STORYMIRROR

Aparna Chaudhuri

Romance Thriller

3  

Aparna Chaudhuri

Romance Thriller

তিন্নি (পর্ব ১৮)

তিন্নি (পর্ব ১৮)

4 mins
321


সামসুদ্দিনের ডিউটিটা একেবারে বাজে। বিজয়কুমার ওকে লাগিয়েছে একটি মেয়ের ওপর নজর রাখার জন্য। যদিও এই কাজে ওর জুড়ি মেলা ভার। ওর চেহারাটা এমন যে ও যদি পাশ দিয়ে চলে যায় তবে কেউ ওর দিকে তাকিয়েও দেখবে না। সেই জন্য ভিড়ের মধ্যে মিশে ওর পক্ষে নজর রাখা সহজ।

তিন চারদিন হল ও এই বাড়ীটার সামনের চায়ের দোকানে আড্ডা গেড়েছে। কিন্তু মেয়েটি কোথাও বেরোচ্ছে না। কাল একবার বেরিয়েছিল, পাড়ার দোকান থেকে কিছু কেনাকাটার জন্য। 

আজ সকাল থেকে তিনটে চা আর এক প্যাকেট বিড়ি শেষ হয়ে গেছে। একটা ওলা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো বাড়ীটার সামনে। সামসুদ্দিন বাড়ীর সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলার আছিলায় গিয়ে দাঁড়ালো গেটের কাছে। দেখলও মেয়েটি পারকিং লটের একটা থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখে টুক করে ঢুকে পড়লো ট্যাক্সিতে। যদিও চোখে রোদ চশমা, মাথায় ওড়না ইত্যাদি দিয়ে নিজেকে ঢাকার যথেষ্ট চেষ্টা সে করেছে, কিন্তু হুঁহুঁ বাবা, সামসুদ্দিনের চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয়। সঙ্গে সঙ্গে ও গাড়ীর নম্বর মডেল সব এস এম এস করে জানিয়ে দিল পুলিশ ষ্টেশনে।

পুলিশের গাড়ী পাড়ার মোড়েই ছিল তাই গাড়ীটাকে ফলো করতে কোন অসুবিধা হল না। গাড়ীটা নানা রাস্তা ঘুরে গিয়ে পৌঁছল গঙ্গা নহল্লির একটা ঘিঞ্জি এলাকায়। সেখানে বাজার বসে। মেয়েটি একটা সরু গলির মধ্যে একটা পুরনো বাড়ীতে ঢুকে গেল। সামসুদ্দিন জিপ থেকে নেমে ওই গলির মধ্যে ঢুকে দেখলো গলিটার অন্যদিকটা বন্ধ। তাই বেরোতে হলে বাজারের দিক দিয়েই বেরোতে হবে।

আবার অপেক্ষা। এবার সামসুদ্দিনের ঠিকানা হল গলির সামনের পাইস হোটেল। দুপুরবেলায় হোটেল বেশ খালি। হোটেলের মালিক সেলিম মিয়াঁ খুব আলাপী লোক। নিজের দুপুরের খাওয়া খেয়ে ও মালিকের সঙ্গে গপ্পো জুড়ে দিল। তাতে অনেক কথা জানতে পারলো। বিকালের চা খেয়ে সামসুদ্দিন একটু ঘুরতে বেরোল। কিন্তু গলিটাকে চোখের আড়াল হতে দিল না। 

প্রায় রাত নটা নাগাদ গলির মুখে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল, একজন বোরখা পরিহিত মহিলা আর তার সঙ্গে একজন পুরুষ ট্যাক্সিতে উঠলো। পুরুষটিকে দেখে সামসুদ্দিন আবার ফোন করলো পুলিশের মোবাইল ভ্যানকে।

“ সামনের ট্যাক্সিটাকে ফলো করুন। নম্বর হল...”

এবার ট্যাক্সিটা চলল কেম্পেগৌডা ইন্টার ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দিকে।

এয়ারপোর্ট, রেলওয়ে ষ্টেশন, বাস আড্ডা সব জায়গাতে আগে থেকেই নজর রাখা হচ্ছিল।

ধরা পড়ে গেল মৃগ আর শ্রীকান্থ। ওরা যাচ্ছিল দুবাই। ওদের দুজনকে ধরে সোজা নিয়ে যাওয়া হল ইন্সপেক্টর বিজয়কুমারের কাছে।

শুভম পুলিশের দলটাকে সেই রাস্তাটায় নিয়ে গেলো যেখানে ও তিন্নিকে খুঁজে পেয়েছিল। এবার পুলিশদের কাজ। শুভম দেখলও পুলিশের দল কারুর জন্য অপেক্ষা করছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আর একটা পুলিশের গাড়ী ওখানে পৌঁছে গেল। আর সেই গাড়ীর থেকে নামলো দুজন পুলিশের সাথে দুটো কুকুর। কুকুরগুলোকে তিন্নির একটা দোপাট্টা শুঁকিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। তাদের পিছন পিছন ছুটল পুলিশের দল। ঝোপ ঝাড় , গর্ত কিছুই মানছে না কুকুর গুলো। ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে। পুলিশের দলের সাথে শুভমও চলেছে।

প্রায়

আধঘণ্টা চলার পর কুকুর গুলো গিয়ে দাঁড়ালো একটা বাড়ীর সামনে। বাড়ীটার বেশ ভগ্ন দশা। মূল বাড়িটায় ঢোকার জন্য একটা বড় গেট আছে বটে কিন্তু বাউন্ডারি ওয়ালটা একেবারেই ভাঙ্গা। বাড়ীর পিছন দিকে একটা বড় গোয়াল। বাড়িটা তিন্নির বর্ণনার সঙ্গে একেবারে মিলে যাচ্ছে। পুলিশের দলটা সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়লো বাড়ীটার মধ্যে। কিন্তু কোন লাভ হল না। বাড়িটা খালি। যদিও গোয়ালে গরু মোষ সব রয়েছে।

“ এরা হঠাৎ করে সবাই পালিয়েছে। তাই গরু মোষ নিয়ে যেতে পারেনি। “ বলল একজন কন্সটেবল।

“ তার মানে ওরা কাছাকাছি কোথাও আছে। রাতে হয়তো ওরা আসবে এখানে, গরু গুলোকে খাওয়াতে বা এখান থেকে সরিয়ে নিতে।“ বলল আরেকজন।

বাড়িটা ভালো করে খুঁজে দেখা হল। কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। বাড়ীটার আশেপাশে কোন বাড়ী নেই। তাই পড়শিদের কাছ থেকে কোন খবর পাওয়া গেল না। পুলিশরা সদলবলে ওখান থেকে রওনা হল।

শুভম মনে মনে মারাত্মক একটা অ্যাডভেঞ্চারের আশা করেছিল। কিন্তু কিছুই হল না দেখে বেশ মনমরা হয়ে ফেরত এলো।

পুলিশ ষ্টেশনে ইন্সপেক্টর বিজয় কুমারের সাথে দেখা হতেই উনি হেসে উঠলেন,” কি খুব মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন মনে হচ্ছে।“

শুভম একটু স্মিত হাসল, “ আসলে ওরা বলাবলি করছিল রাতে হয়তো ওখানে লোকগুলো ফিরে আসতে পারে কিন্তু কেউই তো ওখানে থাকল না। সবাই চলে এলো...”

“ আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমরা দিনের বেলায় যদি ওখানে থেকে যেতাম তাহলে ওরা রাতে ওখানে আসতো না। ওদের লোকেরা নিশ্চয়ই আমাদের লক্ষ্য করছিল। তাই আমরা ফেরত এলাম। “

“ তিন্নি কেমন আছে?”

“ তিন্নি আর ওর বাবা মাকে এক অজানা জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। “

“ আমি কি ওদের ফোন করতে পারি?”

“ না । এই আটচল্লিশ ঘণ্টা একটু বেশী সাবধানে থাকতে হবে আমাদের।“

“ আচ্ছা।“

আজ শুভমকে একবার অফিস যেতেই হবে। পুলিশ ষ্টেশন থেকে ও সোজা অফিসের দিকে রওনা হল। আজ বেশ ক্লান্ত লাগছে। আর খানিকটা নিশ্চিন্ত ও। তিন্নি এখন কোনো সুরক্ষিত জায়গায় আছে। গাড়ীর কাঁচ তুলে এসি চালিয়ে দিল শুভম। ঠাণ্ডা হাওয়া ছড়িয়ে পড়লো গাড়ীর ভিতর। বোসের সাউন্ড সিস্টেমে আজ জগজিৎ সিঙের গজল বাজছে। মনে একটা ফুরফুরে ভাব। নিজের হাতের ওপর তিন্নির হাতের নরম স্পর্শটা এখনও অনুভব করছে শুভম।

অফিসে পৌছনোর আগে এই রাস্তাটা বেশ নির্জন। রাস্তার দুদিকে গাছ। এই রাস্তাটা ওর খুব পছন্দের। গুনগুন করে গজলটায় গলা মেলাতে মেলাতে শুভমের চোখ গেল রিয়ার ভিউ মিররের ওপর।

আরে ওই ছাই রঙের গাড়ী টা অনেকক্ষণ ধরে ওর পিছন পিছন চলছে না? সন্দেহ টা দূর করার জন্য ও একটা সরু গলির মধ্যে ঢুকে পড়লো। তারপর আরও কয়েকটা বাঁক নিল। বেশ খানিকটা দুরত্ব রেখে গাড়ীটা ওকে অনুসরণ করছে। ও একেবারে নিশ্চিন্ত হল।

শুভম গাড়ীর গতিটা বেশ কমিয়ে দিয়ে ইন্সপেক্টর বিজয়কুমারকে একটা কল করলো।

“ আপনি কোথায়?” জিজ্ঞাসা করলেন বিজয়কুমার।

“ আমি আমার অফিসের সামনে।“

“ আপনার লোকেশনটা পাঠান, আর ওদের অন্তত মিনিট পনেরো ব্যস্ত রাখুন।“

“ওকে।“ বলে শুভম নিজের লোকেশনটা পাঠিয়ে দিল ওনাকে।

(ক্রমশ...)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance