তোমাকে চাই
তোমাকে চাই
“ভীষন অসম্ভবে তোমাকে চাই...”, এই লাইনটা শুনলেই রিদ্ধিজার বুকটা চিনচিন করে ওঠে। ও চায় একজনকে, ভীষনভাবে চায়; বড্ড নিজের করে চায়। কিন্তু কথাটা তাকে বলতে পারেনি আজও। ও জানে, ও যেটা বলতে চায় সেটা অসম্ভব। কিন্তু মন! মন কী মানতে চায়?এই ভাবনা গুলো ইদানিং আরো বেড়ে গিয়েছে। ও আটকাতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ওর মন বলছে, “বলে দে, মানুক বা না মানুক, অ্যাটলিষ্ট তো তোর আপশোস থাকবে না। আর তাছাড়া বেষ্টফ্রেন্ড হিসেবে তো...”
মনকে চুপ করতে হয়, ছাদে কৌশিকী এসেছে।— কীরে? তুই এখানে?— ভালো লাগছে না— সেকি! কেন? বরের সাথে তো ঘুরতে বেরোলি, তোর তো মন ভালো থাকার কথা...— ধুর! দেখ, তুই তো দেখছিস আমাকে বিগত দশ বছর ধরে, প্রেমে আমার অরুচি। কোনো ছেলের সাথেই আমার সম্পর্ক হল না। আর এখন তো বাধ্য-বাধকতা, ওই দু'দিন পরিচিত ছেলেটার সাথে সারাজীবন একসাথে কাটাব? প্যানিক অ্যাটাক আসছে ভাবলেই, দেখ হাতটা ধরে, ঠান্ডা!
কৌশিকীর মুখের দিকে তাকালো রিদ্ধি, সত্যি মেয়েটা ভয় পেয়ে আছে। কিন্তু কী করবে ও? কাকু-কাকিমা চায়, আর তাছাড়া আর কতদিন একা থাকবে, লাইফে যখন সব কাজ হয়ে যায়, তখন তো বিয়ে করে সেটেল হতেই হয়...কৌশিকীর মুখ দেখে বোঝানোর চেষ্টা করলো, “দেখ! দু'দিন পরিচিত কোথায়, একমাস তো দেখলি। আর তোকে তো কালকেই ধরে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে না”“তাতে কী?”, ঝঁঝিয়ে ওঠে কৌশিকী, “এমন তো নয়, ছ'মাস পর যদি আমার পছন্দ না হয় তবে যেন বিয়ে ক্যানসেল করে দেবে। তুমি জানো না? বাঙালি পরিবার, শালা পাকা কথা হয়ে গেছে, এরপর বিয়ে ক্যানসেল করার সাধ্যি ব্রহ্মার বাপেরও নেই...”রিদ্ধি হাসে কৌশিকীর কথা শুনে। বেজার মুখ করে রিদ্ধির কাঁধে মাথা রাখলো কৌশিকী। আর আপনা থেকেই রিদ্ধির কানে বেজে উঠলো গানটা, “ভীষন অসম্ভবে তোমাকে চাই... শান
্তি-অশান্তিতে তোমাকে চাই...”আচ্ছা কৌশিকী তো সবরকম পরিস্থিতিতেই ওকে পায় তবে এখন ও যদি বলে, “কৌশি! আমি তোকে ভালবাসি। সেই প্রায় সাতবছর ধরে। তোকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে না। আমি চাইও না তুই অন্য কারোর হ্। তুই আমাকে বিয়ে করবি?” তবে কী কৌশিকী না করবে? কিন্তু রিদ্ধি বলতে পারলো না, আজও সাহস পেলো না।
রাত ক'টা হবে? দু'টো কী আড়াইটে। হঠাৎ কৌশিকী শুনতে পায় কেউ যেন ওর নাম ধরে ডাকছে, খুব আস্তে আস্তে। চোখ খুলে তাকাতেই অবাক হয়ে ধরফড়িয়ে উঠে বসে।— তুই? আসলি কীভাবে?— পাইপ বেয়ে, আর তোর চোর ঢোকানো বারান্দা দিয়ে।— হোয়াট? — হ্যাঁ, আর তোকে না কতবার বলেছি দরজা বন্ধ করে শুবি না, যদি আমার মতো আগে কেউ এসে তোকে তুলে নিয়ে যেতো?— চুপ করবি?— পালাবি?— কী?— হ্যাঁ! চল না। তোকে বিয়ে করতে হবে না। চল, আমাদের যা জমানো মাইনে আছে তাতে এক মাস চালিয়ে নিতে পারবো, তার মধ্যে একটা কাজ যোগাড় করে নেবো। আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবি না?— কিন্তু মা-বাবা?— তোর দাদা, আমার বোন আছে তো ওরা সামলে নেবে। আর আমি বাবাকে বলে এসেছি।— কিন্তু...— তুই কী চাস বিয়েটা করতে? আমি আটকাবো না...
ভাবলো কিছুক্ষন কৌশিকী।"আমরা কতবার বলেছি বলতো আমরা একসাথে থাকবো, চল আজ বরং সে ইচ্ছে পুর্ণ করি। তারপর ক'দিন গেলে ফিরে আসবো। মা ততদিনে বুঝে যাবে আমি বিয়ে করতে চাই না। তুই আর আমি... জমে যাবে ", বলে জড়িয়ে ধরলো কৌশিকী।না! বলতে পারলো না রিদ্ধি, “আমাকে বিয়ে করবি?" বরং মনে মনে এতেই খুশি হলো, একসাথে তো থাকা হবে...
তখন ভোর সাড়ে চারটা, বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের প্রথম বাস ছেড়ে দিয়েছে, জানলার পাশে রিদ্ধি, ওকে জড়িয়ে প্রচন্ড এক্সাইটেড কৌশিকী, একটাই হেডফোন ওদের দু'জনের কানে, গান বাজছে—“শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই..."