Payel Guha

Crime Thriller

4  

Payel Guha

Crime Thriller

কনফেশন

কনফেশন

4 mins
299



না স্যার, আমি বিকৃত মনষ্ক নই। বিশ্বাস করুন স্যার। আরে, সত্যি বলছি স্যার। মা কালীর দিব্যি! নাহলে এতো বড়ো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করছিলাম কী করে বলুন? আপনিই বলুন? অ্যাঁ! তাইলে খুন গুলো কেন করেছি? আসলে স্যার আমি না খুন গুলো করতে চাইনি স্যার। করতে চাইনি...


অ্যাঁ? ছোটবেলা? অত্যাচার? মানে খারাপ শৈশবের কথা বলছেন? না না স্যার! ছোটবেলা থেকে মা-বাবার বড্ড আদরের আমি। অনেক যত্নে বড়ো হয়েছি‌। কোনো অভাব-ও ছিল না আমার‌‌। হেঃ... হেঃ! কী গুবলেট হয়ে গেলেন? বললাম তো স্যার আমার ও'সব মানসিক-টানসিক সমস্যা নেই।


নাহ্! ,কারোর প্রতি রাগ থেকে বা প্রতিহিংসা থেকে একদম খুন করিনি স্যার। কোনো কারনের জন্য করিনা স্যার‌‌। চলুন তবে কিছু কথা বলি আপনাদের, তখন কত বয়স হবে? পনেরো হবে হয়তো। আমরা মানে আমি আর আমার বন্ধু ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলাম। ন্যাড়া ছাদ! তখন বেলা পড়ে এসেছে, পশ্চিম দিকটা কী গাঢ় লাল! দেখলাম আমার বন্ধুটি একদম ধারে ছাদের। ওর কোনো হেলদোল নেই, ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে কখন যেন এগিয়ে গিয়েছে কোনায়। তখন আমার উচিত ছিল, ওকে ওখান থেকে সরিয়ে আনা। কিন্তু, জানেন স্যার, হঠাৎ আমার বড্ড ইচ্ছে করলো একটা ধাক্কা মারতে... সে এক বিভৎস ইচ্ছে স্যার। পারছিলাম না জানেন নিজেকে আটকাতে। এগিয়ে গেলাম, দু'হাত এগিয়ে গেল আমার অজান্তে, কিন্তু হাত দুটো ওকে পিছিয়ে আনলো না। বরং একটা জোড়াল ধাক্কা দিল‌। বিভৎস চিৎকার! তারপর দেখলাম দোতলা থেকে নীচে একটা পাথরের উপর ও পড়েছে। ওর মাথা পাথরের উপর পড়ে থেঁতলে গিয়েছে‌। রক্তারক্তি ব্যাপার। ভয় পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু, পাইনি, জানেন! বরং, অদ্ভুত একটা আনন্দ ঘিরে ধরছিল। ঠিক, অপরপক্ষের ঘুড়ি কাটলে যেমন আনন্দ হয়, ওমন আনন্দ‌। যদিও কেউ জানে না যে আমি ধাক্কা দিয়েছিলাম। সবাই যদিও ভেবেছিল, ওটা অ্যাক্সিডেন্ট। 


দাঁড়ান স্যার, একটু গলা ভিজিয়ে নিই, অনেকক্ষন কথা বলছি তো। আহ্! শান্তি! হ্যাঁ, কী যেন বলছিলাম? হুম্, মনে পড়েছে। এরপর কয়েকবছর চুপচাপ ছিলাম। একটু হয়তো ভয়-ও পেয়েছিলাম। যদি ধরা পড়ে যাই? বড্ড ইচ্ছে করতো জানেন তো? হাতের সামনে ছুরি থাকলে হাত নিসপিস করতো... তাই, অনেকদিন কাউকে আঘাত না করে নিজেকে আঘাত করেছি। এই যে স্যার দেখুন, আমার হাতের কড়ে আঙ্গুলটা তো আমার হাতেই কাঁটা পড়েছে। বসিয়ে দিয়েছিলাম একদম! কিন্তু, কতদিন আর নিজেকে আঘাত করা যায় বলুন। বেকার, হসপিটালে দৌড়ঝাঁপ পোয়াতে হতো‌। তবে কারোর গলায় যদি ছুড়ি বসাই তাহলে তো আর আমাকে হসপিটালে দৌঁড়তে হচ্ছে না! 


যেমন ভাবনা স্যার, তেমনি কাজ। এরপর থেকে আর নিজেকে আটকাইনি। একদিন আমার বোন বসেছিল। চুড়িদার পরেছিল সেদিন। ওর শিফনের ফিনফিনে ফুলফুল ওড়নাটা কী সুন্দর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ, আমার হাতটা নিসপিস করে উঠলো। একটা অদম্য ইচ্ছে সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলিয়ে দিয়েছিল। আমি এগিয়ে গিয়ে পেঁচিয়ে দিলাম সুন্দর ওড়নাটা ওর গলায়। ছটফট করে উঠেছিল আমার বোনটা। ওকে অত ছটফট করতে কখনো দেখিনি জানেন তো? ও বরাবর বড্ড শান্ত, মিষ্টি। হাজার মারলেও ও কখনো রা কাড়তো না। ওইদিন-ও কাড়েনি।


অ্যাঁ? ধরা? পড়বো কী করে স্যার? সবাই তো ভেবেছিল সুইসাইড? হেঃ..হেঃ ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম তারপর ফ্যান থেকে। 


তারপর স্যার, কখনো মানুষ না পেলে আমার গাড়ির সামনে ভুল করে এসে পড়া বিড়াল পিষে দিয়েছি। কখনো আবার আমার কলিগকে... হি হি... 


শুধু এইবার আপনারা ধরে ফেললেন আমায়। সাক্ষী থেকে গিয়েছিল যে... আসলে বুঝতে পারিনি কখন কাজের মেয়েটা চলে এসেছিল। স্যার, আমি আমার স্ত্রীকে মারতে চাইনি। আমি শ্রীতমাকে বড্ড ভালোবাসি। ও যখন কাল মাংস কাটছিল। আসলে, কাল আমাদের অ্যানিভারসারি ছিল কী না! তাই, আমার পছন্দের চিলি চিকেন বানানোর কথা ছিল। সব ঠিক ছিল, কিন্তু ওকে যখন ওই সেফ নাইফটা দিয়ে মাংস কাটতে দেখালাম! ঠিক সেই এক বিদ্যুৎ খেলে গিয়েছিল আমার শরীরে। হাতটা নিসপিস করে উঠেছিল। তারপর কী যে হলো! ঠিক যেভাবে ও মাংস কাটছিল, ওভাবে... 


একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার ভিতর থেকে। “স্যার! বিশ্বাস করুন আমি না কাউকে খুন করতে চাইনি‌। আপনাকে না বলে বোঝাতে পারবো না! আমার মধ্যে একটা আলোড়ন ওঠে মাঝে মধ্যে। একটা বিদ্যুৎ খেলে যায় শরীরে। আমার হাতটা আমাকে বিট্রে করে। ঠিক যেমন এখন করছে... স্যার, আমি আপনাকে মারতে চাই না স্যার... কিন্তু একটা অদম্য ইচ্ছে জেগে উঠছে যে...”


*               *               *


বিশ্বাস করুন, আমি স্যারকে মারতে চাইনি। আপনারা আমায় বিশ্বাস করুন। আমার হাতটা নিজেই এগিয়ে গিয়েছিল ওনার কন্ঠনালী লক্ষ করে। কেউ পারলো না আমার হাতটা ছাড়াতে। কনষ্টেবলরা চেষ্টা করলো, পারলো না। স্যার, লুটিয়ে পড়ে আছে মাটিতে দেখুন আপনারা! তবে জানেন, ওই নিথর দেহ, ঠিকরে আসা চোখ, চোয়াল বেয়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত দেখে আমার ভালো লাগছে। বড্ড ভয় লাগছিল এই থানার আসার পর থেকে, আমার নার্ভ নিতে পারছিল না। ভয় লাগবে না বলুন? পুলিশে ছুঁলে কত ঘা জানেন তো? তবে এখন মনটা শান্ত হয়েছে। এটার দরকার ছিল। কিন্তু, ওরা বলছে আমি নাকি সাইকো? বিকৃত মনষ্ক! তার জন্য কনষ্টেবলরা আমার হাত বেঁধে দিয়ে গেছে। আমাকে নাকি অ্যাসাইলামে পাঠাবে! আচ্ছা, আপনারাই বলুন আমি যদি বিকৃত মনষ্ক হবো, তাইলে অতো বড়ো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করতাম কীভাবে?  


আমি মারতে চাইনি ওনাকে... আমি কাউকে খুন করিনি, আমি কাউকে খুন করি না। শুধু আমার এক অদম্য ইচ্ছে...


আমি কিন্তু খুনি নই...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime