Sipra Debnath

Action Classics Thriller

3  

Sipra Debnath

Action Classics Thriller

নেপথ্য কাহিনী

নেপথ্য কাহিনী

12 mins
395



লক্ষণ সরকার। সরি ভুল বললাম। ইনস্পেক্টর লক্ষণ সরকার। ব্যক্তিগতভাবে আবার একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। যখন থেকে পোস্টিং হয়েছে প্রায় ২৫ বছর ধরে লঙ্কা টাউন পুলিশ স্টেশনেই আছেন।তার কাজের সুনাম শুধু ডিস্ট্রিক্ট জুড়ে নয় সম্পূর্ণ রাজ্য জুড়ে। তবে উনি পুলিশের ইউনিফর্মে কম এবং সিভিল ড্রেসেই বেশী থাকেন। একজন সাদামাটা মানুষের মতো দেখতে। অচেনা কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না উনি আসলে কে?


যাই হোক মূল বক্তব্যে আসি। আজকের গল্পটিতে ওনার ভূমিকা একজন ডিটেকটিভ হিসেবেই। মানুষটির নাম ডাক বেশ ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই যত্রতত্র। তার নাম ডাক ছড়াবার নেপথ্যে রয়েছে এক বড়োসড়ো ডাকাতির কিনারা সহ একটি জোড়া খুনের ঘটনার তদন্ত এবং তার রহস্য উদ্ধার। যেভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি সেই দুধর্ষ খুনিকে আবিষ্কার করেছিলেন তাতে উনার প্রশংসা না করে কোনো উপায় ছিল না। এই নিয়ে তথাকথিত আসামের অনেক খবরের কাগজেও তার সম্বন্ধে অনেক লেখালেখি হয়েছিল একসময়।সব অসমীয়া খবরের কাগজ এবং ইংরেজি খবরের কাগজে।


এমনিতে লক্ষণ পুলিশকে দেখলে হাবাগোবা ছাপোষা মানুষ বলেই মনে হয়। ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেনা এমন। তবে গোয়েন্দা হিসেবে তদন্তের কাজের বেলায় ওনার বুদ্ধি তুখোড় হয়ে ওঠে। কেমন পরিবেশে কি ধরনের টোপ ফেলে এগোতে হবে নিজের কাজে সে ব্যাপারে তার জুড়ি মেলা ভার। সেসব কাজের সময় তার মস্তিষ্ক যেন চারগুণ বেগে কাজ করে। তখন তার চোখ হয়ে ওঠে উজ্জ্বল চকচকে। চেহারা উদ্দীপ্ত।


২ নং প্রাইমারি স্কুলের সামনে রেশন দোকানের কাছেই উনার বাড়ি। বাড়িতেই একটা ছোট্ট ঘরে বসে অনেক কাজ করেন। ঘরটি বেশ সাজানো-গোছানো। রমেন নামে একটি ছোকরা সারাদিন ওনার চেম্বারে থাকেন তাকে সহযোগিতা করার জন্য।সব ধরনের ফাই ফরমায়েশ সে অনায়াসে খাটতে পারে। কখনো মুখভার হয়না। চা এনে দেওয়া পোস্ট অফিস কিংবা ব্যাঙ্কে যাওয়া সব দৌড়োদৌড়ি রামুই করে। রমেন কে লক্ষণ সরকার রামু বলেই ডেকে থাকেন ।



গোয়েন্দাগিরির কাজে লক্ষণ পুলিশকে সারাদিনে একরকম এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়। যথারীতি আজও তিনি বাইরের কাজ সেরে এসে সন্ধ্যায় নিজের চেম্বারে ঢুকলেন। ঢুকেই দেখলেন রামু একটি চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। এই মুহূর্তে চেম্বারে কোন ক্লায়েন্ট উপস্থিত নেই।


 হাঁক দিলেন,, কিরে রামু ঘুমাচ্ছিস নাকি?

 রামু হচ্কচিয়ে উঠলো। রামু বলে--

 না স্যার। আসলে...(একটু বোকার মত হাসে) স্যার আজ সারাদিনে কোন নতুন ক্লায়েন্ট আসেনি। তাইতো একা বসে থাকতে থাকতে চোখ দুটো জুড়ে আসছিল।


লক্ষণ গোয়েন্দা বলে--

তা অবশ্য ঠিক। তোকে আর কি দোষ দিবো। সারাদিন বসে থাকলে যে কারোরই ঝিমুনি আসে। ঠিক আছে একটা কাজ কর, রেজিস্টারটা এদিকে নিয়ে আয় দেখি।সারাদিন

কি হলো একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেই।


 রামু সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে আজ্ঞে না স্যার---

 আগেই তো বললাম আজ স্যার একটা মাছি ও নাক গলায়নি।


লক্ষণ আশ্চর্য হয়ে বলে,, সে কি রে?কেউ না?


রামু আবার ওনার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে 

বোকার মতো একটু হেসে বলে না স্যার। কেউ আসেনি।


লক্ষণ বলে---

ঠিক আছে ঠিক আছে। যা আমার জন্য না হয় এক কাপ গরম চা নিয়ে আয়। তুইও চা খেয়ে বাড়ি চলে যা। আজ যখন কোন নতুন কেস নেই তবে আর বসে থেকে কি করবি? কাল সকালে বরং তাড়াতাড়ি চলে আসিস।


রামু চায়ের ফ্লাস্কটা হাতে নিয়ে ছোট্টে গিয়ে তড়িত্গতিতে চা নিয়ে এসে কাপে ঢেলে প্লেটে বসিয়ে পরিবেশন করলো।

নিজের জন্য ও একটি কাপে চা ঢেলে নিল। চা খাওয়া শেষ হয়ে গেলে লক্ষণ স্যারের দিকে তাকিয়ে আবার বোকার মত হাসে।


লক্ষণ পুলিশ ওর মতলব বুঝে বলে--

কিরে হাসছিস যে! বললাম তো তুই বাড়ি যেতে পারিস।

আমায় একটু বসতে হবে। চাবিটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে যা।


রামু চাবিটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে গেল।


লক্ষণ গোয়েন্দা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন সবে সন্ধ্যা সাড়ে ছটা বাজে। তারমানে মাত্রই সন্ধ্যা হয়েছে।

মুভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পা দুটো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে চোখ দুটো বুজে একটি লম্বা শ্বাস নিলেন।

নিজেকে একটু রিলাক্স মুডে নিয়ে আসলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। তারপর হঠাৎ কি খেয়াল হতেই আগের কেস হিস্টরি ফাইলটা পাশের তাক থেকে পাড়তে গিয়ে দরজার পর্দায় চোখ পড়তে তিনি চমকে উঠলেন। পর্দার ওপারে কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছেন যার পা জোড়া পর্দার নিচ থেকে দেখা যাচ্ছে এবং এ পা জোরা রামুর নয়।

তার অচেনা।


টানটান হয়ে নড়েচড়ে বসলেন লক্ষণ পুলিশ। জিজ্ঞাসা করলেন---

-- কে ওখানে? কি চাই?

ম্যারম্যরে গলায় বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো---

---ভিতরে আসতে পারি স্যার?

লক্ষণ গলাটা একটু কেশে নিয়ে বলল--

চলে আসুন। ওখানে দাড়িয়ে কি করছিলেন?


পর্দা সরিয়ে লোকটা এবার ভেতরে এসে দাঁড়ায়। একটু ইতস্তত ভাব নিয়ে বলে---

স্যার, আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল।যদি অভয় দেন বলতে পারি।


লক্ষণ গোয়েন্দা ভালো করে লোকটির আপাদমস্তক একবার দেখে নিল। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বয়স প্রায় অর্ধশতাধিক। পরনে ধুতি খানা দেখে মনে হচ্ছে টোকা দিলে ঝরঝরিয়ে কিছু ধুলো পড়বে নীচে। গায়ে দেওয়া শার্টের কলারের ছাল প্রায় পুরোটাই উঠে গিয়েছে। দু পায়ে দু'রকম ফিতের স্যান্ডেল। সবকিছু যেমন তেমন মানুষটির ডান গাল জুড়ে একটি বেশ বড়সড় লোমশ আঁচিল । যেন কেউ ভালুকের চামড়া কেটে একটুকরো বসিয়ে দিয়েছে তার গালের উপর। চোখ দুটো যেন মিইয়ে আছে। বিধ্বস্ত চেহারা।


লক্ষণ গোয়েন্দা বলে--

আরে আপনি দাঁড়িয়ে কেন? এইতো-এইখানে এই চেয়ারটায় বসুন।



লোকটি' অভয় পেয়ে এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে। এবার কিছুটা ধাতস্থ হল।


লক্ষণ বলল---

বলুন কি বলতে চাইছিলেন?

লোকটি একটা ঢোক গিলে নিয়ে লক্ষণের দিকে তাকিয়ে বলে--

স্যার একটি খুনের ঘটনা আপনাকে জানাতে এসেছি।


লক্ষণ---

মানে! সে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। খুন! কার খুন! কে খুন করল!


আজ্ঞে স্যার, খুন করে বডিটাকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে।


লক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে আগন্তুক লোকটির দিকে তাকায়।

তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ডায়েরীটা টেনে বের করে নেয় কেস টুকার জন্য। একটু কেশে নিয়ে বলে--


খুলে বলুন তো দেখি একটু ব্যাপারটা। কে কোথায় কাকে কেমন করে খুন করল? একটু উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল।



আগন্তুক নির্বিকার। নির্লিপ্ত চাহনি। শান্ত ভাবে উত্তর দিলো--

স্যার, আপনি যদি ডেড বডি দেখতে চান আমি দেখাতে পারি। অসময়ে আপনার কাছে আসার একটাই কারণ।

স্যার খুনি পালানোর প্ল্যান করছে। শিগগির চলুন না হলে ওকে ধরা যাবেনা।


লক্ষণ মানুষটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। লোকটার মাথায় কোনো ছিট্ নেই তো? মনে মনে ভাবছে। কিন্তু নাহ্ তেমনটা তো মনে হচ্ছে না। বলল আচ্ছা বসুন, চা খান।


লোকটি বলল--

না স্যার, আমি চা খাই না। এছাড়া এখন চা খেতে বসলে দেরি হয়ে যাবে। খুনী পালাবে তাকে ধরা যাবেনা। কারন আজ রাতে সেভেন-আপ (ট্রেন) এ তিনসুকিয়া চলে যাবে বলে ঠিক করেছে। বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে আর কিছুই করা যাবে না স্যার। ওর টিকিট রিজার্ভেশন হয়ে গেছে।


লক্ষণ বলল--

ঘটনাটা ঠিক কোথায় ঘটেছে একটু খুলে বলুন তো।


লোকটি বলল---

খুব একটা দূরে নয় স্যার। ঐতো তালুকদারদের পুকুর ধারে পুরনো বাড়িটাতে।


এড্রেস টা বলুন, লক্ষণ বলল---

লোকটি চটপটকরে ঠিকানাটা বলে ফেলল। লক্ষণ ও তাড়াতাড়ি ডাইরিতে টুকে নিলো ঠিকানাটা। তারপর বলল

বেশ বেশ। এবার বলুন দেখি কে কাকে খুন করল? তাদের নাম কি?


লোকটা বলল---

স্যার যে খুন করেছে তার নাম জি. সি. দাস। (গোবিন্দ চরণ দাস)। খুব ডেঞ্জারাস ফেরারবাজ লোক।


লক্ষণ বলল---

বটে, তা কাকে খুন করেছে? তার নামটা বলুন।


জি স্যার, ওরই এক বিজনেস পার্টনার। নাম অয়ন গিরি।

টাকা পয়সা নিয়ে দুজনের মধ্যে অনেকদিন ধরেই মনোমালিন্য মত বিরোধ চলছিল। আজ দুপুর বেলা অয়নকে নিজের বাড়িতে ডেকে ছিল কিছু কাজের কথা আছে বলে। অয়নের অসতর্ক অবস্থায় অতর্কিতে জি. সি. তাকে হত্যা করে।


আজ দুপুরে!!! কিভাবে?


স্যার জি.সি.র বাড়িটা খুব নির্জন এলাকায়। ওই বাড়িতে সে ছাড়া আর কোন লোক থাকে না। দুজন ঘরের ভেতর বসে কথা বলছিল। হঠাৎই সুযোগ বুঝে জি.সি. অয়নের পেটের মধ্যে ভোজালি ঢুকিয়ে দেয়। তিন চার মিনিটের মাথায় অয়নের ইহলীলা সাঙ্গ হয়ে যায়।



--বটে, আপনি কি সে ঘটনা ঘটতে দেখেছেন? আপনি জানলেন কি করে এত কথা?


আগন্তুক কিছু একটা উত্তর দেবার চেষ্টা করছিল। ঠিক সেই মুহূর্তেই কেলেঙ্কারি ঘটে গেল। দপ্ করে আলো নিভে গেল। লক্ষণ তৎক্ষণাৎ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল লোডশেডিং হয়েছে । বাইরে পুরোটাই অন্ধকার।


সে বলল আমি তাহলে এখন যাই স্যার। আপনাকে খবর দেওয়াটাই ছিল আমার এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য। এবার আপনি যা ভালো বলে বিবেচনা করবেন তাই করুন।

লক্ষণ টের পেল এ কথা বলতে বলতে লোকটা উঠে দাঁড়ালো।

লক্ষণ বলে উঠলো---

সে কি মশাই? আপনি চলে গেলে চলবে কেন? সব কথা তো শুনাই হলো না। তাছাড়া আপনি তো আমাকে স্পটটা দেখাবেন নাকি?


না স্যার। ওখানে আমার যাওয়াটা ঠিক হবেনা। আপনি কাউকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান। দেরি না করে এখনি চলে গেলে জি.সি. কে ঘরে পেয়ে যাবেন। ওকে জিজ্ঞাসা করলে আশা করি সব সত্য সামনে চলে আসবে। বলে সে পর্দা সরিয়ে টুকুস করে কেটে পরল। যেন জ্যান্ত ভূত উধাও।

লক্ষণ পুলিশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল নিজেকে নিজের কাছেই বোকার মত মনে হলো তার।


ডিসগাস্টিং! লোকটা কি পাগল টাগল? অদ্ভুত ব্যাপার তো। হঠাৎ করে এসে দুম করে একটি খুনের খবর শুনিয়ে দিয়ে হাওয়া হয়ে গেল? লোকটির চোখেমুখে বিন্দুমাত্র উত্তেজনার ছাপ পর্যন্ত নেই। নাকি আমি প্রকৃত গোয়েন্দা কিনা তা জানার জন্য একটু হেরাস করে গেল আমাকে কে জানে! মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে উঠে এসে চেম্বারে জানালার পাট দুটো বন্ধ করে দিল। আবার ভাবছেন না ব্যাপারটা একদম উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। চেম্বারে বসে থেকেই বা কি করব? তারচেয়ে বরং জি. সি. দাস নামে কাউকে ওই ঠিকানায় পাওয়া যায় কিনা একবার ঢু মেরে দেখে আসি। চেম্বারের দরজায় তালা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল। রাস্তায় বেরোতেই ইলেকট্রিক লাইট গুলো সব জ্বলে উঠলো। মনে মনে ভাবছে যাক বাবা বাঁচা গেল। লোডশেডিংয়ের ধকল অল্পের উপর দিয়েই কাটল।


লোকটার দেওয়া ঠিকানার দিকে পা বাড়ালো। এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে শেষে জি.সি.র ঘরটা খুঁজে পেয়ে গেল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত প্রায় সাড়ে আটটা। এরই মধ্যে এ পাড়ার পরিবেশ নিঝুম থমথমে।

মোবাইলের টর্চের আলো ফেলে দেখল বাড়িটি খুবই পুরাতন আমলের। দেয়াল চিরে গাছ বেরিয়ে এসেছে। বাড়ির সামনের দিকে বাগানের মত অনেকটা ফাঁকা জায়গা। পরিচর্যার অভাবে ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এরকম একটা জায়গায় কোন মানুষ বাস করতে পারে লক্ষণ গোয়েন্দা ভাবতেই পারছে না। তিনি লক্ষ্য করলেন যে বাড়ির সব কটি দরজা-জানালা ভেতর থেকে বন্ধ। বাড়িটির একটি ঘর থেকে জানালার ফাঁক দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছিল। বুঝতে পারলেন যে জি.সি. নিশ্চয়ই ওই ঘরে এখনো রয়েছে। সন্তর্পণে এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে কলিং বেল টিপতেই বেজে উঠলো।


সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে আওয়াজ আসলো কে? পরমুহূর্তে দরজা খুলে দিল। বলল কে? কাকে চাই?


লক্ষণ দেখতে পেল পরনের শার্ট প্যান্ট পায়ে সু ব্যস্ত সমস্ত একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। হাতে সময় খুব কম এমন ভাব। এমন একজনকে লক্ষণ দেখতে পেল ।

লক্ষণ বলল---

আমি একটু জি.সি.দাস মহাশয় এর সঙ্গে কথা বলতে চাই।


তিনি বললেন---

যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। আমায় ট্রেন ধরতে হবে। হাতে একদম সময় কম।


লক্ষণ বলল---

হুঁম, আমি জানি আপনি যে সেভেন-আপ ধরবেন। তা ট্রেন এক্সাক্টলি কয়টায়?


ভদ্রলোক প্রায় চমকে উঠলেন। মানেটা কি? আপনি কে?

কিভাবে জানলেন যে আমি তিনসুকিয়া যাচ্ছি?


লক্ষণ শান্ত মাথায় জিজ্ঞেস করেন--

আসলে আপনি সেখানে গিয়ে ক'দিন থাকবেন কোথায় উঠবেন এসব তথ্য আমার জানা ভীষণ দরকার।


মুহূর্তেই জি.সি. বাবুর চেহারা পাংশুবর্ণ ধারণ করল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ভুরু কুঁচকে লক্ষণের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন---

কে আপনি? আমার সম্পর্কে এত জানতে চাইছেন কেন?


এ ধরনের পরিস্থিতি কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় লক্ষণের খুব ভালোভাবে জানা আছে। সে মাথা ঠান্ডা রেখে বলে দেখুন মিস্টার জি.সি. বাবু এখন আপনার স্টেশনে যাওয়া হবে না। আপনাকে এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে একটু থানায় যেতে হবে। সেখানে গেলে খুব ভাল করে জানতে পেরে যাবেন আমি কে।



রেগে গিয়ে জি. সি. বাবু বললেন ---

হোয়াট ডু ইউ মিন? থানায় কেন যাব? থানায় যাবার মত কি কাজ করেছি আমি? যান মশাই যান এখান থেকে। আমাকে থানা দেখাতে আসবেন না। ফালতু কাজের সময় নেই আমার কাছে। যান যান এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার বাড়ি থেকে।বলতে বলতে ঘরের ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল ভেতর থেকে।


লক্ষণ দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখলো। উপায় ছিল না। নিজেকে কেমন বোকা বোকা ঠেকলো। সন্দেহ দানা বেঁধে উঠলো

মস্তিষ্কে। মনে মনে ভেবে নিল না এই সন্দেহজনক লোকটাকে এখন কিছুতেই হাতের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। সঙ্গে সঙ্গেই আবার ভাবল আমি তো উইদাউট আর্মস। সে তো একজন খুনি। আমার যে কোন ক্ষতি সে করে দেবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই।


এরই মধ্যে টুকুস করে ঘরের ভেতরের আলো দপ করে নিভে গেল। লক্ষণ একটু চমকে উঠলো। জি. সি. দাস একটি ট্রলি ব্যাগ হাতে করে টেনে নিয়ে ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন।লক্ষণ কে উদ্দেশ্য করে বললেন----

আরে কি ব্যাপার মশাই! আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে?

আপনাকে যে বলেছিলাম জরুরী কাজে আমি বাইরে যাচ্ছি দেরি হয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো বলতে বলতেই সে ঘরের দরজায় তালা ঝুলায়। তারপর ট্রলি ব্যাগটা টেনে নিয়ে সদর দরজার দিকে পা বাড়ায়।


লক্ষণ এমতাবস্থায় কি করবে বুঝতে পেরে ওঠে না। সে কি লোকটার পিছু নেবে? আবার ভাবে না একে ফলো করে কি হবে তার চাইতে বরং থানায় গিয়ে ব্যাপারটা জানানো যাক।


আচানক তার পেছন থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসে।

স্যার স্পটটা একটু দেখে যাবেন না? গলায় আকুতির সুর।


লক্ষণ চমকে উঠে। বলে--

কে? তারপর পিছন ঘুরে দেখে যে আরে এ তো সেই লোকটাই যে খুনের খবর টা দিতে এসেছিল সন্ধ্যায় চেম্বারে গিয়ে।


লক্ষণ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে---

আপনি? লোকটা বলল হ্যাঁ স্যার আমি। জি.সি. তো আপনাকে পাত্তা না দিয়ে ট্যাক্সি ধরে নগাও রোড হয়ে স্টেশনের দিকে চলে গেল।


হুম,,, তো আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? হঠাৎ এখানে কেন?

লোকটার সেই নিষ্প্রভ দৃষ্টি। বলল--

আসুন না স্যার, আপনাকে স্পটটা দেখিয়ে দিই। খুন করে যেখানে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে লাশটাকে। আসুন আমার পেছনে, দেখে যান।


লোকটা বাড়ির পেছনদিকে এগিয়ে যেতে থাকে। লক্ষণ ও তার পিছু নেয়।কোন এক সময় বাড়ির এদিকটাতে ও বাগান ছিল বলে মনে হয়। এখন বাগানের পরিবর্তে ঘন জঙ্গল গজিয়েছে। পেছনদিকে বাউন্ডারি ওয়াল টা বেশ উঁচু। বাইরের কিচ্ছু দেখা যায় না।


স্যার, ওয়ালের পেছন দিকে রয়েছে একটি বড় বিল।

ওহ্! তাই বুঝি?


আর ওই দিকে তাকিয়ে দেখুন স্যার। নিজের আঙ্গুল তুলে দিকটা ইঙ্গিত করে দেখায়।


লক্ষণ দেখতে পায় বাউন্ডারি দেওয়ালের এক কোনায় জঞ্জালের স্তূপ। সেই স্তুপের উপর পিচের একটি খালি ড্রাম দাঁড় করানো।


লোকটা বলে---

স্যার আপনি ড্রামটা একটু সরিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে সেখানে গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। লাশটাকে প্লাস্টিকে মুড়ে একটি বস্তায় ভরে সেখানে পুঁতে দিয়েছে স্যার।


লক্ষণ এগিয়ে যায় দাঁড় করিয়ে রাখা পিচের ড্রামের কাছে। যেই না ড্রামটি সরানোর জন্য লক্ষণ হাত বাড়িয়েছে অমনি লোকটি বলে উঠলো না না স্যার, আপনি ওতে হাত দেবেন না। আগে পুলিশ আসুক। পুলিশ এসে লাশটাকে উদ্ধার করুক।


লক্ষণ হাত সরিয়ে নিয়ে দু পা পিছিয়ে এলো। তাহলে পুলিশকে জানানো দরকার খবরটা কী বল?


লোকটি বলে---

পুলিশ চলে এলই বলে স্যার।ঐতো পুলিশ ভ্যানের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।


হ্যাঁ, লক্ষণ একটি পুলিশ ভ্যানের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। সে সদর গেটের দিকে এগিয়ে যায় শব্দ লক্ষ করে। গিয়ে দেখে যে সত্যি সত্যিই পুলিশের গাড়ি। সে আশ্চর্য হয় এই ভেবে যে পুলিশ কি করে খবরটা ইতিমধ্যেই জেনে গেল। সেতো থানায় এখনো ফোন করেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের গাড়িটি সদর দরজা পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। ওসি সাহেব নেমে আসলেন গাড়ি থেকে।


নেমেই বললেন লক্ষণ বাবু!কি ব্যাপার? এত জরুরি তলব করেছেন কেন? চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাইতো তড়িঘড়ি ছুটে এলাম।


লক্ষণ অবাক হয়। তলব করেছি আপনাকে? আমি? কই নাতো! তবে যাইহোক আপনারা চলে আসাতে আমার পক্ষে খুব ভালোই হয়েছে।


ওসি সাহেব বললেন ---

 বলছেন কি মশাই? তাহলে ফোন করলো কে আমাদের আপনার নাম্বার থেকে? বললেন এই ঠিকানায় ফোর্স নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন চলে আসি খুব জরুরী দরকার?আপনি এখানে অপেক্ষা করছেন।


ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে লাগছে লক্ষণের। রহস্যময় ঠেকছে সব।কিন্তু এই মুহূর্তে ফালতু আলাপ বাড়িয়ে লাভ নেই,বলল---এ বাড়িতে একটা খুব বড় মাপের গন্ডগোলে ব্যাপার ঘটে গেছে। বাড়ির পেছনদিকে মাটির তলায় দারুণ এক রহস্য লুকানো রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।


ওহ্ ! তাই নাকি? চলুন তাহলে আর দেরি কেন? রহস্য উদঘাটন করা যাক।


শুরু হল মাটি খোঁড়ার কাজ। চারদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আর্মড ফোর্স। পিচের ড্রামটি সরিয়ে খানিকটা মাটি খুড়তেই বেড়িয়ে পড়ল বস্তাবন্দি লাশ। সবাই মিলে বডিটাকে গর্ত থেকে টেনে উপরে তুলে আনল। তারপর বস্তার মুখ খুলে প্লাস্টিক কেটে সরাতেই লক্ষণ চমকে উঠে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। আশ্চর্য! অতি আশ্চর্য!! এ কী করে সম্ভব? লাশের শরীরে সেই ময়লা ধুতি, ছাল উঠে যাওয়া শার্টের কলার। আরো তো আরো লোকটার গালে যে কালো ভালুকের মতো লোমশ আঁচিলটি ছিল সেটাও অবিকল!!!


ওসি লক্ষণ কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে---

আরে কি হলো মশাই?


লক্ষণ চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে আমি এতক্ষণ যে লোকটির সাথে কথা বলছিলাম তিনি কোথায়? তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না!


ওসি সাহেব বললেন---

আপনি কার কথা বলছেন? আমরা তো এখানে অন্য কোন লোককে দেখতে পাইনি? কিছুইতো বুঝতে পারছি না মশাই।


লক্ষণ আবার ভয়ে ভয়ে চতুর্দিকে দেখে বলে জানেন ওসি সাহেব, অবিকল লাশটির মত চেহারার একটি লোক সন্ধ্যায় আমার চেম্বারে খুনের ঘটনাটির খবর দিতে এসেছিল।কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত ও লোকটি আমার সঙ্গে ছিল। অবিকল এই চেহারা। এই ধুতি এই শার্ট আর এই গালের এত্ত বড় আঁচিলটা।


ওসি বলল---

তার মানে আপনি বলছেন----


বিশ্বাস করুন ওসি সাহেব। মনে হচ্ছে এই লাশের আত্মাই আমাকে এখানে টেনে এনেছে। থানায় তো আমি ফোন করিনি। ওই কান্ডও নিশ্চয়ই এই আত্মা ব্যাটারই কীর্তি।



বলছেন কি? তাই নাকি? ওসিও ভয় পেয়ে কেমন চুপ মেরে গেলেন। তারপর পুলিশ ভ্যান সোজা স্টেশনে। সেভেন-আপ ট্রেনেই পাওয়া গেলেও জি.সি.কে। তাকে থানায় তুলে নিয়ে আসা হলো। জেরার মুখে জি.সি. স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলো যে সেই অর্থের লোভে নিজের বন্ধু অয়ন গিরি কে খুন করেছে।








Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action