তিতলি কথা
তিতলি কথা
Write a story on your journey of the year 2021...
শিরোনাম: তিতলি কথা
২০২১ তিতলির নানা বাধা বিঘ্নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে। বছরের শুরু থেকে বেশ ভালই কাটছিল। স্বামী ছেলে-মেয়ে সংসার এবং তার স্যারের সঙ্গে।
স্যার তাকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক স্বপ্ন দেখায়। সেও স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়। স্যার কে সে পূর্ণমাত্রায় বিশ্বাস করে এবং শ্রদ্ধা করে। সংসার যদি তার অর্ধেক পৃথিবী হয় বাকি অর্ধেক পৃথিবী তার জীবনে সেই মানুষটা যাকে সে স্যার বলে সম্বোধন করে থাকে। মানুষটাকে সে ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড মনে করে থাকে। স্যার তাকে কখনো ওর আসল নামে ডাকে নি। মিষ্টি অথবা মেমসাহেব বলেই ডাকতো। একদিন সে জানতে পারে তার শ্রদ্ধা এবং ভালবাসার মানুষ অন্য কাউকেও সেই একই নামে ডেকে থাকে। ব্যাপারটা তিতলির একদম ভালো লাগেনি। মনে-মনে আহত হয়।কষ্ট পায়। যে মানুষটা তার সাথে রোজ সকালে কথা না বলে বাইরেই যায় না মেয়েটা খেয়াল করল যে তার স্যারের আচরণ ঠিক আগের মত নেই। কিছুদিনের মধ্যে কারণটা তিতলি বুঝতে পারে। ইতিমধ্যে ইন্দু নামে একটা মেয়ের সাথে উনার যাওয়া-আসা উঠা বসা শুরু হয়েছে। সেই মেয়েটি তার স্যারের নখ কেটে দেয় খাবার বানিয়ে নিয়ে এসে খাইয়ে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে স্যার তিতলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সম্পূর্ণভাবে। ওর আর কিছু বুঝতে বাকি থাকেনা।
স্যারের বাবা অনেকদিন যাবত অসুস্থ বিছানায় শয্যাশায়ী। সবসময় খোঁজ খবর রাখতো তিতলি। স্যার এখন তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে তাই সে আর খবর নিতে পারে না। হঠাৎ একদিন সে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অবগত হয় যে বাবা আর পৃথিবীতে নেই।
অথচ এই খবরটা স্যার তাকে জানায়নি। কষ্ট পায় তিতলি।কারণ তিতলি মেয়েটা নিজের স্যারের বাবাকে নিজের বাবাই মনে করতো।ভালোবাসতো। কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর তিতলি নিজের কষ্ট চেপে রাখতে না পেরে স্যার কে মেসেজ করে। স্যার তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সে আর তিতলির সঙ্গে কথা বলতে চায়না।মেয়েটি আবার কষ্ট পায়।কান্নায় ভেঙে পড়ে।কিন্তু স্যার কে আর কিছু বলেনা।যে চলে যেতে চায় তাকে সে আটকে রাখবে না। কি জন্য কি হয়েছে তিতলি সহজ সরল হলেও এইটুকু সে বুঝতে পারে। তখন থেকে দুজনের মধ্যে আর যোগাযোগ হয়নি। তিতলির জীবনের একটা দিক একদম শূন্য হয়ে গেলো। অন্তর জুড়ে তার হাহাকার। একাই কাঁদে সে। দিনের মধ্যে অসংখ্যবার। অথচ এই মানুষটাই তাকে একদিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল যে সে স্যারের সাথে রিসার্চ করবে বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েট লেভেলে। কেননা তিতলির তখনও মাস্টার ডিগ্রী করা হয়ে ওঠেনি। ২১ দিনের রিসার্চ শেষ করে ব্যাংকক যাবে অন্য প্রজেক্ট এ রিসার্চের জন্য এবং তিতলি সেখানে স্যার কে এসিস্ট করবে।
তিতলি নিজের সব এডুকেশনাল কাগজপত্র সব সাবমিট করেছিল স্যারের কাছে।সেই মুহূর্তে ইউনিভার্সিটির ডিন ছিলেন প্রফেসর মহুয়া দাস। তিনিও ওদের সাথে একসঙ্গে কাজ করার কথা। স্যার তাকে জানিয়েছিল কাগজপত্র দিল্লি হেড অফিসে চলে গিয়েছে। উপাচার্য ফাইলটিকে ফরওয়ার্ড করে দিলেই রিসার্চের কাজ শুরু হয়ে যাবে ।
কিন্তু আজও কিছু হয়নি। বিষয়টা নিয়ে তিতলি খুব এক্সাইটেড ছিল। কিন্তু সব উলোট পালোট হয়ে গেলো। তিতলির জীবনটাই পাল্টে গেলো। সেই আগস্ট মাস থেকে তিতলি দিনরাত কতবার যে কেঁদেছে গুনে শেষ হবে না। এই জীবনে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে কিনা জানে না। সে কোনোদিন আর কাউকে ভালও বাসতে পারবেনা। তিতলি থেমে থাকেনি। সে তার লেখা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেখতে দেখতে দুর্গাপূজা চলে আসে। তিতলি অসুস্থ।মনের কষ্টে তার দিনরাত অতিবাহিত হচ্ছে। তার খাওয়া-ঘুম কোথায় উবে গিয়েছে সে জানে না।
তিতলিকে ওর দূর সম্পর্কের এক দাদা ফোন করে জানায় যে তার বায়োডাটা যেন অতিসত্বর "ভারতীয় দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমি"তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কথা মতো কাজ করে। ওর নাম সাবিত্রীবাই ফুলে নেশনাল ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়। ১০ই ডিসেম্বর তিতলি দিল্লি যায় অ্যাওয়ার্ড নেবার জন্য। প্রথম বার সে ফ্লাইটে চড়ে। ১১ডিসেম্বর ২০২১ দিল্লি পঞ্চশীল আশ্রমে সে ভারতীয় দলিত সাহিত্য একাডেমী কর্তৃক নেশনাল ফেলোশিপ ওয়ার্ড এ সম্মানিত হয়। এ খবর তার শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো শহরে খুশির লহর।
বাড়িতে সংবাদমাধ্যম আসে তার ইন্টারভিউ নিতে। বেশকিছু টিভি চ্যানেলে হেডলাইন হিসেবে খবরটি দেখানো হয়। তিতলির পরিবার খুব খুশি তার এই সফলতায়। তিতলি নিজেও খুশি। এরইমধ্যে তিতলি স্টরিমিরর এ অথর অফ দা ইয়ার নমিনেশন পায়। এছাড়াও তিতলি ইন্ডিয়া প্রাইম অ্যাওয়ার্ডের জন্য টপ হান্ড্রেড অথর এন্ড রিসার্চারস ২০২২ এর জন্য মনোনীত হয়।
বছরের মাঝখানটায় দুঃখ-কষ্টে কাটলেও বছরের শেষ টা হয় সাফল্যের সঙ্গে। তিতলি মনে করে তার কাজই তার পরিচয়। সে কারো করুণা ভিক্ষা বা দয়া চায় না। তিতলি এখন অনেক পরিণত।
© sipra DebnathTultul.