Rima Goswami

Fantasy

4  

Rima Goswami

Fantasy

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব এগারো

ঘনাদা রহস্য উন্মোচন পর্ব এগারো

7 mins
268


অত বড় একটা হবেলী থেকে শুধুমাত্র দড়ি বেয়ে নামার ক্ষমতা ঘনাদার থাকলেও আমার নেই । হয়ত আমি তালপাতার সেপাই , হারগিলে। কিন্তু আমার ওই দড়ি বেয়ে নেমে যেতে বড়ই কষ্ট হলো । হাত পা ঘষা খেয়ে ছিঁড়ে গেলে সেখানে ও জ্বলুনি শুরু হয়েছে । কিন্তু তাতে আমার দাদার কোন মাথা ব্যাথা নেই । সে আমাকে তাড়া লাগালো তারাতারি মন্দিরের দিকে যাবার ।

আমি বললাম দড়ি ঝুলছে ওগুলোর কি হবে ? 

দাদা জানালো আমাদের ফেরার সময় লাগবে ওটা । অবশ্য যদি ধরা না খাই । 

আমরা মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলাম ।

একটু হাটা পথ যেতেই আমরা পৌঁছে গেলাম মন্দিরে । দাদা টর্চ জ্বেলে ঢুকলো ভিতরে । আমিও ওকে অনুসরণ করলাম । দেখি দাদা দেবী মূর্তি যেখানে স্থাপিত থাকে সেই বেদীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল । বেদীর গঠন অনেকটা পদ্মর মতো । দাদা দেখলাম ওটার চারদিকে আলো মেরে হাতড়ে বেড়াতে শুরু করলো। পদ্মটা কিন্তু তামার তৈরি ধাতব। ওটার কেন্দ্রে দাদা একটু চাপ দিলো । আসলে ও কি চাইছে আমি বুঝতে পারছি না । তারপর দেখলাম যে উচুঁ বেদীর উপর বসানো পদ্ম সেটা দেখতে লাগলো । তারপর আবার গেল মন্দিরের একটা থামের কাছে । সেই থামের গায়ে লেখা কিসব মন্ত্র পড়লো মন দিয়ে । 

আমার ঘুম আসছে , এদিকে খিদেও পাচ্ছে । কেন যে এই পাগলটার পাল্লায় পড়লাম আমি সেটা ভেবে নিজেও পাগল হচ্ছি । ব্যাটা একটা মেয়ের পাল্লায় পড়ে বাবা হয়ে গেছে কিন্তু বাড়িতে বেমালুম সবটা চেপে গেছে। আর আমাকে এখানে এনে মশার কামড় খাইয়ে ম্যালেরিয়া ধরিয়ে দেবে। ধুস গোয়েন্দা হবার শখটাই ঘুচিয়ে দিলো ঘনাদা ।

কানে এলো একটা শব্দ ক্যাঁচ... আমি ঘুরে তাকালাম শব্দের উৎসের দিকে । মন্দিরটা যেন নিমেষে থরথর করে কেঁপে উঠলো । 

ঘনাদা ওই পদ্মাসন নিয়ে এতক্ষন যে এক্সপেরিমেন্ট করছিল সেটা মনে হয় ফলস্রুত হয়েছে । 

আমি অবাক হয়ে একটা প্রচণ্ড দুলুনিতে ছিটকে গিয়ে থামের কাছে পড়লাম । আর টাল সামলাতে থামটা ধরলাম । দেখি পদ্মাসনটি কুড়ির মত হয়ে গেছে আর সেটা স্প্রিংয়ের মত উপর দিকে উঠে গিয়ে একটা গর্তের সৃষ্টি করেছে । 

ওটা সরে পাথরের প্লেটে নড় চর হতেই এই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে । ঘনাদা ও পাশের বেদীটা চেপে ধরে আছে । আর আমাকে বলল থাম ধরে থাকতে দুলুনি কমা পর্যন্ত ।

আমরা থাম ধরে থাকলাম । ধীরে ধীরে একটা নিচের সুড়ঙ্গ পথ খুলে গেল আর কম্পন ও থেমে গেল । আমি আর ঘনাদা এবার এগিয়ে এলাম সেই গর্তের দিকে ।

ঘনাদা আমাকে বলল , "বাবলু টর্চ মেরে রাখ । উপর থেকেই দেখি নামা যায় কিনা । আমি জানতাম পদ্মাসনে কিছু একটা আছে । সুড়ঙ্গ যেটা টিলা থেকে শুরু হয়ে ছিল সেটা ওই দরজার কাছে শেষ নয় । সুরঙ্গের দুটি পথের একটি এই মন্দিরের গুপ্ত দরজা আর হবেলী পর্যন্ত গেছে । আর এটা একটা সুড়ঙ্গের চাবি যেটা হয়ত খুব কম মানুষ জানত । আর এখানেই আছে কয়েক বছর অন্তর মূর্তি সরে যাওয়ার রহস্য ।"

আমি টর্চ মারতে ঘনাদা একটু কার্বলিক এসিড দিলো ছড়িয়ে । তারপর হাঁটু মুড়ে বসে উকি মেরে দেখতে শুরু করলো । 

আমি টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি , কিছুই দেখতে পাচ্ছি না । এদিকে ঘনাদা কি করছে । পদ্মাসন যেটা মূর্তির আসন ভেবেছি আর এই পাথর কেটে তৈরি সামান্য মন্দির যেটা অবহেলায় পড়ে আছে তাতে এত রহস্য ! এত কারুকার্য ! আমার ভিতরে শিহরণ শুরু হয়েছে । গর্ব হচ্ছে দাদার উপর ! দাদা এত সুন্দর করে এই রহস্য ভেদ করছে !

দাদা আমাকে বলল , "চল জয় মা বলে নেমে যেতে হবে । যা আছে হবে কপালে । ভোর হবার আগেই খবর দিতে হবে পুলিশে । বিষয়টা ততটা সহজ নয় যতটা ভেবে কেসটা নিয়ে ছিলাম । "

আমি দাদাকে বললাম , আগে আমাকে সবটা খুলে বলো নাহলে আমি তোমার নির্দেশ অনুযায়ী চলতে পারব না । এই আমি তোমার সহকারী ? কিছুই জানিনা শুধু অন্ধের মত ফলো করে যাচ্ছি ।

দাদা বলল , "এই থাম গুলোর ভাষা পড়তে পারলে বুঝতে পারতি তুই বা তারা সবাই যারা এতদিন গুপ্তধন পাবার জন্য এই চেষ্টা করছে । সবটাই জলের মত মনে হয় পরিষ্কার । "

এই থামে লেখা ভাষা আসলে পালি। হ্যাঁ পালি ভাষার প্রচলন তেমন নেই । আর আমি ভাষা তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছি বলেই হয়ত আমার পালি ভাষাতে দখল আছে । উপমা ব্যবহার করে যেটা লেখা আছে তাতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ্য যে এই মন্দির দেবী চণ্ডীর। আর তার অবস্থান হয়েছে পদ্মাসনে। যে পদ্মাসন থেকেই আবর্ত হয়েছে কুবের যন্ত্রের। যা একটা নির্দিষ্ট বছরের ব্যবধানে এগিয়ে আসে । মানে বিষয়টা হলো সূক্ষ কারিগরির । আমি পদ্মাসনের ছবিটা তুলে নিয়ে যাই সাথে এই থাম গুলোর । তার ভাষা পড়তে আমি অনেকটা ধারনা করেছিলাম বিষয়টা । আর এখন এই পদ্ম খুলে যেতেই আমরা সেই পথ পেয়ে গেছি যাকে এখানে কুবের যন্ত্র বলা হয়েছে । 

ব্যানার্জী পরিবারের একসময় এই চিত্রকূটে জমিদারি ছিল । তাদের প্রভূত উন্নতি হয় যখন চার পুরুষের আগের একজন রায়বাহাদুর উপাধি পান ইংরেজদের থেকে। সে ছিল বিশেষ দক্ষ ভাষা জ্ঞানে আর এই সূক্ষ কারিগরির দিকে । একটা আস্ত পাহাড়কে কুদে মন্দির বানিয়ে তাতে গুপ্ত পথ তৈরি করে সে । একটি জুড়ে আছে তার হবেলীর সাথে । আর একটি টিলার সাথে । আসল যে কারণ এই পদ্মাসন আর তার নিচে এক স্প্রিং চেম্বারের সেটা খুব সরল । রায়বাহাদুর প্রচুর মোহর লুকিয়ে রাখার জন্য এটা বানিয়ে রাখেন । নিজের পরের প্রজন্মের জন্য যথেষ্ট অর্থ সিন্দুকে রেখে দেন তিনি । আর তার পরের প্রজন্মের জন্য বরাদ্দ করেন কিছু । কেমন বুঝলি না তো ? 

আচ্ছা খুলে বলি তার আগে নেমে যেতে হবে এই সরু পাথরের রোল সিড়ি বেয়ে নিচে । খুব সাবধান কিন্তু । এই পাথরের খাঁজে আছে ধাতব ব্লেড । একটু অসাবধান হলেই নিশ্চিত মৃত্যু । 

আমি ঘনাদার কথা শুনে অবাক । ওকে ধীরে ধীরে অনুসরন করে ওই পদ্মাসনের নিচের সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে নামতে নামতে ভাবলাম পালি ভাষা ও দাদা জানে !

লোকটা পালি ভাষায় কেন লিখল সবটা ? যদি তার বংশজ সেটা না পড়তে পারে ? যদি অন্য কেউ পড়ে ফেলে ?

সরু রোল প্যার্টান সিড়ি বেয়ে নেমে এলাম নিচে । কালো পাথরের মেঝেতে সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়েছে । চারদিকে ছড়িয়ে আছে মোহর আর মোহর । এতটুকু তার জৌলুস কমেনি এখানে এত বছর ধরে পড়ে থাকার পরেও । 

দাদা আমাকে বলল , বাবলু দেখ এই সিড়ির পাথরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে ব্লেড । যাতে সময় না হলে কেউ না নামতে পারে এখানে । 

আমি বিষয়টা খুলেই বলি তাহলে । জেনে ফেল চটপট ।

শ্যামাপদ ব্যানার্জির পাঁচ পুরুষ অর্থাৎ রায়বাহাদুর কিংশুক ব্যানার্জী নিজের বুদ্ধি দিয়ে এমন এক কুবের যন্ত্র তৈরি করেছেন যেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ে খোলে। তখন মূর্তি নেমে আসে নিচের দিকে আর মূর্তির ভারের সমান মোহর উঠে যায় উপরে । মোহর তুলে নেবার পর মূর্তি আবার যথাস্থানে ফিরে যায় । কিন্তু কেউ চাইলে টপ করে সরাসরি এই খাজানাতে ঢুকতে পারবে না । আমি পদ্মাসনের সেই সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করতে সফল হয়েছি যার প্রক্রিয়া উনি লিখে যাননি। আমি আইডিয়া করে ওই ধাতব পদ্মর সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করেছি । তাতে সরাসরি সুড়ঙ্গ খুলে গেছে । আর কোনদিন আগের মত মূর্তি নেমে মোহর উঠবে না । সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করতে সব স্প্রিং চেম্বার নিজের পজিশন পাল্টে ফেলেছে । এবার আর মরবে না আর মূর্তি সরে গিয়ে অল্প অল্প করে মোহর ও উঠবে না । জমিদার প্রজাকে লুণ্ঠন করে রায়বাহাদুর হয়ে মোহর জড়ো করে । সেটা যদি কোন বংশজ শেষ করে দেয় লুটেপুটে তাই অল্প করে দেবার তালে এত ফন্দি । এখন এই মোহর সরকারের প্রাপ্য তাই সরকার এর দখল নেবে । যেটা মানুষের কাজে লাগবে । 


দাদার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম , কিন্তু ওই কঙ্কাল আর খুনটা কেন হয় ? যদি পালি ভাষা দিয়ে লিখেছে তো আগের বংশজরা কি মোহর পেয়েছিল ? শ্যামাপদ বাবু আমাদের কেন ডাকলেন ?

ঘনাদা : আগের কোন বংশজ মোহর পায়নি । পেয়েছে ভৈরব সিং এর বংশজ। তারা এদের পারিবারিক ভৃত্য । যখন মন্দির বানানো হয় তখন সম্ভবত সবটা ভৈরবের পূর্ব পুরুষ জানত । আর সে তখন থেকে জেনারেশন টু জেনারেশন এই ভাষার প্রচলন করে । তারা জানে কখন মোহর উঠে আসে আর মূর্তি গায়েব হয় । কতটা সময় পর সেটা আবার যথাস্থানে ফেরে । কিন্তু কোন ভাবে তারা সবটা এক সাথে দখল পায়নি। কারণ সুড়ঙ্গর স্প্রিং কোথায় আর সেটা কি করে নিষ্ক্রিয় করবে সেটা একমাত্র যে বানিয়ে ছিল সেই জানতো।

রায়বাহাদুরের বংশের কেউ সঠিক তথ্য কোনদিন পায়নি । তারা বারবার একই সমস্যায় পড়েছেন। দেবী মূর্তি গায়েব হয়েছে আর আবার সেটা যথাস্থানে এসেছে । কেন এসেছে বা কেন গেছে কেউ জানতে পারেনি । রায়বাহাদুরের পুত্র ছিলেন বিলাসী । তিনি নিজের সন্তানদের প্রতি দায়বদ্ধতা রাখেননি । তাই তারা কোন তথ্য ঠিক করে পায়নি কোনদিন । এদিকে ভৈরবরা একে একে বংশ পরম্পরায় পেয়েছে মোহর । ওই টানেলের লাশটি সম্ভবত কোন ট্রাভেলারের । তার সাথে কাকতালীয় ভাবে ঘটনা ঘটে । টিলা থেকে সে গুপ্ত পথ পায় তার পর সেদিকে অগ্রসর হতেই পথে তার মৃত্যু হয় মাথায় চোট পেয়ে বা মিথেনের প্রভাবে । কঙ্কাল অনেক পুরনো বোঝা যায় , তাছাড়া ওই ঘড়িটা পর্যবেক্ষণ করে আমার ওটাই মনে হয়েছে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy