ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব সাত
ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব সাত
টানেলটা বেশ বড় সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । অনেকটা পথ যেতে যেতে মাথায় ধুলো থেকে মাকড়সার জাল সবই লেগে গেছে । পথে দুটো সাপের দর্শন ও পেয়েছি ।
তারপর একটা সময় দেখলাম টানেল দুটো পথে বিভাজিত হয়ে গেছে ।
দাদা সেটা দেখে আমাকে বলল , " খুব সম্ভবত একটা পথ মন্দিরের দিকে গেছে তো অন্যটি গেছে হাবেলির দিকে । "
আমি বললাম , কি করে বুঝবে ?
ঘনাদা বলল ," এই দুটো টানেল আজও ব্যবহার হয় । ওই দুর্গের সুড়ঙ্গ বহুকাল বন্ধ পড়ে আছে সেটা ওর চেহারা আর কঙ্কাল দেখেই বোঝা যায় । আর এই দুটো পথে মানুষের যাওয়া আসার ছাপ স্পষ্ট ।"
আমি এবার ধৈর্য হারিয়ে বলল ,
ধুস বাবা কত যে সময় পেরিয়ে গেছে তাও বুঝতে পারছি না । একটা ভ্যাপসা গরম আর গন্ধ মিলে নাভিশ্বাস উঠেছে । চলো তো কোন দিকে যাবে ।
ঘনাদা : ভাবছি কোনটায় গেলে মন্দিরে উঠবো । কারণ হাবেলীর দিকে গেলে সেই দরজা কোন ঘর পর্যন্ত গেছে জানিনা ।
অনেক ভাবনার পর জয় মা ঠনঠনিয়া কালী বলে আমরা গেলাম ডান দিকের রাস্তায়। একটু পরে আমরা মায়ের নাম করে ঠিক পথেই উঠলাম। এটা মন্দিরের পথেই ঢুকছে ।
আমি আর দাদা একটা জীর্ণ হয়ে আসা দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলাম মূল মন্দিরের ভিতর পথে ।
মন্দিরের গর্ভগৃহে অবস্থান করলে ওই দরজাটা কিন্তু আসলে মায়ের পট বলে ভুল হতে পারে । এমন ভাবেই ওটা বানানো হয়েছে। সামনের দিকে পট আর পিছনে গেট । আমরা নেহাত ওদিক দিয়ে এলাম নাহলে সরাসরি মন্দিরে এলে আমাদের ও ওটা একটা পট বলেই ভুল হতে পারতো ।
ঘনাদা আমাকে বলল , দেখ বাবলু মন্দিরে এখন বিগ্রহ কিন্তু নেই । আর পদ্ম খোদিত পাথরের এই স্থান এখন ফাঁকা । কেউ নয় মন্দির থেকে মূর্তি সরিয়েছে নাহলে মূর্তি মন্দিরেই আছে আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
আমি দাদার কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না ।
দাদা বলল , "জানি ঘটে কিছুই ঢোকেনি । আরে এইসব প্রাচীন মন্দির কিন্তু রহস্য ভরা । যেমন এই বাইরে থেকে চালা মন্দির স্বাভাবিক কিন্তু ভিতরে একটা আস্ত টানেল ।
তেমন আরো এমন একটি গোপন পথ বা কিছু থাকতে পারে যা থেকে মূর্তির সরে যাবার সম্পর্ক থাকতে পারে । আমি কয়েকটা ছবি তুলে ফেলি । তারপর যাই ভৈরব সিং এর হাতের লাঞ্চ খাবো । অঙ্ক বুঝলি বাবলু সবটাই গণিতের ইতিহাস । এখানে হবে না , বসে মাথা খাটাতে হবে ।"
আমি দাদাকে বললাম , ফিরে ভৈরবকে কি বলবে ?
দাদা মুখে একটা চুক চুক শব্দ করে বলল , "বলবো যে তুই আমাকে খুঁজতে এসেছিলি । আর আমি সাপের দর্শন পেয়ে ভয় পেয়ে বসে ছিলাম মন্দিরের কাছে । নড়তে পারিনি পাছে ছোবল দেয় ।
জানি লোকটা যদি কালপ্রিট হয় তবে সন্দেহ করবে । হয়ত করেছে তাই কাল রাতে মাথার ওপর ওরকম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল । কিন্তু দেখ আমাদের সেক্ষেত্রে রিস্ক নিতেই হবে । আমাদের আজকাল করেই রহস্য সমাধান করতে হবে নাহলে ধরা খাবো ।"
আমরা মন্দিরের কয়েকটা ছবি তুলে ফেললাম পটাপট । পাথরের খাঁজে খাঁজে আঙ্গুর লতার মত সূক্ষ কাজ । আর বিভিন্ন মুদ্রায় দেবী চণ্ডীর মূর্তি খোদিত । সাথে সাপের ও আকার খোদিত হয়েছে । মন্দিরের গায়ে কিসব যেন লেখার মত খোদিত । পুরো সেই প্রাচীন আমলের হন্টেড মন্দিরের মত দেখতে । দাদা যে পদ্ম আসলে দেবীর মূর্তি থাকে সেটা একটু দেখলো । তারপর আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম । বাইরে থেকে মন্দিরটা কিন্তু তত বড় লাগছে না ভিতরে যতটা বড় । বাইরে থেকে দোচালা মন্দির প্যার্টান ।
দাদা বলল ," অর্ধেক শরীর দেখা যায় বাইরে থেকে মন্দিরের । আসল অংশ কিন্তু পাহাড়ের গায়ে খোদিত ।"
আমরা হেঁটে হেঁটে ফিরে এলাম শ্যামাপদ ব্যানার্জির হাবেলী ।
ভৈরব সিং বাইরে বসে তেল মাখছিল । আমাদের দেখে বলল , " দেবাশীষ বাবু আপনি কুথা ছিলেন ? দোপহের হতে গেল এদিকে ?
বেলা অনেক হলো । বাকি বাচ্চারা খেয়ে নিয়েছে । আপনি আপনার ভাইকে নিয়ে কুথা গেলেন ! আর এই খোকা বাবু আপনি তো ঘরেই ছিলেন । পতঙ্গবাজি করতে করতে পালিয়ে গেলেন !
এদিকে মউত হয়ে গেছে আমাদের শ্যামাপদ বাবুর , খবর এসেছে এক ঘন্টা আগেই ।"
আমি দাদা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি অবাক চোখে । শ্যামাপদ বাবু তো এখান থেকে রওনা দিয়েছেন ঘন্টা খানেক আগে !
দাদা নিজেকে সামলে বলল , "মানে ! কি বলছ তুমি ভৈরব সিং !
কি করে হলো এসব ?"
ভৈরব সিং : "উনি তো বাড়িতেই ছিলেন কয়েকদিন । আপনারা তো জানবেন সব , আপনি ওনারই অতিথি । "
এটা ভারী মুশকিল হলো এখন । আমাদের কারো কাছেই কনসেপ্ট ক্লিয়ার নয় । অথচ জিজ্ঞাসা করা যাচ্ছে না সরাসরি । কারণ আমরা শ্যামাপদ বাবুর অতিথি হিসেবেই এখানে এসেছি । তারমানে শ্যামাপদ বাবুর বিষয়ে আমাদের নলেজ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক ।