Aparna Chaudhuri

Romance Crime Thriller

3.9  

Aparna Chaudhuri

Romance Crime Thriller

তিন্নি (পর্ব ১১)

তিন্নি (পর্ব ১১)

3 mins
331


ইন্সপেক্টর মিঃ সংগ্রাম বিজয়কুমার রোজির ঘর থেকে পাওয়া জিনিষপত্র গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন। চোখের সামনে ভাসছিল ওর ঘরটা। ঘরে ঢুকেই দরজার ডানদিকে রোজির জুতোর র‍্যাক। তাতে অন্তত তিরিশ জোড়া জুতো। সবগুলোই হাইহিল না হলে স্টিলেটো। রোজির উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। তাতেও এতো উঁচু হিলের জুতো পরার কি দরকার ছিল? জামা কাপড় বেশীরভাগই ওয়েস্টার্ন পার্টি ওয়্যার। আলমারিতে কনডোম, কনট্রাসেপটিভ পিলস ছাড়াও অ্যাসমার ওষুধ পাওয়া গেছে। বিছানায় বডি কোনাকুনি ভাবে পড়েছিল। হতে পারে যে তিন্নি মেয়েটি যা বলছে তা ঠিক। কেউ এসে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চলে গেছে।


আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফরেনসিকের রিপোর্ট এসে যাবে। মোবাইল আর কম্পিউটারের ফাইলগুলো দেখলে অনেক কিছু জানা যাবে। ভাবতে ভাবতে উনি ওর মানিব্যাগটা হাতড়ে দেখতে লাগলেন। ব্যাগের কোণ থেকে একটা বহু পুরনো ছবি পেলেন উনি । দুটি মেয়ে আর একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে ওরা স্কুল বা কলেজের বন্ধু।


ফোনটা বেজে উঠতেই ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার তাড়াতাড়ি তুললেন ফোনটাকে। ফরেনসিক থেকে ফোন। রোজি মারা গেছে ড্রাগ ওভার ডোজে। তবে ড্রাগ ওকে জোর করে খাওয়ানো হয়েছে এমন কোন লক্ষণ পাওয়া যায়নি। একাধিক পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। কিন্তু বলপ্রয়োগের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ঘরের চাবিতে একটা ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া গেছে, যেটা এখনও সনাক্ত করা যায়নি।

রোজির মোবাইল ফোনে তিনটি নম্বর থেকে নিয়মিত ফোন আসতো। একটি নম্বর ওর মায়ের। ওনাকে খবর দেওয়া হয়েছে। রোজির আর কোন আত্মীয়র কথা জানতে পারা যায় নি। দ্বিতীয় নম্বরটা একজন ড্রাগ বিক্রেতার। তাকে খুঁজে বার করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তৃতীয় নম্বরটা সুইচ অফ আসছে।


রোজির কম্পিউটার থেকে জানা গেছে যে ও বেশ কয়েকটি ডেটিং সাইটের মেম্বার ছিল। প্রায় রোজই ও ডেট করতে বাইরে যেতো।

বিজয়কুমার রোজির ব্যাঙ্কে ফোন করে ওর গত একবছরের অ্যাকাউন্ট ডিটেল আনিয়ে নিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা ডিটেল ইমেল করে দিল বিজয়কুমারকে। বিজয়কুমার লক্ষ্য করলেন প্রতিমাসে মায়ের নামে বেশ একটা মোটা টাকা পাঠানো হত নিয়মিত। আর মাস ছয়েক হল একটা অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত ওর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হত। 

 

রোজির মা কুর্গের কাছে একটি গ্রামে থাকে। ওর বাবা কয়েকবছর আগে মারা গেছেন। ওনাকে খবর দিয়ে আনানো হয়েছে। খুবই ভেঙ্গে পড়েছেন ওর মা। ওনার কাছেই জানা গেছে যে রোজির পরিবারে রোজিই একমাত্র পড়াশোনা জানতো। ওর বাবা ছিলেন রাজ মিস্ত্রি। ওর একটি দাদা আছে। কিন্তু তার পড়াশোনায় সেরকম মাথা ছিল না। তাই সে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। পরে সে রঙের মিস্ত্রির কাজ করতো। কিন্তু একটা বহুতল বাড়ি রঙ করতে গিয়ে সে উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। প্রানে বেঁচে যায় বটে কিন্তু শরীরের তলার দিকটা অবশ হয়ে যায়। এখন সে বাড়ীতে থাকে। জেলা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা বলেছিল যে কয়েকটা অপারেশন করলে ওর পাটা খানিকটা ঠিক হতে পারে। তাই রোজি ওর চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাতো।


ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার ওনার দিকে জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন।


“ আচ্ছা রোজি যে এতো পড়াশোনা করেছে, গ্রামের বাইরে এসে থাকা, কলেজে পড়া , এসবের তো অনেক খরচ। এসব আপনারা কোথা থেকে...”


“ আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা ওকে পড়াই নি। আমাদের চার্চের ফাদার ওর পড়াশোনার খরচ দিয়েছিলেন। ও ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছিল পড়াশোনায়।“


“রোজি কোন কলেজে পড়তো জানেন?”

উনি নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন।


বিজয়কুমার বুঝলেন এই অশিক্ষিত মহিলার কাছ থেকে এর বেশী কিছুই জানা যাবে না। তারপর কি ভেবে উনি ওই ছবিটা, যেটা রোজির ব্যাগ থেকে পাওয়া গেছে, ওনাকে দেখালেন।


উনি চিনতে পারলেন। বললেন ,” এরা দুজন ছিল কলেজে রোজির সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এরা ওদের গ্রামে বেড়াতেও এসেছিল একবার। ছেলেটির নাম রাজেশ। মেয়েটির নাম......” বেশ খানিকক্ষণ ভাবার পরও উনি মেয়েটির নাম মনে করতে পারলেন না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance