Aparna Chaudhuri

Romance Thriller

3  

Aparna Chaudhuri

Romance Thriller

তিন্নি (পর্ব ১৬)

তিন্নি (পর্ব ১৬)

4 mins
248



কোন কোন মানুষ খুব কম সময়ে আপন হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ বহুদিন পাশে থেকেও মন ছোঁয় না। কেউ একবারেই বুঝে যায় কি বলা হচ্ছে, আবার কেউ বহুবার শোনার পরও বুঝতে পারেনা। যেমন এই লাবণ্য। শুভম ওকে এক একটা সাধারণ কথা বোঝাতে গিয়ে হয়রান হয়ে যায়, কিন্তু তিন্নির সঙ্গে তো এরকমটা হতোনা। ওর চোখের ইশারাও তিন্নি বুঝতে পারতো। এইসব কথা ভাবতে ভাবতে শুভম একা একা গাড়ী চালিয়ে বাড়ীর দিকে যাচ্ছে। আজ ও সাইট ভিজিটে গিয়েছিল। ওদের নতুন প্রজেক্টের জন্য একটা জমি পাওয়া গেছে বানারঘাটার কাছে। সেইটাই দেখতে গিয়েছিল আজ। সঙ্গে লাবণ্যও ছিল কিন্তু বিকেল বিকেল ও লাবণ্যকে ছেড়ে দিয়েছিল। যদিও লাবণ্য ব্যাঙ্গালোরেরই মেয়ে, তবুও শুভম কোন রিস্ক নিতে চায় না।


কেমন আছে তিন্নি? কোথায় আছে ও? আচ্ছা সেদিন যদি ও তিন্নিকে গলির মুখে না ছেড়ে ফ্ল্যাটের সামনে ছাড়তো, তাহলে হয়তো এসব কিছুই হত না। তাহলে তিন্নির অপহরণের জন্য শুভমও কি খানিকটা দায়ী নয়? ভাবতে ভাবতে একটু বোধহয় অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল শুভম। হঠাৎ ওর গাড়ীর সামনে একজন দেহাতি মহিলা এসে পড়েছিল। প্রচণ্ড জোরে ব্রেক কষে ও গাড়ীটাকে দাঁড় করালো ও। গাড়ীটা মহিলাকে ছুঁয়ে থেমে গেল। আর মহিলা সজোরে পড়লো রাস্তার ওপরে।


শুভম মনে মনে বেশ কয়েকটা চার অক্ষর আওড়ে গাড়ী থেকে নামলো। এরা কেন যে গরু ভেড়ার মত রাস্তায় চল? কাছে গিয়ে গাড়ীর হেডলাইটের আলোয় মহিলাকে ভালোভাবে দেখে চমকে উঠল ও। মুখটা চেনা চেনা লাগছে। মুখের ঘোমটা ভালোভাবে সরিয়ে দেখে ও নিশ্চিত হল , এটা তিন্নিই বটে। একটা খুশীর স্রোত বয়ে গেল ওর মনে। ওর এতো আনন্দ হচ্ছে কেন? ও কি তাহলে তিন্নিকে ভালবেসে ফেলেছে? মাথা কাজ করছে না শুভমের। তিন্নি চোখ বুজে মাটিতে পড়ে রয়েছে। কপাল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। শুভম তিন্নির নাকের কাছে ওর কাঁপা কাঁপা হাতটা নিয়ে গেল।


নিঃশ্বাস পড়ছে। শুভমের যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। তিন্নিকে কোলে করে ও গাড়িতে তুলল। তিন্নির মাথাটা ওর বুকের ওপর। শুভমের শার্টে তিন্নির কপাল থেকে একটু রক্ত লেগে গেল। ওকে সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে শুভম গাড়ী নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হল।   

শুভমের মনে হাজার প্রশ্ন। তিন্নি এখানে এলো কেমন করে আর ওর পরনে শাড়ি কেন?


মিনিট পনেরো পর ওরা পৌঁছল হাসপাতালে। তিন্নির তখনও জ্ঞান আসেনি। হাসপাতালের ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখে শুভমকে জানালো কোনো সিরিয়াস আঘাত নেই। শকের জন্য তিন্নি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এখন জ্ঞান এসেছে।

“আমি কি দেখা করতে পারি?” জিজ্ঞাসা করলো শুভম।

“ ইয়েস, কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য।“ বলে ডাক্তার চলে গেলেন।


শুভম তিন্নির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তিন্নি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। কপালে ব্যান্ডেজ বাঁধা। হাতে স্যালাইন লাগানো। হাতপায়ের কিছু জায়গা ছড়ে গিয়েছে। হাতের কব্জির কাছে চওড়া নীল রঙের কালশিটে পড়েছে। তিন্নির ফর্সা হাতে দাগটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুভম তিন্নিকে ডাকবে কি ডাকবে না বুঝতে পারছিল না। এমন সময় চোখ খুলল তিন্নি। সামনে শুভমকে দেখে প্রথমে ওর মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, তারপরই ও ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। ওর বাঁ হাতটা বাড়িয়ে শুভমের হাতটা চেপে ধরলো।


বেডের পাশে রাখা চেয়ারে বসে তিন্নির মাথায় আসতে আসতে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো শুভম।

“ জানো ওরা আমায় বেঁধে রেখেছিল।“ বলে নিজের হাতের কালশিটেটা দেখালো তিন্নি।


শুভম আলতো করে ওর আঙুল দিয়ে জায়গাটায় হাত বুলিয়ে দিল। এ যেন এক অন্য তিন্নি। এক্কেবারে একটা বাচ্ছা মেয়ে। অসহায়, সন্ত্রস্ত।

“ সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি তো!”

“ জানো ওরা আমাকে ভুল করে কিডন্যাপ করেছিল, আসলে ওরা মৃগকে...।“


“ মৃগকে?” শুভমের ভুরুটা কুঁচকে গেল।

“ আমি মৃগের জ্যাকেট টা পরেছিলাম যে! জানো ও-ওরা বলছিল আমাকে বিক্রি করে দেবে।“

“ শান্ত হও। এখন তুমি সেফ। বিশ্রাম কর।“ তিন্নি উত্তেজিত হয়ে উঠছে দেখে শুভম ওকে শান্ত করলো।

নার্স এসে তিন্নিকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে তিন্নি ঘুমিয়ে পড়লো। তখনও শুভমের হাতটা ওর হাতে ধরা।

আসতে করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে শুভম উঠে দাঁড়ালো। এখন ওর অনেক কাজ। প্রথমে ওকে যেতে হবে পুলিশ ষ্টেশন।

ও ঘর থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় নার্স এসে জানালো যে ডাক্তারবাবু ওর সাথে দেখা করতে চান।

“ আসুন মিঃ...” ডাক্তারবাবু থামলেন।

“ কল মিঃ শুভম।“

“ দেখুন মিঃ শুভম, আমাদের পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে। আপনি তো জানেন এটা অ্যাকসিডেন্ট কেস।“

“ নিশ্চয়ই! আমিই কল করে দিচ্ছি ।“ বলে শুভম ইন্সপেক্টর বিজয়কুমারকে ফোন করলো।

উনি সব শুনে বললেন ,” এখন তো তিন্নি ঘুমোচ্ছে, আমরা কাল সকালে গিয়ে স্টেটমেন্ট রেকর্ড করবো। আমি একটু ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলতে চাই।“

এরপর উনি ডাক্তারবাবুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন। ফোন রেখে ডাক্তারবাবু খুব চিন্তিত ভাবে বললেন ,” উনি বলছেন যে দুজন কনস্টেবলকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারা সারারাত পাহারা দেবে। আর আপনাকে বলেছেন কাউকে এই খবরটা না জানাতে।“ 

শুভম মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

বাড়ী ফিরতে ফিরতে রাত দুটো বেজে গেল।

(ক্রমশ...)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance