Sutanu Sinha

Drama

3  

Sutanu Sinha

Drama

রাজনীতি ও প্রেম অষ্টম কিস্তি

রাজনীতি ও প্রেম অষ্টম কিস্তি

13 mins
1.8K


রাতুল

এই সময় ই হঠাৎ ফোন আসায় ভীষণ বিরক্ত হলো রাতুল । সবে ডাক্তার বলে গেছে যে কোনো সময় সুবীর এর জ্ঞান ফিরতে পারে । এই সময় কোনো ফোন ধরতে এমনিতেই ইচ্ছা করছিলো না রাতুল এর । ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো সুনেত্রার ফোন , সুনেত্রা এখন কেন ফোন করলো ? ও কারখানায় থাকলে তো ফোন করে না । ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই , ওদিক দিয়েএকটা ভীষণ ভারী পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো , "কি করবে এখন তুমি সুনেত্রা ?", ক্রস কানেকশন হয়ে গেছে ভেবে সবে ফোন টা রাখতে যাবে হঠাৎ নিজের নাম শুনতে পেয়ে থমকে গেলো সে । ওই পুরুষ কণ্ঠ বলে চলেছে , "তোমাকে আজ কে বাঁচাবে ? ওই সালা রাতুল কে ভালোই ফাঁসিয়ে দিয়েছি ।ওর বন্ধু টাকে ও মেরে ফেলেছি । পার্টি তে ও কোনঠাসা করে দিয়েছি ।বেটা আমার সাথে লাগতে এসেছিলো । " এবার সুনেত্রার গলা শুনতে পেলো সে , "আর শ্রমিক গুলো কি দোষ করলো ? ওদের কেন আগুন এ পুড়িয়ে মারতে চাইছেন ?ওরা তো আপনাকে বিশ্বাস করে এগিয়ে এসেছে । " লোক টা আবার বলে চললো , "ওরা আমার রাস্তার কাঁটা , তবে সব শ্রমিক দের মারবো না আমি , যারা আমার সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের কে মাস মাইনে দিয়ে রেখে দেব, এমন কি আগে যা পেত তার থেকে বেশি দেব । আমার ব্যবসার রীতি তাকে মেনে নিতে হবে ।" রাতুল বেশ বুঝতে পারছে এই পুরুষ গলাটা কার , সুনেত্রা ঘোরতর বিপদ এ , রাতুল কে এখুনি ই কিছু করতে হবে । কিছু মাথায় আসছিলো না কি করবে সে । লোকটা আরো কিছু বলে চলছিল পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিলো না , পাশের একটা চা এর দোকানে খুব বাজে ভাবে পুরোনো কোনো গানের রেকর্ডিং বাজাচ্ছিল । একটু দূরে সরে এলো রাতুল কথা গুলো ভালো করে শোনার জন্য । তখন এ মাথায় খেলে গেলো রেকর্ডিং শব্দ টা , মাথায় এলো এখুনি এই ফোন এর সমস্ত কথা সে রেকর্ড করবে । সাথে সাথে রেকর্ডিং অপসন টা চালু করে দিলো রাতুল । এবার ওদিক দিয়ে সুনেত্রার গলা ভেসে এলো , "কি ব্যবসা আপনার যাতে এই গরিব শ্রমিক গুলো না করতে পারে ? যারা না করবে তাদের কে আপনি কেন মারতে চাইছেন ?" হেঁসে উঠলো ওই বদমাস মালিক , "যখন তোকে দিয়ে আমার এখানকার ব্যবসা শুরু হবে তখন তোকে সব বলতে কোনো আপত্তি নেই । আমি মেয়েদের বেচা কেনার ব্যবসা করি । আর তাদের মধ্যে কাউকে পছন্দ হলে আমি তাকে একটু উপভোগ করে নিয়ে তবে বেচি । এই ব্যবসায় যে সব শ্রমিক সাহায্য করতে রাজি আছে তাদের আমি কিচ্ছু হতে দেব না । " লোকটির ইঙ্গিত স্পষ্ট বুঝতে পারছে রাতুল , দৌড়োতে শুরু করলো সে স্কুটার এর কাছে , যে ভাবেই হোক সুনেত্রা আর শ্রমিক দের বাঁচাতে হবে । সুনেত্রা আবার বলে উঠলো , "ছিঃ ছিঃ আপনার লজ্জা করে না , এসব কাজ কর্ম করতে , অফিস এর বাকিদের সব কিছু পরিষ্কার করে বলেছেন ? তারা রাজি হয়েছে এসব কাজে ? " লোকটা বলে চললো , "ও তোমার ওই সব বোকা স্টাফ গুলো , ওদের তো জানার দরকার নেই ,ওরা তো শুধু টাকার হিসাব করবে আর আকাউন্ট দেখবে । এই তোকে কেন এতো হিসাব দিতে যাবো । বড়কথা বলিস তো তুই । " রাতুল শুনতে পাচ্ছে সুনেত্রা বলে চলেছে , "আমার কাছে আপনি আসবেন না , আমাকে স্পর্শ করলে তার ফল ভালো হবেনা ।" লোকটার অট্টহাসি ভীষণ ভাবে কানে বাজতে লাগলো রাতুল , খুব তাড়াতাড়ি স্কুটার চালাতে লাগলো সে । ফোন কিছুক্ষন নানা রকম শব্দ , আর চিল্লানোর আওয়াজ হয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলো , রাতুল গাড়ি টাকারখানা থেকে একটু দূরে রেখে কারখানার পিছনের জঙ্গলে এসে দাঁড়ালো । ওই বুড়োদার নাতি সেদিন একটা কথা বলেছিলো , যে ঘরে সুবীর কে বন্দী করে রেখেছিলো সেই ঘরে একটি সিঁড়ি আছে, যা কিনা ওই উপরের ম্যানেজমেন্ট এর ঘরের একটা পার্সোনাল ঘরে উপস্থিত হয়, আর ওই পার্সোনাল ঘর টা যে মালিক এর ঘর সেটা রাতুল ভালো করেই জানে । হাতে খুব একটা সময় নেই রাতুল এর , এমন কি সে দেরি করে ফেলছে কিনা সেটা ও জানেনা । যেমন করে হোক ওই ঘর টাই যাওয়া ভীষণ দরকার । গায়ে মেখে নিলো সেই অদ্ভুত পাতার রস । পকেট থেকে বার করে নিলো টর্চ , আর হাতে নিলো একটা মোটা শক্ত লাঠি । নিজেকে মোটামুটি তৈরি করে নিয়ে এগিয়ে চললো সে । হঠাৎ এ ফোন টা বেজে উঠলো রাতুল , তাড়াহুড়ো করে ফোন টা ধরতেই ওদিক দিয়ে অরিজিৎ এর গলা ভেসে ও এলো , ৩টা খারাপ খবর আছে ভাই , তোর সুনেত্রা বেশ বিপদে , মালিক এর কুনজর এ পড়েছে সে , আজ কিছু হতে পারে ওর , দ্বিতীয় ,গরিব শ্রমিক দের পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেছে ওই মালিক , আর তৃতীয় ,তোর অনুপস্তিতে কোনো প্রমান ছাড়া সুবীর কে মারার জন্য লোক লাগানো হয়েছে ।শুধু তৃতীয় সম্যসা টা তে আমি তোকে কিছুটা সাহায্য করতে পারি । তাও আজ কের দিন টা র জন্য , বাকি গুলো তোকে নিজেকেই সামলাতে হবে রাতুল । শুধু একটা কথা জানাই তোকে বান্টি লোকেরা দায়িত্ব নিয়েছে আগুন লাগাবার , আগুন তো ওদের লাগাতেই হবে ,ওরা শুধু চাইছে যেন কেউ মারা না যাই । আমি কিছুই করতে পারবো না বোলাতে বান্টি তোর নাম বললো , তাই তোকে সব জানালাম , বান্টি নম্বর টা পাঠিয়ে দিচ্ছি, কথা বলে নিস । এতো গুলো কথা বলে রাতুল এর উত্তর এর অপেক্ষা না করেই ফোন রেখে দিলো অরিজিৎ । কিছুক্ষন এর মধ্যেই মেসেজ চলে এলো রাতুল এর ফোন , বান্টি এর নম্বর রয়েছে তাতে, সাথে লেখা সরি ভাই তোর সাথে যেতে পারলাম না , তুই একাই পারবি তোকে করতেই হবে । ঘর টা র কাছে পৌঁছে গিয়ে চোখ টা বুজিয়ে একটু ভেবে নিলো রাতুল । মোটামুটি একটা পরিকল্পনা ছকে নিলো সে । ফোন করলো বান্টি কে , ওদিক থেকে ফোন ধরে বান্টি বলে উঠলো , "বলুন রাতুল দা কি করতে হবে ?" , এমন ভাবে বললো যেন প্রস্তুত এ হয়েছিল রাতুল তাকে ফোন করে কিছু করতে বলবে । রাতুল ও ওতো ব্যাখ্যায় না গিয়ে সরাসরি বললো , তুমি যে কোনো অছিলায় আগুন টা একটু দেরি করে লাগাবে । বান্টি বলে উঠলো , ঠিক আছে রাতুল দা , আমি অন্তত ১ ঘন্টা সময় দিলাম আপনাকে , এর মধ্যে যে ভাবে হোক আপনি সুনেত্রা ম্যাডাম কে বাঁচান । আর কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে বলবেন । ঠিক আছে , বলে ফোন টা রেখে দিলো রাতুল । এবার লাঠি আর টর্চ হাতে অভিযান শুরু করলো রাতুল । সুবীর এর কথা মনে পড়লেও নিজেকে তার থেকে সরিয়ে রাখলো রাতুল , এখনকার মতো সুবীর এর নিরাপত্তা র জন্য অরিজিৎ এর উপর ভরসা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই । এই মুহূর্তে প্রধান উদেশ্য সুনেত্রা আর শ্রমিক দের বাঁচানো । চোখ বুজিয়ে নিজেকে আর এক বার ভালো করে তৈরি করে নিলো সে । তারপর টর্চ জ্বালিয়ে ঢুকে পড়লোওই অন্ধকার কূপ এর মধ্যে । টর্চ এর আলোয় কোথাও ই সে দেখতে পাচ্ছিলো না ওই সিঁড়ির শুরু । হঠাৎ মাথায় এলো সুবীর যে জায়গা টাই পড়েছিল ওখানে তো কেউ এসে ফেলে দিয়ে যায়নি ।নিশ্চই উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল । এটা মাথায় আসতেই সময় নষ্ট করলো না রাতুল , বস্তা গুলো সরাতে শুরু করে দিলো , কিন্ত এতো পচা গন্ধ ছাড়ছিল বাধ্য হয়ে নাকে একটা রুমাল বেঁধে নিলো রাতুল , বেশি নয় ২ -৪ টা বস্তা সরাতেই সিঁড়ির দেখা পেলো সে । কিন্ত সিঁড়িটা ওঠার জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না , যাহোক করে লাঠি দিয়ে ধরে ধরে উপরে উঠে এলো সে । এই কারখানার মধ্যে এরকম যে একটা মৃত্যু কূপ ঠেকতে পারে কখনো ভাবতেই পারেনি রাতুল ।


সিঁড়িরউপরে এসে ও কোনো বেরোবার রাস্তা দেখতে পাঁচিল না সে । অনেক ক্ষণ টর্চ মেরে খোঁজার পর , টর্চ বন্ধ করে আলোর উৎস বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো , তখন ই একটা কাঠের পাটাতন মতো নজরে এলো তার , সেখান থেকে একটা ক্ষীণ আলো আসছিলো । সে দিকে এগিয়ে গিয়ে পাটাতন কে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো সে , কিন্ত কিছু তে যেন আটকে যাচ্ছিলো পাটাতন টা বার বার । একটু শান্ত ভাবে ভাবলো রাতুল , টর্চ লাইট টা দিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো সে , উপরে একটা ছিটকিনি র মতো কিছু দিয়ে আটকানো আছে, সেটা বাইরে থেকে খোলা সম্ভব নয় ।ছিটকিনি জায়গাটা ভালো করে দেখতে লাগলো রাতুল , তখন এ মাথায় এলো তার হাতের ঘড়িতে থাকা চুম্বক টির কথা , বেশ আর দেরি না করে ঘড়ি টা কে লোহার ছিটকিনি কাছে নিয়ে যেতেই ওটা ছিটকিনি টা কে আকর্ষণ করলো , এর পর কাজ টা ছিল শুধু সরানোর । বেশ খুলে গেলো পাটাতন । যদিও এই ভাবে পাটাতন টা কে খোলা যেত না , যদিনা ছিটকিনি অবস্থা এতো খারাপ না হতো । পাটাতন সরিয়ে বেরোতেই পুরোনো শীতমান নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটি প্রায়গায়েরউপর এসে পড়ার উপক্রম হলো, কোনো ভাবে নিজেকে সেখান থেকে বার করলো রাতুল । তারপর এসে পড়লোএকটা ছোট বারান্দা মতো জায়গায় তার ও যা অবস্থা অনেকদিন এখানে কেউ যে এসেছে বলে মনে হয়না ।বারান্দা টিতে দু বার হাঁটতেই বারান্দার ওপারে ২ তো ঘর যে আছে অনুভব করতে পারলো রাতুল । আর যদি বুড়োদা র নাতির কথা ঠিক হয় ,তাহলে এটাই ম্যানেজমেন্ট এর ঘর , আর পাশের ছোট টা মালিক এর । তার মানে এই ঘরেই আছে সুনেত্রা । একটু শান্ত হয়ে কান পাততেই রাতুল শুনতে পেলো মালিক এর ঘর থেকে খুব জোরে মিউজিক ভেসে আসছে । তাতে একটা সুবিধা হলো রাতুল এর জোরের উপর কিছু আওয়াজ করলে ও শব্দ শুনতে পাবে না হারামজাদা রা । দু টা দরজার একটা বিশেষত্ব লক্ষ করলো রাতুল , নিচের দিক টা কিছুটা কাঁচের , আর প্রথম দরজা যেটা কিনা রাতুল এর মোতে মালিক এর ঘরের , সেটা তে তো কাঁচ টা কিছু টা ভঙ্গুর হয়ে গেছে । রাতুল দেরি না করে ওই সবথেকে কাছের দরজা নিচের কাঁচ টা তে খুব জোরে জোরে আঘাত করতে থাকলো শক্ত লাঠি দিয়ে ।অপোক্ত কাঁচ বেশিক্ষন এই আঘাত নিতে পারলো না , কিছুক্ষন এর মধ্যেই দরজার তোলা টা ফাঁকা করে ফেললো রাতুল । যাহোক করে নিজের শরীর গলিয়ে ফেললো ওর মধ্যে , না এটা মালিক এর ঘর নয় ,মালিক এর ঘরের বাথরুম এ এসে পৌঁছালো রাতুল । এবার সামনে শুধু বাথরুম এর পলকা দরজা , খুব জোরে একটা লাঠি মারতেই বাইরে লাগানো লগ ছিটকে গিয়ে পড়লো মালিক এর টেবিল এ , আর সেই ঘরে প্রবেশ করলো রাতুল । ঢুকেই দেখতে পেলো , কিছুটা অবিন্যস্ত অবস্থায় মেঝে তে পড়ে আছে রাতুল এর ভালোবাসার সুনেত্রা , আর শয়তান মালিক হয়তো জোর করে ওর উপরেই ছিল, রাতুল এর হঠাৎ প্রবেশ এ চমকে উঠে ওকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো "কে ওখানে ?", তখন এ সুনেত্রা বলে উঠলো , "রাতুল তুমি ?" , বেশ ভয় পেয়ে গেলো শয়তানটা , দৌড়ে গিয়ে বাইরে থাকা ভোম্বল আর তনয় ডাকতে যাচ্ছিলো সে , রাতুল তখন ই হাতে থাকা লাঠি টা কে খুব জোরে ছুঁড়েদিলো শয়তান টা র দিকে ,হোঁচট খেয়েপরে গেলো সে , আর এই সুযোগ টা কে কাজে লাগিয়ে ,সুনেত্রা ও তার কাছে থাকা শক্ত তালা টা দিয়ে বিশাল জোরে আঘাত করলো ওই লোক টা র মাথায় ,মাথা ফেটে রক্ত পড়তে লাগলো ঝড় ঝড় করে, সামনে এতো রক্ত দেখে জ্ঞান হারালো শয়তানটা । সুনেত্রা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো রাতুল কে । এ ভাবে কাউকে জড়িয়ে ধরে যে চরম শান্তি পাওয়া যাই, তা আগে যেন কোনো দিন অনুভব এ করেনি রাতুল । আজ কোনো ভাবেই নিজেকে রুখতে পারলো না রাতুল , সুনেত্রার কানের কাছে গিয়েসে বলে ফেললো , "আমি তোমাকে ভীষণ ভালো বাসি সুনেত্রা ।", ওদিক দিয়েও জবাব এলো খুব মৃদু শব্দে , "আমি ও ।" দুই প্রেমিক যুগল যেন জায়গা পরিস্তিতি সব ভুলে গিয়ে ,একে অপরকে প্রেম নিবেদনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ।কতক্ষন যে নিজেরা এভাবে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তা নিজেরাই জানেনা । হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো রাতুল এর ফোন বেজে ওঠায় ,বান্টি ফোন করেছে । ওকে দেয়া সময় শেষ হয়ে এসেছে, ফোন টা ধরে রাতুল বললো , আমাকে আর ১০ টা মিনিট দিতে পারবে বান্টি । আমি শ্রমিক দের কে ও বাঁচিয়ে দেব । বান্টি বললো , ঠিক আছে রাতুল দা ১০ মিনিট দিলাম । ফোন টা রেখেই রাতুল এক বার সুনেত্রা র দিকে তাকালো আর বললো , ভাবছি শ্রমিক দের কে বলি ওরা যা বলছে বিনা প্রতিবাদ এ মেনে নিতে , তাহলে ওদের কে ওরা মারবে না । কি বলো ? সুনেত্রা বললো , এক দম ঠিক ভেবেছো রাতুল দা , এখুনি ওদের কে জানিয়ে দাও । রাতুল ফোন লাগালো বুড়োদা কে জানিয়ে দিলো ওরা যাই বলুক সমস্ত শ্রমিক রা যেন মেনে নেই , আর যত দ্রুত সম্ভব কারখানা থেকে বেরিয়ে যাই । ফোন টা সবে রেখে নিজেরা কি করে বেরোবে ভাবতে শুরু করবে , তখন এ দরজায়কেউ টোকা মারতে শুরু করলো , ওপার থেকে ভোম্বল দার গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, স্যার এবার বেরোতে হবে , বান্টি যে কোনো সময় কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেবে, এখানে থাকলে ফেঁসে যাবো । ভোম্বল এর স্যার এর দিকে এক বার দেখে নিলো রাতুল , সুনেত্রা মারের জোর এতটাই ছিল বেটার জ্ঞান ফেরার কোনো লক্ষন ই নেই । সুনেত্রা কে ওই মৃত্যুকূপ এর মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব । খুব দ্রুত একটা পরিকল্পনা করে ফেললো রাতুল , প্রথমে দরজার গোপন গর্ত দিয়ে বুঝে নিলো ভোম্বল আর তনয়এর অবস্থান । তনয়কে সে কোথাও দেখতে পেলো না , কিন্ত ভোম্বল কে পেলো , দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সুনেত্রা কে ডেকে রাতুল বললো , সুনেত্রা তুমি কতটা দৌড়োনোর মতো ক্ষমতায় আছো ? সুনেত্রা জানালো , পুরোপুরি রাতুল দা , ওই বুড়ো আমাকে কোনো ভাবেই আমাকে কাবু করতে পারে নি । রাতুল বললো , খুব ভালো কথা , শোনো বাইরে আমি তনয়কে দেখতে পেলাম না , শুধু ভোম্বল দা আছে, আমরা এই বুড়োর দেহ টা দরজার সামনে রেখে প্রথমে দরজার আড়ালে দাঁড়াবো ,বুড়োরএরকম অবস্থা দেখে ভোম্বল একটু হলে ও চমকাবে , সেই মুহূর্ত তাকে কাজে লাগিয়েএ আমাদের পালতে হবে । বাইরের দরজা খোলা আছে, দু জন এই ওই দিকে দৌড়োবো ,কারখানার গেট এ না পৌঁছনো অব্দি । বোঝা গেলো । সুনেত্রা বললো , আর ভোম্বল দা যদি চিল্লাই , রাতুল বললো , ভয় নেই ,গানের যা আওয়াজ হচ্ছে কেউ শুনতে পাবে না । পরিকল্পনা মতো দরজা খুলে দিয়ে দু জন এ আড়াল হয়ে গেলো , আর রাতুল এর ভাবনা ভুল হলো না , মালিক এর এরকম অবস্থা দেখে ভোম্বল প্রথম এই সেদিকে দৌড়ে গেলো, রাতুল বলে উঠলো রান সুনেত্রা । দৌড়োতে গিয়েও একটু দাঁড়িয়ে পড়লো সুনেত্রা, ধপাস করে দরজা টা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলো সে । ভিতর থেকে ভোম্বল চেঁচিয়ে যাচ্ছে সুনেত্রা দরজা খুলে দে না হলে ভালো হবে না বলছি । সুনেত্রা শুধু বলে চললো , পচে মোর তোরা , আগুন এ পুড়ে জ্বলে শেষ হয়ে যা । বলেই দৌড়োতে শুরু করলো রাতুল এর সাথে , তখন কারখানার এক দিকে আগুন লেগে গেছে , আর সেই আগুন এর লেলিহান শিখা খুব জোরে দৌড়ে আসছে এই ঘর গুলোর দিকে , তার মধ্যে থেকে প্রাণ পোনে এ দৌড়ে বেরিয়ে আসছে দুটি ছেলে আর মেয়ে । সুনেত্রার হাত ধরে বেরিয়ে আসতে আসতে রাতুল এর সত্যি মেয়েটির সাহস কে বাহবা জানাতে ইচ্ছা করছিলো । এরকম এক বিপদ এ পড়লে যেন মেয়ে নিশ্চুপ আর আরো দুর্বল হয়ে যাই , সেখানে সুনেত্রা র চোখে মুখে যেন আগুন জ্বলছে ।অনেক টা ছুটে এসে দু জন এ কারখানার পিছনে রাতুল এর গাড়ির কাছে এসে হাঁফাতে লাগলো । কারখানার অনেকটাই তখন আগুন এ জ্বলে গেছে । দু জন এ খুব হাঁফাতে লাগলো , সুনেত্রা বললো , এক বার যেন শ্রমিক দের সবাই বাঁচলো কিনা । রাতুল ঘাড় নাড়িয়ে নিজের ফোন টা বার করে বুড়োদা কে ফোন লাগালো , ফোন টা ধরেই বুড়োদা বলে চললো , রাতুল স্যার আপনি না বললে তো আমরা মারা যেতাম , কি সব্বোনাশ হতে যাচ্ছিলো । ধন্যবাদ রাতুল বাবু । ঠিক আছে তোমরা যেখানেই থাকো সবাই এক সাথে থাকবে , আলাদা হয়ে ঘুরো না । যদিও বিপদ এর আসল কারিগর আর বেঁচে না থাকায় উচিৎ , তাও সাবধানে থেকো । আমি পরে তোমাদের সাথে দেখা করবো । ফোন টা রেখে সবে গাড়ি চালাতে যাবে আবার ফোন । রাতুল একটু অবাক হলো , সুবীর এর হাসপাতাল এর ডাক্তার । রাতুল ফোন ধরতেই বলে চললেন , তুই কোথায় রাতুল ? কেউ এসে সুবীর এর অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়েছে ,সবে জ্ঞান ফিরছিলো ছেলে তার ও তো এভাবে চললে কোমায় চলে যাবে ।নেহাত আমি তৎক্ষণাৎ দেখতে পেয়েছি তাই এ যাত্রায় বেঁচে গেলো । কেউ ওকে মারার চেষ্টা করছে , তুই কিছু ব্যবস্থা কর । রাতুল খুব শান্ত গলায় বললো, আপনি কিছু চিন্তা করবেন না , সুবীর এর আর কেউ কিছু করতে পারবে না , আমি আসছি এখুনি । ফোন টা রেখে সুনেত্রা কে বললো তুমি আমার সাথে চলো , নিজের জামা টা বদলে নাও , আমাদের এবার সুবীর কে বাঁচাতে হবে । সুনেত্রা কে পিছনে নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো রাতুল , এখন উদ্দেশ্য ২ টো , সুনেত্রার জন্য উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা , আর সুবীর কে বাঁচানো । মনে মনে একটা চোখ কোষেই সে এগোতে থাকলো , যদি তার ভাবনা কে সে সত্যি করতে পারে , তাহলে সে ভালো করেই বুঝে যাবে রাজনীতিতে সে আর কাঁচা খেলোয়াড় নেই । মনে মনে অরিজিৎ , সুজয়দা , তনয় ,ভোম্বল সবার জন্য একটু হাঁসি পেলো রাতুল এর , কিন্ত উপযুক্ত গাম্ভীর্য বজায় রেখে নিজের মনের মধ্যে চলা ভাবনা কে দমন করে রাখাই এই মুহূর্তের আসল কাজ । রাতুল এর মনে পরে গেলো সুজয়দার বলা সেই কথা , রাজনীতিতে পরিকল্পনা করা সোজা কিন্ত সেটা কে সত্যি করে তোলা খুব ই শক্ত ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama