অন্যরকম পরিবর্তন
অন্যরকম পরিবর্তন
অন্যরকম পরিবর্তন***
আমি জয়।ক্লাস সেভেনে পড়ি। বয়স তেরো। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।এই বয়সটায় সকল ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে। আমার মধ্যেও এসেছে তবে এই পরিবর্তন অন্যদের পরিবর্তন থেকে একটু অন্যরকম। কিছুদিন ধরেই দেখছি ক্লাসের বন্ধুরা আমায় নিয়ে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে নিজেদের মধ্যে আমার দিকে তাকিয়ে। আমার অস্বস্তি হয়।
এখন ছেলেদের সাথে কথা বলতে ওদের সাথে বসতে আমার ভালো লাগেনা। কিন্তু উপায় নেই। আমি যে ছেলে আমাকে ক্লাসে বসতেই হয় ওদের সাথে।
আমি নিজেও লক্ষ্য করছি কিছুদিন ধরে অন্যরকম সত্তা আমার মধ্যে জেগে উঠছে। কিন্তু আমি কারো কাছে প্রকাশ করতে পারিনা। আমার ইচ্ছে হয় মেয়েদের মত নখে নেলপলিশ পড়তে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে। চুল কেটে ছোট করতে একদম মন চায় না। আমার হাঁটাচলাতেও তো একটা মেয়েলী ধরন কাজ করছে। এতটা প্রতিকূলতার মধ্য দিতে যেতে যেতে হাপিয়ে উঠছিলাম। না পারছি কাউকে কিছু বলতে না পারছি সইতে। অসহ্য পরিস্থিতি। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আর কতদিন চলা যায়!!!
কিছুদিন ধরে মাও বাবার সাথে কি যেনো গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে। আমার দিকে কেমন একটা করে তাকায়। আজ যখন স্কুল থেকে ফিরলাম বাবা বলল খাওয়া-দাওয়ার পর আমার ঘরে এসো কথা আছে।
খাবার শেষে মায়ের সাথে বাবার ঘরে এলাম। বাবা বলল বস। আমি একটা অস্বস্তি নিয়ে বাবার পাশেই বসলাম।
বাবা বলল দেখো জয় তুমি এখন বড় হচ্ছো। তোমাকে মা-বাবার সম্মান বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে। অনেকে অনেক কথা বলছে কানে আসে ভালো লাগেনা এসব শুনতে। তুমি নিজেকে শুধরাও।
আমার ভেতর থেকে একটি প্রতিবাদী কন্ঠ বলে উঠল, যে যা বলে বলুক। লোকের কথার পরোয়া আমি করি না। আমি বাঁচতে চাই। এভাবে বাঁচা যায় না। তোমরা তো আমার অসুবিধার কথা জানতে চাইলে না!!! তোমরা ছোটবেলা থেকে আমাকে ছেলের মত মানুষ করেছ। কিন্তু
আমি চাই একটি মেয়ে হয়ে বাঁচতে। তোমরা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও না কেন???
বাবা গর্জে উঠলো,,, নাহ সম্ভব নয় । ডাক্তার কি বলবে জানা আছে। মায়ের চোখ থেকে জল ঝড়ছিল। মুখে কিছু বলল না। মায়ের চেহারাতেও আক্ষেপের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। আমি আর কিছু বললাম না। নিজের রুমে চলে এলাম। রাতে বাবা-মা ঘুমিয়ে যাবার পর ঘরের দরজা খুলে
অন্ধকারেই পথে পা বাড়ালাম। জানি বাঁচার জন্য অনেক লড়াই করতে হবে। স্কুলব্যাগে একটি খাতা একটি কলম আর দুটো জামা প্যান্ট নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে এসে জীবন যুদ্ধে পা বাড়ালাম। এটা আমার একার জীবন একার লড়াই।
সোজা স্টেশন এ চলে এলাম নিজের অজান্তেই হাঁটতে হাঁটতে।কিছুক্ষণ পর ট্রেন এলো। গন্তব্য জানা নেই। ট্রেনে উঠে পড়লাম। প্রথমে লুমদিং স্টেশন।তারপর দিফু।আমি কিছু না ভেবেই নেমে পড়লাম দিফু স্টেশনে। বেশ রাত হয়েছিল। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম প্লাটফর্মে থেকে যাওয়াটাই ঠিক হবে। আমি ওয়েটিং চেয়ারে বসেই রাতটা কাটিয়ে দিলাম।ভোরের আলো ফুটতেই হাটা শুরু করলাম। ব্যাগে খাবার নেই। পকেটে পয়সাও নেই।খুব খিদে পেয়েছে। একটা টেপ কল চোখে পড়লো এগিয়ে যেতে।খানিকটা জল খেয়ে আবার এগোতে শুরু করলাম।
আমার উল্টো দিক থেকে একদল কিন্নর হেঁটে আসছিল গল্প করতে করতে।আমায় দেখে থমকে দাঁড়ালো।তাদের মধ্য থেকে দেখতে গার্ডিয়ান মত একজন আমাকে বললো এই ছোড়া থাম থাম তোকে তো দেখতে আমাদেরই মত লাগছে।কোথায় যাচ্ছিস তোকে এত ক্লান্ত কেনো লাগছে।বল বল কি হয়েছে তোর? দেখে তো মনে হচ্ছে পেটে কিছু পরেনি। মাথা নিচু করে আছিস কেনো ধমকের সুরে বলল।তোর অবস্থা আমরা বুঝতে পারছি।আপত্তি না থাকলে চল আমাদের সাথে আমাদের একজন হয়ে থাকবি।আর শোন আমাকে আম্মা বলে ডাকবি বলে দিলুম,বাকিদের দিদি বলবি কেমন।