান কে ভুল পথে চালিত করে , মারণাস্ত্র বা মরণ রোগ তৈরি করা হচ্ছে , হত্যা করা হচ্ছে লাখে লাখে জীব এমনকি মানুষ ও , সেখানে আমার দেখানো এই সামান্য মনুষত্ব টা না হয় দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো ।


Rate this content
Log in