তিন্নি
তিন্নি
ক্যাম্পাস ইনটারভিউয়েই হয়ে গিয়েছিল তিন্নির চাকরিটা। একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পোস্ট। এখন তিন্নি তার পোশাকি নামে পরিচিত, মানে মিস সুতনুকা চ্যাটার্জি। সেই ছোট্ট তিন্নি এখন তৈরি চাকরি জীবনে উন্নতির সিঁড়ি ভাঙ্গার জন্য।
ওর ফাইনাল টার্মের প্রোজেক্টটা মানে যেটা ও বানিয়েছিল গ্রামের দুস্থ মহিলাদের সাহায্য করার জন্য, সেটা খুবই প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু ওর সমাজসেবী সংস্থা বানানোর যে পরিকল্পনা ছিল সেটা খুব একটা সফল হয় নি। ও খুব ভালোবেসে তার নাম দিয়ে ছিল “মৃত্তিকা”। সংস্থা রেজিস্টার ও করেছিল । আশ্রমের মেয়েদের হাতের কাজ বিদেশে বিক্রি হতে শুরু হল। দুয়েকটা অর্ডার আসতে শুরু করলো । কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পাড়ার কিছু ছেলে এসে দেখা করলো তিন্নির সাথে।
“ দিদি সুনলাম আপনি একান কার মেয়েদের হাতে তৈরি জিনিস বিদেসে বিক্রি বাটা করচেন?”
“ হুম।“
“ তা আমরা পাড়ার বেকার ছেলেরা রইচি, তাদের জন্যেও আম্নি কিচু করেন।“
“ কিন্তু আমি তো...... তা আপনারা কি তৈরি করেন?”
“ না , দ্যুর, আমরা কি মেয়েছেলে নাকি যে কাঁটা নিয়ে উল বুনবো। আমরা বলচিলাম, এই যে এত কাজ হচ্চে, আমরা যদি এর কাঁচামাল গুলো সাপ্লাই করতাম। তাহলে আম্নি কম দামে জিনিস পেতেন আর আমরাও টু পাইস ... হে হে ... বুঝতেই তো পারছেন।“
তিন্নি একটু ইতস্তত করে সেঁজুতি মামমামের দিকে তাকাতেই দেখল উনি চোখের ইশারায় না বলছেন। ও সঙ্গে সঙ্গে ছেলেগুলিকে হেসে বলল, “ আসলে এখন তো আমাদের কাছে সাপ্লায়ার আছে, আপনারা একটা কাজ করুন না যা যা আপনারা সাপ্লাই করতে চান তার একটা প্রাইস লিস্ট নিয়ে আসুন। আমরা মিলিয়ে দেখি।“
“ ও ...... প্রাইস লিস্ট। ঠিক আছে।“ খুব অখুশি মুখে ছেলে গুলো ফিরে গেল।
ওরা চলে যেতেই সেজুতি মামমাম আর ক্লাসের মেয়েরা তিন্নিকে ঘিরে ধরল।
“তুমি জানো না দিদি ওরা খুবই সাংঘাতিক। ওদের সঙ্গে এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের সাঁট গাঁট আছে। ওরা যখন একবার টাকার গন্ধ পেয়েছে......”
“কিন্তু আশ্রম তো আর নতুন নয়, আর তোমরাও তো অনেকদিন ধরেই এই কাজ করছ তাহলে?” অবাক হয়ে বলল তিন্নি।
“ তুমি ঠিকই বলেছ। আসলে ওরা আমাদের গুরুদেব কে ভয় পায়। ওনার অনেক লোকের সঙ্গে জানাশোনা আছে। তাই এতোদিন আমাদের আশ্রমে আসতে সাহস পায় নি। কিন্তু এখন তোমাকে দেখে ওদের সাহস বেড়েছে। দাঁড়াও গুরুদেব কে বলছি।“
তিন্নি সেদিন বাড়ি চলে এসেছিল। নানা কাজে ওর ওই ছেলেগুলোর কথা মনে ছিল না। ও আর আশ্রমে ফোনও করেনি। পরের সপ্তাহে ও নিয়ম মতো রওনা হল আশ্রমে। বাস থেকে নেমে বেশ খানিকটা রাস্তা রিক্সা করে যেতে হয়। ও রিক্সা স্ট্যান্ডে গিয়ে একটা রিক্সায় চড়ে বসলো। আশ্রমে যাবার পথে একটা তেঁতুল তলার সামনের রাস্তা টা বেশ নির্জন। ওইখানে হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এসে রিক্সাটাকে দাঁড় করাল। ছেলেগুলোকে দেখে তিন্নির চিনতে কোনো অসুবিধা হল না, এরাই এসেছিল আগের দিন আশ্রমে।
“ এটা কি ঠিক করলেন দিদি?”
অবাক হয়ে তাকাল তিন্নি।
“ মুখখানা তো এমন করে আচেন যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেনা। গুরুদেবকে দিয়ে আমাদের ঝাড় না খাওয়ালেই চলছিলো না, না?”
“ গুরুদেবকে? বিশ্বাস করুন আমি কিন্তু গুরুদেবকে কিছুই বলিনি।“
“ উঃ ! একেবারে ভালো মানুস, কিচ্চু জানেনা। ন্যাকামি হচ্চে? “
“ ভদ্র ভাবে কথা বলুন। “ না চেয়েও গলাটা চড়ে গেল তিন্নির।
“ ভদ্রতা দেখাচ্চেন?” বলেই একটি ছেলে ওর হাতটা চেপে ধরল। ক্যারাটে জানা তিন্নি ছেলেটির হাতটা দিল মুচড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিন্নির সঙ্গে ওই ছেলেগুলোর একটা খণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। বিপদ বুঝে রিক্সাওয়ালা রিক্সা নিয়ে রওনা দিল। চোখের কোন দিয়ে ব্যাপারটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তিন্নি। ও দেখল আর কেউ নেই, ওকে একাই লড়তে হবে। জিন্সের পকেট থেকে মোবাইলটা টেনে বার করলো তিন্নি। আশ্রমের নম্বরটা স্পীড ডায়ালেই রাখা আছে। একহাতে ছেলেগুলোকে আঁটকে অন্য হাতে নম্বরটা ডায়াল করলো তিন্নি। কানে দিয়ে শুনলো নম্বরটা বেজে যাচ্ছে। মুহূর্তের অন্যমনস্কতায় একটা ঘুষি এসে লাগলো তিন্নির চোয়ালে। চোখের সামনে অন্ধকার ছেয়ে গেলো তিন্নির।
(ক্রমশ...)