ইন্দুসুধা ঘোষ
ইন্দুসুধা ঘোষ
ইন্দুসুধা ঘোষ
সতীশ চন্দ্র ঘোষ ছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ সরকারের অধীনে কর্মচারী। তার বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বজ্রযোগিনীতে। তার স্ত্রী
ছিলেন প্রিয়কুমারী ঘোষ। ১০৫ সালে ময়মনসিংহে তাদের কোলে একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে কন্যার নাম রাখা হয় ইন্দুসুধা ঘোষ।
ইন্দুসুধা ঘোষ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ছবি আঁকা, সাহিত্যচর্চা,রাজনীতি,সমাজসেবা বিভিন্ন দিকে তিনি তার অবদানের ছাপ রেখে গেছেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তার শিল্পকলা দেখে মুগ্ধ হন। প্রতীমাদেবী তাকে শান্তিনিকেতনে হাতের কাজের প্রদর্শনী করার জন্য আমন্ত্রণ করে ছিলেন। ১৯২৬ সাল থেকে দীর্ঘ চার বছর তিনি স্কলারশিপে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৩০সালে শান্তিনিকেতনে চাকরিতে যোগ দেন।
১৯২৬ সালে পিসতুতো দাদা কিরণ রায় ইন্দুসুধা ঘোষকে বিপ্লবী যুগান্তর দলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বিপ্লবী যুগান্তর দলের আদর্শে ও কাজকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়েন। শান্তি নিকেতনের নিরাপদ আশ্রয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি স্বদেশী বিপ্লবীদের নিষিদ্ধ পুস্তক লুকিয়ে রাখা, পিস্তল লুকিয়ে রাখা, গ্রামে গঞ্জে সংগঠন বিস্তারের কাজে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৯৩২ সালে স্টেটসম্যান পত্রিকার সম্পাদক ওয়াটসনকে গুলি করার ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত যুগান্তর বিপ্লবীদের তিনি চন্দননগর সহ বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন। অবশেষে পুলিশের কাছে তার বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগ প্রকাশিত হয়ে পড়ে। শান্তিনিকেতন থেকে তিনি পালিয়ে গিয়ে জলপাইগুড়ির সামসিং চা বাগানে আত্মগোপন করে থাকেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ১৯৩২ সালে অক্টোবর মাসে সামসিং চা বাগান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রমাণের অভাবে ইন্দুসুধা ঘোষ মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যান। ইংরেজ পুলিশ তাকে ডেটিনিউ করে প্রেসিডেন্সি জেলে ও পরে হিজলি জেলে আটকে রাখে। হিজলি জেলে বন্দীদের জীবন যখন দুর্বিসহ হয়ে উঠতো তখন তারা ইন্দু দেবীর সেলের কাছে গিয়ে হাজির হত। জেলের অভ্যন্তরে একঘেয়ে কষ্টকর দুর্বিষহ জীবনে মুহুর্তের মধ্যেই আনন্দ ও স্নিগ্ধতা ফিরে আসত।
১৯৩৭ সালে পাকাপাকিভাবে ইংরেজ পুলিশের কবল থেকে তিনি মুক্তি পান। ১৯৩৮ সালে এলাহাবাদ মিউনিসিপাল মহিলা শিল্পভবনে প্রধান শিক্ষিকা রূপে কাজে যোগ দেন। দীর্ঘ নয় বছর সেখানে কাজ করার পর ১৯৪৮ সালে "নারীসেবা সংঘ" নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আবাসিক সুপারিনটেনডেন্ট রূপে নিযুক্ত হয়ে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৯৫ সালে ২৪শে সেপ্টেম্বর তিনি অজানার দেশে পাড়ি দেন।
