Rima Goswami

Action Crime Thriller

3  

Rima Goswami

Action Crime Thriller

www র ফাঁদে

www র ফাঁদে

5 mins
237


কালামকে বললাম বাবলিকে আমি কিভাবে চিনি বা শখেরবাজারে গজেন্দ্র এন্ড সন্স এর কথাটা । বাবলির বাবার আমাকে ওই আমতাতে কিছু একটা চলছে সেটা জানবার কথাটাও । কালাম আমাকে বললেন , " বন্যা আপনি হাবলদার কেন ? আপনাকে তো আমাদের ডিপার্টমেন্ট এ থাকা দরকার । যে কাজটা বড়বাবু বা মেজবাবুর করা উচিত ছিল সেটা আপনি করে ফেলেছেন ! "

আমার ধারণা ছিলনা কোনদিন এই বন্যা আইচের জন্যও কেউ দুটো ভালো কথা বলতে পারে ! আমার কান্না আসছিল আমি লুকিয়ে নিলাম । কালাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমি উইগ সমন্ধিত এত কিছু তথ্য এত তাড়াতাড়ি কি করে জানলাম । আমি আমার গয়না আনার টাকা দিয়ে ফোন কেনা থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের অন্তর্জালকে করাগত করে তথ্য জানার বিষয়টা খুলেই বললাম কালামকে । কালাম আমাকে বললো আগে আমরা গজেন্দ্র এন্ড সন্স যাবো । ওখান থেকে সরাসরি সবটা ক্লিয়ার করে তবেই আমতা যাবো । কারণ খুব চান্স আছে আমতার ওই লোকেশনে একটা বড় চক্রের হদিস পাবার । আমাদের সিভিল ড্রেসে যেতে হবে তাই কালাম আমাকে চেঞ্জ করে আসতে বললো । কালাম নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করবে এই স্ট্রিং অপারেশনে আর ওর পোশাকও সিভিল ।আমি আমার রং চটা সালোয়ার কামিজটা পড়তে জীবনে এই প্রথম লজ্জিত বোধ করলাম । কালাম আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো । প্ল্যান এ এন্ড বি দুটোই রেডি । আমাদের একটু দূরে ফলো করবে দুটো পুলিশের গাড়ি । দরকার পড়লে ওরাও জয়েন করবে । গাড়িতে যেতে যেতে আমি অবাক হয়ে গেলাম কালাম একবারও রাস্তা ভুল না করে সোজা শখের বাজারের ওই ফ্যাক্টরির দিকে এগোচ্ছে । কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে কালাম বললো ও গুগল ম্যাপ ফলো করে এগোচ্ছে । ম্যাপে নাকি ও কোনদিকে যেতে চায় সেটা বলে দিয়েছে । আমি ভাবলাম আমার এখন অনেক শিখতে বাকি আছে । মনে মনে ভয় ও পাচ্ছি মায়ের সামনাসামনি হবো কি করে ? মা তো খুঁজবে কানেরটা ! মা বোঝেও না যে তার কালো খেদি মেয়েকে যখন চাকরির লোভেও কেউ বিয়ে করছে না তখন গয়নার লোভেও করবে না । মা বেকার নিজের মাথাটা খারাপ করছে সঙ্গে আমারটাও । মনের উদ্ভট চিন্তার মাঝে কালাম বললো ," জানেন বন্যা এই উইগের ব্যবসাটার প্রচুর রমরমা এখন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে । গজেন্দ্র নামক এই কোম্পানি আশা করছি কোন বড় দাঁও মেরেছে । তার জন্যই মেয়েদের তুলেছে । বাবলিকেও তুলেছে আর গরিব অসহায় মেয়েটাকে আইনের সামনে দোষী সাজিয়ে নিজেরা পিঠ বাঁচিয়ে চলছে । "

কথা শেষ হবার আগেই পৌঁছে গেছি ফ্যাক্টরির কাছে । বড় লোহার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটির লোক । তাদের বললাম গজেন্দ্র বাবুর সাথে দেখা করবো । সে বললো অপেক্ষা করতে বাবুকে খবর পাঠাচ্ছে । কিছুক্ষণ পর অনুমতি পেলাম ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে দেখা করার । সুসজ্জিত অফিসে ঢুকতেই দেখলাম পেট মোটা একটা লোক বসে আছে আরামকেদারাতে । উনি কালামকে নিজের বিপরীত দিকে রাখা চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু আমাকে বললেন না । কালাম আমাকেও বসতে ইশারা করলো । গজেন্দ্র বাবু জানতে চাইলেন আমাদের আসার কারণ । কালাম নিজের পরিচয় দিল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আর আমার দিকে ইশারা করে জানালো আমাকে ও রাস্তায় পেয়েছিল কয়েকদিন আগে অসহায় ।

গজেন্দ্র বললেন , " বলুন কালাম জি আমি কি উপকার করতে পারি ? "

কালাম আমাকে বললো একটু বাইরে অপেক্ষা করতে ওর গজেন্দ্র বাবুর সাথে ব্যক্তিগত কথা আছে । আমি খুব জানি কালাম কি বলবে এবার তাই সুরসুর করে বেরিয়ে এলাম বাইরে । কালাম গজেন্দ্রকে বুঝিয়ে দিল যে সে একজন দালাল । আর আমি বাংলাদেশ থেকে বর্ডার পার করে চলে এসেছি এখানে । কালাম আমাকে বর্ডারের কাছ থেকে পায় ও ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানে এনেছে । কালামের কাছে খবর আছে গজেন্দ্র বাবু নারী পাচারের সাথে যুক্ত । তাই সে আমাকে নিয়ে এখানে এসেছে সওদা করতে ।

গজেন্দ্র প্রথমটা কপচায়নি , তারপর আমার ওই জেলো পোষাক দেখে কিছুটা বিশ্বাস করেছে গল্পটা আর কিছুটা কালামের স্মার্টনেসের কামাল ।

গজেন্দ্র জানায় তাদের কাছে চীন থেকে একটা বড় টেন্ডার এসেছে । এবং সেটার ভরপাই করার জন্য তার কেশবতী মেয়েদের প্রয়োজন । সেই জন্য সে কিছু মেয়েকে তুলেছে আর তার আমতার গুদামে তাদের রেখেছে । ওদের মাথায় বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো তেল লাগিয়ে ধান উৎপাদনের মত চুল উৎপাদন করছে ও সেই দিয়ে সুন্দর সুন্দর পরচুলা বানাচ্ছে । তবে ওই যে তেলটা ব্যবহার হচ্ছে তার কেমিক্যাল রিয়াকশন আছে তাই মেয়ে গুলো স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যাবে । মোটামুটি কয়েক মাস ওদের ব্যবহার করে নেবে গজেন্দ্র । তারপর অর্ডার কমপ্লিট হয়ে গেলে মেয়ে গুলোর অর্গান বেচে ওদের গণ কবর দিয়ে দেবে কোথাও । কালামকে গজেন্দ্র জানালো সে আমার জন্য বেশি দাম দিতে পারবে না কারণ আমার মাথায় চুল কম । আর হেয়ার গ্রোথ কম হওয়াতে আমাকে নিয়ে ওরা বেশি চুল প্রোডিউস করতে সক্ষম হবে না । তবে হ্যাঁ পরে অর্গান বেচে কিছু পাওয়া যাবে । কালাম বলে সে মোটামুটি একটা দাম পেলেই ছেড়ে দেবে । গজেন্দ্র বলে এক লাখ টাকা সে দেবে । কালাম বলে দেড় লাখে ডিল ফিক্স করতে । গজেন্দ্র রাজি হয়ে যায় । ওর সব বয়ান ফোনে রেকর্ড হয়ে যায় আর সেটা সরাসরি পৌঁছে যায় হেড কোয়ার্টারে । চাইলে এখনই গজেন্দ্রকে এরেস্ট করা যায় নারী পাচার , অর্গ্যান ব্যবসা আর হেয়ার অয়েলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল দেওয়ার অপরাধে কিন্তু গোটা চক্রটাকে ধরতে আমরা নাটকটা চালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে এসেছি । গজেন্দ্র কালামকে বলে তার সাথে মেয়েটিকে নিয়ে আমতা যেতে হবে । মেয়েকে আমতার গোডাউনে পৌঁছে টাকাটা সরাসরি পেয়ে যাবে কালাম । কালাম হাতে চাঁদ পায় , ও তো এটাই চেয়েছিল । আমি বোকা সেজে চুপচাপ বাইরে বসে আছি আর কাঁচের ওপারে নিজেকে বিক্রি হতে দেখছি। এখন দারুন এক্সাইটেড আমি আর মায়ের ভয়টা ভেতরে নেই । ভাবছি এত বড় একটা চক্রের হদিস পেতে আমিও আছি , একটা সাধারণ হাবলদার । নিজেকে কেমন ঘ্যাম লাগছে আজ ।

কালাম বেরিয়ে এলো গজেন্দ্র বাবুর সাথে । আমাকে নিয়ে ওরা দুজন রওনা দিল আমতার দিকে । গজেন্দ্র লক্ষ্য করলো না যে কিছু দূরে দুটো পুলিশ ভ্যান ও আমাদের ফলো করছে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action