তিন্নি (পর্ব ১৯)
তিন্নি (পর্ব ১৯)
আরও তিনটে দিন কেটে গেছে। এই তিন দিনে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। শুভমকে ফলো করছিল যারা তারা ধরা পড়েছে। তিন্নিকে যারা ধরে রেখেছিল, রাতে অপারেশন চালিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। যদিও এই পুরো গ্যাং টার যে মাস্টার মাইন্ড সে বিদেশে পালিয়েছে। তাকে ধরা যায় নি।
তিন্নি আর ওর বাবা মা এখন ওই গেস্ট হাউস থেকে হোটেলে ফেরত চলে এসেছে।। ওরা তিন্নিকে কোলকাতা ফেরত নিয়ে চলে যেতে চান। শুভম ফোন করে সে কথা জানতে পেরেছে।
আজ শুভমের বাড়ীতে সবার নিমন্ত্রণ। সবাই মানে তিন্নি, ওর বাবা, মা আর ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার এবং ওনার স্ত্রী।
এল অ্যান্ড টি সাউথ সিটির শুভমের ফ্ল্যাটে ঢুকে তিন্নি একটু ঘাবড়ে গেল। বিশাল চার বেড রুমের ফ্ল্যাট। লিভিং রুমে রীতিমত ফুটবল খেলা যায়।
শুভমের বাবা অ্যাডভোকেট কর্তার সাইনি এবং মা বাসবি সাইনি খুবই ভালো লোক। ওনারা দিল্লিতে থাকেন। এখন কিছুদিনের জন্য শুভমের কাছে বেড়াতে এসেছেন।
তিন্নি ওনাদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই বাসবি দেবী দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠলেন,” কতদিন বাদে কাউকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখলাম। এখানে তো সবাই হাঁটুতেই সারে। “
শুনে সবাই হেসে উঠলো।
“ আসুন আসুন। কারুর সাথে বাংলায় কথা বলতে পারলে যে কি ভালো লাগে কি বলব।“
“ সেই জন্যই তো হামি ভি বাংলা শিখে গেছে।“ হেসে বললেন মিঃ সাইনি।
“ আপনাদের বাড়ী খুব সুন্দর।“ তিন্নির মা বলল।
“ থ্যাঙ্ক ইউ। আমি আপনাদের ভালো দার্জিলিং চা খাওয়াবো। এখানকার চা খেয়ে খেয়ে নিশ্চয়ই আপনারা বোর হয়ে গেছেন।“
“ দার্জিলিং টি? আরে দারুণ!” বলে উঠল তিন্নির বাবা।
গল্প বেশ জমে উঠেছে, এমন সময় এলেন ইন্সপেক্টর বিজয়কুমার ও তার স্ত্রী। দেখা গেলো ওনারাও দার্জিলিং চায়ের ভক্ত।
চা আর শুভম একসাথে এলো। শুভম আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। এতক্ষণ ও স্নান করে ফ্রেশ হচ্ছিল।
“ নমস্তে আঙ্কল! নমস্তে আনটি! “ বলে ও ওনাদের হাঁটুর কাছে হাত নিয়ে গিয়ে নমস্কার করে সোজা তিন্নির পাশে গিয়ে বসে পড়লো।
“ দেখলেন?” হেসে বলে উঠলেন বাসবি দেবী।
“ তাতে কি হয়েছে? নমস্কার তো করেছে!” হেসে বললো তিন্নির মা।
“ আচ্ছা ইন্সপেক্টর এবার আমাদের পুরো ঘটনাটা খুলে বলুন। আপনা মৃগের ওপর সন্দেহ হল কি করে?” জিজ্ঞাসা করলো শুভম।
“ আমি প্রথমে মৃগকে সন্দেহ করিনি। আমি যখন মৃগনয়নীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ও রোজিকে আগে থেকে চিনতো কিনা। ও সম্পূর্ণ অস্বীকার করলো। তারপর রোজির মাকে ওদের পুরনো ছবি দেখাতে উনি মৃগকে চিনতে পারেন কিন্তু নাম মনে করতে পারেন না। পরে বাড়ী গিয়ে ওনার নাম মনে পড়ে এবং উনি আমায় সেটা ফোন করে জানান। আর এও জানান যে ওই মেয়েটি একটা কিছু গণ্ডগোল করে কলেজ থেকে রাসটিকেটেড হয়। যার একটা মিথ্যে ধরা পড়ে তার বলা বাকি কথাগুলোও কতটা সত্যি সেটা খতিয়ে দেখতে হয়। আমরা মৃগের কলেজে খোঁজ করে জানতে পারি যে ও কলেজের স্টুডেন্টদের ড্রাগ সাপ্লাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে। কলেজ অথরিটি ওর ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে বলে ওকে পুলিশে দেয় নি কিন্তু ওয়ার্নিং দিয়ে কলেজ থেকে বার করে দেয়।“
“ বাবা এতো সাঙ্ঘাতিক মেয়ে!” বললেন বাসবি দেবী।
“ এরপর মৃগ অন্য কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এবং আপনাদের কোম্পানি জয়েন করে। এখানে এসে ওর রোজির সঙ্গে আবার দেখা হয়। পুরনো বন্ধুত্ব আবার জেগে ওঠে। রোজির ভাইয়ের চিকিৎসা আর অপারেশনের জন্য ওর অনেক টাকার দরকার ছিল। কথায় কথায় রোজি হয়তো তা বলেছিল মৃগকে। তখন মৃগ ওকে ড্রাগ আর দেহ ব্যবসার রাস্তা দেখায়। রোজির টাকার দরকার ছিল, কাজেই সহজেই ও ওই পথে পা দেয়। মৃগ তিন্নিকেও ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করছিল।“
“ওমা, সেকি!” আঁতকে উঠলো তিন্নির মা।
“ তবে তিন্নির লাক ভালো যে রোজির মার্ডারটা হয়ে যায়। “
“ রোজির মার্ডার হয়েছিল?” জিজ্ঞাসা করলো শুভম।
“ হ্যাঁ। তিন্নি যখন দেখে রোজিকে, তখন রাত বারোটা সাড়ে বারোটা বাজে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে রোজি মারা গেছে ভোর রাতে, ড্রাগ ওভার ডোজে। আসলে সেদিন রোজির সাথে একটা দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েকটি ছেলে ওকে গ্যাং রেপ করে। ওকে ড্রিঙ্কের সঙ্গে ড্রাগ খাইয়ে দেয়, ফলে ও প্রতিবাদ করতে পারেনা। এই পার্টি আর মাল্টিপল পার্টনারের ব্যাপারটা পুরোটাই মৃগের কীর্তি। ও অনেক বেশী কাট মানি পায় এতে। রোজির যখন জ্ঞান আসে ও মৃগকে ফোন করে সব জানায় আর পুলিশকে সব বলে দেবে বলে ওকে শাসায়। মৃগ ওর সঙ্গে দেখা করতে যায় এবং ওর গলায় ড্রাগের ইনজেকশন লাগিয়ে দেয়।“
(ক্রমশ...)