তিন্নি ( পর্ব ১২)
তিন্নি ( পর্ব ১২)
তিন্নি আর মৃগ কে যে নতুন বাড়িটায় নিয়ে গেল শুভম সেখানে একটাই ঘর খালি ছিল। কাজেই ওদের দুজনকে একটা ঘর শেয়ার করতে হল। তিন্নির বেশ ভালোই লাগলো। মৃগ আর ও একই ঘরে থাকবে। ওর একা থাকতে বেশ ভয় ভয় করছিল। ঘরে একটা ডবল বেড আর একটা আলমারি আছে। শুভম ওদের পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। বলল ও কাল আসবে ওদের পিক-আপ করে অফিসে নিয়ে যাবে।
ঘরে ঢুকেই মৃগ তিন্নিকে জিজ্ঞাসা করলো,” তোর কাছে খুব দামী কিছু আছে কি?”
তিন্নি একটু অবাক হয়ে বলল, “ না সেরকম দামী কিছু তো ...”
“ তাহলে আমি আলমারিতে আমার জিনিষগুলো রাখি?” মিষ্টি হেসে বলল মৃগ।
তিন্নি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
রাতের খাওয়া ওরা হোটেল থেকে খেয়েই এসেছিল। তাই রাতে কোন ঝামেলা ছিল না। তিন্নি প্রথম স্নানে গেলো। ওদের সারাদিন খুব ধকল গেছে। ইসত উষ্ণ জলে স্নান করে ওর শরীর মন দুইই ঝরঝরে হয়ে গেল।
বাথ্রুম থেকে বেরিয়ে ও দেখলও মৃগ নিজের জিনিষপত্র সব আলমারিতে গুছিয়ে রেখে দিয়েছে। ও বেরোতেই মৃগ তাড়াতাড়ি স্নানে ঢুকে গেলো।
তিন্নি চুল আঁচড়ে নিজের ভিজে তোয়ালে টা ঘরের লাগোয়া বারান্দায় মেলে দিয়ে ঘরে এসে দেখলও খাটের ওপর মৃগের মোবাইলটা ব্লিঙ্ক করছে। কেউ একটা ফোন করেছে ওকে। মোবাইলটা সাইলেন্ট মোডে রয়েছে বলে কোন আওয়াজ হচ্ছে না, শুধু আলো দেখা যাচ্ছে। তিন্নির চোখটা চলে গেলো মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে। স্ক্রিনে কলারের ছবিটা দেখা যাচ্ছে। তিন্নি দেখলো একজন তরুণের হাসি হাসি মুখ ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে, গায়ের রঙ বেশ কালো, মাথায় ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল। দেখে মনে হয় ছেলেটি দক্ষিণ ভারতীয়। নাম একটা লেখা ছিল কিন্তু সেটা পড়ার আগেই মৃগ বাথ্রুম থেকে বেরিয়ে এসে ছোঁ মেরে মোবাইলটা তুলে নিল বিছানার থেকে।
তিন্নির ওই ছেলেটির মুখটা বড় চেনা চেনা লাগলো। কিন্তু কোথায় যে দেখেছে ছেলেটিকে সেটা মনে করতে পারলো না।
নতুন প্রোজেক্ট টা খুবই ইন্টারেস্টিং। শহরের মানুষ যাতে একেবারে তাজা সবজি আর ফল পায় তার জন্য একটা এমন চেন অফ স্টোরস বানানো হবে যেখানে অরগানিক সবজি ,ফল সব টব শুদ্ধ রাখা থাকবে শেলফে। যার যেটা লাগবে তাকে সেটা সোজা গাছ থেকে পেড়ে দেওয়া হবে। বেশিরভাগ শাক সবজি বিনা মাটিতে, ফলানো হবে। তার জন্য দোকানে বিশেষ আলোর ও জলের স্প্রে ব্যবহার করা হবে। গাছগুলি যাতে তাড়াতাড়ি বাড়ে তাই দোকানের আলো , আর্দ্রতা, উষ্ণতা সবই কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
গাড়ি চালাতে চালাতে এই সব কথা ওদের বুঝিয়ে বলছিল শুভম। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ও দিনরাত এই প্রোজেক্টটা ছাড়া আর কিছু নিয়েই ভাবতে পারছে না। ওর ডেডিকেশন তিন্নিকে মুগ্ধ করলো।
লাঞ্চের সময় মায়ের ফোন এলো, “ কিরে , তোর কি খবর? কাল থেকে একটাও ফোন করলি না। শরীর টরির ঠিক আছে তো?”
“ হ্যাঁ মা একদম ভালো আছি। কাজের খুব চাপ বুঝতেই তো পারছ। তাই কাল আর কল করা হয়নি। আজ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই কল করতাম।“ বলতে বলতে তিন্নি ভাবছিল, মায়েরা কত সিম্পল হয়। শরীর খারাপ ছাড়া অন্য কোন এমারজেন্সির কথা ভাবতেই পারে না। একবার ভাবল মা বাবাকে সব কথা বলে দেয়। তারপর ভাবল যদি না জানিয়ে নিজেই ম্যানেজ করে নিতে পারে তাহলে আর বেকার কেন ওদের টেনশন দেওয়া।
আজ তিন্নির শুভমের সঙ্গে কাজ ছিল প্রায় সারাদিন। অ্যাপলিকেসনে কি কি থাকবে। সেটা কেমন দেখতে হবে এই সব নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা হল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিন্নির মৃগের কথা মনে হচ্ছিল। আজ ফ্ল্যাটে ফিরে নিশ্চয়ই ওকে শুভমের সঙ্গে কাটানো সময়ের বিষদ বিবরণ দিতে হবে। ভেবেই ওর হাসি পেলো।
লাঞ্চের পর ও আর শুভম ক্লায়েন্টের সঙ্গে একটা মিটিং করতে গেল। মিটিংটা যখন শেষ হল তখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। মোবাইল ফোন সাইলেন্ট করা ছিল। মিটিং এর পর মোবাইল খুলে দেখে মৃগের মেসেজ, “মনে হয় তোর দেরী হবে। আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।“
“ আমি তোমাকে ফ্লাটের সামনের মেন রোডে ছেড়ে দিতে পারি। ঐটুকু তুমি হেঁটে চলে যেতে পারবে না?” বলল শুভম।
“ হ্যাঁ হ্যাঁ। “ মিষ্টি হেসে জবাব দিল তিন্নি। মনে মনে বেশ নিশ্চিন্ত হল। এখনও এখানকার রাস্তা ঘাট ও চিনে উঠতে পারেনি। আর এই ক্লায়েন্টের অফিসটা শহরের বাইরের দিকে। এখান থেকে বাড়ি যাবার জন্য বাস বা ট্যাক্সি পেতে বেশ বেগ পেতে হত।
ফেরার পথে শুভম কোন কথা বলল না। ওর গাড়িতে লায়োনেল রিচির গান বাজতে শুনে অবাক হয়ে গেল তিন্নি। ওরও খুব প্রিয় লায়োনেল রিচির গান। ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছতে বেজে গেল প্রায় পৌনে এগারোটা। থাঙ্কস টু ব্যাঙ্গালোরের ট্রাফিক।
তিন্নিকে ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে শুভম চলে গেল।
বাড়ির সামনের রাস্তাটা খুব অন্ধকার। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়ালো তিন্নি।
হঠাৎ মাথার পিছন দিকে একটা কিছু দুম করে কিছু একটা লাগলো, আর তিন্নির চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এলো।
(ক্রমশ...)