ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব সাত
ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব সাত
শ্যামাপদ বাবু নেই মানে ! আমরা বিষয়টা বুঝতে পারলাম না। ঘনাদা কেন জানিনা খুব একটা কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সরাসরি ফোন করলো শ্যামাপদ বাবুর নাম্বারে । রিং গেল কয়েকটা তারপর ফোন ধরলেন উনি ।
বলুন মিস্টার সমাদ্দার ...
ঘনাদা পাশে ভৈরব সিং আছে বলে শুধু এটাই বলল যে শ্যামাপদ বাবু ঠিক আছেন কিনা ।
উনি জানালেন সব কিছু ঠিকঠাক আছে। উনি বর্ধমান নামবেন কিছুক্ষণ পর ।
ঘনাদা জানতে চাইল ওনার বাড়িতে কি কেউ মারা গেছেন ?
শ্যামাপদ বাবু বললেন ওনার জেঠু রাধাপদ ব্যানার্জি মারা গেছেন কয়েক ঘণ্টা আগে । উনি খবর পেয়েছেন ফোনে।
এদিকের ঘনাদার কথা শুনতে পাচ্ছে ভৈরব সিং কিন্তু ওদিকের বক্তব্য সে শুনতে পাচ্ছে না । আমরা সরে এসে ফোনটা করছি আর পাশে থাকার দরুন আমিও শ্যামাপদ বাবুর কথা হালকা শুনতে পাচ্ছি ।
দাদা আর কিছু বলল না । ফোনটা রেখে ভৈরব সিংকে বলল সে কি নিশ্চিত কে শ্যামাপদ বাবুর মৃত্যু হয়েছে ?
ভৈরব মাথা চুলকে বলল , ফোনে সেটাই তো শুনলাম মনে হলো ! আমাকে গিন্নি ফোন করে বললেন কর্তা নেই। যেহেতু বাড়ি তাদের তাই এই বাড়িতে থাকা দেবতার এখন পুজো বন্ধ ।
ঘনাদা বিরক্ত হয়ে বলল , শ্যামাপদ বাবু মারা গেছেন সেটা বলে ছিলেন ?
ভৈরব : না নাম বলেননি তো । তবে উনি তো মনে হয় কর্তা । আর ওনার পিতা আগেই গত হয়েছেন । ভাইরা ওনার ছোট । আর হ্যাঁ আছে ওনার এক জেঠু ।
আমি শ্যামাপদ বাবুকেই কর্তা বলে জানি ।
ঘনাদা বিরক্ত হয়ে বলল , ওনার জেঠু সবার বড় ছিলেন পরিবারে তাই ওদের কাছে উনি কর্তা মশাই ছিলেন । আর ওনার মৃত্যু হয়েছে আজ । আমি নিজে শ্যামাপদ বাবুর সাথে কথা বললাম এই মাত্র ।
ভৈরবের মুখটা কেমন যেন উদাস হয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে বলল , কিছু খাননি আপনি । চলুন স্নান সেরে খেয়ে নেবেন ।
আমি আর ঘনাদা ইদারার কাছে গিয়ে জল তুলে স্নান সেরে নিলাম । একটা মানুষকে দিয়ে জল টানিয়ে টানিয়ে বাথরূমে স্নান করা অসভ্যতা ।
জমিয়ে লাল লাল করোখ নাথ মুরগির ঝোল ভাত খেয়ে আমরা আমাদের জন্য বরাদ্দ ঘরে ঢুকে এলাম । খোকন আর বাপি খাওয়া শেষ করেই আবার ছাদে উঠে গেল । ঘুড়ি ওড়ানোর নেশায় পেয়েছে ওদের । আর এদিকে মলি রানী তো ব্যস্ত লাজোর সাথে । যদিও সবটাই ঘনাদার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে । এদিকে লাজোর কাছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নানা বিষয় জেনে নেওয়া আর ওকে ব্যস্ত রাখাই কাজ মিলির। বাপি আর খোকনের কাজ ছাদ থেকে এলাকাটা নজর রাখা ।
আমি ভর পেট খেয়ে একটু ঘুমানোর তালে ছিলাম । কাল বিকাল থেকে ট্রেন জার্নি তারপর ভোর রাতে এই অজানা স্থানে এসে শুয়ে ঘুমটা পূর্ন হয়নি । গা ম্যাজম্যাজ করছে।
কিন্তু ঘনাদা দেখলাম অন্য তালে ।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে বলল , এই বাবলু পকেট থেকে ওই ঘড়িটা বের কর আর ফোনে তোলা ছবি গুলো ও বের কর । একটা খাতা কলম দে আমাকে ।
আমি গড়াতে চেয়েও গড়াতে না পেয়ে একটু ক্ষুন্ন হলাম তবে দাদার আদেশ শিরোধার্য তাই উঠে গেলাম ব্যাগের কাছে ।
খাতা কলম দিলাম আর ফোন থেকে ছবি গুলো ও বের করলাম কিন্তু দাদার পাজামার পকেট থেকে ঘড়িটা বের করলাম না ।
ঘনাদা সেটা লক্ষ্য করে নিজেই হ্যাঙ্গার থেকে পাঞ্জাবিটা নামিয়ে ঘড়িটা বের করল ।
তারপর এসে বসলো খাটে ।
আমি চুপ করে বসে রইলাম ।
দাদা বলল , এই তুই গোয়েন্দা হবি বাবলু ! একটা ঘড়ি বের করছিস না পকেট থেকে কেন না সেটা কঙ্কালের শরীর থেকে খুলে এনেছি বলে ?
আমি বেমালুম মিথ্যা বলে দিলাম , কই না তো ! আসলে ভুলে গেছি একেবারে ।
দাদা হাসলো কিন্তু কিছু বলল না ।
ঘড়িটা দেখতে দেখতে আমাকে দাদা নির্দেশ দিলো কিট ব্যাগ থেকে আতস কাঁচ বের করে আনতে ।
আমি সেটা এনে হাতে দিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঘড়িটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ।
তারপর বলল , " এইচ এম টির ঘড়ি রে বাবলু। পুলিশ আসার পর কঙ্কালটি তাদের নজরে আনা হবে । ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী বোঝা যাবে বডি কবেকার । মানে মৃত্যু কখন হয়েছে । কিন্তু ঘড়িটি দেখে বোঝা যাচ্ছে মৃত্যু অনেক দিন হয়েছে । এক এই কোম্পানির ঘড়ি এখন বাজারে নেই । যদি কারো কালেকশনেও আছে তো এটি বেশ দামী একটি রেয়ার মডেল। মানে এই কঙ্কাল এই ব্যানার্জী পরিবারের কারো হতে পারে ।
শ্যামাপদ বাবুর কাছে ওদের বংশের লিস্ট নিতে হবে ।
জানা দরকার বংশজদের ইতিহাস । "
ফোনে তোলা ছবি গুলো তারপর একে একে খুঁটিয়ে দেখল দাদা । নানান এঙ্গেল থেকে তোলা ছবি গুলো । গুপ্ত পথ বাদে মন্দিরের একটি দরজা , সেটি সদর দরজাটি ।
এখন মূর্তি গেল কোথায় আর গেলেও সেটি কি আগের বারের মতো ফিরে আসবে সেটাই দেখার ।