তিন্নি (পর্ব ২০/ অন্তিম পর্ব)
তিন্নি (পর্ব ২০/ অন্তিম পর্ব)
“ যার ফলে রোজি মারা যায়। তার মানে মৃগ রোজিকে খুন করেছে?” জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ সাইনি।
“ হ্যাঁ।“
“ আপনারা কি ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছেন?”
“ হ্যাঁ। যদিও সিরিঞ্জটাকে ও ফেলে দিয়েছিল কিন্তু আমরা সেটা খুঁজে বার করেছি।“
“ আপনারা যদি প্রথম থেকেই জানতেন যে মৃগ খুনি তাহলে ওকে গ্রেপ্তার করলেন না কেন?”
“ না করিনি, তার দুটো কারণ। প্রথম কারণ আমরা মৃগের সঙ্গে ওর দলটাকেও গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিলাম। আর দ্বিতীয় কারণ তিন্নি কিডন্যাপ হয়ে গিয়েছিল। আমরা আগে ওকে উদ্ধার করে ওর কিডন্যাপের পিছনে যারা আছে তাদের গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিলাম। “
“ তিন্নিকে তো ওরা মৃগ বলে ভুল করে কিডন্যাপ করেছিল!” বোল তিন্নির বাবা।
“ হ্যাঁ ঠিকই । কিন্তু সেটা আমারা পরে জানতে পেরেছি। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম যে মৃগই তিন্নির কিডন্যাপ করিয়েছে হয়তো। কিন্তু পরে দেখলাম যে ব্যাপারটা উল্টো। তিন্নির জন্যই মৃগ বেঁচে গেছে। তখন আমরা মৃগকে ডেকে পাঠালাম। ইন্টারোগেশনে ও এটা স্বীকার করলো যে ও নিজের জ্যাকেট তিন্নিকে পরতে দিয়েছিল, কারণ তিন্নির ঠাণ্ডা লাগছিল। কিন্তু কেউ ওর জায়গায় তিন্নিকে কিডন্যাপ করেছে এটা ও মানতে চাইল না। কিন্তু ওর হাবভাব খুব কনভিন্সিং ছিল না। তাই আমরা ওর ওপর নজর রাখার জন্য সামসুদ্দিনকে তিন্নিদের বাড়ীর ওপর নজর রাখতে বললাম। মৃগ যেই বাড়ীর থেকে বেরোলো আমাদের জিপ ওকে ফলো করলো। ফলে মৃগ আর শ্রীকান্থ ধরা পড়ে গেল। ওরা প্রায় দু কোটি টাকার ড্রাগ চুরি করে পালাচ্ছিল। ওই জন্যই মৃগের দলের লোকেরা ওকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল।“
“ বাপ রে! কি কাণ্ড!“ বললেন বাসবি দেবী।
“ হ্যাঁ, বাবা। আমরা তো খুব ভয় পেয়ে গেছি। আমি তো ওর বাবাকে বলেছি, অনেক হয়েছে চাকরি করা। এবার ভালোয় ভালোয় ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে চল।“ বলল তিন্নির মা।
“আর একবার চা হবে নাকি?“ বললেন মিঃ সাইনি।
সকলেই সমস্বরে সমর্থন জানালো।
“ তোমরা চা খাও, আমি তিন্নিকে আমাদের টেরেস গার্ডেনটা দেখিয়ে আনি?” একটু কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠলো শুভম।
“হাঁ যা বেটা । আমরা গল্প করি। তোরা আমাদের মধ্যে আর...।“ বললেন মিঃ সাইনি।
পারমিশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুভম আর তিন্নি উঠে রওনা হল।
শুভমদের ফ্ল্যাটে একটা ছোট ছাদ আছে। সেটাতে খুব সুন্দর বাগান করেছে ওরা। চারিদিকে গাছ। এক কোনে একটা ছোট্ট লিলি পুল। মাঝে লন। আর সেখানে গার্ডেন চেয়ার পাতা।
তিন্নির খুব পছন্দ হল বাগানটা। সন্ধ্যার অন্ধকার বেশ ঘনিয়ে এসেছে বলে বাগানের চারিদিকে আলো জ্বেলে দেওয়া হয়েছে।
বাগানের রেলিঙের ধারে দাঁড়িয়ে তিন্নি দিগন্ত বিস্তৃত বেঙ্গালুরু শহরটাকে দেখছিল। শুভম ওর পাশে এসে দাঁড়াল।
“ এখান থেকে শহরটা কি সুন্দর দেখায়!” মৃদুস্বরে বলে উঠলো তিন্নি। এলোমেলো হাওয়ায় ওর চুলগুলো উড়ছিল।
“ তাহলে এতো সুন্দর শহরটাকে না ছেড়ে গেলেই তো হয়।“ ওর অবাধ্য চুল গুলোকে কপাল থেকে কানের পাশে সরিয়ে দিতে দিতে শুভম তিন্নির কানে ফিসফিস করে বলে।
তিন্নির গাল লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। কিন্তু অন্ধকারে শুভম তা দেখতে পায় না। তিন্নিকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ও তিন্নির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
“ তোমার যদি মত থাকে তাহলে মা আর বাবাকে বলি তোমার প্যারেন্টেদের সাথে কথা বলতে?”
তিন্নি মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলে শুভমের বুকের মধ্যে মুখ লোকায়।