Payel Guha

Horror Crime Thriller

2.6  

Payel Guha

Horror Crime Thriller

ম্যাজিক পেন

ম্যাজিক পেন

3 mins
189



১/


"রাতের ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে দীপ আর শুভমিতা। অনেকদিন পর একসঙ্গে সময় কাটাল ওরা। ডিনার শেষে দীপ, শুভমিতাকে বাড়িতে ছেড়ে আসার জন্য বেরোয়। অনেকটা পথ, গাড়িতে ওঠার বেশ কিছু সময় পর, শুভমিতাকে বারবার হাই তুলতে দেখে, দীপ মজা করে জিজ্ঞেস করে, “কী? ঘুম পাচ্ছে নাকি?”

— প্রচন্ড।

কথাটা শুনে দীপের ঠোঁটের কোনে মিচকি হাসি ফুটে ওঠে। 


গাড়ি যখন শুভমিতার বাড়ির সামনে পৌঁছালো, ততক্ষনে গভীর ঘুমে ঢলে পড়েছে ও। দীপ গাড়ি থেকে নেমে পায়ে পায়ে গিয়ে শুভমিতার দিকের দরজাটা খোলে। শুভমিতার ঘুমন্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দীপ। একটা ক্রুর হাসি ফুটে উঠল ওর মুখে। ওর মুখে ফুটে ওঠা হিংস্রতা দেখলে মনে হবে যেন ওর মধ্যে কোনো এক শয়তান ভর করেছে...

দীপ ওর দুটো হাত বাড়িয়ে দিতে থাকে শুভমিতার দিকে। শুভমিতার ফরসা গলায় দীপের লিকলিকে আঙুল গুলো চেপে বসতে শুরু করে, শুভমিতার ফরসা মুখটা লাল হয়ে উঠতে শুরু করে,কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রানহীন হয়ে যায়..."


 লেখাটা থামাতে হয় রত্নদীপকে, ওর ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপার থেকে মেয়েলি গলাটা শুনতে পায়, 'এতক্ষনে ফোন ধরার সময় হল? কখন থেকে কল করে যাচ্ছি'


—আরে গল্প লিখছিলাম। জানো তো! এবারের গল্পে তোমার নাম আছে'


হাসির শব্দ শুনতে পায় রত্নদীপ, 'এমনভাবে বলছো যেন আমার নাম দিয়ে কোনো রোমান্টিক গল্প লিখছো!লেখো তো রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প... দেখা যাবে আমার নামের চরিত্রটাকে মেরেই দিলে'


এবার রত্নদীপ 'হো হো' করে হেসে ফেলে।


—শোনো না,বলছি যে, আজ রাতে ফাঁকা আছো?


— হ্যাঁ


— অনেকদিন হলো, চলো না দেখা করি আজ...


— হ্যাঁ চলো। একটানা লিখছি, ভালো লাগছে না...দেখা করা যাক আজ।


২//


খবরের শিরোনাম চলছে, বিখ্যাত লেখক রত্নদীপ সেনগুপ্তের ফিয়ন্সে রাতদুপুরে খুন। গলাটিপে খুন করা হয় তাকে...


ঘরের এক কোনে থম মেরে বসে আছে রত্নদীপ, বড্ড ভেঙে পরেছে ও। ওর কিছু পরিচিত লোক কাছে এসেছে।

পুলিশও এসেছে।


—আপনিই রত্নদীপ সেনগুপ্ত?


মাথা নাড়ায় রত্নদীপ।


—যিনি খুন হয়েছেন অর্থাৎ শুভমিতা চ্যার্টাজী, তাঁর শেষ দেখা হয় আপনার সাথে?'


আবারও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় রত্নদীপ।


— ওনার কি কোনো শক্রু ছিল?


বিহ্বল চোখে তাকায় ও। কোন ভাবনায় অতলে যেন হারিয়ে যায় রত্নদীপ। পুলিশ অফিসার আবারও প্রশ্নটি করলে চমক ভাঙে, মাথা নাড়িয়ে 'না' বলে ও।


— আপনি তো কাল ওনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন, কোনো রকম সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েছিল?


এই প্রশ্নের উত্তরটাও কথা না বলেই দেয়। এরকম আরও কিছু প্রশ্ন করে পুলিশ আশানুরূপ কোনো কথা জানতে না পেরে শেষমেষ চলে যায়। একে একে ওর পরিচিতরাও চলে যায়।

তারপর একা ঘরে ও, ওর লেখার টেবিলের সামনে বসে।

কতক্ষন চুপচাপ বসেছিল ওর খেয়াল নেই‌। ঠক্ করে একটা কিছুর পরে যাওয়ার শব্দে হুশ ফিরতে দেখে পেন পরেছে। পেনটা তুলে টেবিলে রাখতে খেয়াল পরে রত্নদীপের... এটাই তো সেই ম্যাজিক পেন!


৩//


রত্নদীপ ছোট থেকেই শুনেছে, ওর দাদু নাকি মস্ত বড়ো ম্যাজিশিয়ান ছিল। তাঁর ছিল একটা ম্যাজিক পেন। সেটা ওর দাদুর নাকি কেউ তাকে দিয়েছিল; তা ও জানত না। সেই পেন দিয়ে যা লেখা যেত তাই নাকি বাস্তবেও ফলে যেত। ওই পেন দিয়ে ওর দাদু নাকি অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছিল।


পুরোনো বাড়ি বিক্রির সময় এই পেনটা হঠাৎ খুঁজে পায় রত্নদীপ।ছোট থেকে শোনা গল্প গুলো কখনোই বিশ্বাস করতো না ও, তবে পেনটা হাতে পাবার পর পরীক্ষা করে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। ওর দাদুও নাকি খুব ভালো লিখতে পারত, সবাই বলে ওর দাদুর থেকেই নাকি ও এই লেখালেখির গুনটা পেয়েছে‌।

তাই রত্নদীপ, ওই পেন দিয়ে একটা গল্প লেখা শুরু করে। শুভমিতাকে বেছে নিয়েছিল গল্প লেখার জন্য। শুভমিতাকে মনে করেই লিখছিল গল্পটা... আর দীপ- ওর নিজের ডাক নাম।


রত্নদীপের চোখের সামনে খোলা আগেরদিনের লেখা গল্পটা,


"...শুভমিতার ফরসা গলায় দীপের লিকলিকে আঙুল গুলো চেপে বসতে শুরু করে, শুভমিতার ফরসা মুখটা লাল হয়ে উঠতে শুরু করে,কয়েকসেকেন্ডের মধ্যে প্রানহীন হয়ে যায়..."




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror