Sipra Debnath

Abstract Action Fantasy

3  

Sipra Debnath

Abstract Action Fantasy

আতঙ্ক...

আতঙ্ক...

3 mins
251



রাত প্রায় দশটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট।সকল যাত্রীরাই ডিনার সেরে যার যার বাঙ্কারে মোটামুটি ঘুমের দেশে পারি দিয়েছে। দিল্লী টু ডিব্রুগড়। ট্রেন নাম্বার ২০৫০৪, ডিবি আর জি রাজধানী। দুরন্ত গতিতে ছুটছে নিজের লক্ষ্যে। তিতলিরা নিউ দিল্লি থেকে বোর্ডিং করেছিল। ডেস্টিনেশন কিশান্গঞ্জ। সেখান থেকে তিতলিদের অন্য কোন গাড়িতে রায়গঞ্জ পৌঁছতে হবে।


ঠিক সে সময় হঠাৎ করেই সাইরেন বেজে ওঠে। অর্ধ ঘুমে 

সকলেই লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে। আচমকা সাইরেনের আওয়াজে সকলেই বিব্রত এবং অপ্রস্তুত এবং বেশিটাই আতঙ্কিত। তিতলিও ঘুমোচ্ছিল। ওর হাজব্যান্ড ওকে এক ধাক্কাতে জাগিয়ে তোলে। ফলত: তিতলি চট করে কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। সকলের দৌড়োদৌড়ি হুড়োহুড়ি দেখে আন্দাজ করে সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটেছে। তৎক্ষণাৎই ওর কানে সাইরেনের আওয়াজ আসে। চতুর্দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে না আসলে কি ঘটেছে। সব যাত্রীরা একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে। তিতলিদের অপজিট সিটের কো প্যাসেঞ্জার আদি । আর্মির উচ্চপদস্থ ইঞ্জিনিয়ার সে নিজেকে রেডি করে নিয়েছে যে করেই হোক সকলকে বাঁচাতে হবে। সাইরেন বেজেই চলছে সাথে সকলের ভয় আর আতঙ্কও বাড়ছে।

তিতলি আদির থেকে জেনে নিল ট্রেনে কি ঘটেছে। জানলার ধারের সিটে আছেন অন্য এক আর্মি অফিসার এবং ওনার ফ্যামিলি। স্ত্রী একটি ছ বছরের মেয়ে এবং একটি দু বছরের ছেলে। সিমি এবং চিকু। ওনাদের ডেস্টিনেশনও রায়গঞ্জ। সেখান থেকে ইটাহার। ওরাও সকলে ধরফর করে উঠে বসেছে। আদির ওপরের বাংকারে এক যাত্রী নাম মতীন্দ্র মাহাতো সঙ্গে তাঁর ছয় বছরের মেয়ে মিষ্টি। তারা বাপ মেয়েতে কুচবিহার যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে দিনহাটা। মিষ্টির বাবার চোখ মুখ মুহূর্তেই শুকিয়ে গেল। মিষ্টি প্রচন্ড ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করেছে। খুব খুব ভয় পেয়েছে। আদির নিচের বাংকারে অন্য একটি মেয়ে বয়স আঠারো। সে দিল্লি থেকে একাই এসেছে। গন্তব্য সমস্তিপুর।কথায় কথায় তিতলি জেনে নিয়েছিল সে সমস্তিপুর থেকে 12 ক্লাস পাস করার পর দিল্লী জেএনইউ তে ইংলিশে অনার্স নিয়ে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। দিল্লিতে দাদা বৌদির কাছেই থাকে। বাড়িতে মা আছেন। বাবা বছরখানেক আগে স্ট্রোক হয়ে মারা গিয়েছে।আজকাল অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। তাই সে ভেবেছে

 মায়ের কাছে থেকে আসবে কিছুদিন।ওর চোখেমুখে আতঙ্ক এবং অসহায়তার ছাপ স্পষ্ট। চেহারা পাংশুবর্ণ ধারণ করেছে। বুঝতে পারছে না কি করবে।

যার যার লাগেজ নিয়ে দরজার সামনে। পারলে দরজা ভেঙ্গে লাফ দেয়। এরই মধ্যে একজন গিয়ে দরজা খুলে দেয় চলন্ত ট্রেনের। দুরন্ত গতিতে ট্রেন চলছে দরজা খোলার ফলে প্রচন্ড জোরে হাওয়া ভেতরে প্রবেশ করছিল। তিতলি চিৎকার করে বলে উঠলো আরে এই এই আপনি করছেন টা কি ? থামুন আপনি দরজা বন্ধ করুন। চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মরার ইচ্ছা জেগেছে বুঝি? ধমক খেয়ে লোকটা দরজা বন্ধ করে দিল। কিন্তু কথা হচ্ছে সাইরেন এখনো বেজে চলছে।দরজার সামনে লাগেজ এবং প্যাসেঞ্জার এর ভির।পা রাখার জায়গা নেই।যার যার প্রাণের মূল্য তার তার কাছে অনেক বেশি।তখনই জানা গেলো ডিবি আর জি ট্রেনের সামনের দিকের বগিতে আগুন ধরেছে।প্রত্যেকের চেহারা লক্ষ্য করার মতো ছিল।বাকিদের ভয় পাওয়া দেখে তিতলির ভয় উবে গিয়েছে। ভয় না পাওয়া যাত্রীর মধ্যে সে শুধু আদিকেই দেখতে পেল। তিতলির মনে হল যাই হোক না কেন আদি সকলকে বাঁচিয়ে নেবে । সে নিজেও আরেকটু সাহস সঞ্চয় করে নিল। যা হবে দেখা যাবে।


জানা গেল কোনো একজন যাত্রী চলন্ত ট্রেনে সিগারেট ধরিয়ে ছিল। আর তাতেই এই বিপত্তি। প্রায় 15 মিনিট পর 

সাইরেনের আওয়াজ বন্ধ হল। সকলেই একটু ধাতস্থ হলো। নিস্তেজ হয়ে পরল। চোখ মুখ থেকে আতঙ্কের ছায়া কাটতে ঘন্টাখানেক আরো কেটে গেল। তারপর কেউ আর ঘুমোলো না। গল্প করে সারারাত কাটিয়ে দিল। পরের দিন যার যার ডেস্টিনেশনে পৌঁছে গেল নির্ঝঞ্ঝাট।


আদির গার্লফ্রেন্ড নিজেই ড্রাইভ করে কিশান্গঞ্জ স্টেশন এসে উপস্থিত ওকে পিক আপ করার জন্য। ওরা কিছু শপিং করতে যাবে শিলিগুড়িতে । কিশান্গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি খুব কাছে। আদি সুমনার সাথে তিতলির পরিচয় করিয়ে দিল দিদি হিসেবে। মেয়েটি তিতলিকে পায়ে হাত রেখে প্রণাম করলো।তিতলি তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিল।খুব সুন্দরী মেয়েটি। ফর্সা লম্বা স্লিম ফিগার। চোখা নাক বড় বড় চোখ। লম্বা চুল। বেশ মোহময়ী চেহারা। তিতলির খুব ভালো লাগে। মনেই হলনা যে মেয়েটির সাথে প্রথমবার দেখা হয়েছে।তারপর সুমনা আদিকে নিয়ে চলে গেলো। তিতলিরাও টোটো ধরে বাসস্ট্যান্ডে চলে এলো বাড়ি ফেরার জন্য সিমি চিকুদের সঙ্গে করে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract