Rima Goswami

Action Crime Thriller

3  

Rima Goswami

Action Crime Thriller

মলেস্টেশন এন্ড সিরিয়াল কিলার

মলেস্টেশন এন্ড সিরিয়াল কিলার

5 mins
334


স্থান- পুলিশ হেডকোয়ার্টার


হাত কাটা জগাটা কাল রাতে বনগাঁ লোকলে খুন হয়েছে । গত সপ্তাহে সিন্ডিকেটের টিপু যোধপুর এক্সপ্রেস এ করে ফিরছিল , আসানসোল এর পর কালীপাহারি স্টেশনে ওকে সকলে বাথরুমে মৃত আবিস্কার করে । গত মাসে কালু যে ভোটে ছাপ্পা দেওয়ার ওস্তাদ ছিল ও তো দুর্গাপুর যাওয়ার পথে গুসকরা যখন ট্রেন পাস করছিল ট্রেন থেকে পড়ে মরলো । যদিও পড়ে যাওয়ার আগেই ওর গলার নলি ফাঁক হয়ে গিয়েছিল ।খুনগুলো পরস্পর রিলেটেড কারণ এক ব্যক্তিই এই অপরাধকে রূপ দিচ্ছে , একে সিরিয়াল কিলার বলেই মনে হচ্ছে । কারণ সব খুন ট্রেনে করছে ,মারার স্টাইল ও এক গলার নলি কেটে দিচ্ছে । এসপি রুপম সান্যাল এক টানা কথা গুলো বলে গেল , সাব ইন্সপেক্টর অসীম ধর আর বাকিরাও আজ্ঞাবহ র মতো কথাগুলো শুনে গেল । রুপম এর মাথায় একটা কথাই পাক খাচ্ছে এত লোকের মাঝে থেকে অপরাধী অপরাধকে রূপ দিচ্ছে কি ভাবে ! আর তার টার্গেট এই অপরাধপ্রবণ মানুষগুলোই কেন ? নেক্সট টার্গেট ই বা কে ?


স্থান - দেবাশীষ গোস্বামীর ফ্ল্যাট


আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো গোছানো ফ্ল্যাটে ডাইনিং টেবিলে থরে থরে সাজানো স্যুপ , স্যালাড , চিকেন তন্দুর , চিলি বেবী করন , মাটন রেজালা , মোমো , চিজ স্যান্ডউইচ আরো কত কি ! খেতে বসেছেন দেবাশীষ বাবু ওনার স্ত্রী অঞ্জলী আর মেয়ে জুনি । দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টে এ জি ম ছিলেন দেবাশীষ বাবু রিটায়ার্ড হয়ে তিনি এখন কলকাতা নিবাসী , রাজারহাটের এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে তার জীবন কেটে যাচ্ছে । অঞ্জলী দেবী লক্ষ করছেন বেশ কিছু সময় ধরে জুনির মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন । দুর্গাপুরে থাকতে কত খুশি খুশি থাকতো মেয়েটা তার পর কলকাতা এসেও মানিয়ে নিয়েছিল , আসলে দুর্গাপুরের মতো শান্ত পরিবেশ থেকে এসে জনবহুল কলকাতাকে আপন সময় লাগারই কথা , জুনি মানিয়ে নিচ্ছিল । তবে মাস খানেক ধরে ও কেমন যেন একটা হয়ে গেছে । এই যেমন কাল রাতে টিউশন থেকে ফিরে বললো ' মা আজকে ও ডিনার এ রুটি চিকেনের ঝোল , ওকে কাল আমি নিজে ডিনার টা তৈরি করবো ' । তার পর আজ এই কান্ড , এত এত খাবার তৈরি করেছেন মহারানী । অদ্ভুত ব্যাপার এসব ও প্রায় করছে না করছে রিয়ারলি , যখনই দেখি ও এই এলাহী আয়োজন করে আর খাওয়ার সময় টিভি অন করে নিউজ খোলে । আর প্রতি এলাহী ডিনারে র সাথে টিভি তে ওই খবরটা আসে ট্রেনে সিরিয়াল কিলার আর খুন ।


স্থান- বর্ধমান পুরুলিয়া লোকাল ট্রেন


ট্রেনটা আর দুটো স্টেশন পার করলেই জিতু লাহিড়ী নামবেন মধুকুন্ডা তে , ঘড়িতে দুপুর দেড়টা । জননেতা জিতু লাহিড়ীর আমন্ত্রণ আছে স্বপন কুমার বিশ্বাস এর মেয়ের বিয়েতে , স্বপন বাবু অদ্রা তে রেলে চাকরি করেন , আর আগামী ভোটে এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী । আর পার্টির হয়ে জননেতা জিতুর হাজিরা দেওয়াটা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভালো প্রভাব ফেলবে , তাই নিজের এসি স্করপিও ছেড়ে জিতু কে লোকের দরদ আদায় করতে সেই বর্ধমান থেকে এই ট্রেন যাত্রা করতে হচ্ছে । এইসব সাতপাঁচ ভাবছিল জিতু , তখনই গলায় একটা তীব্র জ্বালা আর চোখ ঝাপসা হয়ে গেল , টিভিতে সন্ধের নিউজ ট্রেনে সিরিয়াল কিলার এর হাতে খুন হলেন জননেতা ।


স্থান - দেবাশীষ গোস্বামীর ফ্ল্যাট


অঞ্জলীর সন্দেহ র কথা দেবাশীষ কে জানালে উনি প্রচন্ড হাসতে থাকেন আর স্ত্রীকে বলেন টিভি দেখে দেখে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে । ওইটুকু একটা সতেরো বছরের মেয়ে সারাদিন স্কুল টিউশন নিয়ে পড়ে ও করবে খুন ? সত্যি তো সেই সকালে মেয়েটা স্কুল যায় তার পর কোনো কোনো দিন বাড়িও ফেরে না টিউশন চলে যায় ওই পথেই ফেরে সন্ধে তে , সন্ধ্যে তে ও ক্লাস থাকলে রাত হয় ফিরতে ও কি করে এসব করতে পারে ! অঞ্জলী চিন্তা করছিলেন মনে মনে । জুনি এত ছোট বয়স থেকেই রান্না তে সিদ্ধহস্ত । তাই রান্না করে মাঝে মাঝে । ও কেন করবে এ সব ?


স্থান - সাবইনস্পেক্টর অসীম ধর এর কোয়ার্টার


রাত দুটো । অসীম বাবু ডীপ ফ্রীজে বরফ জমাতে রাখলেন , একটা ছাচ সরু ছুরির শেপের , ওতে জল দিয়ে বরফ জমাতে হবে তার পর ওটাকে আস্তে আস্তে পাতলা করতে হবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে , তা হলেই তৈরি হয়ে যাবে নেক্সট টার্গেট এর নলি চেরাই করার হাতিয়ার । এই নিয়ে চারটে অপরাধীকে শেষ করে দিয়েছে ও ভিড়ের মধ্যে মিশে । প্রত্যেক খুনের আগে শাড়ি পড়ে হিজড়া সেজে টার্গেট কে ফলও করে তার সাথে একই কামরায় গেছে সঙ্গে ভ্যানিটি ব্যাগে থার্মাল ফ্লাস্কে মারণ অস্ত্র । সুযোগ বুঝে টুক করে গলায় চালিয়ে হাতিয়ার ফেলে দেওয়া । কাজ শেষ হয়ে গেলে সকলে যখন খুন হওয়া ব্যাক্তিকে নিয়ে ব্যাস্ত খুন কে করেছে ? কিসে করে খুন করা হয়েছে ? কেউ দেখে না । যখন হুস আসে আর পুলিশও আসে তখন হাতিয়ার গলে জল হয়ে সেই জল শুকিয়ে ও যায় আর হিজরে সাজা অসীম ও কোনো এক স্টেশন এ নেমে কোলকাতা র উদ্দেশ্য রওনা দেয় ।


সাইত্রিশ বছরের অকৃতদার অসীম ধর প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিল সতেরো বছরের জুনি কে , জুনিও অসীম কে ভালোবেশে ফেললো । রোজ ওর স্কুল আর ওর অফিসের পথে দুজনের দেখা হতে লাগলো , অসীম ভেবেছিল বয়সের পার্থক্য কেবল মাত্র ওদের কাছে বাধা হয়ে যেতে পারে না । তাই জুনি আর অসীম ঠিক করে ছিলো জুনি উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে যখন কলেজ এ যাবে ওরা জুনির বাবা কে জানাবে ওদের সম্পর্কের কথা । তার পর সেই রাত .....


জুনি টিউশন পরে ফিরছিল , অটো টা বলে তাড়া আছে ওকে মোড়ে নামিয়ে দেবে , জুনি আপত্তি করে না কারণ মোড় থেকে ওর ফ্ল্যাট দু মিনিটের পথ । ফিরতি পথে একটা পার্টি অফিস ও পরে ওখানে লোকজনের আনাগোনা তাই সে ভয় পায়নি । সেদিন পার্টি অফিসে মদের আসরে ছিল টিপু , জগা , কালু , নেতা জিতু আর ইসিডিস অফিসার ইনচার্জ অর্ক দত্ত । শুনশান রাতে উন্মক্ত হয়ে ওরা জুনিকে পার্টি অফিসে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে মলেস্ট করে ।ওকে নগ্ন করে ওর ছবি তুলে ওকে ধমকি দেয় যদি ওরা যখন জুনিকে ডাকবে জুনি যদি ওদের সাথে বিছানায় যেতে রাজি না হয় তা হলে ওর এই সব ছবি ইন্টারনেট এ ছড়িয়ে দেবে , বাবা মা বা পুলিশকে জানালে ওর ফ্যামিলি কে শেষ করে দেবে । ভীত সন্ত্রস্ত জুনি ওদের কবল থেকে বেরিয়ে বাড়ি না গিয়ে ফ্ল্যাটএর পার্কিংয় এ দাঁড়িয়েই অসীম কে ফোন করে ডেকে নেয় । তার পর ওকে সব বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে । অসীম কথা দেয় জুনি কে ওর সব অপরাধীদের ও শেষ করে দেবে , ওরা সুযোগ পাবে না জুনিকে হাত লাগানোর । তার পর থেকেই ওই জানোয়ার দের ধ্বংসলীলা শুরু । আর প্রত্যেক অপরাধীর মৃত্যুর পর জুনির সেলিব্রেশন ওর ফ্যামিলির সাথে । আর একটা সেলিব্রেশন বাকি ... কালকে ঠিক রাতের খবরে অর্ক দত্ত খুন সিমলা যাওয়ার পথে ট্রেনে সিরিয়াল কিলার এর হাতে ...


সাথে জুনির সেলিব্রেশন ওর স্পেশ্যাল ডিনার ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Action