প্রফেসর সাম্য - সাধুবাবা ২
প্রফেসর সাম্য - সাধুবাবা ২
[প্রফেসর সাম্যকে হঠাৎ ফোন করে এক সাধুবাবার কাছে যাবার অনুরোধ করে প্রীতম । ভীষণ খুশি মনে হালকা মেজাজে প্রীতম এর সাথে চলে যাই প্রফেসর সাম্য । কিন্ত চতুর বাবাজি ছল করে হাতিয়ে নেই প্রফেসর সাম্যের ঘড়ি ও প্রীতম এর গলার হার । সেটাই উদ্ধার করতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করে ফেলে বাবাজির গুপ্তধন হাতানোর রহস্য । কিন্ত বাবাজির চেলাদের হঠাৎ আক্রমণে বন্দি হয়ে যাই প্রীতম , যাহোক করে প্রাণে বাঁচে প্রফেসর সাম্য। ...তারপর। ... ]
৫ম আগস্ট , ২০১৮
চোখ যখন খুললাম দেখলাম সকাল এর আলো ফুটতে চলেছে । এখন দূরের পড়ো বাড়ির দরজা টা ও খুব ভালো করে দেখা যাচ্ছে। মনে মনে ছক কষতে শুরু করলাম কেমন করে প্রীতম কে বাঁচানো যাই । কিন্ত কিছু করার আগেই বুঝে গেলাম আমার বন্দুক এর গুলি কে আগে হোটেল থেকে উদ্ধার করা জরুরী । না হলে চাইলে ও কিছু করতে পারবো না । ভাবতে লাগলাম কি ভাবে হোটেল অব্দি যাওয়া যাই, হেঁটে যেতে গেলে ধরা পরে যাবার সম্ভবনা প্রচুর । তখন ই মনে পরে গেলো প্রীতম এর আনা গাড়িটার কথা । গাড়িটাকে পড়ো বাড়িটার থেকে একটু দূরে একটা ঝোপ এর মধ্যে রেখেছিলো প্রীতম । আর ওর ক্যামেরা যন্ত্রপাতি নেবার জন্য ও চাবি টা আমাকেই রাখতে দিয়েছিলো ।পকেট হাতড়ে পেয়ে গেলাম চাবিটা । মনে একটু বল পেলাম । এবার সুযোগ এর অপেক্ষা । প্রায় ১০থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর কাউকে আসতে না দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম । হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ।মনে মনে ভাবলাম যে ভাবেই হোক এই সুযোগ টাকে কাজে লাগাতে হবে , না হলে প্রীতম কে বাঁচানোর কোনো উপায় থাকবে না । আসতে আসতে গাছ থেকে নেমে এলাম । ওই গাছের তলা থেকে গাড়িটির দূরত্ব খুব বেশি হলে ২ মিনিট এর হাঁটা পথ । গাছ থেকে নেমেই একটু জোরে হাঁটতে থাকলাম । হঠাৎ একটি লোক কে দেখলাম পাশের জঙ্গল এর মধ্যে । যতটা পারলাম তার দিকে না তাকিয়ে জোরে হাঁটতে থাকলাম । কিন্ত ধরা পরে গেলাম । সে চিল্লাতে লাগলো কে যাই ? লোকটির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সে প্রাতঃকার্য সারতে ভীষণ ই ব্যস্ত । আর জঙ্গল এর যে জায়গায় সে আছে আমার মুখ দেখতে পাওয়া কখনো ই সম্ভব নয় ।হঠাৎ ই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো , যে চেলাটির সাথে প্রীতম কথা বলছিলো , ওকে প্রীতম রামু বলে ডাকছিলো । সাহস করে বলেই ফেললাম আমি রামু । উত্তর এলো এতো সকালে তুই এখানে কি করছিস , যা পালা । বেশ সুযোগ কাজে এসে গেলো , চোখ বুজিয়ে দৌড় মারলাম গাড়ির দিকে, গাড়ির ভিতর বসে একটু জোরে কিছুক্ষন দম নিয়ে নিলাম । চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম বটে,কিন্ত নিজে ড্রাইভ করার অভ্যাস না থাকায় বেশ সম্যসা হচ্ছিলো । অনভ্যেস হাতে আঁকা বাঁকা ভাবে গাড়ি এগোতে লাগলো । এতো ভোর বেলা , গ্রাম এর রাস্তা প্রায় খালি , তাই বেশি বেগ পেতে হচ্ছিলো না । যাহোক করে হোটেল অব্দি পৌঁছে গাড়িটা দাঁড় করালাম । ওপরে গিয়ে দেখলাম দরজার চাবি কেউ ভেঙে দিয়েছে ।ভিতরে ঢুকে দেখলাম সব জিনিস ওলোটপালোট করা আছে । দরকারি জিনিস যা ছিল সব নিজেদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় বিশেষ কিছু পেয়েছে বলে মনে হলো না । তাড়াতাড়ি করে আমার ব্যাগ এর ওই বিশেষ চেন টিতে দেখলাম বন্দুক এর গুলি গুলো অক্ষত আছে কিনা । আমি সাধারণত ব্যাগ এর একটি বিশেষ চেন এ আমার গবেষণার গুরুত্ব পূর্ণ জিনিস গুলো কে লুকিয়ে রাখি । সেই চেন টি সাধারণের ভাবে দেখলে দেখতে পাওয়া যাই না । কেউ এই ব্যাগ আগে ব্যবহার করে থাকলে তবেই বুঝতে পারবে । অনেক গুলো গুলি বার করে পকেট এ নিয়ে নিলাম । কিন্ত একা এতো জনের হাত থেকে প্রীতম কে বাঁচাতে গেলে আরো কিছু লুকোনো অস্তের দরকার । শুধু মাত্র বন্দুক আর বুদ্ধি দিয়ে কিছু করতে যাওয়া ভালোই হঠকারিতা হয়ে যাবে । প্রথম বুদ্ধি এলো কলকাতার কমিশনার এর সাথে কথা বলা আর লোকাল পুলিশ এর ব্যবস্থা করা । কিন্ত মোবাইল এর টাওয়ার এখান থেকে পাওয়া ভীষণ শক্ত । তাই অগত্যা নিচে গিয়ে ল্যান্ড লাইন এর শরণাপন্ন হতে হলো । এখানে ছোট একটা এসটিডি বুথ দেখতে পেয়ে ,সেখানে গিয়ে কলকাতার কমিশনার অরুনাভ চ্যাটার্জী কে ফোন লাগালাম । পুরো গল্প টা শোনার পর বেশ চিন্তিত হয়ে অরুনাভ জানালো , যে জায়গায় তুমি আছ কাছাকাছি কোনো থানা তো দেখছি না , তাই খবর দিলে ও তাদের আসতে কাল সকাল হয়ে যাবে । তাই আমাকে সকাল অব্দি কোথাও লুকিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে ফোন টা রেখে দিলো ।
কিন্ত সকাল অব্দি অপেক্ষা আমি কোনো মতেই করতে পারবো না , কারণ যে ভাবেই হোক প্রীতম কে বাঁচানো টা আমার কর্ত্যব । কাল সকালে যদি পুলিশ নিয়ে গিয়ে দেখি ওরা প্রীতম এর সাথে খারাপ ভালো কিছু করে দিয়েছে ,আমি নিজেকে কোনো মতেই মাফ করতে পারবো না । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একাই যাবার , কিন্ত এখুনি নয় রাতের অন্ধকারে । বুথ থেকে ফেরার পথে হালকা কিছু খাবার দাবার খেয়ে ঘরে ফিরে এলাম । আরো ভালো করে ভাবতে লাগলাম , আর কি অস্ত্র বানানো যেতে পারে এখুনি যা আমাকে এই যুদ্ধে সাহায্য করতে পারে । ২টো জিনিস মনে হলো , এক যদি কোনো কিছু দিয়ে নিজেকে অদৃশ্য করা যেতে পারে , দুই ওদের সত্যিকারের বন্দুক এর গুলির হাত থেকে যদি নিজেকে রক্ষা করা যেতে পারে । প্রথম টি আমার তৈরি চাদর দিয়ে সম্ভব ছিল, কিন্ত সেটা তো সাথে আনিনি , আর এখুনি বানানো ও সম্ভব নয় ।কিন্ত দ্বিতীয়টি বোধহয় সম্ভব । নিজের চারধারে একটা বলয় তৈরি করা, যাকে ভেদ করে কোনো বন্দুক এর গুলি প্রবেশ করতে পারবে না । এই বলয় তৈরী করার জন্য যা যা জিনিস এর দরকার তার বেশ কয়েকটি জিনিস আমার নিজের কাছেই আছে , কিন্ত কিছু জিনিস কিনতেই হবে । তবে যে কোনো ওষুধ এর দোকান বা কোনো কেমিক্যাল ল্যাব এ জিনিসগুলো পেয়ে যাব । কেমিক্যাল ল্যাব না পেলে ও ওষুধ এর দোকান এখানে পাওয়া উচিৎ । নিচে নেমে জিজ্ঞেস করে ওষুধ এর দোকান পেতে বিশেষ অসুবিধা হলো না । প্রয়োজনীয় সব জিনিস পাওয়া না গেলে ও যা পেয়েছি সেটা দিয়ে কিছু যে করা যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিৎ ছিলাম । ঘরে ফিরেই লেগে পড়লাম এক্সপেরিমেন্ট এ । প্রায় ৩ঘন্টার চেষ্টাই নানারকম টেস্টিং এর পর যে বলয় টি তৈরি করা গেলো সেটা দিয়ে বন্দুক এর গুলির হাত থেকে বাঁচা যাবে ঠিক কথা , কিন্ত স্থায়িত্বকাল বেশিক্ষণের নয় । এক বার শুরু করলে ১ ঘন্টা ওই বলয় সক্রিয় থাকবে, তারপর নিজেই বিলীন হয়ে যাবে । অন্ততঃ ৫০০ মাইল প্রতি সেকেন্ড এ বা তার থেকে বেশি গতিবেগ এ আসা যে কোনো বস্তূ এই বলয়কে অতিক্রান্ত করতে পারবে না ওই এক ঘন্টার মধ্যে । যন্ত্র টি বানাতে পেরে মনে ভালোই খুশি হলো , অন্ততঃ ১ ঘন্টা সময় পাওয়া যাবে, যে ভাবেই হোক তার মধ্যে আমাকে বার করতেই হবে প্রীতম কোথায় আছে । সব কিছু তৈরী করে অল্প কিছু খাওয়া দাওয়া করে একটু চোখ টা বুজোলাম , এরকম সময়এ যতই ক্লান্ত থাকি ঘুম আসতে চাই না । তাই দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে আধা ঘুম আধা জাগরণে সূর্য ডোবার অপেক্ষা করতে থাকলাম ।
৬ই আগস্ট , ২০১৮
অদ্ভুত এক পরিস্তিতিতে , বন্দি অবস্থায় এই প্রথম ডায়েরি লিখছি আমি । যাকে বাঁচাতে এখানে আসা তার সাথেই বন্দী হয়ে গেছি , আর বাঁচার উপায়কি সেটাই ভাবছি ।
কাল সূর্য ডোবার পর যখন বেরোলাম চারিদিকে শুনশান হয়ে গেছে । গ্রামের দিকে সূর্য ডুবে যাবার পর এরকম ই শুনশান লাগে । গাড়িটা চালিয়ে পড়ো বাড়িটার কাছে যখন পৌঁছলাম আসে পাশে সেরকম কাউকে দেখতে পেলাম না । আসতে করে গাড়িটা ঝোপ এর কাছে রেখে , ধীর পায়ে এগিয়ে চললাম । জানলা অব্দি পৌঁছনোর জন্য কোনো বাধা বিশেষ পেলাম না । ভিতরে ঝুঁকে ও কাউকে দেখতে পেলাম না । বুঝতে পারছিলাম না সবাই এখান থেকে পালিয়ে গেলো কিনা । আজ সেই বিশাল গর্ত টা দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্ত সেখানে কেউ কাজ করছে না । জানলা টপকে ভিতরে যাবো ভাবছি , এমন সময় পিঠের উপর বিশাল একটা লাথি এসে পড়লো ।মুখ থুবড়ে জানলা টপকে ভিতরে গিয়ে পড়লাম ।আমি কিছু করার আগেই লোক টা লাফিয়ে এসে দুটো হাঁটু মুড়ে আমার বুকের উপর এসে বসলো । মনে হলো জান টা বুঝি বেরিয়ে গেলো । এবার পর পর ঘুষি মারতে থাকলো মুখের উপর । আর কিছুক্ষন এরকম চললে, আমি যে জ্ঞান হারাবো সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম । কিন্ত এই সময়ই লোকটিকে পিছন থেকে কেউ ডাকলো । ফলে কিছুক্ষন এর জন্য সে আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো । কিছুক্ষন এর জন্য মার্ খাওয়া থেকে বিরতি পেয়ে একটু দম নিতে পারলাম । প্রথম আক্রমণ এ যে এতটা জোরালো হবে বুঝে উঠতে পারিনি । আমার মাথা ফেটে রক্ত চোখ অব্দি চলে এসেছিলো । তাই চোখ টা ভালো করে চাইতে অসুবিধা ই হচ্ছিলো । যাহোক করে চোখ টা চেয়ে দেখলাম আমাকে প্রায় ৫জন লোক ঘিরে ধরেছে । হঠাৎ সবাই সরে গিয়ে এক জন এগিয়ে এলো , আর পকেট থেকে বন্দুক বার করে আমাকে তাক করছে । অপেক্ষা না করে হাত ঢুকিয়ে দিলাম বাঁ পকেট, আর অন করে দিলাম বলয় তৈরীর যন্ত্রটাকে । কয়েক মিলিসেকেন্ড লাগে ওটা তৈরি হতে তার মধ্যেই যদি গুলি চলে আসে নিশ্চিত মৃত্যু । গুলি চালালো লোক টা , চোখ বুজিয়ে ফেললাম আমি , হয়তো মৃত্যু আর বেঁচে থাকার মধ্যে শিখন্ডি হয়ে আছে আমার মাত্র ৩ ঘন্টায় তৈরি এই বলয় যন্ত্র টা । না মরতে হলো না আমাকে , গুলি চালালে ও বলয়এ লেগে তা তৎক্ষণাৎ পিছন দিকে ছুটলো আর যে চালাচ্ছিল তার হাতে গিয়ে লাগলো । মুহূর্তের মধ্যে আর্তনাদ করে উঠে অনেক টা পিছনে সরে গেলো সে । সুযোগ টা কাজে লাগালাম , উঠে দাঁড়ালাম আমি । পায়ে ,হাতে ভালোই লেগেছে , হাঁটতে গিয়েও বেশ একটু অসুবিধা হচ্ছে । কিন্তু এসব ভাবলে এখন চলবে না । পকেট থেকে বন্দুক টা বার করলাম , এর মধ্যে আরো এক জন আমাকে গুলি করলো , সেটা ও ছিটকে গিয়ে প্রায় তার গায়ে গিয়ে লাগছিলো, যাহোক করে বাঁচলো লোকটা । এতে যে লোক টা আমাকে প্রথম থেকে আক্রমণ করছিলো সে আরো রেগে গিয়ে আমাকে ঘুষি মারতে উদ্দত হলো , মুহূর্তের মধ্যে আমি আমার বন্দুক চালিয়ে দিলাম, তাতে স্ট্যাচু হয়ে গেলো সে । বাকিরা পুরো ব্যাপার টা বোঝার আগেই বন্দুক চালিয়ে দিলাম আমি , কিছু ক্ষণ এর মধ্যেই ৫ জন কে জব্দ করে নেয়া গেলো । এবার কাজ প্রীতম কে খোঁজা । বাড়িটা বিশাল বড়,কোন দিকে যাবো বোঝা টা ভীষণ শক্ত লাগছিলো । যাবার সময় সেই গর্ত টা দেখলাম প্রায়খালি হয়ে গেছে । জিনিস গুলো নিশ্চয় কোথাও রেখেছে । অজস্র ঘর এর দরজা খুলে দেখতে দেখতে সত্যি প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেলাম । কেমন যেন গোলকধাঁধা এই বাড়িটা ।ভাবলাম এক তলায় অনেক খুঁজলাম , এক বার ২ তলায় গিয়ে দেখি, সবে ২ তলায় পা দিয়েছি ,পিছন থেকে কেউ আমাকে যেন অনুসরণ করছে মনে হলো । অনুমান কোনো ভুল ছিল না , পিছন ফিরে তাকাতেই তার হতচকিত আক্রমণ, বন্দুক হাতেই ছিল চালিয়ে দিলাম, স্ট্যাচু হয়ে গেলো সে , ঠিক সেই মুহূর্তেই মাথার উপর বিশাল জোরে লাঠির আঘাত । জ্ঞান হারালাম আমি । যখন জ্ঞান ফিরলো , দেখলাম আমি একটা ভেঙে যাওয়া চেয়ারএ বসে আছি । সামনের লোক দুটোর মধ্যে এক জন এর হাতে বন্দুক ধরা । বলয়টা এখনো সক্রিয় ।তাই মনে মনে চাইছিলাম গুলি করুক । লোকটা সত্যি ই গুলি করলো , আর আমার সক্রিয় বলয় সেটা কে ফিরিয়ে দিলো । এবার সরাসরি লোক টার বুকে গিয়ে লাগলো । কিছু ক্ষণ এর মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে । আর একজন যে তার পাশে ছিল তার ঘাবড়ে যাবার সুযোগ নিয়ে দূরে পরে থাকা আমার বন্দুক থেকে একটি গুলি ছুড়লাম ।শান্ত হয়ে গেলো সেই লোক টি ও । চেয়ার থেকে উঠে এগোনোর আগে একবার মোবাইল বার করে সময়টা দেখে নিলাম । আর মাত্র ১০ টি মিনিট আছে আমার হাতে যে ভাবে হোক খুঁজে বার করতেই হবে প্রীতম কে । একটু তাড়াহুড়ো করতে শুরু করলাম, যখন আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি , প্রীতম প্রীতম বলে ডাকতে শুরু করলাম । মনে হলো যেন পাশের ঘর থেকে একটা ক্ষীণ আওয়াজ পেলাম । পাশের ঘরে দরজা ঠেলতেই দু জন পেল্লাই লোক সামনে এসে দাঁড়ালো , এক জন সপাটে একটা লাথি মারলো আমাকে , পরে যেতে যেতে গুলি চালালাম বটে কিন্তু ২ তো গুলি ই নষ্ট হলো , যখন আর একটা লাথি বুকের উপর পড়তে যাবে, তখন চোখ বুজিয়ে পর পর ২ টো গুলি চালালাম । তাতে এক জন জব্দ হয়ে গেলো । আর এক জন বন্দুক বার করে গুলি করলো আমাকে , বলয় তার কাজ করে ফেললো , লোক টির দিকে তাকিয়ে গুলি করলাম , স্ট্যাচু হয়ে গেলো সে । এই সময় দূরে মনে হলো প্রীতম কে দেখতে পেলাম বাঁধা অবস্থায় ।সবে এগোতে যাবো , এমন সময় সাধুবাবা কে আসতে দেখলাম । কোনো এক অজানা গন্ধ , আর অদ্ভুত জাদুতে হারিয়ে গেলাম আমি । মনেই থাকলো না কে প্রীতম , কেন তাকে বাঁচাতে চাই কিছুই । শুধু মনের মধ্যে রইলো বাবার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেবার ইচ্ছা । কোনো এক অবলীলাবলে আমার অত শখের আবিষ্কার করা বন্দুক , ৩ ঘন্টাতে তৈরি করা বলয় এর যন্ত্র সব ই দিয়ে দিলাম বাবাকে । সেই সময় এক ভীষণ জোর আঘাত পেলাম মাথার উপর , জ্ঞান হারালাম আমি ।
বেশ যখন জ্ঞান ফিরলো , আমি বন্দী , আমার পাশেই বাঁধা রয়েছে আমার বন্ধু প্রীতম । নিজের চালে একটা মস্ত বড় ভুল করে নিজেই পস্তাচ্ছি এখন , বাবা যে সম্মোহন জানে সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম ।আমার আর একটা চোখের লেন্স নিয়ে আসা উচিত ছিল । যাই হোক , এই সব কিছুর মধ্যে একটাই জিনিস যা আমাকে খুশি দিচ্ছে, সেটা হলো প্রীতম এর বেঁচে থাকা । প্রীতম এর জ্ঞান নেই ঠিক কথা , কিন্ত প্রীতম যে বেঁচে আছে এটা জানতে পেরে ভীষণ খুশি লাগছে । এবার যেমন করে হোক ওকে এখানে থেকে বাঁচিয়ে ফিরতে হবে । কিন্ত কি ভাবে সেটা সম্ভব ভেবে কোনো কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না । আশা একটাই এখানে আসার আগে কমিশনার অরুনাভ কে পুরোটা জানিয়ে এসেছিলাম । যদি উনি কিছু করেন । প্রীতম এর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা , কমিশনার যদি কিছু করে তার আশা , আর যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু কে গ্রহণ করতে হতে পারে এমন মানুষিকতা, এই তিন সত্য কে বিশ্বাস করে চোখ টা বুজিয়ে নিজের গবেষণাগার এ করে আসা শেষ অংকের হিসাব করতে লাগলাম । কথাই আছে না "ঢেঁকি স্বর্গে গেলে ও ধান ভাঙবে ।", সেরকম এক জন বৈজ্ঞানিক তার মৃত্যুর আগের মুহূর্তে ও নিজের শেষ গবেষণা কে নিয়ে চিন্তা করবে , সেটাই স্বাভাবিক । নিজের অঙ্কের শেষ সমাধান বার করতে করতে কখন যেন মন থেকে সমস্ত ভয় উদাও হয়ে গিয়ে,একটা ভালো লাগার অনুভতি হতে থাকলো , আধা ঘুম এর মধ্যে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম সময়এর এক অদ্ভুত মায়াজাল এর মধ্যে আমি অঙ্ক করে চলেছি ।