Rima Goswami

Action Thriller

3  

Rima Goswami

Action Thriller

www র ফাঁদে তৃতীয় পর্ব

www র ফাঁদে তৃতীয় পর্ব

5 mins
266


থানায় গিয়েই ওসির ব্যাজার মুখ আর তিরিক্ষি মেজাজের সম্মুখীন হতে হলো । যেন বন্যা হাবলদার একদিন দেরি করলেই থানার রুলস ভাঙা পড়বে । অন্যদিন যে এস আই সাহেব , ওসি সকলেই ভুঁড়ি বাগিয়ে পান চিবাতে চিবাতে বেলা বারোটা বাজার পর আসেন তার বেলা কোন দোষ নেই । যাই হোক লাথি সর্বদা নীচের তলার লোককেই খেতে হয় । আমি কিছুক্ষন এদিক ওদিক করলাম থানার মধ্যে । অপেক্ষা করছি কখন বাবু চা আনতে অর্ডার দেবেন । বেলা একটা বাজলো , চায়ের হাঁক এলো । আমিও তেবরে যাওয়া টিনের গ্লাসটা নিয়ে চললাম পানুলালের দোকান । চা চাপিয়ে পানুলাল পান সাজছিল আমি গিয়ে গ্লাসটা ঠকাস করে নামিয়ে জাঁকিয়ে বসলাম । পানু আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাছে মন দিল । আমি পকেট থেকে চকচকে ফোনটা বের করে পানুর সামনে নামিয়ে রাখলাম । আমার কাছে এমন একটা ঝাঁ চকচকে ফোন দেখে পান সাজা ছেড়ে পানুলাল ফোনটা তুলে নিল ঝপ করে । 

পানুলাল : মাইরি খাসা মাল ! এই বন্যা কোথাকে পেলি ? কিনলি ? 

কিনলাম পানুলাল ... এবার একটা কাজ করে দিতে হবে । আমাকে ফোনটা শিখিয়ে দিতে হবে । 

পানুলাল : কত নিল রে ? খাওয়াতে হবে কিন্তু । 

সাত হাজার নিল পানু । আর এখন খাবো খাবো করবি না । অনেক টাকা খরচে গেল । খাওয়াব পরের মাসে প্রমিস । 

পানু বললো চা পৌঁছে দিয়ে সময় নিয়ে আসতে । আমি তাড়াতাড়ি থানা গিয়ে কাপ প্লেটে চা ঢেলে ওসিকে দিয়েই ছুটলাম চা দোকানে । পানু চা দোকানি হলেই বা , শালা হেব্বি চালু । সুন্দর ভাবে আমাকে শিখিয়ে দিল কি করে নেট অন করতে হবে । তারপর জি লেখা ওই লোগোটি খুলে দিলেই ব্যাস জাদুর পিটারা খুলে যাবে । গুগল খুলে লিখে দেওয়া যাবে আমি যেটি সমন্ধে জানতে চাই আর বেশি কুঁড়েমী লাগলে একটা মাইকের মত চিহ্ন আছে সেটা চেপে ধরে বলে ফেল কি বলতে চাও । ঠিক যেন হাতের মুঠোয় ভূতের রাজা .. যা চাইবে তাই পাবে । এই ভূষকো পটল বন্যা আইচ টেনেটুনে বি এ পাস , বাপ মরার চাকরি করে তবে পানুলালের ট্রেনিং এ আমি কিন্তু www র অন্তর্জালকে করাগত করে ফেললাম দ্রুত ।

পানু আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খুলে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আপাতত আমার মাথায় চলছে অন্য হিজিবিজি । তাই পানুকে বললাম এটুকু হলেই আমার এখন চলবে । 

আমি ফোনের কারিকুরি শিখে , পানুকে একদিন পোলাউ খাওয়াব কথা দিয়ে ফিরে এলাম । থানায় এসে শুনি বাবলির কেসটা নিয়েই কথা চলছে । যদিও কেসটা অন্য থানার তবুও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স নাকি নেটওয়ার্ক ট্রেস করে আমতার দিকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আমার বুকে হাতুড়ি পড়লো । এরা তো এবার আমতা যাবে , তারপর ? 

ওসি আমাকে দেখে বললেন , এই যে বন্যা আইচ ও চলে এসেছে । যাক সময় পেয়েছে আড্ডা দিয়ে কাজে ফিরতে । আচ্ছা বন্যা তুমি আমাদের নতুন ইনভেস্টিগেটর অফিসারের সাথে যাবে আমতা । উনি কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবেন তুমি রেডি থাকো । আর হ্যাঁ বাড়িতে জানিয়ে দেবে হয়ত আজ বা কাল তুমি নাও ফিরতে পারো । 

ইনভেস্টিগেটর আসার ফাঁকে এক টিফিন বক্স খাবার সাঁটিয়ে আমি বসে গেলাম ফোন নিয়ে । গুগলে সার্চ করতে শুরু করলাম অপটু হাতে উইগ নিয়ে । উইগের আন্তর্জাতিক মার্কেট , আমদানি রফতানি , কেমন ধরেনের চুলের আছে সবটা জানলাম । শখেরবাজারের কাছে বাবলিদের চুলের তেলের কারখানা আর উইগের কারখানার লোকেশন ও দেখলেন এই ফাঁকে । পুলিশ কেন যে বাবলিকে নারী পাচারের সাথে জড়িয়ে দিল কে জানে ? কোনভাবেই এই চুলের কোম্পানির নাম কিন্তু জড়ায়নি । কি মনে হতে একবার বাবলির ফোন নাম্বার লেখা চিরকুটটা পার্সের ভিতর থেকে বের করে ডায়াল করলাম । না ফোনটা বাজছে কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না । স্যার কি বলছিল যেন ? জি পি এস ট্র্যাক ... হম্ম ওটা কি করে ব্যবহার করে দেখি । না পারলাম না ফোনটা ট্রেস করতে । এই ফোন থেকে হবে না ওটা তো পুলিশের স্পেশাল জিপি এস ট্রাকর । 

ইন্টারনেট সার্চ করে যেটুকু খবর পেয়েছি তাতে বাবলিদের কোম্পানির নাম গজেন্দ্র এন্ড স্বন্স । ওই নামেই তেলের ফ্যাক্টরি ও চলে আবার উইগ কারখানাও চলে । ওদের তেলের মার্কেট ভালো । এদিকে পরচুলা বানাতে যে গোড়া সুদ্ধু চুলের প্রয়োজন সেটা কালেক্ট করতে ওদের এজেন্সির লোক আছে । তারা আনুমানিক চার হাজার টাকা কিলো দরে চুল কিনে বেড়ায় পাড়ায় পাড়ায় । বেশিরভাগ লোকেরই ধারণা নেই আন্তর্জাতিক মার্কেটে কি দর বা চাহিদা চুলের । তাই অনেকেই সস্তা স্টিলের বাসনের পরিবর্তে চুল দিয়ে দেয় । কোম্পানির তেল বানাবার সরঞ্জাম গুলি নিয়ে একটা কেস ও হয়েছে সম্প্রতি । এই নিয়ে জলঘোলা ও হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে । ব্যাপারটা দেখতে হবে আলাদা করে । কিন্তু বাবলিকে হঠাৎ করে এই ভাবে ফাঁসান হলো কেন ? তাও মেয়ে পাচার কান্ডে ! এখন পয়লা কাজ ওই কোম্পানির মালিকের সাথে কথা বলা ও বাবলির সহকর্মীদের একটা জেরা করা । কিন্তু বাবলির বাবা আমতার কথা বললো , এদিকে পুলিশের কাছেও আমতার খবর ... ব্যাপারটা একটু গোলমেলে । তাহলে কি আমতার কোন জায়গাতে মেয়েদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে ? 

ভাবতে ভাবতে টেবিলে বসে ভাত ঘুমটা অভ্যাসমত চলেই এসেছিল । আসলে গোয়েন্দা হতে চাইলেই হয়না , শরীরটা ব্যাগরা দেয় । 

টেবিলে ধুম ধুম করে চাপ্পর পড়তেই ঘুম চটকে গেল । মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি হিরো মার্কা পুরুষ । মুখটা গম্ভীর করে জিজ্ঞাসা করলাম , হোয়াট হ্যাপেন ? 

লোকটা বললো , আমি ইনভেস্টিগেটর কালাম । 

বাবারে এতো আমার বস । উঠে দাঁড়িয়ে একটা পাল্লায় সেলাম ঠুকলাম । নিজের পরিচয় ও দিলাম। স্যার আমার চেয়ারটা ঠেলে বসে গেল । 

উনি আমাকে বললেন , আমাকে স্যার বলার দরকার নেই বন্যা। কালাম বলতে পারো , কাজ করতে কমফোর্ট ফিল করবো । 

আমি মাথা নেড়ে দিলাম টিকটিকির মত । 

কালামের পরনে একটা ডেনিম প্ল্যান্ট , সাদা শার্ট । খুবই স্মার্ট আর সুন্দর কালাম , ঠিক যেমন সিনেমার পুলিশ গুলো হয় । আমাদের থানার পুলিশ গুলো তো কার্টুনের মোটু , বাটুল দি গ্রেটের বাটুলের মত । কালামকে বেশ পছন্দ হয়ে গেল আমার এক দেখাতেই । এমন কোনদিন আগে হয়নি । ধ্যাৎ কি ভাবছি কি ? এখনই যেতে হবে এর সাথে আমতা । মাকে ফোন করলাম একটু সরে গিয়ে । জানালাম আজ হয়ত ফিরব না । মা জিজ্ঞাসা করলো সোনার কানেরটা নিয়েছি তো ? আমি এড়িয়ে গেলাম । ফোনটা কেটে ফিরে এলাম সিনিয়র বসের কাছে । কালাম আমাকে বললো , আপনি রেডি বন্যা তাহলে এবার আমরা বেরিয়ে যাবো । 

আমি বললাম , স্যার .. এই সরি কালাম বলছি যে বাবলিকে আমি পার্সোনালি চিনি । কিছু বলতে চাই যদি রাগ না করেন । 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action