Aparna Chaudhuri

Romance Crime Thriller

3.4  

Aparna Chaudhuri

Romance Crime Thriller

তিন্নি (পর্ব ১৭)

তিন্নি (পর্ব ১৭)

4 mins
358



রাত একটার সময় এলো মেসেজটা,” কাল সকাল সাড়ে আটটায় পৌঁছে যাবেন পুলিশ ষ্টেশনে।“

শুভম তখন বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিল। চোখের সামনে খালি তিন্নির মুখটা ভাসছে। ওকে পাওয়া গেছে কিন্তু ওর বাবা মাকে সে কথা জানানো হয়নি। এটা কি উচিৎ? ওনাদের জানার অধিকার আছে। কিন্তু তাতে যদি তিন্নির বিপদ হয়?

মেসেজটা দেখে ও একটা মেসেজ পাঠালো ইন্সপেক্টর বিজয়কুমারকে,” আমি কি তিন্নির বাবা মা কে জানাতে পারি তিন্নির কথা?”

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো,” নো। আমরা কাল সকালে জানাব।“

পরেরদিন শুভম পুলিশ ষ্টেশনে পৌঁছে দেখলো তিন্নির বাবা মাও ওখানে বসে আছেন। ওকে দেখেই দুজনে উঠে এলেন।

“তিন্নি ঠিক আছে তো? ভয়ের কিছু নেই তো?” দুজনে একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন।

শুভম ওদের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে শান্ত করলো।

হাসপাতালে মা বাবাকে দেখে তিন্নি কি করবে ভেবে পেলো না। আজ তিন্নি অনেকটা সুস্থ। 

ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার এসে তিন্নির বাবা মা কে বাইরে বসতে বললেন।

“ আপনি যেখানে ছিলেন সেই জায়গাটা কোথায় বলতে পারবেন?”

তিন্নি যতটা সম্ভব জায়গাটার বর্ণনা দিল।

“ আর ওখানে কতজন লোক ছিল?”

“ আমি যতদূর দেখেছি, তিন থেকে চারজন লোক আর ওই মহিলা আর তার বাচ্ছা। “

“ আপনি ওই লোকেদের মধ্যে কাউকে দেখলে চিনতে পারবেন?”

“ না । আমি ওদের কাউকে দেখিনি শুধু গলা শুনেছি।“

“ হুম।“

ইন্সপেক্টর তক্ষুনি শুভমকে নিজের টিমের সঙ্গে পাঠালেন সেই জায়গাটা খুঁজে বার করে রেড করতে।

বিজয়কুমার এরপর তিন্নিকে যে কথাটা জিজ্ঞাসা করলেন সেটা শুনে তিন্নি একটু অবাক হয়ে গেল।

“ আচ্ছা আপনি আমায় একবার বলেছিলেন যে আপনি রোজির একজন বয় ফ্রেন্ড কে দেখেছিলেন।“

“ হ্যাঁ।“

“ আপনি তাঁর চেহারাটা মনে করতে পারেন?”

“ হ্যাঁ , পারি।“

“ তাহলে আমি আমাদের স্কেচ আর্টিস্ট দের আপনার কাছে পাঠিয়ে দেব। ওরা আপনার বর্ণনা শুনে একটা স্কেচ বানাবে। আচ্ছা ওই লোক দুটো যারা শেষদিন রোজি কে পৌঁছতে এসেছিল। তাদের কেমন দেখতে আপনার কি মনে পড়ে?”

“ আসলে আমি তাদের মুখ দেখতে পাইনি পরিষ্কার ভাবে। তারা অন্ধকারে ছিল।“

“ ওকে নো প্রবলেম। আপনাকে আপনার বাবা ও মায়ের সঙ্গে আমরা একটা সেফ জায়গায় লুকিয়ে রাখব। আপনাদের একটা নতুন ফোন আর সিম কার্ড দেওয়া হবে। আপনারা শুধু আমাকে কনট্যাক্ট করতে পারেন, তবে খুব এমারজেন্সি ছাড়া আপনারা ফোন করবেন না। আর যতটা সম্ভব বাড়ীর ভিতরেই থাকবেন ।“

“ আপনি কি সন্দেহ করছেন আমার ওপর আবার অ্যাটাক হতে পারে?”

“ দেখুন , বলা তো যায় না। আমরা সাবধান থাকতে চাই।“ বললেন বিজয়কুমার।

পরেরদিন খুব ভোরবেলায় তিন্নি একটা এস ইউ ভি করে রওনা হল, একা। গাড়িটির সব কাচগুলো কালো ফিল্ম লাগানো। বাইরে থেকে ভিতরে কে বসে আছে দেখতে পাওয়া যাবে না। তিন্নিকে হাসপাতালের পিছনের রাস্তা দিয়ে, যেখান দিয়ে শববাহী গাড়ীগুলো বেরোয়, সেখান দিয়ে বার করে নিয়ে যাওয়া হল।

তিন্নি একবার ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলো, “ ঔর কোই নহি জায়েঙ্গে?”

ড্রাইভার মাথা নেড়ে না বলল।

তিন্নির খুব অস্বস্তি হতে লাগলো। কে জানে এটা ঠিক গাড়ী কিনা? যদি অন্য কোনো গাড়ী হয়?তা কি করে হবে, নার্স তো এসে বলল ওর জন্য ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার গাড়ী পাঠিয়েছেন। কিন্তু অন্য কেউ যদি মিথ্যে বলে ওকে নিয়ে যায়। এই গাড়ীটাতে কোন পুলিশ নেই, পুলিশের কোন চিহ্নও নেই। অনেক ভেবে ও ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলো, “ আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

“ ইয়েরকাডের কাছে একটা গ্রামে। সেখানে একটা গেস্ট হাউস আছে।“

গাড়ীটা শহর পেরিয়ে হাইওয়েতে পড়লো। চমৎকার রাস্তা। আর সেরকমই চমৎকার বাইরের দৃশ্য। কিন্তু তিন্নির সেই সব দেখার কোন উৎসাহ নেই। ধীরে ধীরে ঘরবাড়ীর সংখ্যা কমে সবুজের পরিমান বাড়ছে। তা দেখে আনন্দ হবার চেয়ে তিন্নির টেনশন বাড়ছে।

শেষে ও জিজ্ঞাসা করলো ড্রাইভারকে,” আচ্ছা আপনাকে কে পাঠিয়েছে বললেন যেন?”

ড্রাইভার মুচকি হেসে জবাব দিল,” ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার। আমি এস আই নাগার্জুন। সাদা পোশাকে আছি। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনার মা বাবা অন্য গাড়িতে স্পটে পৌঁছবেন। সিকিউরিটির কারণে এই ব্যবস্থা।“

তিন্নি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর চোখে নেমে এলো ঘুম। ঘুম ভাঙ্গলো ড্রাইভারের ডাকে,” ম্যাডাম উঠিয়ে। হাম পঁহচ গয়ে।“

ধড়মড় করে জেগে উঠে বসতে গিয়ে সিট বেল্টে আটকে গেল তিন্নি। নিজেই হেসে ফেলল ও।

ওর বাবা মা আগেই পৌঁছে গেছে। ওকে দেখে ওরা হৈ হৈ করে উঠলো।

এস আই নাগার্জুন ওদের সাবধান করে দিল,” আপনারা যতটা সম্ভব বাংলোর ভিতরেই থাকার চেষ্টা করবেন। বারান্দায় বা বাগানে না বেরনোই ভালো। বাংলোটা আমাদের লোকেরা গার্ড দিচ্ছে। এখানের সব কাজের লোকই আমাদের লোক। কোন এমারজেন্সি হলে ইন্সপেক্টর বিজয়কুমারকে এই নম্বরে ফোন করবেন। নিজেদের মোবাইল সুইচ অফ রাখবেন আর ফোন করার জন্য এই নতুন মোবাইল ব্যবহার করবেন।“

একটা নতুন মোবাইল ফোন ওদের হাতে দিয়ে, নিজের লোকেদের কিছু নির্দেশ দিয়ে নাগার্জুন চলে গেলেন। 

তিন্নি দেখলো বাংলোটা খুব সুন্দর। সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি। বড় বড় ঘর। কাঠের মেঝে, কাঠের ছাদ। সঙ্গে অ্যাটাচ টয়লেট। ঘরে টিভি, টয়লেটে গিজার। ব্যবস্থা খুব ভালো।

তিন্নির মা আলমারিতে নিজেদের জিনিষ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

“ মা কি এতো গোছাচ্ছ? আমরা কদিনই বা আছি এখানে?” ক্লান্ত ভাবে বলল তিন্নি। এখনও ওর শরীরটা ঠিক নেই।

“ তা ঠিক। কিন্তু ওটা অভ্যাস। আমি রাতে তোর কাছে থাকব। “ তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল ওর মা।

“ ঠিক আছে।“ বলে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো তিন্নি।

(ক্রমশ...)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance