তিন্নি ( পর্ব ১৩)
তিন্নি ( পর্ব ১৩)


শুভমের কাছে ফোনটা এলো সকাল নটা নাগাদ। ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার ফোন করেছেন,” কাল রাতে মিস সুতনুকা ফ্ল্যাটে ফেরেনি। আপনার সঙ্গে ওনার শেষ কখন দেখা হয়?”
“সেকি? আমি তো ওকে কাল রাত সাড়ে দশটা পৌনে এগারোটা নাগাদ ওকে ওদের ফ্ল্যাটের গলির মুখে ড্রপ করে দিই।“
“ আপনি একবার আসতে পারবেন? আমরা তাহলে আপনাকে সঙ্গে নিয়ে স্পটটা দেখতে যেতাম।“
“ নিশ্চয়ই! আমি হাফ অ্যান আওয়ারের মধ্যে পৌঁছচ্ছি।“
ইন্সপেক্টরের ফোনটা কেটে দিয়ে শুভম অফিসে একটা ফোন করে বলে দিল যে ওর আজ পৌঁছতে দেরী হবে। তারপর গাড়ী ঘুরিয়ে রওনা হল পুলিশ স্টেশনের দিকে।
ওখানে পৌঁছে দেখলও মৃগনয়নাও বসে আছে । ওকে দেখে মৃগের চোখে মুখে ফুটে উঠলো একটা শঙ্কার ছাপ। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেও শুভম মুখে কিছু বলল না। ইন্সপেক্টর শুভমকে ইশারা করে ঘরের বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন।
মিনিট পনেরো পরে যখন মৃগ ওনার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তখন ওর চোখমুখ বেশ ফোলা, দেখে মনে হল ও কাঁদছিল।
একটু বাদেই শুভমের ডাক পড়লো ইন্সপেক্টরের ঘরে।
ও ঘরে ঢুকতেই ইন্সপেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন,” আপনি কতদিন চেনেন মৃগনয়না
আর রোজানাকে?”
“ ওরা দুজনেই প্রায় একই সঙ্গে জয়েন করে আমাদের অফিসে। তা প্রায় বছর তিনেক হবে। কেন বলুন তো?”
“ আর সুতনুকাকে?”
“ সুতনুকা তো এই কয়েকদিন হল জয়েন করেছে। ও কোলকাতার মেয়ে। আমি ওকে অফিসেই প্রথম দেখি। “
“ আপনি কি জানেন ওরা কেউ কাউকে আগে থেকে চিনতো কিনা?”
“আমি বলতে পারব না।“
“ আপনি কি সুতনুকাকে চিনতেন আগে? সত্যি কথা বলুন মিঃ সাইনি।“
চমকে উঠলো শুভম। ইন্সপেক্টর কি ওকে সন্দেহ করছে নাকি?
“ দেখুন আমি সত্যি বলছি, আমি সুতনুকাকে অফিস জয়েন করার পরই প্রথম দেখি।“
“ সেই কথাই মিস মৃগনয়নাও বলেছিলেন। কিন্তু আমরা তো দেখছি সেটা সত্যি নয়।”
“ আমি সত্যি বলছি।“
“ ওনার বাবা মা কে ইনফরম করতে হবে। ওনার বাড়ীর ঠিকানা আর ফোন নম্বরটা আমাদের দিন।“
“ আমি এক্ষুনি অফিস থেকে জেনে বলে দিচ্ছি। “
“চলুন আপনি কোথায় কাল ওনাকে নামিয়েছিলেন সেটা দেখাবেন।“
শুভমের দেওয়া ফোন নম্বরটা একজন অফিসারকে দিয়ে তিন্নির বাড়ীতে জানাতে বলে উনি বেরোলেন পুলিশ স্টেশন থেকে।
শুভম ওনাকে দেখিয়ে দিল জায়গাটা। এখন দিনের বেলায় ওখানে অনেক লোকের চলাচল। পুলিশের নজরে সেরকম আস্বাভাবিক কিছু পড়লো না। প্রায় ওদের বাড়ীর সামনে, রাস্তার ধারে একটা ব্যাগ পড়ে ছিল। সেটা দেখতে পেয়ে শুভম চেঁচিয়ে উঠলো,” ইন্সপেক্টর এই ব্যাগটাই কাল তিন্নি নিয়ে গিয়েছিল।“
ব্যাগটার একটা হ্যান্ডল ছেঁড়া, চেন খোলা। পুলিশের লোকেরা ব্যাগটা নিয়ে ভিতরের জিনিষগুলো বার করে দেখলো, মানিব্যাগটা ভিতরেই রয়েছে।
আশপাশের বাড়ীর লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছুই জানতে পারা গেল না। শুধু তিন্নিদের বিল্ডিঙের ওয়াচ ম্যান বলল যে কাল বিকাল থেকে ও একটা টাটা সুমো গাড়ীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল রাস্তার ধারে। এরকম অনেক গাড়ীই দাঁড়িয়ে থাকে তাই ওর সন্দেহ হয় নি। গাড়ির রঙ ছিল মেরুন। গাড়িতে কালো কাঁচ লাগানো ছিল তাই ও ভিতরে কে বা কতজন ছিল তা বলতে পারলো না। ওর যখন ডিউটি শেষ হয় মানে রাত আটটায়, তখনও গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশ রাতের ওয়াচ ম্যানের ফোন নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করে জানতে পারলো যে রাত সাড়ে দশটা পৌনে এগারোটা নাগাদ সে একবার বাথ্রুমে যায়। ফিরে এসে সে আর গাড়ীটাকে দেখে নি।
“ মৃগ ম্যাডাম কখন বাড়ী ফেরে কাল?”
“ স্যার উনি বাড়ী ফেরেন রাত বারোটার পর।“
ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার জিপের দিকে রওনা হলেন।
“ ক্যান আই গো নাও?“ জিজ্ঞাসা করলো শুভম।
“যেতে পারেন কিন্তু বিনা পারমিশনে শহরের বাইরে যাবেন না।“ বললেন বিজয়কুমার।
(ক্রমশ...)