Rima Goswami

Children Stories Tragedy Fantasy

4  

Rima Goswami

Children Stories Tragedy Fantasy

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব তেরো

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব তেরো

5 mins
445


আমি দরদর করে ঘামছি । মাথায় পিস্তল ঠেকানো অবস্থায় সবার তাই হবে। আমার তো মনে হয় কেউ কেউ ভয়ে পেচ্ছাপ পর্যন্ত করতে পারে। আর তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই ।

একটা ট্রিগার আর আমার মাথা ছাতু হয়ে যাবে । চোখ বন্ধ করে ফেলেছি ভয়ে । আর রাগ হচ্ছে ঘণাদার উপর। কেমন অকারণে বকে যাচ্ছে এই সাইকো ভৈরব সিং লোকটার সাথে । আরে বাবা ভাইকে আগে বাঁচা তো ? 

নিজের ছেলের উপর মায়া নেই আমাকে নিয়ে কি ভাববে বদমাশ পাজি লোক । মাকে মনে পড়ছে। মা মনে হয় খুব কেঁদে অস্থির হবে আমার মরার পর। আমি আর দাদা শুধু না , আমাদের বোকামির জন্য আমাদের ভাড়াটেদের ও কোল ফাঁকা হবে। কারণ মলিকে ওরা মেরে দেবে হবেলী ফিরে । মলি আমার প্রেম । আর খোকন বাপি ! ওদের জমজ ভাইকেও তো আর বেঁচে ফিরতে হবে না। কাকিমা কি নিয়ে বাঁচবে ওদের পর ? একটা লোক এত শয়তান ? শুধুমাত্র কোন মান্ধাতা আমলের রায়বাহাদুরের শাস্তি আমাদের দেবে ?

কানে এলো ঘনাদার গলা ...

ভৈরব সিং তুমি একা এত সম্পদ নিয়ে কি করবে ? আমার লোক তো তোমার মেয়ে লাজোকে মেরে দেবে আমাদের আস্ত না পেলে । 

ভৈরব সিং রেগে হিসহিস করে বলল , মজাক পেয়েছ ? আমার মেয়ে তাতে কে কি করবে ? সে তো হবেলীতেই আছে । তোমাদের মেরে ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে আমি চলে যাবো ।

ঘনাদা হেসে উঠলো । সেই হাসি পাথুরে দেওয়ালে ঘা খেয়ে ফিরে ফিরে আসতে লাগলো ।

ঘনাদা বলল , আরে আমি লীনাকে ডেকে ছিলাম । ওর আসাটা কাকতালীয় নয় মোটেও । ওর কাছে পিস্তল আছে । ও তোমার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া খাবার খায়নি । ও আমাদের ফিরতে না দেখলে তোমার মেয়েকে ... ঢিসুম ...

ভৈরব সিং তোতলিয়ে বলল , না না কিছুতেই আমার মেয়েকে তোমরা মারতে পারবে না ।

অস্থির হয়ে ওর পিস্তল আমার মাথা থেকে সরতেই ঘনাদা আমাকে ইশারা করলো । আমি এক গুতো দিলাম ভৈরব সিং এর পেটে কুণুই দিয়ে । ঘ্যাত করে পেট চেপে বসে গেল লোকটা । ওর হাত থেকে পিস্তল ছিটকে পড়লো পাথরের মেঝেতে । আমি দৌড়ে দাদার দিকে চলে এলাম । দাদা শক্তি দিয়ে না বুদ্ধি দিয়ে সব কিছু হ্যান্ডেল করে । ও মনটা ডাইভার্ট করছিল লীনার কথা বলে ভৈরব সিংয়ের । আমি জানি লীনা কাকতালীয় ভাবেই এখানে এসেছে । 

ভৈরব সিং পড়তেই ওর অস্ত্র আমি তুলে নিলাম হাতে দাদার নির্দেশে । দাদা নিজের পকেট থেকে বের করলো একটা ছোট্ট পিস্তল । ভৈরব সিং উঠতে যাবার আগেই ওকে কব্জা করলো দাদা ।

এর মাঝে পুলিশ এসে হাজির হয়েছে । ভৈরব সিং এর জবানবন্দি দাদার ছোট্ট ডিভাইসে লোড হয়েছে আগেই । লোকটাকে কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে গেল পুলিশ । মন্দির চত্বর ঘিরে দেওয়া হলো । এত সম্পদ আছে তলায় সবটা সরকারের হাতে যাবে । তাছাড়া টানেলে পাওয়া কঙ্কাল পাঠানো হবে ফরেনসিক বিভাগে । লোকটির আইডেন্টিটি পেলে দেখা যাবে আসলে কে ছিল সে । হয়ত এত পুরোনো মিসিং রিপোর্ট পাওয়া যাবে না । তবে শনাক্ত করা যাবে ।

আমরা যখন ফিরলাম হাবেলী তখন ভোর হয়ে গেছে । সবাইকে ঘুম থেকে তোলা হলো। লাজো কেঁদে ওঠে বাবার কথা শুনে । কিন্তু লীনা ওকে আশ্বস্ত করে যে লাজোর দায় দায়িত্ব পালন এখন থেকে সেই করবে । ঘুম থেকে উঠে খোকন আর বাপি তো সব কিছু শুনে থড়হরি কম্পমান। মলি খুব আপসেট তাকে কেন নিয়ে গেল না দাদা কেস সমাধান করতে মন্দিরে।  

আমরা সেইদিন ফিরলাম রাতের ট্রেনে কলকাতা। খবর পেয়ে চিত্রকূট এসেছিলেন শ্যামাপদ বাবু । বোন লীনাকে সেখানে দেখে উনি একটু অবাক ও হন । তবে ভৈরব সিং এর বিষয়টি শুনে তিনি নিজেও লজ্জিত নিজের পূর্বপুরুষের উপর। 

কেস সমাধান হতে তিনি ঘনাদাকে জিজ্ঞাসা করেন যে সে কত ফিজ নিতে চাইবে । শ্যামাপদ বাবুর জীবন রক্ষা হয়েছে তাছাড়া মূর্তি রহস্য উন্মোচন হয়েছে।  

ঘনাদা সবাইকে চমকে শ্যামাপদ বাবুকে বলে , ফিজ অনেক বড় । দিতে পারবেন ?

শ্যামাপদ বাবু বলেন , সরকারকে এত বড় গুপ্তধনের সন্ধান দেয়াতে আপনি এমনিতেই অনেক টাকা পাবেন। তাও আমি চাই আপনি মন খুলে নিজের ফিজ আমার কাছে দাবি করুন ।

ঘনাদা বলে , লীনাকে চাই আমি । আইনত ভাবে তাকে ফিরে পেতে চাই। দেবেন ওকে আমায় ।

শ্যামাপদ বাবু জানেন লীনা কুমারী মা । সে বিদেশে থাকে । তাকে হটাৎ কেন দেবাশীষ সমাদ্দার চাইছে ? 

লীনা দাদাকে খুলে বলে সব কিছু । কি ভাবে তার আলাপ ঘনাদার সাথে । কি ভাবে রাগ করে ঘনাদা চলে আসে দেশে। যদিও নিজের সন্তানের খবর তার কাছে ছিল না ।

সব কিছু শুনে শ্যামাপদ বাবু ঘনাদার হাত ধরে বলেন , যা আপনার সেটা আপনি নিয়ে যাবেন । এটা তো আমার ফিজ দেওয়া হলো না । উল্টে আপনি আমাকে চিন্তা মুক্ত করলেন।  

ঘনাদা হেসে বলল , নাহ আপনার কেসটা না এলে আমি যে আমার জীবনের একটা বড় সত্যিই কোনদিন জানতে পারতাম না । কারণ আপনাদের পূর্ব পুরুষ রায়বাহাদুরের মত আপনার বোন লীনা ও বড় বেয়াড়া ।

শ্যামাপদ বাবু কিছু বলতে পারেন না । তিনি ঘনাদার হাত ধরে হেসে ফেলেন ।

আমরা রাতের ট্রেন ধরে ফিরি কলকাতা। লাজো বাবার সাথে জেলে দেখা করে আমাদের সাথেই চলে আসে চিত্রকূট ছেড়ে। 

ওকে লীনা রাখবে সেটা জানিয়ে দিয়েছে।  

বর্ধমান স্টেশনে নেমে যায় লীনা তার পুত্র সন্তান, শ্যামাপদ বাবু আর লাজো। 

আমরা কলকাতা চলে আসি। লীনাকে অফিসিয়াল ভাবে আনা হবে এক মাস পর এই ঠনঠনিয়াতে। বাড়ি ফিরে জ্যাঠা মশাইকে সব চুগলি করে দিলাম আমি । ভাবলাম জ্যাঠা মশাই দেবে দাদাকে আচ্ছা সে। কিন্তু কোথায় সেসব ? সে তখন নাতির খবর শুনে ধুতির কাছা তুলে নেত্য করতে শুরু করলো । 

ঘণাদার খবরের কাগজে নাম বেরোলো এত বড় সম্পদ উদ্ধারের ঘটনার জন্য। আমাদের নাম ও ছিল । তাতে তো মলি খুব আলহাদিত। খোকন বাপি ও আজকাল পাড়ার হিরো । দাদার কদিন পর ছেলে বউ আসবে সেই নিয়ে বাড়িতে জোড় প্রস্তুতি। মাঝখান থেকে এই বাবলু সমাদ্দার সেই ভোঁদু রাম কে ভোঁদু রামই রয়ে গেল ....

না আমি জাতে উঠলাম আর না মলির প্রেম প্রস্তাব পেলাম। শুনছি সেখানে বেড়াতে গিয়ে নাকি খোকনের সাথে একটু মাখো মাখো সম্পর্ক হয়েছে মলির । 

ধুস আমি আর গোয়েন্দাগিরি করবো না । 



Rate this content
Log in