Rima Goswami

Tragedy Others

4  

Rima Goswami

Tragedy Others

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব নয়

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব নয়

4 mins
283


বেসনের ফুলুরী খাবার যম ঘনাদা কিন্তু লীনার বানানো ফুলুরী ছুঁয়েও দেখেনি। কি জানি কেন ? সম্ভাব্য কারণ হতে পারে লীনার সাথে ব্রেকআপ বা রহস্যের জটে লীনাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা ।

আমি মলির সাথে একটু জমাতে এলাম । সে তো হলো না । মলি জমেছে লাজোতে । আর কোথা থেকে বোমের মত এসে হানা দিলো ঘনাদার প্রেমিকা , যেটা ভাবনার বাইরে ছিল ।

যাই হোক বিকালে সবাই মিলে একটু বাইরে বেরিয়ে এলাম । মূলত ভৈরব সিং মন্দির দেখালো। বাচ্চাকে কিন্তু ঘনাদা নিজের কোলে রেখেছিল সারাটা রাস্তা । এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চলার সামর্থ্য সৌম্য মানে আমার ভাইপোর নেই ।

সৌম্য কিন্তু এটুকু সময়ে তার অজানা বাপের সাথে ঘুলেমিলে গেছে । লীনা বেশ কালো সিফন শাড়ি পড়ে সেই কাভি খুশি কাভি গম সিনেমার কাজল সেজে ঘুরছে। 

খোকন মন্দিরে এসে এদিক ওদিক দেখে বলল , এ বাবলু ও মূর্তি গেছে আর না ফেরাই ভালো ।

আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম তো বাপিকে ইশারা করলাম ভাইয়ের মুখ বন্ধ করতে । বাপি ওর পশ্চাতে একটা চিমটি কেটে ওকে থামালো। নাহলে আমাদের সাথে ভৈরব সিং আর লীনা আছে । লাজো আসেনি রাতের খাবার বানাবার জন্য। মিলি এখন লীনার সাথে চিপকে গেছে আঠার মতো।

ঘনাদা বাচ্চাটা নিয়ে ভাবলেশহীন হয়ে ঘুরছে। আমি জানি অজানা সন্তানকে দেখে ওর মন গলছে বরফের মতো কিন্তু মুখে স্বীকার করবে না ।

মন্দিরে দাদা এমন ভাব করলো যেন তার তেমন কিছু দেখার বা বোঝার নেই। শুধু ভৈরব সিংকে বলল এই দরজা ছাড়া আর কোন দরজা আছে কিনা মন্দিরের।

ভৈরব সিং অবাক হয়ে বলল , এই মন্দিরে একটাই দরজা দেবাশীষ বাবু । আর এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । বেকুবের মত প্রশ্ন হলো কিনা ?

ঘনাদা আমার দাদাকে বেকুব বলা ? প্রচন্ড রাগ হলেও চুপ করে রইলাম ।

আমরা এদিক ওদিক দেখে ফেরার সময় ভৈরব সিং বলল , ইস্টিশন চলুন বাচ্চারা গোলগাপ্পা খাবে । পুদিনার জল দিয়ে সুন্দর একেবারে জমাটি ।

মিলি তো একেবারে ঝাঁপিয়ে বলল , আঙ্কেল চলো আমরা কলকাতাতে তেতুঁল জল খাই পুদিনা জল খেতে হবে ।

লীনা একটু দাদার দিকে মুচকি হেসে বলল , হ্যাঁ ঠিক তাই । চলো সবাই যাই একটু।

আমরা সবাই স্টেশনের দিকে গেলাম । বাপি আর খোকন সারাটা রাস্তা ঝগড়া করলো কে কত বাজী ধরে ফুচকা খেতে পারে ।

যদিও জানি দাদা বেশি কাউকে খাওয়াবে না । পরের ছেলে বিদেশ বিভূঁইয়ে এনে দাদা মোটেই চাইবে না ওরা অসুস্থ হোক । তারপর আবার কমোডের ফ্ল্যাশ কাজ করে না জলের অভাবে ।

আমরা মোটামুটি ভালো বিল করলাম ফুচকা খেয়ে । দাদা অম্লান বদনে টাকা দিয়ে বলল এবার ফেরা যাক ।

আমরা যখন হবেলী পৌঁছে গেলাম তখন বাইরে থেকে অন্ধকার ওই হাবেলী দেখে মনে হচ্ছিল ভৌতিক কোন স্তূপ । যার ভিতরে না ঢুকলে আন্দাজ করে যায়না যে এখানে মানুষ বাস করে।

দরজা খুলে দিলো লাজো। আমরা ওর জন্য প্যাকিং ফুচকা এনেছি দেখে খুশি হলো খুব ।

তারপর আমরা দাবা খেলার প্রস্তুতি নিলাম । সবাই মিলে হো হো করে দাবায় বসে গেলাম । দুটো পক্ষ আর একদিকে প্রধান আমার দাদা । অন্য দিকে আমার লীনা বৌদি না মানে ইয়ে আর কি ।

মেয়েরা সকলে গেল লীনার দলে । ওরা তিনজন আর এদিকে আমরা চারজন । তাই শেষে অশান্তি শেষ করতে আমি মাঝে রইলাম গেম জাজ করতে ।

সাদা কালো রঙের ৬৪ বর্গের একটি বোর্ডের দুইপাশে বসে দুইজন খেলোয়াড় দল দাবা খেলতে বসলো । প্রত্যেক খেলোয়াড়েরের দলে যথারীতি ১৬ টি করে গুটি । যাতে আছে ১টি রাজা, ১টি মন্ত্রী, ২টি নৌকা, ২টি হাতি, ২টি ঘোড়া, ৮টি সৈন্য। খেলার লক্ষ্য হল প্রতিপক্ষের রাজাকে চেকমেট করা। আমরা মন দিয়ে লেগে গেলাম । ভৈরব সিং পাশে একটা গালিচা পাতা ছিল তাতে শুতেই নাক ডাকতে শুরু করেছে এদিকে ।

লীনা মলিকে বলল , রাজা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুটি, কিন্তু সবচেয়ে দুর্বলগুলোর একটা। রাজা যেকোনো দিকে এক ঘর যেতে পারবে - উপরে, নিচে, পাশাপাশি ও কোনাকুনি। রাজা কখনও নিজে চেকের মধ্যে যেতে পারবেনা , যেখানে তাকে খেয়ে ফেলা যাবে । রাজা যখন অন্য ঘুঁটি দারা আক্রান্ত হয়, তখন তাকে "চেক" বলে।

আমি জানি লীনা এসব বলছে দাদাকে ঠেস দিয়ে । 

দাদা আমার গম্ভীর বদনে খোকনকে বলল , শুনে রাখ খোকন মন্ত্রী হল সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি। এটা যেকোনো একদিকে সোজা চালানো যাবে - সামনে, পিছনে, পাশাপাশি বা কোনাকুনি - যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের কোন গুটির উপর দিয়ে না যায়। আর, অন্য গুটিগুলোর মতো, মন্ত্রী যদি প্রতিপক্ষের কোনো গুটি খায় তাহলে চাল শেষ হবে। খেয়াল করুন কীভাবে সাদা মন্ত্রী কালো মন্ত্রীকে খেয়ে ফেলে এবং তারপর কালো রাজা সরতে বাধ্য হয়।


ঘড়িতে রাত দশটা এমন সময় লীনা দাদাকে চেকমেট দিলো । আমি জানতাম না লীনা দাবার চ্যাম্পয়নশিপ খেলেছে স্টেট লেভেলে । ঘনাদা অন্য চিন্তায় মগ্ন নাহলে আমি ভাবতেও পারিনি ওকে কেউ হারিয়ে দেবে । খেলার প্রাক শর্ত অনুযায়ী যে জিতবে সে মনের ইচ্ছা মত কিছু চাইতে পারে । আমরা তো সাপোর্ট ছিলাম বাকি মেইন খেলোয়াড় তো ওরাই ছিল তাই লীনাকে মলি আর লাজো বলল কিছু চাইতে । 

লীনা বলল সময় হলে চেয়ে নেবে। 

ঘনাদা বিরক্ত মুখে উপরে উঠে গেল । আর বলেই গেল সে রাতে কিছু খাবে না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy