Rima Goswami

Crime Fantasy

4  

Rima Goswami

Crime Fantasy

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব ছয়

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব ছয়

7 mins
387


ঘুমটা বেশ জড়িয়ে এসেছে । ঘনাদা আমার পাশে আর ওই দিকে দুই ভাই একসাথে। কেমন যেন অনুভব করলাম ঘাড়ের কাছে কেউ নিশ্বাস নিচ্ছে। ভোর হয়েই আসছে চোখটা একটু হালকা করে খুলে দেখলাম । নাহ কেউ নেই । দরজার দিকে চোখ গেল , দেখলাম পর্দাটা একটু যেন সরে গেল । নতুন জায়গা একটু ভয় লাগলো । ভাবলাম ডাকি ঘনাদাকে । কিন্তু তারপর ভাবলাম থাক বরং।

তারপর জানিনা কখন ঘুমিয়ে পড়েছি । ঘুম ভাঙলো খোকনের লাথি খেয়ে । 

খোকন কলকল করে উঠলো , এই ব্যাটা নাক ডেকে ঘুমাস যে বড় ? এইদিকে তোর দাদা যে সাতটা সময় উঠে হাঁটতে গেল !

ধরমর করে উঠে বসলাম । ঘনাদা সকালে উঠে হাঁটতে যায় । আজকে তাও দেরি হয়ে গেছে । অন্য দিন পাঁচটার পর বেরিয়ে পড়ে ।

উঠে নামালাম নিচের তলায়। দোতলায় বাথরুম আছে কিনা জানা নেই । কাল নিচেই সবাই সেরে গেছি ।

নেমে দেখলাম মলি দিব্যি ভাব জমিয়ে ফেলেছে লাজোর সাথে । ওরা গল্প করছে দাওয়ায় বসে । 

ভৈরব সিং আমাকে দেখে বলল , খোকা উঠছ ? এসো গোসল খানায় জল রেখে দিয়েছি। তোমার দোস্ত সবাই চা খেয়ে ফেলেছে । তুমি খেয়ে নিলে আমি নাস্তা তৈরি করবো ।

আমি বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বললাম , এতবড় তোমাদের গোসল খানায় জলের ব্যবস্থা নেই ? 

ভৈরব সিং বলল , সুখা বঞ্জর জায়গা তো । জল কম এখানে । ইদারা ভরসা আমাদের । অত বড় ইদারাতে মোটর ফিট করা যায়না । 

ফ্ল্যাশ দেবেন না খোকা বাবু । ওটা সাজানো রয়েছে কাজ করে না । 

মনে মনে বিব্রত হলাম তবে মুখে কিছুই বললাম না ।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসতে ভৈরব সিং আমার হাতে তুলে দিলো একটা তামার ছোট্ট গ্লাস যেটা একটা তামার বাটিতে রাখা হয়েছে । 

অন্য একটি প্লেটে বিস্কুট । চায়ে চুমুক দিয়ে মনটা শান্ত হয়ে গেল । আহা এত স্বাদ চায়ের মধ্য কি করে এলো ! 

চা খেয়ে মলির কাছে গিয়ে বললাম , কি চিনেও চিনতে পারছে না ! এসে থেকে ব্যস্ত বন্ধুর সাথে ।

লাজো মনে হয় বাবার সাথে নাস্তা তৈরি করতে গেছে , সেই তালে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে দিলাম মলির কাছে ।

মলি সেসব কথায় মোটেও পাত্তা দিলো না । আমাকে ঢিমে গলায় বলল , ঘনা আঙ্কেল বলে গেলেন ব্রেকফাস্ট করে এই বাড়ির পিছনের দিকে টিলার কাছে যেতে। আমি লাজোকে বিজি রেখে দেবো গল্পতে। ও ভাবে কলকাতা যেন এক রূপকথার দেশ । নানান রকমের প্রশ্ন করছে কলকাতা নিয়ে । 

ওই খোকন আর বাপি পড়ে যাবে । আমি ওদের সময় হলে জানিয়ে দেবো । আপাতত তুই যা বাবলু । সবাই এক সাথে যাওয়া ঠিক না । তুই যা পড়ে একে একে সবাই যাবে।  


বুঝলাম যে ঘনাদা আসলে রহস্যের গন্ধ পেয়ে গেছে । আমি মলিকে আর ঘাঁটালাম না । 

খোকন আর বাপি ছাদে উঠে এদিক ওদিক করছে । আমি পকেটে একটা ছোট্ট এলিডি টর্চ নিয়ে রেখে দিলাম। এই বাড়ির পিছনে টিলায় কি আছে ? ঘনাদা কি ভৈরব সিংকে ও সন্দেহের চোখে দেখছে ? 

নাস্তা দিলো বিশাল ডাইনিং টেবিলে লাজো । খোকন আর বাপিকে সিড়ি থেকে ডাকতেই ওরা ছুটে এলো । যা পেটুক দুটিতে ।

নাস্তায় ছাতু পুর দেওয়া গুটকা কচুরি , হিং দেওয়া ছোলার ডাল , ফুলকপি ভাজা , টমেটো তেতুঁল পেস্ট আর মুগ ডালের হালুয়া । জম্পেশ খেলাম সবাই মিলে । তারপর খোকন আর বাপিকে ভৈরব সিং বলল , পতঙ্গ বাজি করতে চাও ? সিঁড়ির কোণে আছে সব । নিয়ে যাও খোকা বাবুরা । আমি করোখনাথ মূর্গা জবাই করে রান্না করবো । তোমরা খিদে চাগিয়ে ফেলো । তোমাদের মাস্টারকে দেখিনা তো ? সে তো চা পর্যন্ত খায়নি !

আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে বললাম , দাদা ছাতু খেয়ে বেরিয়েছে মনে হয় । ও সকালে ছাতু সরবৎ খায় । ব্যাগে করে এনেছে মনে হয় ।

ভৈরব সিং বলল , স্যার হন না উনি ? দাদা বল কেন ?

খোকন : আরে ওরা তো দুই খুরতুত ভাই । 

পট করে একটা বেফাঁস মন্তব্য করে খোকন । 

মলি আমার দিকে তাকালো । তারপর বলল , হ্যাঁ ওরা ভাই হয় সম্পর্কে । তবে দেবাশীষ স্যার আমাদের সবার প্রিয় স্যার হন ।

ভৈরবকে সামলে আমরা সবাই ছাদে গেলাম । ঘুড়ি একটু উড়িয়ে কেটে পড়তে হবে আমাকে । এদিকে মলি গেছে লাজোর সাথে ।

খোকন আর বাপিকে বললাম সবটা । ওরা বলল ওরা এদিকে দেখছে ।

বিশাল বাড়িটার ছাদে রীতিমত ক্রিকেট খেলা যাবে । বাড়ির মূল ফটকের উপরে একটা পরী বসানো আছে সেই ভিক্টোরিয়ার পরীটার মত ।

ছাদে উঠে দেখলাম ঠিকই বলেছে ভৈরব সিং । এই এলাকা রুক্ষ কাঠখোট্টা । 

ছাদ থেকে একটা ছোট্ট মাটির পাহাড়ের মত দেখলাম । পাশে অনেক বড় বড় গাছ । এটার কথাই বলছে তাহলে ঘনাদা । কিন্তু ও এতক্ষ্ন ধরে ওখানে কি করছে ? নাহ আমাকে যেতে হবে ঘনাদার কাছে । 


রাস্তাটা এবড়োখেবড়ো আর মাটি লাল রঙের । ল্যাটেরাইট মাটি মনে হয় । আমি টিলার দিকে এগিয়ে গেলাম । বাড়ি থেকে যতটা কাছে মনে হয়েছিল মোটেই ততটা কাছে না। বেশ কিছুটা হেঁটে যেতে টিলায় পা দিলাম । ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি । পরনের হাফ প্যান্ট একটু টাইট তো যেন মনে হচ্ছে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে । দাদার জন্য এই সব জ্বালা। কেন ফুল প্যান্ট পড়লে কি ক্ষতি হতো শুনি ? 

পাথরের খাঁজে খাঁজে পা দিয়ে টিলার খানিকটা উঠতেই পাশের দিকে একটা রাস্তার মত পিছন দিকে গেছে মনে হলো । টিলার অনেকটা উপরে এসে মন্দির বা কিছু তো দেখলাম না । ঘনাদা ও নেই । তবে এই রাস্তা ধরে পিছন দিকে যাই দেখি কি হয় ।

একটু যেতেই চোখ পড়ল একটা ভগ্ন টাওয়ারের মত । আর ওখানেই চাতালে বসে সিগারেট টানছে ঘনাদা । ওর মুখে একটা ভাবনার রেখা । 

আমাকে দেখে বলল ," কি রে বাবলু এত দেরি হলো ?"

আমি বললাম ," ওই খেতে দেরি হয়ে গেল । ভৈরব সিং লোকটা দারুন রান্না করে ।"

ঘনাদা বিরক্ত হয়ে বলল , "ওই হবে .. খালি মুখের স্বাদের চিন্তা । আরে তোর বন্ধুদের এনেছি দল ভারী করে লোক দেখাতে । তুই তো আমার হেল্পার তাই না ! তোর মাথা কি কাজ করে না ?"

আমার মোটেও ভালো লাগছে না এই ধমক খেতে । তবে কিছু বললাম না এখন ।

ঘনাদা বলল , "কাল রাতে উসখুস করলি কেন ? নাহলে পাক্কা ধরে নিতাম।"

কি বলছে ঘনাদা ! তার মানে কাল ওই মাথার কাছে নিশ্বাস ফেলার বিষয়টা কি ঘনাদা জানে!

ঘনাদা বলল , "ওটা প্রবাবলি ভৈরব সিং ছিল। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল কাল । আমি বুঝেও নড়চড় করিনি। তালে তালে ছিলাম , খপ করে ধরতাম। তুই চোখ খুলে নড়ে দিলি তো সরে গেল টুক করে । কেন এসেছিল ও ভাবে রাতের বেলা জানিনা তবে বিষয়টা স্বাভাবিক নয় । "

আমি জিজ্ঞাসা করলাম , "তুমি কি করে শিওর হলে ? "

ঘনাদা বলল , "লোকটা ফস ফস করে নিশ্বাস ফেলে , ওটা ওর মুদ্রাদোষ । "

তো এখানে কেন ডাকলে ? এটাই কি মন্দির ? 

ঘনাদা : মন্দির বাড়ির দক্ষিণে অবস্থিত। আমি বাইরে থেকে দেখেই চলে এসেছি । ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসে দেখি শ্যামাপদ বাবু অচেতন পড়ে আছে এখানে । 

ভয় পেয়ে কাঁপা গলায় বললাম , কই উনি ? 

দাদা বলল , "ওনাকে সুস্থ করে রওনা করে দিয়েছি । উনি নাকি ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান । এখানে এই দুর্গের মত বানানো হয়েছিল অনেকদিন আগে । এলাকায় নজর রাখার জন্য । উনি রাতটা এখানে কাটিয়ে চলে যাবেন ভেবে ছিলেন । আমাদের ওনার হাবেলিতে ঢুকতে দেখে নিশ্চিত হয়ে এখানে এসেছিলেন। একটা কালাচ সাপ দেখে ভিমড়ি খেয়ে যান । ভাগ্য ভালো কামড়ে দেয়নি ওটা ।

আমি সাথে জলের বোতল নিয়েই বেরোই। নাহলে এখানে জল পেতাম কোথায় ? ওনাকে চোখে মুখে জল দিতে উনি উঠে বসেন । দেখলাম কথাও স্নেক বাইট আছে কিনা । তারপর ওনাকে বললাম যদি চান কাজে বাধা না পড়ুক সোজা চলে যান ট্রেনে চড়ে বর্ধমান ।

উনি চলে যেতে আমি এই দুর্গের মত এলাকাটা দেখলাম । সবই ঠিক আছে কিন্তু একটা স্তম্ভ দেখে আমার একটু ডাউট হয় । ওটার গায়ে খোদিত আছে দেবনাগরী ভাষায় কিছু কোড । আমি জানি সেই ভাষা । তো পড়ে দেখলাম চণ্ডী মন্ত্র আছে । স্তম্ভের গায়ে সেগুলো এলোমেলো হয়ে আছে রিং আকারে। সেগুলো চক্রাকারে ঘুরিয়ে মন্ত্রটা সরাসরি সাজিয়ে দিলেই আমার সামনে খুলে যায় একটা সুড়ঙ্গ ।

এখন আমি আর তুই সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে চলে যাবো পথ যেদিকে নিয়ে যায় । "

দেখলাম পকেট থেকে দাদা একটা হোমিপ্যাথি কাঁচের শিশি বের করলো । 

আমি অবাক চোখে চাইতে দাদা বলল , "এই এলাকায় সাপ ইতিউতি দেখা যায় । তাই যখনই বাইরে বেরিয়ে আসবো আমাদের এই কার্বলিক এসিড সাথে রাখতে হবে । আমি সবসময় রাখছি । তোদের ও দিয়ে দেবো। নে টর্চ লাইট এনেছিস তো ? জ্বালা ওটা আমরা সুড়ঙ্গে নামবো ।"

ভয়ে ভয়ে লাইট জ্বালিয়ে নেমে গেলাম মাকড়সার জালে ভরা সুড়ঙ্গে । বুক ঢিপঢিপ করেছে আমার । দাদা কার্বলিক একটু একটু করে দিতে দিতে আমাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । 

খানিকটা পথ যেতে যেতে আমরা দেখলাম সুড়ঙ্গের পথে একটা নর কঙ্কাল । আমি তো চিৎকার করে ফেললাম । সেটা বন্ধ জায়গায় ইকো হয়ে আমাদের কানে এসে ধাক্কা মেরে গেলো ।

দাদা পাজামাটা একটু গুটিয়ে বসে দেখল কঙ্কালটা । দাদা বলল , "পরনের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে কোন পুরুষ ।" দাদা ওটার হাত থেকে একটা ঘড়ি খুলে নিলো আর সেটা পকেটে চালান করে দিলো ।

আমি বললাম ," ছি কঙ্কালের কাছ থেকে ঘড়ি চুরি শেষে ! "

দাদা কটমট করে তাকালো আমার দিকে ।

তারপর বলল , "মিথেন গ্যাস জমে আছে কিন্তু তারাতারি পা চালা বাবলু । নাহলে তুই আমিও এর মতো পড়ে থাকবো ।"

মানে ! জেনেশুনে দাদা এ ভাবে মৃত্যুর কুয়োর মধ্যে কেন ঝাঁপ দিলো! 

আমার প্রশ্ন ভরা মুখ দেখে দাদা বলল , "কঙ্কালটা ভালো করে দেখ । স্কাল্প কিন্তু চির ধরা আছে ওটার । মানে যেই এখানে এসেছিল সে পড়ে গিয়ে বা কোনভাবে মাথায় চোট পেয়ে ছিল । সে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিল সম্ভবত। তো এই যে হালকা মিথেন গ্যাস আমরা হার কবলে এখনো পড়িনি , এই লোকটা পড়ে গিয়েছিল । লোকটা অচেতন অবস্থায় গ্যাসের কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায় । চোটের যা পরিমাণ তাতে সেই কারণে ওর মৃত্যু হয়নি । নে নে চল এগিয়ে যাই।"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime